যে হজ্জ করতে এসে আমার রওজা যিয়ারত করলো সে যেন আমার জাহেরী হায়াতেই যিয়ারত করলো



হাদিসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় একটি গ্রহণযোগ্য হাদিসকে অগ্রহণযোগ্য বলে উলে­খ করেছেন। হাদিসটি হল :


ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ رِشْدِينَ قَالَ: نا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ هَارُونَ الْأَنْصَارِيُّ قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ ابْنُ ابْنَةِ اللَّيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ قَالَ: حَدَّثَتْنِي عَائِشَةُ ابْنَةُ يُونُسَ، امْرَأَةُ لَيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي بَعْدَ مَوْتِي، كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে, সে যেন আমার জীবিত ন্যায়ই সাক্ষাত করলো।’’ ৩০

➥৩০. ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কাবীর : ১২/৪০৬ : হা/১৩৪৯৬, ইমাম তাবরানী : মু’জামুস আওসাত : ১/৯৪ : হা/২৮৯, ইমাম তাবরানী : মু’জামুস সগীর : ১/২০৯ পৃঃ, ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৪/২ পৃ, আল্লামা তাহের সালাফী : মাশায়েখে বাগদাদিয়্যাহ : ২/৫৪ পৃঃ ইবনে নাজ্জার, আখবারে মদিনা, ১/১৫৫পৃঃ তবে তিনি হযরত আনাস এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, মোবারকপুরী, মিরআ‘ত, ৯/৫৫৬পৃঃ হাদিস:২৭৮২।


সনদ পর্যালোচনা:


এ হাদিসটির মান ‘হাসান’, কেননা উপরের সূত্রটি এটিকে শক্তিশালী করেছে। আহলে হাদিস আলবানী এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের দাবী হলো, আল্লামা হাইসামীর একটি বক্তব্য। আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে বলেন,


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الصَّغِيرِ، وَالْأَوْسَطِ وَفِيهِ عَائِشَةُ بِنْتُ يُونُسَ وَلَمْ أَجِدْ مَنْ تَرْجَمَهَا.


-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মুজামুস সগীর এবং মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ সনদে ‘আয়েশা বিনতে ইউনূস’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, আমি কোথাও তাঁর জীবনী পাইনি।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৪/২ পৃ. হা/৫৮৪৪)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ সনদে আর কোনো রাবী নিয়ে সমালোচনা নেই, তবে আলবানী রাবী ‘লাইস ইবনে আবি সুলাইম’ কেও অত্যন্ত যঈফ বুঝাতে চেয়েছিলেন, তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বের হাদিসে আমি উল্লেখ করে এসেছি।


বাস্তবে কী রাবী ‘আয়েশা বিনতে ইউনূস’ কি অপরিচিত?


বাস্তবতা হলো আমরা আসমাউর রিজালের কিতাব গবেষণা করলে দেখতে পাই রাবী ‘আয়িশা’ কোনো মাজহুল দূরের কথা কোনো যঈফ রাবীও নন। বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ ইমাম সামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


عائشة بنت يونس امرأة ليث بن أبي سليم عن ليث حدثني مجاهد


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি তাঁর স্বামী থেকে তিনি তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’

(ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ১/৩০১ পৃ. ক্রমিক.৪১৭)


শায়খ আকরাম বিন মুহাম্মদ তার আসমাউর রিজাল বিষয়ক কিতাবে উল্লেখ করেন-


عائشة بنت يونس بن عبيد، امرأة الليث بن أبي سليم، من السابعة، ذكرها ابن حبان في (الثقات)


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি সপ্তম তবকার রাবী, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (المعجم الصغير لرواة الإمام ابن جرير الطبري , ২/৮৩৭ পৃ. ক্রমিক.৬৬৪৬)


এবার আমরা দেখবো ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার জীবনীতে কি লিখেছেন-


عَائِشَة بنت يُونُس بن عبيد امْرَأَة لَيْث بن أبي سليم تروى عَن زَوجهَا حَدثنِي عبد اللَّهِ بْنُ جَابِرٍ بِطَرْسُوسَ


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী .......।’’ (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/৫২৮ পৃ. ক্রমিক. ১৪৮৪১)


ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله)-এর যে হাদিসটি রাবী ‘আয়িশা’ এর জীবনীতে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সে হাদিসটি মুহাদ্দিসগণ হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন। (বায়হাকী, বা‘আস ওয়ান নুশুর, ১/২১৯ পৃ. হা/৩৫৩)


আহলে হাদিস আলবানীর অবস্থা দেখুন তিনি উক্ত মহিলা রাবীর বিষয়ে লিখেছেন-


لم أجد من ذكرها


-‘‘কেউ তার জীবনী আলোচনা করেছেন বলে আমি পাইনি।’’ ৩১

➥৩১. আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ : ১/১২৩ পৃঃ হা/৪৭


অথচ নিজেই এ গ্রন্থের অন্যস্থানে লিখেছেন-


عائشة بنت يونس امرأة الليث بن أبي سليم، عن ليث بن أبي سليم، عن مجاهد، عن أبي أمامة


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি তাঁর স্বামী থেকে তিনি তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) হতে তিনি সাহাবী আবূ উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করতেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ : ৮/৩৩ পৃ. হা/৩৫৩৯)


পাঠকবৃন্দ! এ ধরনের সত্য গোপনকারীদের কথা যারা অন্ধভাবে অনুসরণ করে তাদের বিষয়ে কি পরামর্শ থাকতে পারে!


তাই কোনো সন্দেহ নেই এ সনদটি গ্রহণযোগ্য এবং ‘হাসান’। অপরদিকে আমরা গবেষণা করে এ বিষয়ক আরেকটি হাদিস দেখতে পাই। ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وعن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: من زار قبري بعد موتي فكأنما زارني في حياتي، ومن لم يزر قبري فقد جفاني.


-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যারা আমার ওফাতের পরে যিয়ারত করবে সে যেন আমার জিবদ্দশায় যিয়ারত করলো। যে আমার যিয়ারত না করবে সে যেন আমার উপর যুলুম করলো।” (ইমাম আবূ সাদ খারকুশী নিশাপুরী: শরফুল মুস্তফা, হাদিস নং ৮৬২, ৩য় খণ্ড, ১৭২ পৃ:; ইবনে সালেহ শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খণ্ড, ৩৭৭ পৃ:)।

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন