❏ ইমাম নববী (رحمة الله) নিজ ‘শরহে সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে হুযূর পূর নূর (ﷺ)’এর দোয়া উদ্ধৃত করেন:
قَوْله صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( أَنْتَ نُور السَّمَاوَات وَالْأَرْض )
“এয়া আল্লাহ, আপনি হলেন আসমান ও জমিনে নূর এবং সমস্ত প্রশংসা-ই আপনার…..”
● ইমাম নববী : শরহু মুসলিম, ৩:১১৯ হাদীস নং ১২৮৮।
❏ উপরোক্ত ‘আপনি হলেন আসমান ও জমিনে নূর’ – এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বলেন:
قَالَ الْعُلَمَاء : مَعْنَاهُ مُنَوِّرهمَا وَخَالِق نُورهمَا.
“আপনি-ই তাদেরকে (আপনার নূর দ্বারা) আলোকিত করেন এবং আপনি-ই তাদের নূর তথা আলোর স্রষ্টা।”
হাদিস ১:
❏ হযরত আবু উবায়দা (رضي الله عنه) বলেন, “
وَقَالَ أَبُو عُبَيْد : مَعْنَاهُ بِنُورِك يَهْتَدِي أَهْل السَّمَاوَات وَالْأَرْض ، قَالَ الْخَطَّابِيُّ فِي تَفْسِير اِسْمه سُبْحَانه وَتَعَالَى : النُّور ، وَمَعْنَاهُ الَّذِي بِنُورِهِ يُبْصِر ذُو الْعِمَايَة ، وَبِهِدَايَتِهِ يَرْشُد ذُو الْغَوَايَة . قَالَ : وَمِنْهُ { اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَات } أَيْ مِنْهُ نُورهمَا ، قَالَ : وَيَحْتَمِل أَنْ يَكُون مَعْنَاهُ ذُو النُّور ، وَلَا يَصِحّ أَنْ يَكُون النُّور صِفَة ذَات اللَّه تَعَالَى وَإِنَّمَا هُوَ صِفَة فِعْل أَيْ هُوَ خَالِقه ، وَقَالَ غَيْره : مَعْنَى نُور السَّمَاوَات وَالْأَرْض : مُدَبِّر شَمْسهَا وَقَمَرهَا وَنُجُومهَا .
এর অর্থ – আপনার নূর দ্বারাই আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী সবাই হেদায়াত লাভ করেন।” আল্লাহর নাম ’নূর’ সম্পর্কে আল্ খাত্তাবী তাঁর তাফসীরে লিখেন, “তিনি (আল্লাহ) এমন এক সত্তা যাঁর নূর দ্বারা অন্ধ দেখতে পায় এবং পথহারা পথের দিশা পায়, যেহেতু তিনি আসমান ও জমিনে নূর (আলো); আর এটাও সম্ভব যে ‘নূর’ বলতে ‘যুন্ নূর’-কে বোঝানো হয়েছে। উপরন্তু, এটা সঠিক নয় যে ‘নূর’ আল্লাহতা’লার যাত মোবারকের গুণ (যাতী সিফাত/সত্তাগত গুণ), কেননা এটা ’সিফাতু ফে’লী’ (গুণবাচক ক্রিয়া); অর্থাৎ, তিনি নূরের স্রষ্টা।” অন্যান্য উলামা বলেন, “আল্লাহ আসমান ও জমিনে নূর – এ বাক্যটির অর্থ হলো, তিনি ওগুলোর সূর্য ও চাঁদ ও তারাসমূহের কর্তা।”
হাদিস ২:
❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেছেন:
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خَلَقَ خَلْقَهُ فِي ظُلْمَةٍ فَأَلْقَى عَلَيْهِمْ مِنْ نُورِهِ فَمَنْ أَصَابَهُ مِنْ ذَلِكَ النُّورِ اهْتَدَى وَمَنْ أَخْطَأَهُ ضَلَّ فَلِذَلِكَ أَقُولُ جَفَّ الْقَلَمُ عَلَى عِلْمِ اللَّهِ.
“মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগৎ (মাখলুকাত)’কে অন্ধকারে (ফী যুলমাতিন) সৃজন করেন; অতঃপর তাদের প্রতি নিজ নূর মোবারক বিচ্ছুরণ করেন। যিনি-ই এই ঐশী আলোর স্পর্শে এসেছেন, তিনি-ই হেদায়াত পেয়েছেন; আর যে সত্তা এর স্পর্শ পায় নি, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাই আমি বলি, (ঐশী) কলম শুকনো এবং (সব কিছুই) আল্লাহর (ঐশী) ভবিষ্যৎ জ্ঞানের আওতাধীন।”
(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৯:২৩৬ হাদীস নং ২৫৬৬।
(খ) আল খতিব : মিশকাতুল মাসাবীহ, ১:২২ হাদীস নং ১০১।
(গ) আহমদ : আল মুসনাদ, ১৩:৩৯৪ হাদীস নং ৩৬৫৬।
(ঘ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, ৯:৪।
(ঙ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ২৫:৩৭৯ হাদীস নং ৬২৭৫।
● ওপরের এই হাদীস ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) সহীহ সনদে তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (‘হাসান’ হিসেবে)।
● ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবের ২টি স্থানে,
● ইমাম তাবারানী (رحمة الله) তাঁর হাদীস সংকলনে,
● ইমাম হাকিম (رحمة الله) নিজ ’মুসতাদরাক’ পুস্তকে এবং
● ইমাম ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তাঁর ‘সুনান আল কুবরা’ কেতাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
● ইমাম ইবনুল আরবী (رحمة الله) তিরমিযী শরীফের ওপর তাঁর ব্যাখ্যামূলক ‘আরিদাত আল আহওয়াযী’ গ্রন্থে (১০:১০৮)
● ইমাম তিরমিযী (رحمة الله)’র বর্ণনার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে বলেন, “এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেকে ওই নূর থেকে ততোটুকুই পান যা আম (সাধারণ) ও খাস্ (সুনির্দিষ্ট)’ভাবে তাঁর জন্যে মঞ্জুর করা হয়েছে…তাঁর অন্তরে এবং শরীরে।”
❏ উপরোল্লিখিত হাদীস ও হযরত কাজী ইবনে আরবী (رحمة الله)’র ব্যাখ্যা পরিস্ফুট করে যে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নূর (জ্যোতি), আর মহানবী (ﷺ) হলেন ঈমানদারদের মধ্যে প্রথম এবং নূরের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবার বেলায় সর্বাগ্রে, এমন কী ফেরেশতাবৃন্দ যারা নূরের সৃষ্টি, তাঁদেরও অগ্রে। ঈমানী ঘাটতি যাদের, শুধু তারাই এ সত্যটি অস্বীকার করতে পারে যে আল্লাহ যখন তাঁর নূর সৃষ্টিকুলের প্রতি বিচ্ছুরণ করেছিলেন, তখন মহানবী (ﷺ)-ই নিশ্চিতভাবে সর্বপ্রথমে ও সর্বাগ্রে ওই ঐশী জ্যোতির পরশ পেয়েছিলেন, এমন মাত্রায় তা পেয়েছিলেন যা কোনো ফেরেশতা, কোনো নবী আলাহিমুস সালাম কিংবা কোনো জ্বিন-ই পান নি।
ওপরের আলোচনা এক্ষণে আলোতে নিয়ে এসেছে ইবনে তাইমিয়ার আক্ষরিকতার চোরা-গর্তকে, যখন সে তার ‘মজমুয়াত আল ফাতাওয়া’ নামের তাসাউফ-বিষয়ক প্রবন্ধে (১১:৯৪, ১৮:৩৬৬) দাবি করে বসে যে মহানবী (ﷺ) কোনোক্রমেই নূরের পয়দা হতে পারেন না; কেননা, মানুষ মাটির সৃষ্টি যার মধ্যে রূহ ফোঁকা হয়েছে; পক্ষান্তরে, ফেরেশতাকুল নূরের সৃষ্টি।
হাদিস ৩:
❏ এই মতের সমর্থনে ইবনে তাইমিয়া মুসলিম শরীফে লিপিবদ্ধ ও হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা’র বর্ণিত হাদীসটি উদ্ধৃত করে, যা’তে হুযূর পূর নূর (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
خُلِقَتْ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ.
ফেরেশতাকুলকে নূর (আলো) থেকে সৃষ্টি করা হয়, জ্বিন জাতিকে ধোঁয়াবিহীন আগুন থেকে, আর আদম আলাহিমুস সালাম’কে তা থেকে যা তোমাদের কাছে বর্ণিত হয়েছে (আল কুরআনে)।”
● (ক) মুসলিম : আস সহীহ, ১৪:২৭৩ হাদীস নং ৫৩১৪।
(খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ৫১:১৯৫ হাদীস নং ২৪০৩৮।
(গ)আল খতিব : মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩:২৩৯ হাদীস নং ৫৭০১।
(ঘ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, ৯:৩।
(ঙ) আব্দুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১১:৪২৫।
(চ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ২৫:৩৫২ হাদীস নং ৬২৬১।
কিন্তু মানবকে কখনো-ই নূরের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বলে বিবেচনা করা যাবে না, ওপরের হাদীস থেকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মানে হলো হুবহু ইবলিস (শয়তান)-এর সেই ভ্রান্ত ধারণারই লালন, যখন সে মাটির চেয়ে ধোঁয়াবিহীন আগুনের শ্রেষ্ঠত্বের অজুহাতে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। অধিকন্তু, এই বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত তিরমিযী শরীফে লিপিবদ্ধ ও হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণিত (উপরোক্ত) সহীহ হাদীসের সাথে একেবারেই অসঙ্গতিপূর্ণ, আর এই বিষয়টির একটি সঠিক ও সামগ্রিক উপলব্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় স্পষ্ট ব্যাখ্যারও পরিপন্থী।
এ বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম-বৃন্দ আল্লাহর দানকৃত নূর ও অন্যান্য নেয়ামতের প্রশ্নে ফেরেশ্তাদের চেয়েও উন্নত আল্লাহর এক সৃষ্টি, যে খোদায়ী দান ও নেয়ামত হযরত ইবনুল আরবী আল মালেকী (رحمة الله)’র ভাষায় হতে পারে আম (সার্বিক) বা খাস (বিশেষ), তাঁদের কলব্ (অন্তর) বা জিসম (দেহ) মোবারকে সন্নিবেশিত। আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম’এর ফেরেশ্তাপ্রতিম অভ্যন্তরীণ সীফাত বা গুণাবলী সম্পর্কে -
❏ ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) নিজ ‘শেফা’ পুস্তকে (ইংরেজি সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৭৭-৮) খোলাসা বর্ণনা দেন নিম্নে:
فالأنبياء والرسل عليهم السلام وسائط بين الله تعالى وبين خنقه يبلغونهم أوامره ونواهيه ووعده ووعيده ويعرفونهم بما لم يعلموه من أمره وحلقه وجلاله وسلطانه وجبروته وملكوته فظواهرهم وأجسادهم وبنيتهم متصفة بأوصاف البشر طارئ عليها ما يطرأ على البشر من الأعراض والأسقام والموت والفناء ونعوت الإنسانية .
নবী-রাসূলবৃন্দ আল্লাহতা’লা ও তাঁর সৃষ্টিকুলের মাঝে মধ্যস্থতাকারীস্বরূপ। তাঁরা মহান প্রভুর আদেশ-নিষেধ, সতর্কবাণী ও শাস্তির ভীতি প্রদর্শন সৃষ্টিকুলকে জানান এবং তাঁর আজ্ঞা, সৃষ্টি, পরাক্রম, ঐশী ক্ষমতা এবং মালাকুত সম্পর্কে তারা যা জানতো না, তাও তাদের জানিয়ে থাকেন। তাঁদের বাহ্যিক আকার-আকৃতি ও শারীরিক গঠন অসুখ-বিসুখ, পরলোক গমন ইত্যাদি অনাবশ্যক বিষয়ে মানুষের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বলেই দৃশ্যমান।
وأرواحهم وبواطنهم متصفة بأعلى من أوصاف البشر متعلقة بالملإ الأعلى متشبهة بصفات الملائكة سليمة من التغير والآفات لا يلحفها غالبا عجز البشرية ولا ضعف الإنسانية إذ لو كانت بواطنهم خالصة للبشيرة كظواهرهم لما أطاقوا الأخذ عن الملائكة ورؤيتهم ومخاطبتهم ومخالتهم كما لا يطيقه غيرهم من البشر .
কিন্তু তাঁদের রূহ মোবারক ও অভ্যন্তরীণ (অদৃশ্য) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানবিক গুণাবলীর অধিকারী, যা মহান প্রভুর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং যা ফেরেশ্তাপ্রতিম গুণাবলীর অনুরূপ; আর কোনো পরিবর্তন (অধঃপতন) কিংবা খারাবির সম্ভাবনা থেকে যা মুক্ত। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে মানুষের সাথে সম্পৃক্ত অক্ষমতা ও (মানবীয়) দুর্বলতা তাঁদের মধ্যে নেই। তাঁদের অভ্যন্তরীণ গুণাবলী যদি তাঁদের বাহ্যিক মানবীয় আবরণের মতো হতো, তাহলে তাঁরা ফেরেশ্তার কাছ থেকে ওহী/ঐশীবাণী গ্রহণ করতে পারতেন না, ফেরেশ্তাদের দেখতেও পেতেন না, তাঁদের সাথে মেশতে ও সঙ্গে বসতেও পারতেন না, যেমনিভাবে আমরা সাধারণ মানুষেরা তা করতে পারি না।
ولو كانت أجسادهم وظواهرهم متسمة بنعوت الملائكة وبخلاف صفات البشر لما أطاق البشر ومن أرسلوا إليه مخالطتهم كما تقدم من قول الله تعالى.
যদি আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম’এর বাহ্যিক কায়া মানবের মতো না হয়ে ফেরেশতাদের মতো গুণাবলীসম্পন্ন হতো, তাহলে তাঁদেরকে যে মর্তের মানুষের মাঝে পাঠানো হয়েছিল তাদের সাথে তাঁরা কথা বলতে পারতেন না, যা আল্লাহ ইতোমধ্যে বলেছেন। অতএব, তাঁদের ‘জিসমানিয়্যাত’ তথা শারীরিক গঠনে তাঁরা মানবের সুরতে দৃশ্যমান, আর রূহ (আত্মাগত) এবং অভ্যন্তরীণ গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁরা ফেরেশতাসদৃশ।”
● কাজী আয়ায : আশ শিফা, ২:২৯৬।
❏ ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله)’র (ওপরে উদ্ধৃত) বিশদ ব্যাখ্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া বুঝতে পারেনি, এ ব্যাপারটি নিয়ে সন্দেহ আছে। বস্তুতঃ আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম ফেরেশতাদের মতো নূরের পয়দা, এ বিষয়টি অস্বীকার করার পর আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম, বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ খাতামুল আম্বিয়া (ﷺ) সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া আহলে সুন্নাতের সর্বজনজ্ঞাত আকিদা-বিশ্বাসটি-ই ব্যক্ত করে যে তাঁরা ফেরেশতাকুলের চেয়েও উচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন; সে বলে:
আল্লাহতা’লা তাঁর কিছু ক্ষমতা ও ঐশী জ্ঞান-প্রজ্ঞা সৎকর্মশীল নেক বান্দা আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম ও আউলিয়া (رحمة الله)ম’এর মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা তিনি ফেরেশতাদের মাধ্যমে করেন না; কেননা তিনি প্রথমোক্ত দলটিতে সে সব গুণের সম্মিলন ঘটান যেগুলো তাঁর অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে ছড়ানো-ছিটানো আছে। ফলে তিনি মানুষের কায়া মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং রূহ ফোঁকেন তাঁর নিজের থেকে; আর এই কারণেই এটা বলা হয়, ‘মানুষ সৃষ্টিকুলের প্রতিনিধি এবং সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিকৃতি।’আল্লাহর দৃষ্টিতে মহানবী (ﷺ) হলেন আদম-সন্তানদের মধ্যে সরদার, সেরা সৃষ্টি, এবং সৃষ্টিকুলের মাঝে মহানতম। এ কারণেই কেউ কেউ বলেছেন, ‘বিশ্বনবী (ﷺ)’এর খাতিরেই আল্লাহ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেন’; অথবা ‘মহানবী (ﷺ) না হলে আল্লাহ আরশ-কুরসী, লওহ-কলম, আসমান-জমিন, চাঁদ-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।’ তবে এটি হুযূর (ﷺ)’এর হাদীস নয়……কিন্তু এটিকে সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।” ● [ইবনে তাইমিয়া]
● ইবনে তাইমিয়া এরপর মহানবী (ﷺ)’এর কারণে আল্লাহ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন মর্মে বর্ণনার সপক্ষে তার দালিলিক প্রমাণ পেশ করে, যা আমরা আমাদের (মূল) বইয়ের (The 555 beautiful names of the Prophet) ’মুহাম্মদ’ ও ‘আহমদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) অধ্যায়ে উদ্ধৃত করেছি (#১-২)।
হাদিস ৪:
❏ সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) নিচের কবিতাটি নবী করীম (ﷺ)-এর শানে আবৃত্তি করেন:
ألا أن خير المرشدين إلى الهدى
نبي جلا عنا شكوك الترجم
نبي أتى والناس في عنجهية
وفي سدف من ظلمة الكفر معتم
فأقشع بانلور المضيء ظلامه
وساعده فيأمره كل مسلم
● মহানবী (ﷺ) ধরণীর বুকে মানবকুল-শ্রেষ্ঠ এ কথা সত্য,
● যিনি আমাদের থেকে সন্দেহ-শঙ্কা করেছেন বিদূরিত,
● তাঁর আবির্ভাব এমনই সময় যখন মানুষ দম্ভের সাগরে ছিল নিমজ্জিত,
● আর ছিল অবিশ্বাসের ঘন-কালো রাত্রির অন্ধকারে বিভ্রান্ত,
● অতঃপর তিনি (তাঁর) উজ্জ্বল আলো দ্বারা অন্ধকার করেন বিতাড়িত,
● আর এতে তাঁকে সাহায্য করেন যাঁরা ছিলেন খোদার প্রতি সমর্পিত ।”(ভাব অনুবাদ)
● ইবনে সাইয়্যেদ আল-নাস এটি বর্ণনা করেন ‘মিনাহ আল-মায’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ১৭৬)।
হাদিস ৫:
❏ হযরত আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ)’কে বলেন,
”এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি আপনার প্রশংসা করার ইচ্ছা পোষণ করি।” হুযূর পাক (ﷺ) উত্তর দেন, “অগ্রসর হোন — আল্লাহ আপনার মুখকে রৌপ্যশোভিত করুন!” অতঃপর হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন:“ধরাধামে শুভাগমনের আগে আপনি ছিলেন আশীর্বাদধন্য (পবিত্র) ছায়া ও ঔরসে – তা এমনই এক সময়ে যখন আদম আলাহিমুস সালাম ও হাওয়া গাছের পাতা দিয়ে আব্রু সম্বরণ করতেন। অতঃপর আপনি এই বসুন্ধরায় নেমে এলেন মানুষ হিসেবে নয়; এক টুকরো মাংস হিসেবেও নয়; কোনো জমাটবদ্ধ/ঘনীভূত পিণ্ড হিসেবেও নয়; বরং এক ফোঁটার মতো (আকৃতিতে) যা (নূহ আলাইহিস সালামের) কিস্তিতে আরোহণ করেন যখন মহাপ্লাবন ঈগল পাখি এবং অন্যান্য মূর্তিকে ধ্বংস করেছিল: যে ফোঁটা সময়ের পরিক্রমণে পবিত্র ঔরস থেকে পবিত্র গর্ভে ছিলেন অগ্রসরমান — যতোক্ষণ না সমস্ত সৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণকারী মহাপ্রভু আপনার সুউচ্চ মর্যাদাকে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত খিনদিফ সমান পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। আর তখনি, যখন আপনি এ ধরায় আবির্ভূত হন, একটি আলো পৃথিবীর ওপরে নিজ রশ্মি বিচ্ছুরণ করে, যা সারা পৃথিবীর আকাশ আলোকিত করে। আমরা সেই আলো দ্বারা আলোকিত, আর সেই আলোর উৎসমূল এবং সেই হেদায়াতের পথসমূহ দ্বারাও (যার জন্যে আমরা) কৃতজ্ঞ।”
● ইবনে সাইয়্যেদ আল-নাস নিজ ‘মিনাহ আল-মায’ (পৃষ্ঠা ১৯২-৩) পুস্তকে এই বর্ণনা
● ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ও
● আল-বাযযার’এর সনাদে লিপিবদ্ধ করেন।
● এ ছাড়া ইবনে কাসীর তার ’সীরাতে নববীয়্যা’ (মোস্তফা আবদ্ আল-ওয়াহিদ সংস্করণ ৪:৫১) গ্রন্থে এবং
● মোল্লা আলী কারী নিজ ‘শরহে শিফা’ (১:৩৬৪) কেতাবে বলেন যে এটি
- আবু বকর শাফেয়ী ও
- ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণিত এবং
- ইবনে আব্দিল বার কৃত ‘আল-ইস্তিয়াব’ ও
- ইবনে কাইয়েম আল্ জওযিয়া প্রণীত ‘যাদ আল্ মা’আদ’ বইগুলোতে উদ্ধৃত হয়েছে।
______________
কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর
✍ মূল: শায়খ হিশাম কাব্বানী (যুক্তরাষ্ট্র)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন