ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ সংকলন করেন-
حَدَّثَنِي أَبُو الْقَاسِمِ بْنُ سَعِيدٍ قَالَ: ثنا سَعْدٌ قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِي بَعْدَ وَفَاتِي كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করতে এসে আমার ওফাতের পরে আমার রওজা যিয়ারত করলো, সে যেন আমার জীবদ্দশাতেই আমার জিয়ারত বা সাক্ষাত করলো।’’ ২৭
➥২৭. বায়হাকী : সুনানে কোবরা : ৫/২৪৬ পৃঃ, বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৪৮৯ পৃঃ হা/৪১৫৪, ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কাবীর : ১২/৪০৬ পৃঃ হা/১৩৪৯৭, তাবরানী : মু’জামুল আওসাত : ১/৯৫ পৃঃ হা/২৮৭, ইমাম দারেকুতনী : আস সুনান : ১/২১৭ পৃঃ হা/২৬৬৭, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ১/৫৫০ পৃঃ রাবী : ২৩৬৯, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারতি খাইরিল আনাম ১৭ পৃ, হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২ পৃঃ, সুয়ুতী : জামেউস সগীর : ২/৫২৪ পৃ: হা/৮৬২৮, ইমাম সূয়তী : জামেউল আহাদিস, ৭/১৯ পৃ: হা/২০৫৫১, কাজী শাওকানী : নায়লুল আওতার : ৫/১১৩পৃঃ, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল : ১৫/৬১৫ পৃঃ হা/৪২৫৮২, ইবনে নাজ্জার, আখবারে মদিনা, হা/১৫৬১, ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াতারহীব, ২/২৭ পৃঃ হা/১০৮০, ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৬/২৯৩পৃঃ ভূয়া তাহকীককারী আহলে হাদিস আলবানী, দ্বঈফাহ, হা/৪৭ এ তিনি বলেন, হাদিসটির সনদটি জাল।
সনদ পর্যালোচনা:
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসটির মান ‘হাসান’, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৫ পৃষ্ঠায় এবং আমাদের আরও কতিপয় আহলে হাদিসদের দাবী যে আল্লামা নুরুদ্দীন হাইসামী (رحمة الله) এ সনদ সম্পর্কে বলেছেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَالْأَوْسَطِ وَفِيهِ حَفْصُ بْنُ أَبِي دَاوُدَ الْقَارِئُ؛ وَثَّقَهُ أَحْمَدُ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ مِنَ الْأَئِمَّةِ.
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী মু‘জামুল কাবীর ও মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেন। উক্ত হাদিসের সনদে ‘হাফস বিন আবি দাউদ ক্বারী’ রয়েছেন , তাকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, কিন্তু এক জামাত মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল বলেছেন।’’ ২৮
➥২৮.ইমাম হায়সামী, মাযমাউয যাওয়েদ, ৪/২পৃঃ
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৫ পৃষ্ঠায় উক্ত রাবী সম্পর্কে তিনি লিখেন-‘‘তবে তিনি হাদীস বর্ণনায় অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন।’’ তিনি একজন সিকাহ রাবীর বিষয়ে এ ধরনের কথা কিভাবে লিখতে পারলাম তা দেখে আমি অবাক! আমরা এখানে দেখলাম যে, আল্লামা হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবীকে সিকাহ বলার পক্ষে একক ইমাম আহমদের নাম পেশ করেছেন, কিন্তু সেই একই গ্রন্থে অন্য এক হাদিসের তাহকীকে উক্ত রাবী সম্পর্কে তিনি লিখেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْقَارِئُ، وَثَّقَهُ وَكِيعٌ وَغَيْرُهُ، وَضَعَّفَهُ الْجُمْهُورُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, সনদে রাবী ‘হাফস বিন সুলায়মান ক্বারী’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, তাকে ইমাম ওকী এবং অন্যান্য ইমামগণ সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, আবার অনেক মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বলেছেন।’’ ২৯
➥২৯. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ১০/১৬৩ পৃ:
এখানে আমরা তাকে সিকাহ বলার পক্ষে ইমাম ওয়াকী ইবনে র্জারাহ (رحمة الله) সহ আরও অন্যান্যকেও পেলাম। আল্লামা হাইসামী (رحمة الله) আরেক স্থানে লিখেন- وَوَثَّقَهُ أَحْمَدُ وَابْنُ حِبَّانَ -‘‘তাকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) এবং ইবনে হিব্বান (رحمة الله) সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৩২৮ পৃ. হা/১৮৫০)
এখানে আমরা তাকে সিকাহ বলার পক্ষে ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) কেও পেলাম। আসমাউর রিজালের কিতাবসমূহে উক্ত রাবীর জীবনী অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে মাত্র ২-৩ জন মুহাদ্দিস তাকে হাদিসে দুর্বল বলেছেন, আর তাদের বক্তব্য হলো, তিনি পৃথিবীর সাতজন শ্রেষ্ঠ ক্বারীর অন্যতম, তবে তিনি কেরাতের প্রতি বেশী মনোযোগ থাকায় হাদিসের প্রতি বেশী যতœবান বা পরিশ্রমী হননি; এজন্য তিনি তাদের নিকট দুর্বলতাপূর্ণ বর্ণনাকারীদের অর্ন্তভুক্ত হন।
ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন, قال وكيع: كان ثقة. -“ইমাম ওয়াকী (رحمة الله) বলেন, সে ছিল বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর একজন।’’ (ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী: ২১২১)
ইমাম যাহাবী ও মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন,
قَالَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ: مَا بِهِ بَأْسٌ.
-“ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণের ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই।”
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৭; ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী: ২১২১; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০)
ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-
عن عَبد اللَّهِ بن أحمد بْن حنبل، عَن أبيه: صالح.
-‘‘মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তার সম্মানিত পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’ (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী: ১৩৯০)
ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-
قال وكيع: كان ثقة. روى له: التِّرْمِذِيّ، والنَّسَائي في مسند علي متابعة، وابْن مَاجَهْ.
-“আবু আমর আদ দানী বলেন, ওয়াক্বী বলেছেন: সে বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম নাসাঈ তার থেকে ‘মুসনাদে আলী’ এর মধ্যে হাদিস বর্ণনা করেছেন ও ইবনে মাজাহ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০)
সবমিলিয়ে তার হাদিসকে সহীহ না বলা গেলেও ‘হাসান’ বলতে কোনো অসুবিধা নেই।
আরেকটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:
এই হাদিসে উপরের আলোচিত রাবীর উস্তাদ রাবী لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইস ইবনে আবী সুলাইম) রয়েছেন। আহলে হাদিস আলবানীর দাবী যে ইমামগণ তার সমালোচনা করেছেন। আমরা এখন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করবো।
ইমাম সামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেন-
لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ الكوفي: حسن الحديث
-“লাইছ ইবনে আবী সুলাইমান কুফী হাসানুল হাদিস।” (ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৩৫০৩)
وَقَالَ ابْن معِين أَيْضا لَا بَأْس بِهِ
-“অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”
(ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ দ্বুয়াফা, রাবী নং ৫১২৬)
وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: سَأَلْتُ يَحْيَى عَنْ لَيْثٍ، فَقَالَ: لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ.
-“ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, আমি ইয়াহইয়া (رحمة الله) কে লাইস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।”
(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, রাবী নং ৮৪)
وقال بن عدي له أحاديث صالحة
-“ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গুলো গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭)
وَقَالَ البَرْقَانِيُّ: سَأَلْتُ الدَّارَقُطْنِيَّ عَنْهُ، فَقَالَ: صَاحِبُ سُنَّةٍ، يُخَرَّجُ حَدِيْثُه.
-“বারকানী বলেন, আমি ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: সে সুন্নাহর অনুসারী ও তার হাদিস বর্ণনা করি।”
(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, ৬/১৮১, রাবী নং ৮৪)
وَقَدِ اسْتَشْهَدَ بِهِ البُخَارِيُّ فِي الصحيح، وروى له في كتا رفع اليدين فِي الصلاة، وغيره.
-“ইমাম বুখারী তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ‘রাফ‘উল ইয়াদাইন ফিস সালাত’ ও অন্যান্য গ্রন্থে লাইস থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।”
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, ৬/১৮১ পৃ., রাবী নং ৮৪)
ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
قال الساجي وكان أبو داود لا يدخل حديثه في كتاب السنن الذي ضعفه كذا قال وحديثه ثابت في السنن لكنه قليل
-“ইমাম ছাজী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) লাইস এর দুর্বল হাদিস গুলো তার সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। যেমনটি তিনি বলেছেন এবং তার হাদিস গুলো সহীহ্ প্রমাণিত যেগুলো সুনান গ্রন্থে রয়েছে কিন্তু এগুলোর সংখ্যা কম।” (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫)
আফসোস! তাদের জন্য যারা সত্য জানার পরও ধোঁকাবাজ আলবানীকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন, আর বলে বেড়ান মাযহাব অনুসরণকারী অন্ধ তাকলীদের অনুসারী, বিচার মহান রবের দরবারেই রইল। আলবানী এ হাদিসটিকে (موضوع) জাল বলে আখ্যায়িত করেছে, উপরের দুই রাবীকে সমালোচিত বানিয়ে এ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছে। (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসি দ্বঈফাহ, ১/১২০ পৃ. হা/৪৭)
আমরা এবার এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র নিয়ে আলোকপাত করবো, ইনশা আল্লাহ।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন