মহানবী (ﷺ)-এর নূরানী চেহারাকে চাঁদ ও সূর্যের সাথে তুলনা


সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বহুবার মহানবী (ﷺ)’কে নূর (জ্যোতি) বা আলোর উৎস, বিশেষ করে চাঁদ ও সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন। এঁদের মধ্যে প্রধান হলেন তাঁর কবি -


হাদিস ৬:

 ❏ হযরত হাসসান বিন সাবিত আনসারী (رحمة الله); তিনি লিখেন:

ترحَّلَ عن قوم فضلَّت عُقولهمْ … وحلَّ على قومٍ بنورٍ مجدّدِ.

তিনি এমন এক জাতিকে ত্যাগ করেন যারা নিজেদের খামখেয়ালি পূর্ণ মস্তিষ্ককে দিয়েছিল তাঁর চেয়ে বেশি গুরুত্ব,

অতঃপর তিনি অপর এক জাতির ভাগ্যাকাশে উদিত হন নিয়ে নতুন আলোর দিগন্ত ।” (ভাব অনুবাদ)


مَتى يَبْدُ في الدّاجي الْبَهيمِ جَبِينُه … يَلُحْ مثلَ مِصْباحِ الدُّجَى المتوقِّدِ.

মহানবী (ﷺ)’এর পবিত্র ললাট যখনই আবির্ভূত হয়েছে ঘন কালো অন্ধকারে তা অন্ধকার রাতে উজ্জ্বল তারকার মতোই দ্যুতি ছড়িয়েছে ।


● ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তাঁর প্রণীত ‘দালাইল আন্ নবুয়্যত’ (১:২৮০, ৩০২) গ্রন্থে এই দুটো পংক্তি বর্ণনা করেন। পরবর্তী পংক্তিটি

 ● ইবনে আবদিল বার নিজ ‘আল ইস্তিয়া’ব’ (১:৩৪১) বইয়ে এবং

 ● আল যুরকানী মালেকী তাঁর ‘শরহে মাওয়াহিব আল্ লাদুন্নিয়া পুস্তকেও বর্ণনা করেন।


হাদিস ৭:

❏ হযরত আবু উবায়দা ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:

قَالَ: قُلْتُ لِلرَّبِيعِ بنتِ مُعَوِّذِ بن عَفْرَاءَ صِفِي لِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ:لَوْ رَأَيْتُهُ رَأَيْتُ الشَّمْسَ طَالِعَةً.

আমি হযরত রুবাইয়ী বিনতে মু’আওয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা’কে জিজ্ঞেস করি, “মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে বর্ণনা করুন।” তিনি উত্তর দেন, “তুমি তাঁকে দেখলে বলতে: সূর্যোদয় হচ্ছে।

(ক) আল খতিব : মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩:২৫৯ হাদীস নং ৫৭৯৩।

 (খ) তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১৮:১২।

 (গ) বায়হাকী : দালায়িলুন নবুওয়াত, ১:১৩৪ হাদীস নং ১১৬।

 (ঘ) দারেমী : আস সুনান, ১:৭১ হাদীস নং ৬১।


● এই বর্ণনা ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেছেন তাঁর ‘দালাইল আন্ নবুয়্যত’ (১:২০০) কেতাবে; আর

● ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (رحمة الله) নিজ ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ (৮:২৮০) গ্রন্থে; তাতে তিনি বলেন যে-

 ● ইমাম তাবারানী (رحمة الله)-ও স্বরচিত ‘মু’জাম আল কবীর’ ও ‘আল আওসাত’ পুস্তক দুটোতে এটা রওয়ায়াত করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীদেরকে নির্ভরযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।


হাদিস ৮:

❏ হযরত কাআব ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন,

قَالَ فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنْ السُّرُورِ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ.


”আমি হুযূর পূর নূর (ﷺ)’কে সালাম দেই, আর তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি যখনই খুশি হতেন, তাঁর চেহারা মোবারক এমন উজ্জ্বল হতো যেন চাঁদের টুকরো।”

 (ক) বুখারী : আস সহীহ, ১১:৩৯১ হাদীস নং ৩২৯২।

 (খ) মুসলিম : আস সহীহ, ১৩:৩৪৫ হাদীস নং ৪৯৭৩।

 (গ) আহমদ : আল মুসনাদ, ৩১:৪২৪ হাদীস নং ১৫২২৯।

 (ঘ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, ৯:৩৫।

 (ঙ) আব্দুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ৫:৪০৪।

 (চ) নাসায়ী : আস সুনানুল কুবরা, ৬:৩৬০।


হাদিস ৯:

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করলে তাঁর ফুপু হযরত ’আতিকা বিনতে আবদিল মুত্তালিব, যদিও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন যে তিনি কুরাইশের ধর্ম তখনো অনুসরণ করছিলেন, তিনি নিচের চরণটি আবৃত্তি করেন –

عيني جودا بالدموع السواجم

على المرتضى كالبدر من آل هاشم

আমার নয়নে অশ্রুধারা প্রবাহিত অনন্যতায় মনোনীত জনের শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ, যিনি হাশেমী পরিবারের পূর্ণ চন্দ্ররূপ।।

● আল বুখারী ও মুসলিম শরীফে এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে;

● ইমাম আহমদ (رحمة الله)-ও এটা বর্ণনা করেছেন নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবে।

● ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তাঁর কৃত ‘দালাইল আন্ নবুয়্যত’ (১:৩০১) কেতাবে সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্যদের বাণী বিধৃত করেন।


হাদিস ১০:

❏ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে বলেন:

أمين مصطفى للخير يدعو

كضوء البدر زايله الظلام

এক বিশ্বাসভাজন, মনোনীত জন, যিনি কল্যাণের পথে করেন আহ্বান, যেন অন্ধকার রাতে পূর্ণ চন্দ্রের কিরণ।।



হাদিস ১১:

❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) আবৃত্তি করতেন নিম্নের পংক্তি:

لو كنت من شيء سوى بشر

كنت المضيء لليلة البدر

যদি আপনি হতেন মানবের সুরত-বহির্ভূত কোনো কিছু ভিন্ন, তবে তা হতো সেই রাতের আলো যা‘তে চাঁদ হয় পূর্ণ ।।”


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এই বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করেন নিজ ‘দালাইল আন্ নবুওয়া’ (১:৩০১-৩০২) গ্রন্থে এবং বলেন যে হযরত উমর (رضي الله عنه) উক্ত পংক্তির সাথে আরও যোগ করেছিলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم كذلك ، ولم يكن كذلك غيره .

“মহানবী (ﷺ) এ রকম ছিলেন; তিনি ছাড়া আর কেউই এ রকম নয়।”


❏ জামি’ ইবনে শাদ্দাদ বলেন:

كان رجل منا يقال له طارق فأخبر أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم بالمدينة فقال هل معكم شئ تييعونه قلنا هذا البعير قال بكم قلنا بكذا وكذا وسقا من تمر فأخذ بخطامه وسار إلى المدينة فقلنا بعنا من رجل لا ندرى من هو ومعنا ظعينة فقالت أنا ضامنة لثمن البعير رأيت وجه رجل مثل القمر ليلة البدر لا يخيس بكم فأصبحنا فجاء رجل بتمر فقال أنا رسول رسول الله صلى الله عليه وسلم إليكم يأمركم أن تأكلوا من هذا التمر وتكتالوا حتى تستوفوا ففعلنا.

আমাদের গোত্রভুক্ত এক ব্যক্তিকে তারেক নামে ডাকা হতো [মোল্লা আলী কারী বলেন, ’তিনি সাহাবী হযরত শিহাব আবু ‘আবদ-আল্লাহ আর-মুহারিবী (رحمة الله), যিনি হাদীস বর্ণনা করেন’]।

তিনি বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ)’এর সাথে মদীনায় তাঁর সাক্ষাৎ হয়; হুজূর পাক (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, “তোমাদের সাথে এমন কিছু কি আছে যা তোমরা বিক্রি করবে?” আমরা জবাবে বলি, এই উট বিক্রি করবো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, “কতো?” আমরা বলি, ‘এতো ওয়াসক্ (প্রতি এককে প্রায় ২৪০ দুই অঞ্জলিভর্তি) খেজুর।’ মহানবী (ﷺ) উটের লাগাম নিজ হাত মোবারকে নিয়ে মদীনা চলে গেলেন। তারেক ও তাঁর সাথী বল্লেন, “আমরা এমন একজনের কাছে (উট) বিক্রি করলাম যাঁকে আমরা চেনি-ও না।” আমাদের গোত্রের এক মহিলা বল্লেন, “আমি তোমাদেরকে এই উটের দাম পাবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তাঁর চেহারা মোবারককে পূর্ণচন্দ্রের মতো দেখেছি। তিনি ঠকাবেন না।” পরের দিন সকালে এক ব্যক্তি ওই খেজুর নিয়ে এলেন এবং বল্লেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)’এর প্রতিনিধি। তিনি আপনাদের এই খেজুর খেয়ে সুস্বাস্থ্য লাভ করতে বলেছেন।” অতঃপর আমরা তাই করি।

 ● কাজী আয়ায : আশ শিফা, ১:২৪৮।


________________

কিতাবঃ মহানবী (ﷺ) নূর
 ✍ মূল: শায়খ হিশাম কাব্বানী (যুক্তরাষ্ট্র)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন