হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠা আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য হাদিসকে ইবনে তাইমিয়া এবং নাসিরুদ্দিন আলবানীর বক্তব্যের মাধ্যমে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছে। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ الْحَارِثِ الْأَصْبَهَانِيُّ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ عُمَرَ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدٍ، وَالْقَاضِي أَبُو عَبْدِ اللهِ، وَابْنُ مَخْلَدٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْوَلِيدِ الْبُسْرِيُّ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، وَابْنُ عَوْنٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، وَالْأَسْوَدِ بْنِ مَيْمُونٍ، عَنْ هَارُونَ أَبِي قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ حَاطِبٍ، عَنْ حَاطِبٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي
-‘‘হযরত হাতেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওযা যিয়ারত করল সে যেন আমার জীবিত অবস্থাতেই আমার জিয়ারত করলো।’’ ৩২
➥৩২. বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪৮৮পৃঃ হাদিস, ৪১৫১, বায়হাকী : সুনানে কোবরা : ৫/২৪৫, দারেকুতনী : সুনান : ২/২৭৮ পৃঃ হা/১৯৩, ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানুল মিযান : ৬/১৮০ পৃঃ তিনি হযরত ইবনে উমর হতে, যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/২৬২ পৃঃ রাবী : ৯৬৬৫, তাবরানী : মু'জামুল কাবীর : ১২/৩১০ পৃ: হা/১৩৪৯৭, সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪৭৩ পৃঃ হা/১১২৩, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২২৪ পৃঃ হা/২৪৮৭, কাজী শাওকানী : নায়লুল আওতার : ৫/১৭৯ পৃঃ, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখিসুল হুবাইর : ২/২৬৭ পৃঃ ইবনে আসাকীর, ইত্তিহাফুল জায়েরা, ১/২৫ পৃঃইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাত, ৪/১৯৬পৃঃ হা/৪১২৫, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস: ২০/৩৪৯ পৃঃ হা/২২৩০৭
সনদ পর্যালোচনা:
হাদিসটির দুটি সনদ রয়েছে, একটি সনদ হযরত হাতেব (رضي الله عنه) হতে অপরটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে। দুটি সূত্রেই একজন করে মাজহুল রাবী রয়েছেন। এজন্য আহলে হাদিস শাওকানী এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেছেন-
وَفِي إسْنَادِهِ الرَّجُلُ الْمَجْهُولُ
-‘‘এ সনদে একজন রাবী রয়েছেন যিনি অজ্ঞাত।’’ (শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৩ পৃ.)
হাদিসটিকে গ্রহণযোগ্য কোন মুহাদ্দিস জাল বা বানোয়াট বলেননি। আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও নাসিরুদ্দিন আলবানীই শুধু জাল বলার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। “হারুন আবু কুযা‘আহ” সম্পর্কে আল্লামা শায়খ ওয়াদায়ী লিখেন-
وقال ابن حبان في الثقات : هارون أبو قزعة يروي عن رجل من آل حاطب المراسيل
-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার কিতাবুস সিকাত গ্রন্থে বলেন, রাবী হারুন উপনাম আবূ কুযা‘আহ হাতেব (رضي الله عنه)-এর বংশের লোকের মাধ্যমে মুরসাল রূপে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ (শায়খ ওয়াদায়ী, তারাজামু রিজালিল দারাকুতনী ফি সুনানিহী, ১/৪৬৬ পৃ. ক্রমিক. ১২০৪)
এ আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, এ রেওয়ায়েতটি মুরসাল, আর মুরসাল জমহুর ওলামাদের নিকট হুজ্জাত হিসেবে দাঁড় করানো বৈধ, যা আমি এ গ্রন্থের শুরুতে বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। অনেকে হয়তো বলতে পারেন সিকাহ রাবীর মুরসাল গ্রহণযোগ্য, যেহেতু রাবী ‘আবূ কুযা‘আহ’ যঈফ রাবী তাই এ মুরসাল যঈফ। আমি বলবো, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) উক্ত রাবীকে সিকাহ এবং এ মুরসালকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৭/৫৮০ পৃ. ক্রমিক. ১১৫৬৪)
তাই এ মুরসাল শক্তিশালী হতে আর কোনো বাঁধা থাকলো না। তাই আমার মতে ইমাম সুবকী (رحمة الله) এ হাদিসের বিষয়ে যা বলেছেন তাই সঠিকতর। এ সনদ প্রসঙ্গে ইমাম সুবকী বলেন- بل حسن او صحيحه -‘‘উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ অথবা সহীহ এর মর্যাদা রাখে।’’ ৩৩
➥৩৩. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ
এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র রয়েছে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ التِّرْمِذِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْجُدِّيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَوَّارِ بْنِ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
-‘‘তাবেয়ী হারুন ইবনে কুযা‘আহ (رحمة الله) তিনি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বংশের এক লোকের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৭ পৃ. হা/৩৮৫৬, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৮/৩০৯ পৃ. ক্রমিক. ৮২০৬)
এ সনদটির মান ‘হাসান’ পর্যায়ের। তাবেয়ী ‘আবু কুযা‘আহ’ এটিও মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্রের সবচেয়ে আপত্তিকর দিক হিসেবে রাবী ‘আবূ কুযা‘আহ’ এর ছাত্র ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ কে দোষী করেছেন, তার দাবী তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। আসমাউর রিজাল সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারা জানেন যে ইমাম শু‘বা (رحمة الله) কোনো যঈফ, মাজহুল রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না, তাহলে তিনি কিভাবে সিওয়্যার থেকে বর্ণনা করলেন!
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্র সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘এ সনদটি প্রথম সনদের চেয়েও দুর্বল।’’ পাঠকবর্গ! এবার আমরা তার গবেষণার বাস্তবতা দেখবো।
বায়হাকীর সনদের ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ নামক রাবী সম্পর্কে লিখেন- سَوَّارُ بْنُ مَيْمُونٍ، وَقِيلَ مَيْمُونُ بْنُ سَوَّارٍ -‘‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন কে মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ তাকে মায়মুন ইবনে সিওয়্যারও বলে থাকেন।’’ (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৬ পৃ. হা/৩৮৫৫)
বুঝা গেল মুহাদ্দিসগণ তাকে দুই নামেই চিনতেন।
বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ, হাদিসের ইমাম, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) রাবী ‘মায়মুন ইবনে সিওয়্যার’ কে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৯/১৭৩ পৃ. ক্রমিক.১৫৮৩৮) বুঝা গেল এ রাবী মাজহুল নন বরং সুপরিচিত এবং সিকাহ।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন