রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি বিষয়ক আলোচনা তাফসির নং- ৩১-৪০


(৩১) ইমাম মাজিদুদ্দীন ফিরোজাবাদী (ওফাত. ৮১৭ হি.) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


وقوله تعالى: [قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ] يعنى سيِّد المرسَلين محمّدا صلَّى الله عليه وسلَّم.


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান ‘নূর’ এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য সায়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’


(বাছায়ের জুভিল তামিজ, ৫/১৩৫ পৃ.)



(৩২) ইমাম মুকরিযী (ওফাত. ৮৪৫ হি.) তার সিরাত গ্রন্থে লিখেন-


ابن سبع في كتاب (شفاء الصدر) من خصائصه صلى اللَّه عليه وسلّم  أنه كان نورا وكان إذا مشى في الشمس والقمر لا يظهر له ظل ويشهد لما ذكره قول اللَّه تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ  فسماه اللَّه نورا وسماه سراجا فقال تعالى: إِنَّا أَرْسَلْناكَ شاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً وَداعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِراجاً مُنِيراً  قال الطبري: يعنى بالنور محمدا صلى اللَّه عليه وسلّم الّذي أنار اللَّه به الحق وأظهر به الإسلام ومحق به الشرك وهو نور لمن استتار به انتهى.


-‘‘ইমাম ইবনে সাবা (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘শিফাউস সুদূরে’ রাসূল (ﷺ)-এর বৈশিষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয় তিনি নূর ছিলেন এবং সূর্যের বা চাঁদের আলোয় তিনি যখন হাঁটতেন তখন তাঁর কোনো ছায়া প্রকাশিত হতো না। আর এ কথার (তিনি যে নূর) সাক্ষ্য প্রদান করেছেন মহান রব এভাবে, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (সূরা মায়িদা, আয়াত নং-১৫), এখানে এ আয়াতে মহান আল্লাহ নবীজে নূর হিসেবে নামকরণ করেছেন এবং তিনি তাকে আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ নামেও নামকরণ করেছেন, যেমন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির-নাযির এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং আলোকোজ্জ্বল (নূর-প্রদানকারী) প্রদীপরূপে (সূরা আহযাব, ৪৫-৪৬)। আল্লাহ্ তা‘য়ালা এখানে (সূরা মায়েদা, আয়াত ১৫ এ) নূর মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কথা বুঝিয়েছেন। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে জাহির (বিকাশিত) করেছেন এবং শিরকে মিটিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারা আলোকিত হতে চায় তার জন্য তিনি আলো।’’


(ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ১০/৩০৮ পৃ.)



(৩৩) ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (ওফাত ৮৫০ হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ محمد


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ তার দ্বার উদ্দেশ্য হলো রাসূল (ﷺ)।’’


(তাফসীরে নিশাপুরী, ২/৫৭০ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



(৩৪) ইমাম আবি বকর আল-বাকী [ওফাত. ৮৮৫ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-


[نور] أي واضح النورية، وهو محمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’


(তাফসীরে নায্মুদদুরার, ৬/৬৩পৃ. দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।)



(৩৫) বিখ্যাত মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস, ফকীহ, হাফেযুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) [ওফাত ৯১১ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসিরে লিখেন,


[قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللَّه نُور] هُوَ النَّبِيّ ﷺ [وَكِتَاب] قُرْآن


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, সেই নূর হলেন নবী করীম (ﷺ) এবং (কিতাব) মানে কুরআনুল কারীম।’’ ১৫

➥{ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন : ১০১ পৃ.}



(৩৬) ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) [ওফাত. ৯২৩ হি.] তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থে লিখেন-


وأما النور فقال تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ  قيل: محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম হল ‘নূর’ যেমন মহান রব তার শানে আয়াত নাযিল করেছেন, তোমাদের নিকট মহান রবের পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল ‘নূর’, মুফাস্সিরগণ বলেছেন, এ নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’


(ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৬৩ পৃ.)



(৩৭) ইমাম  ইবনে সালেহ শামী  (ওফাত. ৯৪২ হি.) লিখেন-


قال الله تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ قال جماعة: النور هنا محمد صلى الله عليه وسلم.


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের নিকট মহান রবের পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জ্বল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব, এ জামাত মুফাস্সিরগণ বলেছেন, এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’


(ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৫৩০ পৃ.)



(৩৮) ইমাম খতিব শরবীনী (رحمة الله) [ওফাত. ৯৭৭ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন, 


[قد جاءكم من الله نور] هو محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর। এখানে নূর মানে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আলাইহি সালাতু ওয়াস্ সালাম।’’ ১৬

➥{আল্লামা খতিব শরবীনী : তাফসীরে সিরাজুমু মুনীর : ১/৩৬৩ পৃ.}



(৩৯) ইমাম আবুস সাউদ উমাদী (رحمة الله) [ওফাত.৯৮২ হি.] তার তাফসীরে উল্লেখ করেন,


المرادُ بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن


-‘‘প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ)। আর দ্বিতীয়টা প্রকাশ্য কিতাব মানে হচ্ছে কুরআন মাজীদ।’’ ১৭

➥{ইমাম আবুস সাউদ : তাফসীরে আবিস সাউদ : ৩/১৮ পৃ. দারুল ইহইয়াউল তুরাস আল আরাবী,  বয়রুত।}



(৪০) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী [ওফাত. ১০১৪ হি.] তার তাফসিরে লিখেন-


قيل: يريد بالنور محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘কোনো মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসিরে উদ্দেশ্য করেছেন, ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)।’’


(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, তাফসিরে মোল্লা আলী ক্বারী, ১/৫১১ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন