(২১-২২) বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) (ওফাত.৬০৬ হি.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
قَالَ تَعَالَى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ وَفِيهِ أَقْوَالٌ: الْأَوَّلُ: أَنَّ الْمُرَادَ بِالنُّورِ مُحَمَّدٌ وَبِالْكِتَابِ الْقُرْآنُ
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব। প্রথমত নূর দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন মাজীদ।’’
❏ তারপর একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এ আয়াতের নূরের ব্যাখ্যায় যারা কুরআন উদ্দেশ্য করতে যান তাদের জবাবে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন-
الثَّالِثُ: النُّورُ/ وَالْكِتَابُ هُوَ الْقُرْآنُ، وَهَذَا ضَعِيفٌ لِأَنَّ الْعَطْفَ يُوجِبُ الْمُغَايَرَةَ بَيْنَ الْمَعْطُوفِ وَالْمَعْطُوفِ عَلَيْهِ
-‘‘তৃতীয়ত যারা উক্ত আয়াতের নূর ও কিতাব দ্বারা একক কুরআনই উদ্দেশ্য বলতে চান আমি বলবো, তাদের এ অভিমত দুর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) ‘মা‘তুফ’ (সংযোজিত) ও ‘মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’ ১০
অথাৎ, নূর ও কিতাব একই জাতের নয়।
➥{ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১১/৩২৭ পৃ. দারুল ইহইয়াউল তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত।}
❏ তিনি তাঁর তাফসিরে লিখেন-
وَسُمِّيَ الرَّسُولُ نُورًا قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ [المائدة: ١٥] يعني محمد
-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা কোরআন মাজীদে হুযূর (ﷺ) কে নূর নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মহান রব ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব, এ নূরের মমার্থ হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
(ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ২/২৬৩ পৃ.)
(২৩) ইমাম ইযুদ্দীন বিন আবদুস্ সালাম দামেস্কী [ওফাত ৬৬০ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
[نور] محمد صلى الله عليه وسلم
-‘‘উক্ত আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য।’’
(তাফসীরে আল আয বিন আব্দুস্ সালাম, ১/৩৭৭ পৃ. দারুল ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন।)
(২৪) ইমাম কুরতুবী আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.৬৭১ হি.] স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ: وَقِيلَ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنِ الزَّجَّاجِ.
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর, অনেক মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) উদ্দেশ্য, যেমন ইমাম যাজাজ (رحمة الله) বলেছেন।’’
(ইমাম কুরতুবী, আহকামুল কুরআন, ৬/১১৮ পৃ., দারুল কুতুব মিসরিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর।)
(২৫) ইমাম কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (ওফাত. ৬৮৫ হি.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন,
قيل يريد بالنور محمد صلّى الله عليه وسلّم.
-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, আয়াতে ‘নূর’ মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন।’’১১
➥{ইমাম কাজী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী : তাফসীরে বায়যাভী : ২/৩০৭ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।}
(২৬) বিখ্যাত উসূলবিদ আল্লামা আবুল বারাকাত নাসাফী (رحمة الله) [ওফাত ৭১০ হি.] তার তাফসীরে বলেন,
قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ ৃ النور محمد عليه السلام لأنه يهتدى به كما سمي سراجا–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে ‘নূর’। আর উল্লেখিত আয়াতে ‘নূর’ হলো হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)। কারণ, তাঁর মাধ্যমে পথের দিশা পাওয়া যায়। যেমনিভাবে তাকে (কোরআনে) সজ্জ্বল প্রদীপ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।’’ ১২
➥{ইমাম নাসাফী: মাদারিকুত তানজীল : ১/৪৩৬ পৃ.দারুল কালামুল তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন।}
(২৭) ইমাম জুযী কালবী (رحمة الله) [ওফাত. ৭৪১ হি.] উক্ত আয়াতের নূরের ব্যাখ্যায় বলেন-
[نور] محمد صلّى الله عليه وسلّم
-‘‘যে এটা দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’
(তাফসীরে আল-তাহসীল লিল উলূমুল তানযীল, ১/২২৬ পৃ. দারূল আরকাম বিন আবি আরকাম, বয়রুত, লেবানন।)
(২৮) ইমাম আলাউদ্দিন খাযেন (رحمة الله) [ওফাত ৭৪১ হি.] বলেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني محمدا صلى الله عليه وسلم إنما سماه الله نورا لأنه يهتدى به كما يهتدى بالنور في الظلام–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ আর এ নূরের মমার্থ হল মুহাম্মদ (ﷺ), নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁকে নূর হিসেবে নামকরণ করেছেন, কারণ তাঁর নূর দ্বারা মানুষ হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, যেমনিভাবে নূর বা আলো দ্বারা অন্ধকারে পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’’ ১৩
➥{ইমাম খাযেন : তাফসীরে খাযেন : ২/২৪ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
(২৯) ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী (ওফাত. ৭৪৫ হি.) তার তাফসিরে লিখেন-
وَقِيلَ: النُّورُ الرَّسُولُ.
-‘‘কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলে কারীম (ﷺ)।’’
(ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী, তাফসিরে বাহারুল মুহিত ফিত-তাফসীর, ৪/২০৮ পৃ.)
(৩০) ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী (ওফাত.৭৭৫ হি.) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-
والمراد بالنُّور: محمد - عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام
-‘‘মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন রাসূল (ﷺ) কে।’’
(ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ৭/২৫৯ পৃ.)
❏ তিনি যারা নূর ও কিতাব দ্বারা কোরআনকে উদ্দেশ্য করেন তাদের তাফসিরের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন-
وهذا ضعيفُ؛ لأنَّ العَطْفَ يوجبُ التَّغَاير.
-‘‘তাদের এ অভিমত দুর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) ‘মা‘তুফ’ (সংযোজিত) ও ‘মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’ ১৪
অথাৎ, নূর ও কিতাব একই জাতের নয়।
➥{ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ৭/২৫৯ পৃ.}
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন