হিমস শহরে প্রথম অভিযান কখন হয়েছিল এ ব্যাপারে সরাসরি হাদিসে কোন বর্ণনা নাই। তাই আমি তারিখ গ্রন্থ থেকে আলোচনা করব। দেখুন কয়েকটি তারিখের বর্ণনা:
✦ হাফিজ ইবনে কাসির বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এভাবে:
ثم دخلت سنة خمسة عشرة- قال ابن جرير قال بعضهم فيها مصر سعد بن ابى وقاص الكوفة دلهم عليها ابن بقيله- قال السعد ادلك على ارض ارتفعت عن البق وانحدرت عن الفلاة فدلهم على موضع الكوفة اليوم قال وفيها كانت وقعه مرج الروم وذالك لما انصرف ابو عبيدة وخالد من وقعة فحل قاصدين الى حمص حسب ما امربه امير المؤمنين عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه-
অর্থ: অতঃপর ১৫ হিজরি শুরু হল। ইবনে জারির বলেন: কেউ কেউ বলেছেন সে সময় সাদ বিন আবি ওয়াক্বাস কুফায় ছিলেন। তখন তিনি ইবনে বাকিলাহ নামক ব্যক্তির সাথে পরিচিত হলেন। তিনি সাদকে বললেন: আমি আপনাকে এমন একটি জায়গার সন্ধান দিব যা অন্যান্য জায়গা থেকে উচ্চ এবং মরুভূমি থেকে নিচু। অতঃপর তিনি তাদেরকে কুফার সন্ধান দিলেন এবং বললেন: এখানেই মারজে রোম অভিযান হয়েছিল।
ইহা তখনকার ঘটনা যখন আবু উবায়দাহ ও খালিদ ফাহল যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তারা আমিরুল মো’মিনন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নির্দেশক্রমে হিমস শহরের দিকে যাত্রা করেন। (বেদায়া ৯/৬৪৮ পৃষ্ঠা)
✦ অতঃপর ইবনে কাসির বর্ণনা করেন:
وقعة حمص الاولى: لما وصل ابو عبيدة فى اتباعه الروم المنهزمين الى حمص نزل حولها يحاصرها ولحقه خالد بن الوليد فحاصروا حصارا شديدا وذالك فى زمن البرد الشديد-
অর্থ: হিমসে প্রথম অভিযান: আবু উবায়দাহ যখন তাঁর বাহিনী নিয়ে রোমে পৌঁছলেন তখন তারা হিমস অভিমুখে রওয়ানা হলেন। অতঃপর খালিদ বিন ওয়ালিদ তার সাথে যোগদান করেন। মুসলমানগণ সেখানে কঠোর অবরোধ করেন। সে সময় প্রচন্ড শীত পড়েছিল। (বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ৯/৬৪৯ পৃষ্ঠা)
✦ আল্লামা ইবনুল আসির ‘আল কামিল ফিত তারিখ’ গ্রন্থে বলেন:
ثم دخلت سنة خمس عشرة- فى هذه السنة كانت الوقعة بمرج الروم- وكان سبب ذالك ان ابا عبيدة وخالد بن الواليد سار بمن معهما من فحل قاصدين حمص فنزلا على ذى الكلاع-
অর্থ: অতঃপর ১৫ হিজরি শুরু হল। এ বৎসরেই মারজে রোম হয়েছিল। এ কারণে আবু উবায়দাহ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ তাদের সাথীদেরকে নিয়ে ‘ফাহাল’ থেকে হিমসের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। অতঃপর তারা ‘যিলকিলা’ নামক স্থানে অবতরণ করেন। (আল কামিল ফিত তারিখ ৩/৩৩৮ পৃষ্ঠা)
✦ এর কয়েক লাইন পরে ইবনুল আসির আরো বর্ণনা করেন:
ذكر فتح حمص وبعلبك: فلما فرغ ابو عبيدة من دمشق سار الى حمص- فسلك طريق بعلبك فحاصرها فطلب اهلها الامان فامنهم وصالحهم وسار عنهم فنزل على حمص ومعه خالد- وقيل انما سار المسلمون الى حمص من مرج الروم-
অর্থ: হিমস ও বা’লা বাক্কা বিজয়ের বর্ণনা। অতঃপর আবু উবায়দাহ দামেস্কে অভিযান শেষ করে বা’লা বাক্কার পথ ধরে হিমসের দিকে রওয়ানা হলেন। অতঃপর তিনি সেখানে অবরোধ করলেন। তখন সেখানকার অধিবাসীগণ নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেন। অতঃপর তিনি খালিদকে সাথে নিয়ে সেখান থেকে হিমসে চলে গেলেন। কেউ কেউ বলেছেন: মুসলমানগণ মারজে রোম থেকেই সরাসরি হিমসে চলে গিয়েছিলেন। (আল কামিল ৩/৩৩৯ পৃষ্ঠা)
✦ ইমাম আবু জাফর আত তাবারী স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন:
ثم دخلت سنة خمس وعشرة وفى هذه السنة كانت الوقعة بمرج الروم وكان من ذالك ان ابا عبيدة خرج بخالد بن الوليد من فحل الى حمص-
অর্থ: অতঃপর ১৫ হিজরি প্রবেশ করল। এই বৎসরেই মারজে রোম নামক অভিযান সংঘটিত হয়েছিল। আর ইহা তখন হয়েছিল, যখন আবু উবায়দাহ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ ‘ফাহাল’ থেকে হিমসের দিকে রওয়ান হয়েছিলেন। (তারিখে তাবারী ৩/৫৯৯ পৃষ্ঠা)
সম্মানিত পাঠকবর্গ এ ব্যাপারে প্রায় সমস্ত তারিখ গ্রন্থেই একই রকম বর্ণনা এসেছে যে হিমস শহরে প্রথম অভিযান হয়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে ১৫ হিজরিতে। তার নেতৃত্বে ছিলেন আবু উবায়দাহ এবং খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। তখন পাপিষ্ট এজিদের জন্মই হয়নি। অতএব হিমস শহরে প্রথম অভিযানে এজিদের অন্তর্ভুক্তি কল্পনাকেও হার মানায়।
______________
কিতাব: কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে এজিদের অন্তর্ভুক্তি
লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন