ইয়াযিদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের বক্তব্য


১. ইবনে হাজার হায়তামী মক্কীর বক্তব্য:


আল্লামা ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী আলাইহির রহমত (আরবি) পৃ-৬৮ গ্রন্থে ৫৯৩-৫৯৯ পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যাসহ দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে নিম্নে কিছুটা আলোকপাত করা হল,


অর্থ: জেনে রাখুন, এজিদকে কাফির বলার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উলামায়ে কেরামগণ মতানৈক্য করেছেন। সিবতু ইবনুল জাওযীসহ ইবনে জাওযীর নাতি একদল উলামায়ে কেরামদের মতে সে কাফির। কারণ হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহু এর শির মোবারক যখন এজিদের দরবারে আনা হয়েছিল তখন এজিদ শামবাসীদে একত্রিত করে পবিত্র মাথা মোবারকে লাঠি দ্বারা আঘাত করেছিল এবং ইবনে যুবারির কবিতা আবৃত্তি করেছিল। ‘হায়! আজ যদি বদর যুদ্ধে নিহত আমার মুরুব্বিগণ এ অবস্থা দেখত।





২. ইমাম কুরতুবির বক্তব্য: ইমাম কুরতুবি (আরবি) পৃ-৭৩ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-


অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ‘কুরাইশদের কিছু যুবকদের হাতে আমার উম্মত ধ্বংস হবে।’এই হাদিস উল্লেখ করার পর ইমাম কুরতুবি বলেন- উক্ত হাদিসে ইঙ্গিত পূর্ণ ব্যক্তিগণ হলেন এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া, উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং বনী উমাইয়ার ঐ সমস্ত যুবকগণ যারা এদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। তারা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর আহলে বাইতদেরকে হত্যা ও কয়েদি করেছিল। তাছাড়া তারা মদিনা শরীফ ও মক্কা শরীফের বুযুর্গ আনসার ও মুহাজিরদেরকে হত্যা করেছিল। (আত তাযকিরাহ- ২/৬৪৩ পৃষ্ঠা)।



৩. আল্লামা ইবনুল জাওযীর বক্তব্য:


আল্লামা জামালউদ্দিন আবুল ফারজ ইবনুল জাওযী আলাইহির রহমত এজিদের প্রতি লা’নতের বৈধতা প্রমাণ করে স্বতন্ত্র একটি কিতাব রচনা করেছেন। যার নাম হলঃ

অর্থ: বাংলা অর্থ দাঁড়ায় প্রায় এ রকম ‘এজিদকে মন্দ বলতে বাঁধা দানকারী, অন্ধভাবে স্বীয় সম্প্রদায়ের পক্ষালম্বনকারী, অন্যায় পথে বিচরণকারীর বক্তব্যের খণ্ডন।’




৪. ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতির বক্তব্য:


নবম শতকের মুজাদ্দিদ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থে ১৬৫ পৃষ্ঠায় বলেন-(আরবি) পৃ-৭৭

অর্থ: ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যে শহিদ করেছে তার প্রতি আল্লাহর লা’নত। সাথে সাথে ইবনে যিয়াদ ও ইয়াযিদের প্রতিও লা’নত।



৫. উমর বিন আব্দুল আযিয এর বক্তব্য:


উমর বিন আব্দুল আযিয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে উমরে সানী বা দ্বিতীয় উমর বলা হয়। এজিদকে আমিরুল মোমিনীন বলায় তিনি এক ব্যক্তিকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।



৬.ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি বক্তব্য
____________________
৬.ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (আরবি) পৃ-৮০ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-(আরবি) পৃ-৮১


অর্থ: নওফেল বিন আবিল ফুরাত বর্ণনা করেন- একবার আমি উমর বিন আব্দুল আযিয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দরবারে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি ঘটনাক্রমে এজিদ সম্বন্ধে বলল ‘আমিরুল মোমেনীন এজিদ বিন মুয়াবিয়া’ একথা বলেছেন। তখন উমর বিন আব্দুল আযিয বললেন- তুমি তাকে আমিরুল মোমিনীন বললে? অতঃপর তিনি লোকটাকে ২০টি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ প্রদান করলেন। (তারিখুল খোলাফা- ১৬৬, আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ, ৫৯৫ পৃষ্ঠা)


শেষকথা: পরিশেষে বলতে চাই এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হল যে, এজিদই ছিল কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার মূল নায়ক। তার হুকুমেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই পবিত্র মস্তক মোবারকে লাঠি দ্বারা আঘাত করে উল্লাস করেছে। তার হুকুমেই মদিন শরীফে সন্ত্রাস হয়েছে। তার নির্দেশেই কাবা শরীফে হামলা হয়েছে। অথচ আজকে এ সমস্ত শেখেরা স্বীয় প্রেমিককে  ভাল মানুষ সাজাতে গিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। রচিত করছে জাল হাদিস। আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে এ সমস্ত এজিদ প্রেমিদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করেন এবং আহলে বাইতের মহব্বত দ্বারা আমাদের অন্তরকে ভরপুর করেন। আমিন।

_______________

ইয়াযিদের হাকিকত
কৃতঃ হাফেজ মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন।
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন