কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অংশগ্রহণ (কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অন্তর্ভুক্তি)

১১
কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অংশগ্রহণ



সম্মানিত পাঠকবর্গ এখন আমি আলোচনা করব যে এজিদ পরবর্তী একটি অভিযানে কুস্তুনতুনিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। তাও স্বইচ্ছায় ছিল না। বরং তাকে শাস্তি স্বরূপ জোরপূর্বক সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কেউ কেউ বলেছেন ৪৯ হিজরি কারো মতে ৫০ হিজরি অথবা ৫২ হিজরিতে সে একবার অংশ নিয়েছিল। তাহলে আসুন দেখি ঐতিহাসিকগণ কি বলেন?


✦ হাফিজ ইবনে কাসিরের বর্ণনা,

ثم دخل سنة تسع واربعين فيها غزا يزيد بن معاوية بلاد الروم حتى بلغ القسطنتنية-

অর্থ: অতঃপর ৪৯ হিজরি সন শুরু হল। এই বৎসর এজিদ বিন মুয়াবিয়া রোম দেশে অভিযান করে এবং কুস্তুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। (বেদায়া ১১/১৮০ পৃষ্ঠা)


✦ হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানীর বর্ণনা,

وكانت غزوة يزيد المذكورة فى سنة اثنتين وخمسين من الهجرة

অর্থ: এজিদের অন্তর্ভুক্তি সম্বন্ধে যে কথা বল হয় তা ছিল ৫২ হিজরির ঘটনা। (ফাতহুল বারি ৬/১২১ পৃষ্ঠা)



✦ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর বর্ণনা,

وقال صاحب المرئة- والاصح ان يزيد بن معاوية غزا القسطنتنية فى سنة اثنتين وخمسين-

অর্থ: মিরআতের মুসান্নিফের মতে বিশুদ্ধ মত হল, এজিদ বিন মুয়াবিয়া কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে শরিক হয়েছিল ৫২ হিজরিতে। (উমদাতুল ক্বারী ১৪/১৯৮ পৃষ্ঠা)


এজিদকে জোরপূর্বক কুস্তুনতুনিয়ায় প্রেরণ

যাই হোক এজিদ একবার কুস্তুনতুনিয়ার অভিযানে শরিক হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল শাস্তি স্বরূপ। মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জোরপুর্বক সেখানে পাঠিয়েছিলেন। আসুন এবার কিতাবের বর্ণনা দেখি।


✦ আল কামিল ফিত তারিখ আল্লামা ইবনুল আসির ‘আল কামিল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

وقيل سنة خمسين سير معاوية جيشا كثيفا الى بلاد الروم للغزاة وجعل عليهم سفيان بن عوف وامر ابنه يزيد بالغزاة معهم- فتثاقل واعتل فامسك عنه ابوه-

فاصاب الناس فى غزاتهم جوع ومرض شديد فانشأ يزيد يقول-

ما ان ابالى بما لاقت جموعهم- يا لغز قذونة من حمى ومن مؤم

اذا اتطأت على الانماط مرتفعا- بدير سمعان عندى ام كلثوم

فبلغ معاوية شعره فاقسم عليه ليحلقن بسفيان الى ارض الروم ليصيبه ما اصاب الناس- فسار ومعه جمع كثير اضافهم اليه ابوه-

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন হিজরি ৫০ সনে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বিরাট একটা বাহিনী রোম দেশে অভিযানের জন্য প্রেরণ করেন। তাদের সেনাপতি ছিলেন সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় পুত্র এজিদকে তাদের সাথে যুদ্ধে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন। তখন সে ইহাকে অনেক কঠিন মনে করল এবং অসুস্থতার ভান করল। তখন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বিরত রাখলেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনী উক্ত অভিযানে ক্ষুধা ও ভীষণ রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হল। তখন এজিদ একটি কবিতা আবৃত্তি করল:

‘মুসলিম বাহিনী উক্ত অভিযানে যে জ্বর ব্যাধি ও কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে এতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ আমি তো  বসে আছি উচ্চ বিছানায়। আমার সাথে আছে উম্মে কুলসুম। এ খবর যখন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট পৌঁছল তখন তিনি শপথ করলেন যে, এজিদ অবশ্যই রোম দেশে সুফিয়ান বাহিনীর সাথে যোগদান করতে হবে এবং লোকসকল যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এজিদও তা ভোগ করতে হবে। অতঃপর সে একটি সম্পুরক বাহিনী নিয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করে। (আল কামিল: ৩য় খন্ড ৫৬-৫৭ পৃষ্ঠা)।





তারিখে ইবনে খালদুন
____________________
তারিখে ইবনে খালদুন


ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন স্বীয় তারিখ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন নিম্নরূপ:

ثم بعث معاوية سنة خمسين جيشا كثيفا الى بلاد الروم مع سفيان بن عوف وندب يزيد ابنه معهم- فتثاقل فتركه- ثم بلغ الناس ان الغزاة اصابهم جوع ومرض وبلغ معاوية ان يزيد انشد فى ذالك

ما ان ابالى بما لاقت جموعهم- بالفدفد البيد من حمى ومن شوم

اذا اتطأت على الانماط مرتفعا- بدير مران عندى ام كلثوم

فحلف ليحلقن بهم فسار فى جميع كثير

অর্থ: অতঃপর ৫০ হিজরি সনে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি বিরাট বাহিনী সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে রোম দেশে প্রেরণ করেন। তখন তিনি স্বীয় পুত্র এজিদকে উক্ত বাহিনীর সাথে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সে অসুস্থতার ভান ধরল। এবং উক্ত অভিযান থেকে বিরত থাকল। অতঃপর মানুষের নিকট সংবাদ পৌছল যে, উক্ত বাহিনী কঠিন রোগ ব্যধি ও ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে। অতঃপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, এজিদ নিম্নক্তো কবিতাটি আবৃত্তি করছে:

‘উক্ত বাহিনী যে কঠিন রোগ ব্যাধি ও মুসিবতের সম্মুখীন হয়েছে এতে আমার কিছু যায় আসে না।

আমি তো আমার স্ত্রী উম্মে কুলসুমকে সাথে নিয়ে উচ্চ বিছানায় বসে আছি।’

তখন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু শপথ করলেন যে, এজিদকে সেখানে অবশ্যই পাঠাবেন। অতঃপর এজিদ একটি বাহিনী নিয়ে সেখানে গমন করে। (তারিখে ইবনে খালদুন ৩য় খন্ড ১২ পৃষ্ঠা)


সম্মানিত পাঠকবর্গ উক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হলো যে, এজিদ স্বইচ্ছায় শাহাদতের প্রত্যাশায় উজ্জীবিত হয়ে জিহাদের ময়দানে যায়নি। বরং ইহা ছিল তার জন্য কঠিন মুসিবতের বিষয়। সে বাধ্য হয়ে শাস্তিস্বরূপ সেখানে একবার গিয়েছিল। এবার আপনারাই বিচার করুন এ রকম অংশগ্রহণে কি ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়া যায়? জান্নাত ওয়াজিব তো অনেক দূরের কথা।


______________

কিতাব: কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অন্তর্ভুক্তি
লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন