(৪১-৪২) আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) [ওফাত. ১১২২হি.] লিখেন-
قيل النور هنا محمد صلى الله عليه وسلم
-‘‘মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের তাফসিরে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)।’’
(আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৪/২৬৯ পৃ.)
❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-
[مِنَ اللَّهِ نُور] هو محمد صلى الله عليه وسلم [وَكِتَابٌ مُبِين] قرآن بين ظاهر.
-‘‘(আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর) আর সে নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) (প্রকাশ্য কিতাব) দ্বারা হলো কুরআন।’’
(আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৪৮৭ পৃ.)
(৪৩-৪৫) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) [ওফাত.১১২৭ হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
وقيل المراد بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن. وسمى الرسول نورا لان أول شىء أظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلى الله عليه وسلم كما قال (أول ما خلق الله نورى)
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সমুজ্জল কিতাব এসেছে । কোনো কোনো মুফাস্সিরগণ বলেছেন, প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ) আর দ্বিতীয়টা (কিতাব) মানে হচ্ছে- কোরআন মাজীদ............রাসূল (ﷺ) কে নূর নামকরণ এজন্যই করা হয়েছে যে, তিনিই সর্বপ্রথম বস্তু, যাকে আল্লাহ্ তাঁর কুদরতী নূর দ্বারা অস্তিত্বহীনতার আড়াল থেকে প্রকাশ করে দিয়েছেন, সেটা ছিলো হুযূর (ﷺ) এরই নূর, যেমন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’ ১৮
➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ২/৩৭০ পৃ. মায়েদা, ১৫ ও ২/৩৭০ পৃ. মায়েদা-১৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
❏ অন্য এক বিষয়ের আলোচনা করতে গিয়ে এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
سماه الله نورا وقال قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ فالنور هو محمد عليه السلام والكتاب هو القرآن
-‘‘মহান রব রাসূল (ﷺ)-এর একটি নাম রেখেছেন ‘নূর’ যেমন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। এ নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাব মানে কুরআন।’’ ১৯
➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ১/৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
❏ তিনি আরেক স্থানে রাসূল (ﷺ)-এর নূরাণীয়ত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-
وقال تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ- وروى- عن النبي عليه السلام انه قال (كنت نورا بين يدى ربى قبل خلق آدم باربعة عشر ألف عام
-‘‘মহান তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ)-এর নূর হওয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। যেমন রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইরশাদ করেছেন, আমি হযরত আদম (عليه السلام)-এর সৃষ্টির ১৪ হাজার পূর্বে মহান প্রতিপালকের দরবারে নূর ছিলাম।’’ ২০
➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৩/২৫৬ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-
كما قال تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعنى محمدا صلى الله عليه وسلم وكتاب مبين يعنى القرآن
-‘‘যেমন মহান তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ)-এর নূর হওয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। এখানে নূরের মমার্থ হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।’’ ২১
➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ২/৩৭০ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
(৪৬) আল্লামা আবূ আব্বাস আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন মাহদী আল-হুসাইনী আল-ফাসী [ওফাত ১২২৪ হি.] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
النور: محمد-عليه الصلاة السّلام- والكتاب المبين: القرآن
-‘‘প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ)। আর দ্বিতীয়টা প্রকাশ্য কিতাব মানে হচ্ছে কুরআন মাজীদ।’’
(আল-বাহারুল মুদিদ ফি তাফসীরে কুরআনুল মাজিদ, ২/২০ পৃ.)
(৪৭) আহলে হাদিসের মান্যবড়দের অন্যতম এবং তাদের ইমাম কাযী শাওকানী (মৃত.১২৫০ হি.) স্বীয় তাফসীরে লিখেন-
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ. أَنَّ مُحَمَّدًا صلّى الله عليه وَسَلَّمَৃ قَالَ الزَّجَّاجُ: النُّورُ محمد صلّى الله عليه وَسَلَّم-
-‘‘নিশ্চয় তোমােেদর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর......নিশ্চয়ই উক্ত আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে উদ্দেশ্য, ইমাম রাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, এই নূরের উদ্দেশ্য হল মুহাম্মদ (ﷺ)।’’
(শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, ২/২৩ পৃ.)
(৪৮) আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত. হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعنى محمد صلى الله عليه وسلم–
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নূর এসেছে অর্থাৎ তা হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ ২২
➥{কাজী সানা উল্লাহ পানিপথী : তাফসীরে মাযহারী : ৩/৬৮ পৃ. মাকতুবাতে রশীদিয়্যাহ, পাকিস্তান।}
(৪৯-৫১) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) [ওফাত. ১২৭০ হি.] বলেন,
قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ عظيم وهو نور الانوار والنبى المختار صلى الله عليه وسلم اليه ذهب قتادة والزجاج
-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে মহান এক ‘নূর’ আর তিনি হচ্ছেন মহা সম্মানিত নূর, নূরুল আনোয়ার বা সকল নূরের নূর, আল্লাহর মনোনীত নবী মুহাম্মদ (ﷺ)। এমনটি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رحمة الله) ও যুজ্জায (رحمة الله) এর অভিমত।’’ ২৩
➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৩/২৬৯ পৃ.}
❏ তিনি সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে লিখেন-
الثاني الرسول صلّى الله عليه وسلّم قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ [المائدة: ١٥]
-‘‘এ আয়াতের দ্বিতীয় নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উদ্দেশ্য, যেমন মহান রব তা‘য়ালা তাঁর হাবিবের শানে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’ ২৪
➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৮/৫২৪ পৃ.}
❏ তিনি এ আয়াতের তাফসিরে আরও লিখেন-
وقيل المراد بنوره رسوله محمد صلّى الله عليه وسلّم وقد جاء إطلاق النور عليه عليه الصلاة والسلام في قوله تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ
-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উদ্দেশ্য সাধারণভাবে রাসূল (ﷺ), মহান রব তা‘য়ালা তাকে নূর বলেছেন, তাই তিনি তাঁর হাবিবের শানে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’ ২৫
➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ৯/৩৫৮ পৃ.}
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন