সাগর পথে প্রথম অভিযান হয়েছিল হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে ২৭ অথবা ২৮ হিজরিতে। তখন এজিদ ছিল দুধের শিশু। কারণ এজিদের জন্ম হয়েছিল ২৫ অথবা ২৬ হিজরিতে। অতএব সাগর পথে প্রথম অভিযানে এজিদের অন্তভুর্ক্তি হাস্যকর ও অসম্ভব।
✦ এ ব্যাপারে ইমাম বুখারি স্বীয় গ্রন্থে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন নিম্নরূপ:
عن انس بن مالك عن خالته ام حرام بنت ملحان قالت نام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما قريبا منى ثم استيقظ يتبسم فقلت ما اضحكك؟ قال اناس من امتى عرضوا على يركبون هذا البحر الاخضر كالملوك على الاسرة- قالت فادع الله ان يجعلنى منهم فدعالها- ثم نام الثانية ففعل مثلها فقالت مثل قولها- فاجابها مثلها- فقالت ادع الله ان يجعلنى منهم- فقال انت من الاولين- فخرجت مع زوجها عبادة بن الصامت غازيا- اول ما ركب المسلمون البحر مع معاوية فلما انصرفوا من غزوتهم قافلين فنزلوا الشام قربت اليها دابة لتركبها فصرعتها فماتت-
অর্থ: আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খালা উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। অতঃপর হঠাৎ মুসকি হাসি দিয়ে জাগ্রত হলেন। আমি বললাম, আপনি হাসছেন কেন? নবীজি বললেন: আমার উম্মতের কিছু লোককে আমার কাছে পেশ করা হল: তারা এই সবুজ সাগর পথে এমনভাবে আরোহন করবে যেমনি কোন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহন করে। তিনি বললেন: আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন নবীজি তার জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর তিনি পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন আবার পূর্বের ন্যায় জাগ্রত হলেন। উম্মে হারাম আবার বললেন: আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন নবীজি বললেন: তুমি প্রথম অভিযানে অন্তর্ভুক্ত হবে। আনাস রা বলেন: অতঃপর উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর স্বামী উবাদাহ বিন সামিত রা. এর সাথে অভিযানে বের হন। আর ইহা ছিল মুসলমানদের সাগর পথে প্রথম অভিযান মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে। অতঃপর যখন তারা উক্ত অভিযান থেকে কাফেলাবদ্ধ হয়ে ফিরছিলেন তখন তারা শামে অবতরণ করলেন। তখন উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা বাহন থেকে পড়ে গেলেন এবং শাহাদত বরণ করলেন। (বুখারি কিতাবুল জিহাদ ২৭৯৯)
উল্লেখিত হাদিসে সুষ্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, মুসলমানগণ সাগর পথে সর্বপ্রথম অভিযান করেছিলেন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে এবং সে অভিযানে উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহাও ছিলেন।
✦ উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন:
وقوله اول ماركب المسلمون البحر مع معاوية كان ذالك فى سنة ثمان وعشرين فى خلافة عثمان-
অর্থ: হাদিসে বর্ণিত ‘সাগর পথে মুসলমানদের প্রথম অভিযান, হয়েছিল উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে ২৮ হিজরিতে। (ফতহুল বারি ৬/২৩ পৃষ্ঠা)
✦ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী উমদাতুল ক্বারী গ্রন্থে বলেন:
ذكر معناه (اول جيش من امتى يغزون البحر) ارادبه جيش معاوية- وقال المهلب معاوية اول من غزا البحر وقال ابن جرير قال بعضهم كان فى سنة سبع وعشرين وهى غزوة قبرس فى زمان عثمان بن عفان رضى الله عنه- وقال الواقدى كان ذالك فى سنة ثمان وعشرين-
অর্থ: হাদিসে বর্ণিত ‘সাগর পথে আমার উম্মতের প্রথম অভিযান’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাহিনী। মুহাল্লাব বলেছেন: মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম সাগর পথে অভিযান পরিচালনা করেছেন। ইবনে জারির বলেছেন: কারো কারো মতে সে অভিযান হয়েছিল ২৭ হিজরি সনে। ইহাকে কাবরুসের যুদ্ধও বলা হয়। এ অভিযান হয়েছিল উসমান বিন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে।
ওয়াকিদী বলেছেন: এ অভিযান হয়েছিল ২৮ হিজরি সনে। (উমদাতুল ক্বারী কিতাবুল জিহাদ)
✦ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি তারিখুল খোলাফা গ্রন্থে বলেন:
وفى سنة سبع وعشرين غزا معاوية قبرس فركب البحر بالجيوش وكان معهم عبادة بن الصامت وزوجته ام حرام بنت ملحان الانصارى فسقطت عن دابتها فماتت شهيدة هناك وكان النبى صلى الله عليه وسلم اخبرها بهذا الجيش ودعالها- بان تكون منهم فدفنت بقبرس-
অর্থ: হিজরি ২৭ সনে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কাবরুস শহরে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে সাগর পথে আরোহন করেন। এ বাহিনীর সাথে উবাদাহ বিন সামিত এবং তাঁর স্ত্রী উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা আল আনসারি ও ছিলেন। তখন উম্মে হারাম স্বীয় বাহন থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন। রাসূলেপাক (ﷺ) তাকে এ বাহিনীর সংবাদ প্রদান করেছিলেন এবং তাঁর অন্তর্ভুক্তির জন্য দোয়াও করেছিলেন। অতঃপর তাকে কাবরুসেই দাফন করা হয়। (তারিখুল খোলাফা ১২৫ পৃষ্ঠা)
✦ হাফিজ ইবনে কাসির ‘বেদায়া ওয়ান নেহায়া’ গ্রন্থে বলেছেন:
ثم دخلت سنة ثمان وعشرين- فتح قبرس ففيها- وكان فتحها على يدى معاوية بن ابى سفيان- ركب اليه فى جيش كثيف من المسلمين ومعه عبادة بن الصامت وزوجته ام حرام بنت ملحان-
অর্থ: অতঃপর হিজরি ২৮ সন শুরু হল। এই বৎসরে সাগর পথে কাবরুস শহর বিজয় হয় এই অভিযানটি পরিচালিত হয়েছিল মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুমার নেতৃত্বে। মুসলমানদের বিরাট একটি বাহিনী উক্ত অভিযানে অংশ গ্রহণ করে। তাদের সাথে উবাদাহ বিন সামিত এবং তাঁর স্ত্রী উম্মে হারাম বিনতে মিলহানও ছিলেন। (বেদায়া ওয়ান নেহায়া)
উক্ত আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুষ্পষ্ট হয়ে গেল যে, সাগর পথে সর্বপ্রথম অভিযান হয়েছিল ২৭ হিজরি অথবা ২৮ হিজরিতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর যামানায়। অতএব সে অভিযানে এজিদের অন্তর্ভুক্তি গাজাখোরি গল্প বৈ কিছ্ইু নয়।
____________
কিতাব: কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অন্তর্ভুক্তি
লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন