“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৮২-৫৮৩ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসকে জাল প্রমাণ করার অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেন নি। উক্ত হাদিসটির একজন রাবী ‘মুসলিম ইবনুল সালিম আল জুহায়নী’ সম্পর্কে সে মন্তব্য করেছেন তিনি দুর্বল, অথচ দেখুন উক্ত রাবী সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, যা সামনে আলোকপাত করা হবে।
ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: نَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْعِبَادِيُّ الْبَصْرِيُّ قَالَ: نَا مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ الْجُهَنِيُّ قَالَ: حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَا تُعْمِلُهُ حَاجَةٌ إِلَّا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَيَّ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন যে ব্যক্তি আমার কাছে যিয়ারত কারী হিসেবে আগমন করবে, আমার যিয়ারত ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজন তাকে ধাবিত করবে না, তার জন্য আমার দায়িত্ব হবে যে, আমি কিয়ামতের দিন তার শাফায়াত করবো।’’ ১৯
➥১৯. ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১২/২৯১ পৃঃ হা/১৩১৪৯, ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৫/১৬ পৃঃ, হা/৪৫৪৬, ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২পৃঃ হাদিস: ৫৮৪২, ইমাম দারেকুতনী : আস্-সুনান : ২/২৭৮ পৃঃ, ইমাম তকিউদ্দনি সুবকী : সিফাউস সিকাম : ১৩ পৃঃ, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৪/৯৬ : রাবী নং : ৮৯৬৪, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানুল মিযান : ৮/৫০ পৃঃ ক্রমিক নং.৭৭০৫, জীবনী: মুসলিম বিন সালেম, ও তার অপর গ্রন্থ তালখিসুল হুবাইর, ২/৫৬৯ পৃঃ, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, আদ্দুররুল মুনতাসিরাহ : ১/২৩৭ পৃঃ, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪১৯ পৃঃ হা/১১২৫, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৪২৬ পৃঃ হা/২৪৮৭, ইবনে নাজ্জার, আখবারে মদিনা, ১/১৫৫ পৃঃ নুরুদ্দীন সানাদী, হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানি ইবনে মাজাহ, ২/২৬৮ পৃঃ ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৬/২৯৮পৃঃ খিলঈ, আল-সাবেঈ মিনাল খিলাআ‘ত, ৫২পৃঃ হাদিস, ৫২, ফাওয়াইদুল হাসান সিহাহ ওয়াল গারায়েব, ১/৬৯পৃঃ হাদিস:৬৮, ও আল-ফাওয়াইদুল মুনতাক্বাত, ১/২২২ পৃ. হাদিস:২৮৩।
মুহাদ্দিসদের অভিমত:
এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) এর অভিমত,
قال العراقي: رواه الطبراني من حديث ابن عمر وصححه ابن السكن .. وكذا صححه عبد الحق في سكوته عنه والسبكي في رد مسألة الزيارة لابن تيمية
-“হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) বলেন, ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে সুকান (رحمة الله) ইহাকে ছহীহ্ বলেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আব্দুল হাক্ব (رحمة الله) ইহার থেকে চুপ থেকে সহীহ্ বলেছেন। ইমাম তাজউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) ইবনে তাইমিয়ার যিয়ারতের রদের মাসয়ালায় হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।” (হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ম খণ্ড, ৩০৬ পৃ: ৪ নং হাদিস; তাখরিজু আহাদিসি এহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ৭৭২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
তাই উক্ত হাদিস সম্পর্কে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, وصححه ابن السكن--‘‘ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله) উক্ত হাদিসকে সহীহ বলেছেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আদ্দুররুল মুনতাসিরাহ, ১/২৩৭ পৃ.)
এ সূত্র সম্পর্কে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) ও ইমাম যুরকানী (رحمة الله) বলেন- صححه ابن السكن অর্থাৎ- ইমাম ইবনুস্-সাকান (رحمة الله) নিম্নোক্ত সনদকে সহীহ বলেছেন।২০
আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-
رَوَاهُ الْجَمَاعَةُ مِنْهُمُ الْحَافِظُ أَبُو عَلِيِّ بْنُ السَّكَنِ فِي كِتَابِهِ الْمُسَمَّى بِالسُّنَنِ الصِّحَاحِ، فَهَذَانِ إِمَامَانِ صَحَّحَا هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ
-‘‘এ হাদিসটি এক জামাত ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে ইমাম আলী ইবনে সাকান (رحمة الله) তাঁর ‘সুনানিস সিহাহ’ ইমামগণ এ হাদিসদ্বয়কে সহীহ বলেছেন।’’ (হাশিয়ায়ে সানাদী, ২/২৬৮ পৃ.)
দ্বিতীয় সূত্র:
হাদিসটি ‘মুসলিম ইবনে ছালিম জুহানী’ থেকে ভিন্ন আরেকটি সূত্রে সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سُلَيْمَانَ الْهَرَوِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ حَاتِمٍ الأَنْصَارِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ الْجُهَنِيُّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ يَعْنِي: الْعُمَرِيَّ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَمْ تَنْزِعْهُ حَاجَةٌ إِلا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারী হওয়া আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে।” (ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইস্পাহান, ২য় খণ্ড, ১৯০ পৃ:)
দুইটি সুত্র মিল হাদিসটি আরো শক্তিশালী হবে। ফলে হাদিসটি সহীহ্ হওয়াতে কোন বাধা থাকবে না।
একটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:
আমাদের কতিপয় আহলে হাদিস ভাইদের দাবী যে, এ সনদ প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেছেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَالْكَبِيرِ وَفِيهِ مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ، وَهُوَ ضَعِيفٌ.
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত ও কাবীরে বর্ণনা করেছেন। উক্ত সনদে ‘মাসলামা বিন সালিম’ তিনি দ্বঈফ বা দুর্বল।’’ ২১
➥২১. আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী, ৪/২ পৃঃ হাদিস, ৫৮৪২
আমি বলবো ভাই আপনি যে ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর তথ্য দিয়েছেন আমিও উনার আরেকটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি একই কিতাব থেকে। ইমাম হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবী সম্পর্কে আরেক স্থানে লিখেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ، وَيُقَالُ: مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ، ضَعَّفَهُ أَبُو دَاوُدَ، وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর উক্ত সনদে ‘মাসলামা বিন সালেম’ রাবি রয়েছেন ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) তাকে কিছুটা দুর্বল বলেছেন, কিন্তু ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’ ২২
➥২২. আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী, ১/১৯৫ পৃঃহাদিস, ৯৪৪
২. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- فوثقه ابن معين. -‘‘ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ ২৩
➥২৩. যাহাবী :মিযানুল ই‘তিদাল : ৪/১০৪ পৃষ্ঠা, ক্রমিক নং.৮৪৮৯
৩. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থেও এমনটি উল্লেখ করেছেন। (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২৭৩)
৪-৬. ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) ও ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (رحمة الله) বলেছেন, তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৫৩৮)
তাই তাকে সরাসরি দ্বঈফ বলা যাবে না। তার হাদিসের মান ‘হাসান’ পর্যায়ের।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন