ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কি এজিদের অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন?


আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, মুয়াজ্জেম হোসেন নামক এজিদী মোল্লা বলেছে ‘৫২ হিজরিতে এজিদের নেতৃত্বে রোমে অভিযান হয়েছিল, এবং ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু তার অধীনে নাকি একজন সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’ নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক।

ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা আজগুবি ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য। এ রকম কথা কোন ঐতিহাসিকগণই বর্ণনা করেননি। তবে কেউ কেউ বলেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুম এজিদের সাথে ছিলেন। কিন্তু বদরুদ্দীন আইনীসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামগণ সে কথাকেও অস্বীকার করেছেন। দেখুন মূল ইবারতটি:


✦ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর অভিমত

وذكر ان يزيد بن معاوية غزا بلاد الروم حتى بلغ قسطنتنية ومعه جماعة من سادات الصحابة منهم ابن عمر وابن عباس وابن الزبير وابوايوب الانصارى-

অর্থ: বর্ণিত আছে যে, এজিদ বিন মুয়াবিয়া রোম দেশে অভিযান করে কুস্তুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার সাথে ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, ইবনে জুবাইর ও আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ সাহাবাদের একটি জামাত ছিলেন।


✦ অতঃপর আল্লামা আইনী বলেন:

وقيل سير معاوية جيشا كثيفا مع سفيان بن عوف الى القسطنتنية- فاوغلوا فى بلاد الروم وكان فى ذالك الجيش ابن عباس وابن عمر وابن الزبير وابوا ايوب الانصارى وتوفى ابو ابوب الانصارى فى مدة الحصار-

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন: মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে বড় একটি জামাত রোমের কুস্তুনতুনিয়া শহরে প্রেরণ করেন।

উক্ত বাহিনীতে ইবনে আব্বাস ইবনে উমর, ইবনে জুবাইর ও আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুমও ছিলেন। এ অভিযানে আবু আইয়ুব আনসারী ইন্তেকাল করেন।


✦ অতঃপর আল্লামা আইনী বলেন:

قلت الاظهر ان هؤلاء السادات من الصحابة كانوا مع سفيان ولم يكونوا مع يزيد بن معاوية لانه لم يكن اهلا ان يكون هؤلاء السادات فى خدمته-

অর্থ: আমি বলব, এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ কথা হল এ সমস্ত সম্মানিত সাহাবিগণ সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে ছিলেন। তারা এজিদের নেতৃত্বে ছিলেন না। কারণ এ সমস্ত সম্মানিত সাহাবিদের নেতৃত্ব দেওয়ার মত কোন আহল বা যোগ্যতাই এজিদের ছিল না। (উমদাতুল ক্বারী ১৪/১৯৮,১৯৯ পৃষ্ঠা)


✦ ইবনে আসির ও ইবনে খালদুন এর বর্ণনা

আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, ইবুনল আাসির ও ইবনে খালদুন স্ব-স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু ৫০ হিজরি সনে সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে একটি বাহিনী রোম দেশে প্রেরণ করেন। এজিদ সে অভিযানে ইচ্ছা করে যায়নি। পরবর্তীতে তাকে জোরপূর্বক শাস্তিস্বরূপ সেখানে প্রেরণ করা হয়। তখন তার সাথে সম্পুরক হিসেবে আরো কিছু লোক প্রেরণ করা হয়েছিল।

অতএব উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু দূরের কথা অন্যান্য কোন বুজুর্গ সাহাবিও এজিদের নেতৃত্বে কুস্তুনতুনিয়ায় গমন করেননি।



ইবনে কাসিরের একটি বক্তব্য ও জবাব
____________________
ইবনে কাসিরের একটি বক্তব্য ও জবাব


✦ হাফিজ ইবনে কাসির স্বীয় বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থে ১১তম খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় এজিদ সম্বন্ধে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন যা অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ও স্ববিরোধী বক্তব্য। আসুন আমরা প্রথমে তাঁর বক্তব্যটি দেখি:

ثم دخلت سنة تسع واربعين- فيها غزا يزيد بن معاوية بلاد الروم حتى بلغ القسطنتنية ومعه جماعة من سادات الصحابة منهم ابن عمر وابن عباس وابن الزبير وابو ابوب الانصارى

وقد ثبت فى صحيح البخارى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اول جيش يغزون مدينة قيصر مغفورلهم فكان هذا الجيش اول من غزاها-

অর্থ: অতঃপর ৪৯ হিজরি সন শুরু হল। এ বৎসর এজিদ বিন মুয়াবিয়া রোম দেশে আক্রমণ করেন। শেষ পর্যন্ত সে কুস্তুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার সাথে সাহাবাদের একটি জামাত ছিল। তাদের মধ্যে ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, ইবনে জুবাইর ও আবু আইয়ুব আনসারী অন্যতম।

সহিহ বুখারীশরীফে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন: প্রথম বাহিনী যারা কায়সারের শহরে আক্রমণ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। আর উক্ত বাহিনীই হল প্রথম বাহিনী যারা সে শহরে অভিযান করেছিল।

সম্মানিত পাঠকবর্গ হাফিজ ইবনে কাসিরের উক্ত বক্তব্যটি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ও স্ববিরোধী। কারণ এখানে তিনি বলছেন এই ৪৯ হিজরির অভিযানই হচ্ছে প্রথম বাহিনী যারা কুস্তুনতুনিয়ায় আক্রমণ করেছে। অথচ তিনি নিজেই একই কিতাবে প্রথমে বর্ণনা করেছেন যে ৩২ হিজরিতেই সর্বপ্রথম কুস্তুনতুনিয়া শহরে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। ইতোপূর্বে আমি এ ব্যাপারে অন্যান্য ঐতিহাসিকদের বর্ণনাও পেশ করেছি। এখন শুধু ইবনে কাসিরের বর্ণনাটুকু আবার দেখুন।

ثم دخلت سنة ثنتين وثلاثين- وفيها غزا معاوية بلاد الروم حتى بلغ المضيق مضيق القسطنتنية ومعه زوجته عاتكه-

অর্থ: অতঃপর ৩২ হিজরি শুরু হলো। এই বৎসর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু রোম দেশে অভিযান পরিচালনা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কুস্তুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যান। (প্রাগুক্ত)

তাছাড়া ৩২ হিজরীর পরে ৫০ হিজরি পর্যন্ত প্রায় প্রতি বৎসরেই কুস্তুনতুনিয়ায় হামলা হয়েছে। অতএব ৪৯ হিজরিতে পরিচালিত অভিযান প্রথম অভিযান হল কিভাবে?


________________

কিতাব: কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অন্তর্ভুক্তি
লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন