হযরত আমীর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র ফজিলতঃ



অভিযোগ গুলো খন্ডন করার আগে  সহীহ হাদীসের আলোকে হজরত মুয়াবিয়া  (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে সহীহ হাদিসে কি এসেছে , তা জানার চেষ্টা করি ।


❏ হাদিস ১:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-


 أول جيش من أمتي يغزون البحر قد أوجبوا


অর্থ-"আমার উম্মতের মধ্যে যে বাহিনী সর্ব প্রথম সমুদ্র অভিযানে অংশ নিবে তারা নিজেদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিবে।" (সহীহ বুখারী ১/৪১০ হাদিসঃ ২৯২৪)


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় সকল ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসগণ একমত যে, হজরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-ই কেবল প্রথম সমুদ্র অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এ অভিযান কে ইতিহাসের ভাষায় "সাইপ্রাস"অভিযান বলে।


❏ ইমাম ইবনু হাজার আসকালনী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন এটা কেবল মুয়াবিয়ার ফজীলতেই কেননা তিনিই প্রথম সমুদ্র অভিযান করেন। তিনি বলেন-

قال المهلّب : في هذا الحديث منقبة لمعاوية لأنه أول من غزا البحر

(ফাতহুল বারী ৬/১২৭)


❏ ইমাম আবু জা'ফর আত তাবারী (رحمة الله) খালেদ ইবনু মা'দান থেকে বর্ণনা করে এ কথাই বলেন তার রচিত" তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক"গ্রন্থের ২৬ হিজরীর ঘটনা পরিচ্ছেদে। তিনি বলেন-

 عن خالد بن معدان قال : أول من غزا البحر معاوية؛ في زمن عثمان، وكان استأذن عمر فلم يأذن له، فلم يزل بعثمان حتى أذن له، وقال : لا تنتخب أحداً، بل من اختار الغزو فيه طائعاً فأعِنه، ففعل

বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনু খালদূন (رحمة الله) বলেন-হজরত  মুয়াবিয়া  (رضي الله عنه)-ই হলেন ১ম খলীফা যিনি ইসলামী বাহিনীর জন্য জাহায তৈরি করে মুসলমানদের জন্য গোড়াপত্তন শুরু করেন।" (মুকাদ্দামা ইবনু খালদূনঃ ৪৫৩ পৃ, তারীখে ইবনু খালদূন ৪/৪১০)


❏ ২৭ হিজরীরে মুয়াবিয়া সমুদ্র অভিযানে শরীক হয়ে  এক বছরের কম সময়ে যুদ্ধে বিজীত হন।

(আন নুজূমুয যাহিরা ১/৮৫)


❏ হাদিস ২:


আব্দুর রাহমান ইবনু আবী উমাইরাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-

اللهم اجعله هادياً مهديًّا، واهدِ به

অর্থ-"হে আল্লাহ তুমি মুয়াবিয়াকে হেদায়াতের রাহবার বানাও, পথ  প্রদর্শন কর, মানুষকে তার দ্বারা হিদায়াত দাও।"

★সুনানে তিরমিযী, হাঃ ৩৮৪২;

★জাওয়ামিউস সাহীহ ২/২৪৭

★হাদিসটির মান সহীহ, সিলসিলা আহাদিসাস সাহীহাহঃ ১৯৬৯।



আমরাও সনদ কে আলাদা ভাবে গবেষনা করে সহীহ হিসেবেই পেয়েছি ।

সুতরাং রাসুলের দুয়ায় যিনি হিদায়াত প্রাপ্ত মানুষের হিদায়াতের মাধ্যম তাকে জালিম আর কাফের বলনে ওয়ালা না জানি কত বড় জালিম  !!!


❏ হাদিস ৩:


ইরবায ইবনু সারিয়াহ (رضي الله عنه) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ থেকে শুনেছি তিনি মুয়াবিয়ার জন্য বলেন-


اللهم علّم معاوية الكتاب والحساب ، وقِهِ العذاب

অর্থ- "হে আল্লাহ আপনি মুয়াবিয়াকে কিতাব ও হিসাবের জ্ঞান প্রদান করুন।এবং তাকে জাহান্নাম এর আযাব হতে হিফাজাত করুন।"

(মুসনাদে আহমাদ হাদিসঃ১৭২০২;উসদূল গাবাহ ৪/৩৮৬; সিলসিলা আহাদিসসাস সহীহাহঃ৩২২৭)



এ হাদিসের বিভিন্ন শাহেদ আছে যার কারনে হাদিসটির সনদ সহিহের দরজায় চলে গেছে।


❏ হাদিস ৪:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-

"এ দ্বীনের নবুওয়াতের যুগটি হবে রহমতের,এরপর খিলাফত আসবে সেটিও রহমত এরপর রাজত্বের(মুয়াবিয়ার) যুগ আসবে সেটিও হবে রহমতের(এরপর ফিতনার কথা উল্লেখ আছে)

★মুস্তাদতাকে হাকেম ৪/৫২০ হাঃ ৮৪৫৯।

★কিতাবুল ফিতান, আবু নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ পৃঃ২৩৬।

★জামেউল মাসায়েল, ইবনু তাইমিয়্যাহ ৫/১৫৪।

★হাদিসটির সনদ সহীহ। ইমাম হাইসামী তার মাজমাউয যাওয়ায়েদে বলেন এ হাদিসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন এর সকল রাবী সিক্বাহ। (সিলসিলা সাহীহাহঃ৩২৭০)।






হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে কয়েকটি আপত্তির জবাবঃ


মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর বিরুদ্ধে  সহীহ মুসলিমের হাদিস নিয়ে ভ্রান্তির নিরসন, ফজীলতের হাদিসকে বদ দুয়ার হাদিস বানানোর অপচেষ্টা)

সে সহীহ মুসলিমের হাদিস রেফার করে মুয়াবিয়াকে অভিশপ্ত বানানোর পায়তারা করেছে।


❏ হাদিস ৫:


সহীহ মুসলিমের (২৬০৩ নং) হাদীসটি হচ্ছে, একদিন নবী (ﷺ) ওহী লিখার প্রয়োজন বোধ করলে (কেননা মুয়াবিয়া অহী লিখকদের একজন) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه)-এর বাল্যকাল বয়সে যখন সে বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন তখন নবী (ﷺ) এসে তাকে বললেন-


وقال اذهب وادع لي معاوية قال فجئت فقلت هو يأكل قال ثم قال لي اذهب فادع لي معاوية قال فجئت فقلت هو يأكل فقال لا أشبع الله بطنه


অর্থঃ"যাও আমার জন্য মুয়াবিয়াকে (ওহী লিখার জন্য) ডেকে নিয়ে আস "ইবনু আব্বাস  (رضي الله عنه) বলেন- "আমি তার নিকট গেলাম" আমি নবীর কাছে গিয়ে বললাম, সে খাচ্ছে।" অতঃপর নবীজী বললেন,

"যাও  আমার জন্য মুয়াবিয়াকে (ওহী লিখার জন্য) ডেকে নিয়ে আস।" আমি নবীর কাছে গিয়ে বললাম, "সে তো খাচ্ছে!! তারপর নবী (ﷺ) বললেন, "আল্লাহ তার পেটকে পরিতৃপ্ত করবেন না!"


এ হাদিস থেকে শিয়া স্কলারদের আপত্তি গুলো হচ্ছে-

১।এখানে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) নবীর ডাকে সারা না দিয়ে বেআদবী করেছে (নাউযুবিল্লাহ)!

২।নবীজি মুয়াবিয়ার জন্য বদ দুয়া করেছেন।

(মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা'নাত)


১ম আপত্তির খন্ডনঃ


এ হাদিসে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর বেয়াদবী কিভাবে প্রমানিত হবে অথচ বালক সাহাবী ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-কে নবী যে তলব করেছেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন বলে কোন কথাই এ হাদিসে নেই। যদি মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) জানতেন আল্লাহর রাসূল(আলাইহিস সালাম) তাকে তলব করেছেন সে তো অবশ্যই তার খাবার রেখে নবীর কাছে ছুটে যেতেন।


সুতরাং ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) তার খাওয়ার অসমাপ্তি দেখে  তাকে জানান নাই যে, রাসূলে আরাবী তাকে তলব করেছেন । এখান থেকেই হযরত  মুয়াবিয়ার নির্দোষ হওয়া প্রমানিত হয়।


২য় আপত্তির জবাবঃ


নবীজি মুয়াবিয়াকে বদ দুয়া করেছেন এটা গায়ের জোরের  কথা । যে ব্যাক্তির কোন দোষই নাই আল্লাহর রাসূল তাকে কি করে বদ দুয়া দিতে পারেন?  যারা এ বদ দুয়ার পক্ষপাতি তারা প্রকৃতপক্ষে প্রিয়নবীজ্বিরও  দুশমন! কেননা এখানে তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, রাহমাতুল্লীল আলামীন (ﷺ)  উম্মতের বিষয়ে বে-খেয়াল ও বে- ইনসাফ !  (নাউযুবিল্লাহ) !

তা নাহলে একজন নিরাপরাধ লোককে বদ দুয়া করে। ( নাউযুবিল্লাহ)


মূলত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় সকল মুহাদ্দিসগন বলেছেন রাসুলুল্লাল্লাহ((ﷺ)  আমীরে মুয়াবিয়ার জন্য বদ  দুয়া না,  দুয়া করেছেন ।

(কেননা পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়া মুমিনের সিফাত না, নিচে এ বিষয়ে হাদিস দেওয়া হবে)। এছাড়াও  যারা এ হাদিসটিকে বদদোয়ার হাদিস হিসেবে দলিল দিচ্ছেন, তাদের  জানা থাকার কথা যে,  আরবীদের  কথার স্টাইলই এমন, তারা লা'নাতের (বদ দুয়ার) ক্ষেত্রে এভাবে বলে না, যেমন নবিজী মাঝে মাঝে মাঝে কোন কোন সাহাবী কে বলতেন-

❏ "রগিমা আনফুক (আল্লাহ তোমার নাক ধূলিমলিন করুক)";

❏ সাকালাতকা উম্মুক (তোমার মা তোমাকে হারাক!);

❏ তারিবাত ইয়ামিনাক(তোমার ডান হাত ময়লা/মাটি যুক্ত হোক!)" এগুলা আদর করে বলা হয় মুখে একটা  থাকে অন্তরে অন্যটা। আমরা আমাদের খুব কাছের মানুষকে অনেক সময় গালিগালাজ করে সম্বোধন করি। (এটার উদাহরণ দেওয়া জরুরী মনে করছি না)


❏ ইমাম নববী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ২ টি জবাব দিয়েছেন(যার  একটি উপরে উল্লেখ করেছি, পুরো ইবারাত দিয়ে দিচ্ছি)-


« وأما دعاؤه على معاوية أن لا يُشبع بطنه حين تأخر ففيه جوابان: أحدهما: أن المراء ليس بأهل لذلك عند الله تعالى وفي باطن الأمر، ولكنه في الظاهر مستوجبٌ له، فيظهر له  استحقاقه لذلك بأمارة شرعية ويكون في باطن الأمر ليس أهلاً لذلك. وهو  مأمورٌ بالحكم بالظاهر، والله يتولّى السرائر. الثاني: أن هذا ليس بمقصود وإنما هو مما جرت به عادة العرب في وصل كلامها بلا نيّة، كقوله تَرِبَتْ يمينك و [ثكلتك أمك] وفي حديث معاوية: « لا أشبع الله بطنه » ونحو ذلك لا يقصدون بشيء من ذلك حقيقة الدعاء، فخاف r أن يصادف شيء من ذلك إجابة، فسأل ربه سبحانه وتعالى ورغب إليه في أن يجعل ذلك رحمة وكفارة وقربة وطهورًا وأجرًا، وإنما كان يقع هذا منه في النادر والشاذ من الأزمان، ولم يكن r فاحشًا ولا متفحشًا ولا لعّانًا ولا منتقمًا لنفسه، وقد قالوا له: ادعُ على دَوس فقال: « اللهم اهد دوسًا » وقال: « اللهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون »


[শরহুন নাবাবী আলা মুসলিম ৮/৩৮৭-৩৯০]

ইমাম ইবনু হাজার আল মক্কী আল হাইতামী (رحمة الله) একই ব্যাখ্যা করেন।

(ইবনে হাজারঃ তাতহীরুল জিনান পৃঃ১২,৩৭) ।




ইমাম নাসায়ি নাকি আমীরে মুয়াবিয়ার বিরোধী ছিলেন?


অথচ এ হাদিসটিকে ইমাম নাসায়ী মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর ফজীলত সংক্রান্ত হাদিস হিসেবে গন্য করেছেন।


❏ শায়খ আব্দুল হাই  ইবনু ইমাদ আল হাম্বলী তার গ্রন্থে ইমাম নাসায়ী (رحمة الله) যে এ হাদীসকে মুয়াবিয়ার ফজীলত মানতেন তা প্রমানে তিনি আল্লামা ইবনু খাল্লিকানের (رحمة الله) সনদে বলেন-


ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺧﻠّﻜﺎﻥ: ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﻖ ﺍﻷ‌ﺻﺒﻬﺎﻧﻲ: ﺳﻤﻌﺖ ﻣﺸﺎﻳﺨﻨﺎ ﺑﻤﺼﺮ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ: ﺇﻥّ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻓﺎﺭﻕ ﻣﺼﺮ ﻓﻲ ﺀﺍﺧﺮ ﻋﻤﺮﻩ ﻭﺧﺮﺝ ﺇﻟﻰ ﺩﻣﺸﻖ, ﻓﺴﺌﻞ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻭﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻣﻦ ﻓﻀﺎﺋﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ: ﺃﻣﺎ ﻳﺮﺿﻰ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﺭﺃﺳًﺎ ﺑﺮﺃﺱ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﻀَّﻞ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ: ﻣﺎ ﺃﻋﺮﻑ ﻟﻪ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﺇﻻ‌: “ﻻ‌ ﺃﺷﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻄﻨﻪ”

এ ইবারতটি হুবহু পাওয়া যাবে ইমাম ইবনু খাল্লিকানের রচিত "ওফায়াতুল আ'ইয়ান"১/৭৭ এ।


❏ অন্য বর্ণনায় এসেছে-

ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻮَﺯِﻳْﺮُ ﺍﺑْﻦُ ﺣِﻨْﺰَﺍﺑَﺔُ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻣُﺤَﻤَّﺪَ ﺑﻦَ ﻣُﻮْﺳَﻰ ﺍﻟﻤﺄَﻣﻮﻧِﻲَّ – ﺻَﺎﺣِﺐُ ﺍﻟﻨَّﺴَﺎﺋِﻲّ – ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻗَﻮْﻣﺎً ﻳُﻨْﻜِﺮُﻭْﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺴَﺎﺋِﻲِّ ﻛِﺘَﺎﺏ ” ﺍﻟﺨَﺼَﺎﺋِﺺ ” ﻟِﻌَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺗَﺮْﻛَﻪُ ﺗَﺼْﻨِﻴْﻒَ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﺍﻟﺸَّﻴْﺨَﻴْﻦِ ، ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺩَﺧَﻠﺖُ ﺩِﻣَﺸْﻖَ ﻭَﺍﻟﻤُﻨْﺤَﺮِﻑُ ﺑِﻬَﺎ ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﻛَﺜِﻴْﺮ، ﻓَﺼَﻨَّﻔْﺖُ ﻛِﺘَﺎﺏَ ” ﺍﻟﺨَﺼَﺎﺋِﺺِ ” ﺭَﺟَﻮْﺕُ ﺃَﻥْ ﻳَﻬْﺪِﻳَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ . ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻪُ ﺻَﻨَّﻒَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ، ﻓَﻘِﻴْﻞَ ﻟَﻪُ : ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺳْﻤَﻊُ ﺃَﻻ‌َ ﺗُﺨْﺮِﺝُ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻱُّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺃُﺧْﺮِﺝُ ؟ ﺣَﺪِﻳْﺚَ : ” ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻻ‌َ ﺗُﺸْﺒِﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” ﻓَﺴَﻜَﺖَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞُ

(সিয়ারু আলামিন নুবালা,যাহাবী ১৩/১৩০;তাহযীবুল কামাল,ইমাম মিযযী ১/৩৩৮)


❏ এ ইবারাত উল্লেখ করে ইমাম মিযযী (رحمة الله) হাফেজ আবুল কাসেম ইবনু আসাকীরের থেকে এভাবে বর্ণনা করেন-

ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﺤﻜﺎﻳﺔ ﻻ‌ ﺗَﺪُﻝُ ﻋﻠﻰ ﺳﻮﺀ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺫﻛﺮﻩ ﺑﻜﻞ ﺣﺎﻝ. ﺛﻢ ﺭﻭﻯ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻘﺎﺑﺴﻲ ﻗﺎﻝ: “ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﻼ‌ﻝ ﻳﻘﻮﻝ: ﺳُﺌﻞ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺻﺎﺣﺐ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ: “ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﻛﺪﺍﺭ ﻟﻬﺎ ﺑﺎﺏ، ﻓﺒﺎﺏ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ، ﻓﻤﻦ ﺁﺫﻯ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺇﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﻛﻤﻦ ﻧﻘﺮ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺮﻳﺪ ﺩﺧﻮﻝ ﺍﻟﺪﺍﺭ، ﻗﺎﻝ: ﻓﻤﻦ ﺃﺭﺍﺩ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ”

(তাহযিবুল কামাল ১/৩৩৯)


অন্যান্য হাদিস থেকেও বুঝা যায় এটি ছিল মুয়াবিয়া (রাদীঃ) জন্য দুয়া --  বদ দুয়া নয় ।  কেননা বিভিন্ন সহীহ হাদিসে পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে।




মুয়াবিয়া (রাদীঃ) এর প্রতি দুয়া নাকি বদ দুয়া?


❏ হাদিস ৬-৯:


আরেক সহীহ হাদিসে এসেছে- "যারা দুনিয়ায় তৃপ্ত হয়ে খায়,  তারা কিয়ামতের দিন অধিকতর ক্ষুদামন্দ হবে!" (সংক্ষিপতার জন্য অনুবাদ না করে নিচে কেবল এ বিষয়ক মূল হাদিসের  ইবারাত গুলো দেওয়া হল)


❏ ইবনু উমার(رضي الله عنه) বলেন-

 « تجشأ رجل عند النبي فقال كف عنا جشاءكفإن أكثرهم شبعا في الدنيا أطولهم جوعا يوم القيامة»

(তিরমিযী ২/৭৮;সুনানু ইবনু মাজাহ হাঃ৩৩৫০;সিলসিলা সহীহা ১/৬৪ হাঃ৩৪৩)


❏ অন্য বর্ণনায় অতিরিক্ত আসছে-

فما أكل أبو جحيفة ملء بطنه حتى فارق الدنيا». وفي لفظ آخر: « فما شبعت منذ ثلاثين سنة».


❏ মুল্লাহ আলী কারী (رحمة الله) ইমাম ত্বীবি (رحمة الله)-এর ক্বওল নকল করে বলেন-

والنهي عن الجشاء هو النهي عن الشبع لأنه السبب الجالب له

(মিরকাতুল মাফাতীহ ৯/৩৮৯)


❏ মিকদাম ইবনু মা'দী (رضي الله عنه) নবীজি থেকে বর্ণনা করেন-

ما ملأ آدمي وعاء شر من بطن، بحسب ابن آدم أكلات يقمن صلبه، فإن كان لا محالة فثلث لطعامه وثلث لشرابه وثلث لنفسه»

(তিরমিযী ২/৬০; সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ ১৩৪৯ ;মুসতাদরাকে হাকেম৪/১২১; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩২;ইরওয়াউল গালীল,আলবানী ৭/৪১ হাঃ১৯৮৩)


 এরপর যদি এ হাদিস প্রশ্নের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয় বদ দুয়া ,  তবুও এটি বদ দুয়া হবে না  । এটি হবে ব্যাক্তির জন্য দুয়া ও রহমতের পুরস্কার । কারণ


❏ হাদিস ১০:


নবীজি (আলাইহিস সালাম) বলেন-


اللهم إنما أنا بشر، فأي المسلمين لَعنتُه أو سببتُهُ فاجعله له زكاة وأجرًا


অর্থ-"হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি কোন মুসলিমকে লানত করলে বা মন্দ বললে,  তাকে (এর জন্যে) পবিত্র কর ও পুরষ্কার প্রদান কর।" (সহীহ মুসলিম হাঃ২৬০০,কিতাবু বিররি  ওয়াস সিলাহ, বাবু-


 باب من لعنه النبي صلى الله عليه وسلم أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة )


এ মর্মে বিভিন্ন  শব্দে একই মতনে অনেক সহীহ হাদিস আছে, আলোচনা লম্বা হওয়ার ভয়ে লিখলাম না।অন্যান্য রেওয়াতে তার তার গুনাহের কাফফারা ও দরজা বুলুন্দির কথা আছে। তবে এটি  অমুসলিমদের কিংবা রাসূল কর্তৃক বড় গুনাহের কারনে বিশেষ কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জন্য লা'নতের বিষয়টি এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

আচ্ছা এত আলোচনা বাদ, এ হাদিস যে সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস) বর্ণনা করেছেন তার নিকট এ হাদিসের মর্ম কি আসুন জেনে নিই।


❏ হাদিস ১১:


আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-কে একজন ফকীহ বলে সম্বোধন করেছেন-

"إنه فقيه" (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৫৫৩)


❏ হাদিস ১২:


অন্য বর্ণনায় ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) মুয়াবিয়াকে রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আখলাক ওয়ালা বলেছেন-

ما رأيت رجلاً كان أخلق بالملك من معاوية

(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৩৫)


উল্লেখিত হাদিসটির মর্ম যদি আলোচিত আপত্তি গুলো হতো তাহলে ইবনু আব্বাস নিজেই মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর এত প্রশংসা করতেন না,অথচ উল্লেখিত হাদিসটি তার থেকেই বর্ণিত।


________________


হযরত আমীর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র বিরোদ্ধে আণিত অভিযোগের জবাব
___________
🖋 সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাইয়ুম আল হোসাইনী।
(সম্পাদনাঃ মাসুম বিল্লাহ সানি)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন