আল-কুরআন ও তফসীর থেকে নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ)



🕋 সূরা মায়েদাঃ আয়াত ১৫ ও তার তফসীর


❏ কুরআন মজীদের ৩টি স্থানে মহানবী (ﷺ)’কে ’নূর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:

قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ.

”নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নূর (আলো, জ্যোতি) এবং স্পষ্ট কেতাব।

 [আল কুরআন : আল মায়িদাহ, ৫:১৫]


❏ ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) বলেন,

سمى بذلك لوضوح أمره وبيان نبوته وتنوير قلوب المؤمنين والعارفين بما جاء به.

“মহানবী (ﷺ)’কে ‘নূর’ বলা হয়েছে তাঁর (নবুয়্যতের) স্বচ্ছতার কারণে এবং এই বাস্তবতার আলোকে যে তাঁর নবুয়্যতকে প্রকাশ্য করা হয়েছে; আর এই কারণেও যে তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা দ্বারা ঈমানদার (বিশ্বাসী) ও আল্লাহর আরেফ (খোদা সম্পর্কে জ্ঞানী)’দের অন্তরগুলো আলোকিত হয়েছে।”

[কাজী আয়ায : আশ শিফা, ১:২৩৮]


● ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) তাঁর ’তাফসীরে জালালাইন’ গ্রন্থে,

 ● ফায়রুযাবাদী ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস’ অবলম্বনে নিজ ‘তানউইরুল মেকবাস’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৭২),

 ● শায়খুল ইসলাম ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী, যিনি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ, তিনি তাঁর ’তাফসীরে কবীর’ কেতাবে (১১:১৮৯),

 ● ইমাম কাজী বায়দাবী (رحمة الله) নিজ ’আনওয়ারুত্ তানযিল’ শীর্ষক বইয়ে,

 ● আল বাগাভী তাঁর ‘মা’আলিমুত্ তানযিল’ নামের তাফসীর কেতাবে (২:২৩),

 ● ইমাম শিরবিনী নিজ ‘সিরাজুম মুনীর’ শীর্ষক তাফসীর গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৩৬০),

 ●‘তাফসীরে আবি সা’উদ’ (৪:৩৬) প্রণেতা এবং

 ● সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) তাঁর ’তাফসীরে মাযহারী’ (৩:৬৭) কেতাবে বলেন,

قَدْ جَاءكُمْ مّنَ الله نُورٌ } هو النبي صلى الله عليه وسلم.

(আয়াতোক্ত) ’নূর’ বলতে মহানবী (ﷺ)’কে বোঝানো হয়েছে।”


❏ ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) তাঁর ‘তাফসীরে জামেউল বয়ান’ (৬:৯২) পুস্তকে বলেন,

“من الله نور”، يعني بالنور، محمدًا صلى الله عليه وسلم الذي أنار الله به الحقَّ، وأظهر به الإسلام، ومحق به الشرك، فهو نور لمن استنار به يبيِّن الحق. ومن إنارته الحق.

“তোমাদের কাছে এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর (আলো) – এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ বোঝাচ্ছেন বিশ্বনবী (ﷺ)’কে, যাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য উদ্ভাসিত করেছেন, দ্বীন ইসলামকে প্রকাশ করেছেন, এবং মূর্তিপূজা নিশ্চিহ্ন করেছেন। অতএব, তিনি ‘নূর’, তাঁর দ্বারা যাঁরা আলোকিত হয়েছেন তাঁদের জন্যে এবং সত্য প্রকাশিত হওয়ার জন্যে।”

 [তাবারী : জামিউল বয়ান ফি তা‘বিলিল কুরআন, ১০:১৪৩]


❏ আল খাযিন নিজ তাফসীর কেতাবে একইভাবে বলেন,

{ قد جاءكم من الله نور } يعني محمداً صلى الله عليه وسلم إنما سماه الله نوراً لأنه يهتدى به كما يهتدى بالنور في الظلام.

“(আয়াতে) ’নূর’ বলতে রাসূলে পাক (ﷺ)’কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে আর অন্য কোনো কারণে নয়, শুধু (এ কারণে যে) মানুষেরা তাঁর দ্বারা পথপ্রদর্শিত হন, যেমনিভাবে কেউ আলো দ্বারা অন্ধকারে পথের দিশা পান।’

 [খাযিন : লুবাবুত তা‘বিল ফি মা‘আনিত তানযিল, ২:২৫১]


❏ ইমাম নাসাফী (رحمة الله) তাঁর ‘তাফসীরে মাদারেক’ (১:২৭৬) গ্রন্থে এবং আল কাসেমী নিজ ‘মাহাসিন আল্ তা’বিল’ (৬:১৯২১) পুস্তকে অনুরূপভাবে বলেন,

النور محمد عليه السلام لأنه يهتدى به كما سمي سراجاً { يَهْدِي بِهِ الله } أي بالقرآن.

“আয়াতে উল্লেখিত ‘নূর’ (জ্যোতি) হুযূর পূর নূর (ﷺ)’এর; কেননা, তাঁর দ্বারা-ই মানুষেরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হন। একইভাবে, তাঁকে ’সিরাজ’ (প্রদীপ)-ও বলা হয়েছে (আয়াতে)।”

 [নাসাফী : মাদারিকুত তানযিল ওয়া হাকায়িকুত তাহবীল, ১:২৮০]।





🕋 সূরা আন নূরঃ আয়াত ৩৫ ও তার তফসীর
____________________

🕋 সূরা আন নূরঃ আয়াত ৩৫ ও তার তফসীর



❏ আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:

اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُورٌ عَلَى نُورٍ.

”তাঁর (আল্লাহর) আলোর (নূরের) উপমা হলো এমনই যেমন একটা দীপাধার, যার মধ্যে রয়েছে প্রদীপ। ওই প্রদীপ একটা ফানুসের মধ্যে স্থাপিত। ওই ফানুস যেন একটি নক্ষত্র, মুক্তার মতো উজ্জ্বল হয় বরকতময় বৃক্ষ যায়তুন দ্বারা, যা না প্রাচ্যের, না প্রতীচ্যের; এর নিকটবর্তী যে, সেটার তেল প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠবে যদিও আগুন সেটাকে স্পর্শ না করে; আলোর (নূরের) ওপর আলো (নূর)।” [আল্ কুরআন : আন নূর, ২৪:৩৫।]


❏ ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله) তাঁর ’আল রিয়াদ আল আনিকা’ পুস্তকে বলেন, “হযরত ইবনে জুবায়র (رضي الله عنه) ও হযরত কাআব আল আহবার (رضي الله عنه) বলেছেন: ‘(আয়াতোক্ত) দ্বিতীয় ’নূর’ দ্বারা মহানবী (ﷺ)’কে বোঝানো হয়েছে; কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে (আগত) যে জ্ঞানালোক ও সুস্পষ্ট (প্রমাণ), তিনি-ই তার সংবাদ দানকারী, প্রকাশক ও জ্ঞাপনকারী।’ কাআব (رضي الله عنه) বলেন, ‘এর তেল প্রজ্জ্বলিতপ্রায় হবে, কারণ মহানবী (ﷺ) মানুষের কাছে পরিচিতপ্রায় হবেন, এমন কী যদি তিনি নবী হিসেবে নিজেকে দাবি না-ও করেন, ঠিক যেমনি ওই তেল আগুন ছাড়াই (প্রজ্জ্বলনের) আলো বিচ্ছুরণ করবে’।”


❏ ইবনে কাসীর তার ’তাফসীরে কাসির’ কেতাবে ইবনে আতিয়্যা কর্তৃক বর্ণিত হযরত কাআব আল আহবার (رضي الله عنه)’র উপরোক্ত আয়াতের

يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُورٌ عَلَى نُورٍ

তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,

قال: يكاد محمد يبين للناس، وإن  لم يتكلم.

“হুযূর পাক (ﷺ)’এর নবুয়্যত মানুষের কাছে সুস্পষ্ট, এমন কী যদি তিনি তা ঘোষণা না-ও করেন।”

 ● ইবনে কাছির : আত তাফসীর, ৬:৬১।


❏ ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) নিজ ’শেফা’ গ্রন্থে (ইংরেজি সংস্করণ, ১৩৫ পৃষ্ঠা) বলেন, ”নিফতাওয়াই আলোচ্য আয়াত (২৪:৩৫) সম্পর্কে বলেছেন:

وقال نفطويه في قوله تعالى (يكاد زيتها يضئ ولو لم تمسسه نار) هذا مثل ضربه الله تعالى لنبيه صلى الله عليه وسلم يقول يكاد منظره يدل على نبوته وإن لم يتل قرآنا كما قال ابن رواحة

لو لم تكن فيه آيات مبينة * لكان منظره ينبيك بالخبر

‘আল্লাহ তাঁর নবী (ﷺ)’এর বেলায় এই মিসাল (উপমা) দিয়েছেন। তিনি আয়াতে বুঝিয়েছেন যে মহানবী (ﷺ)’এর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হবার আগেই তাঁর চেহারা মোবারকে নবুয়্যতের ছাপ ফুটে উঠেছিল, যেমনিভাবে হযরত ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) ব্যক্ত করেছিলেন নিজ কবিতায় –

”এমন কী আমাদের কাছে যদি (তাঁর নবুয়্যতের) সুস্পষ্ট চিহ্ন না-ও থাকতো, তাঁর চেহারা মোবারক-ই আপনাদের সে খবর বলে দিতো ।।”

 ●  কাজী আয়ায : আশ শিফা, ১:২৪৯।


উপরোক্ত আয়াতে উদ্ধৃত مَثَلَ نُوْرِهِ ’আল্লাহর নূর (জ্যোতি)-এর উপমা’ বলতে মহানবী (ﷺ)’কে উদ্দেশ্য হয়েছে বলে যে সকল উলামা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেনঃ


 ● ইবনে জারির তাবারী (তাফসীর ১৮:৯৫),

 ● ইমাম কাজী আয়ায (শেফা শরীফ),

 ● আল বাগাবী (মা’আলিমুত্ তানযিল ৫:৬৩),

 ● আল খাযিন-এর হাশিয়ায়, সাঈদ ইবনে হুবাইর ও আল দাহহাক হতে, আল খাযিন (তাফসীর ৫:৬৩),

 ● ইমাম সৈয়ুতী (দুররে মনসুর ৫:৪৯),

 ● যুরকানী (শরহে মাওয়াহিব ৩:১৭১),

 ● আল খাফাজী (নাসিম আল রিয়াদ ১:১১০, ২:৪৪৯) প্রমুখ।

● আল নিশাপুরী নিজ ’গারাইব আল কুরআন’ (১৮:৯৩) পুস্তকে বলেন, “মহানবী (ﷺ) নূর (আলো) এবং আলো বিচ্ছুরণকারী প্রদীপ।”

● মোল্লা আলী কারী তাঁর ’শরহে শিফা’ বইয়ে বলেন, “এর সুস্পষ্ট অর্থ হলো, নূর বলতে মহানবী (ﷺ)’কে বুঝিয়েছে।”




🕋 সূরা আল আহযাব আয়াত ৪৫ ও তার তফসীর
____________________

🕋 সূরা আল আহযাব আয়াত ৪৫ ও তার তফসীর



❏ আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا.

“হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (পরিজ্ঞাতা) (নবী-দ)! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি ‘উপস্থিত’ ‘পর্যবেক্ষণকারী’ (হাযের-নাযের) করে, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে; এবং আল্লাহর প্রতি তাঁরই নির্দেশে আহ্বানকারী ও আলোকোজ্জ্বলকারী প্রদীপ (ইমাম আহমদ রেযা খান কৃত তাফসীরে ‘সূর্য’ বলা হয়েছে)-স্বরূপ।”

 ● আল কুরআন : আল আহযাব, ৩৩:৪৫।


❏ ইমাম কাজী বায়দাবী (رحمة الله) নিজ তাফসীরে লিখেন: “এটা সূর্য, কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি সূর্যকে একটি প্রদীপ বানিয়েছি;’ অথবা, এটা প্রদীপও হতে পারে।”


❏ ইবনে কাসীর তার তাফসীরে বলেন,

وأمرُك ظاهر فيما جئت به من الحق، كالشمس في إشراقها وإضاءتها، لا يجحدها إلا معاند.

“আল্লাহর বাণী: ‘আলোকোজ্জ্বলকারী প্রদীপ’, অর্থাৎ, (হে রাসূল) আপনি যে সত্য নিয়ে এসেছেন তাতেই আপনার সুউচ্চ মর্যাদা/মাহাত্ম্য প্রতিফলিত হয়েছে, যেমনিভাবে সূর্যের উদয় ও কিরণ দ্বারা বোঝা যায় (তার বৈশিষ্ট্য), যা কেউই অস্বীকার করেন না কেবল একগুঁয়ে লোকেরা ছাড়া।”

 ●  ইবনে কাছির : আত তাফসীর, ৬:৪৩৯।


❏ ইমাম রাগিব আল ইসফাহানী ‘আল মুফরাদাত’ (১:১৪৭) পুস্তকে বলেন, “সিরাজ (প্রদীপ) শব্দটি যা কিছু আলোক বিচ্ছুরণ করে তার সবগুলোকেই বোঝায়।”


❏ ’শরহে মাওয়াহিব’ (৩:১৭১) গ্রন্থে ইমাম যুরকানী মালেকী (رحمة الله) বলেন, “মহানবী (ﷺ)’কে প্রদীপ বলা হয়েছে, কারণ এক প্রদীপ থেকে বহু প্রদীপে আলো জ্বালা হয়, তথাপিও ওই প্রদীপের আলোয় কোনো কমতি হয় না।”


❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আনসারী (رحمة الله), যিনি আরবী কবি ইমরুল কায়েসের পৌত্র, তিনি মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে নিজ কবিতায় বলেন:

لو لم تكن فيه آيات مبينة * لكان منظره ينبيك بالخبر

এমন কী আমাদের কাছে যদি (তাঁর নবুয়্যতের) সুস্পষ্ট চিহ্ন না-ও থাকতো, তাঁর চেহারা মোবারক-ই আপনাদের সে খবর বলে দিতো ।।’


❏ ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (رحمة الله) নিজ ‘আল ইসাবা’ পুস্তকে (২:২৯৯) এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন এবং বলেন,

ومن أحسن ما مدح به النبي صلى الله عليه وسلم

“মহানবী (ﷺ)’এর প্রশংসায় এটি সবচেয়ে সুন্দর পদ্য।”


❏ হযরত ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) সম্পর্কে ইবনে সাইয়্যেদ আল নাস নিজ ‘মিনাহ আল মায’ (পৃষ্ঠা ১৬৬) বইয়ে বলেন:

ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) মক্কা বিজয়ের আগে ৮ জুমাদাল আউয়াল তারিখে ‘মু’তা’ দিবসে শাহাদাৎ বরণ করেন। ওই দিন তিনি অন্যান্য সেনাপতিদের সাথে সেনাপতিত্ব করছিলেন। কবিদের একজন হিসেবে তিনি অনেক ভালো কাজ করেন এবং মহানবী (ﷺ)’এর প্রতি শত্রুদের অপবাদ খণ্ডন করে যথোপযুক্ত জবাব দেন। তাঁর এবং তাঁর দুই বন্ধু হযরত হাসান বিন সাবেত (رضي الله عنه) ও হযরত কাআব ইবনে যুহাইর (رضي الله عنه) সম্পর্কেই নাযেল হয়েছিল কুরআনের আয়াত –

إِلَّا الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا.

‘শুধু যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তারা ব্যতিরেকে।’

 ● আল কুরআন : আশ শুআরা, ২৬:২২৭।


❏ হিশাম ইবনে উরওয়া তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه)’র চেয়ে তৎপর আমি আর এমন কাউকে দেখিনি। একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’কে তাঁর উদ্দেশ্যে বলতে শুনলাম, “বর্তমানের জন্যে যথাযথ কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শোনাও, যখন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি।” তৎক্ষণাৎ কবি উঠে দাঁড়ালেন এবং বল্লেন,

إنِّي تفرّست فيكَ الخيرَ أعرفهُ … واللهُ يعلمُ أنْ ما خانني البصرُ

أنتَ النبيُّ ومن يُحْرَم شفاعَتَهُ … يومَ الحِسابِ فقد أزْرى به القدرُ

فثبّتَ اللهُ ما آتاكَ من حسَنٍ … تثبيتَ موسى ونصْراً كالذي نُصِروا

"অন্তর্দৃষ্টিতে আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার (চূড়ান্ত) ভালাই, এতে আমার নাই কোনো সন্দেহ-ই,

আল্লাহ জানেন, এই অন্তর্দৃষ্টি আমার সাথে কভু বিশ্বাসঘাতকতা করে নাই,

নবী আপনি-ই, আর যে রয়েছে আপনার শাফায়াত বিনা-ই,

রোজ কেয়ামতে তার ভাগ্য-ললাটে আঁকা হবে বে-ইজ্জতীর বিড়ম্বনা-ই,

আল্লাহ সুদৃঢ় করুন সে সব ভালাই, তিনি আপনাকে দান করেছেন যা-ই,

মূসা আলাহিমুস সালাম-এর মতো দৃঢ়তা, আর বিজয় ওই এক-ই ।।"

এ কবিতা শুনে মহানবী (ﷺ) কবিকে বলেন,

قَالَ:”وَأَنْتَ، فَثَبَّتَكَ اللَّهُ يَا ابْنَ رَوَاحَةَ”

“আল্লাহ তোমাকেও দৃঢ় (অটল,অবিচল) করুন, ওহে ইবনে রাওয়াহা!”

 ● তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১৮;৪৮০।

হিশাম ইবনে উরওয়া আরও বলেন, বাস্তবিকই আল্লাহ তাঁকে সবচেয়ে সুদৃঢ় করেছিলেন (ঈমানী চেতনায়)। তিনি শহীদ হন; তাঁর জন্যে বেহেশ্তের দরজা খুলে দেয়া হয়, আর তিনি তাতে প্রবেশ করেন।

আল্লাহর একটি সিফাত (গুণ) হলো ‘যুন্ নূর’, যার অর্থ তিনি নূর (আলো)-এর স্রষ্টা এবং ওই নূর দ্বারা আসমান ও জমিন, আর সেই সাথে ঈমানদারদের অন্তরও হেদায়াতের আলো দ্বারা আলোকোজ্জ্বলকারী।


________________


কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর
 ✍ মূল: শায়খ হিশাম কাব্বানী (যুক্তরাষ্ট্র)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন