ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৪১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নূর দ্বারা সৃষ্ট’ এ অর্থে বর্ণিত ও প্রচলিত সকল হাদীসই বানোয়াট।’’ এবার আমরা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি সম্পর্কিত সনদসহ কোনো বর্ণনা আছে কীনা তা অনুসন্ধান করে দেখবো, কারণ মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘নূরের বর্ণনাটাই তো নির্জলা জাল।’’
তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে যে উনার আক্বিদা কি এবং এ বিষয়ের কোন মতের হাদিস সহীহ! তিনি ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘তারপর তাঁর (আদম عليه السلام এর) বংশধরের (যার মধ্যে নবী ওলীগণও রয়েছেন) প্রত্যেককেই একফোঁটা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিও এভাবেই হয়েছে।’’
আফসোস! তিনি যদি রাসূল (ﷺ)-এর কে নুতফার তৈরী করার পক্ষে একটি দলিলও উপস্থাপন করতে পারলেন না বলে, শুধু মুখের বুলি উড়ানো ছাড়া আর তিনি কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারলেন না। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল আবদুল মালেক এবং তার সহচর মাওলানা মুতীউর রহমানের কথায় একটাই যুক্তি এবং ভিত্তি, তাহলো, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আদম (عليه السلام)-এর অনেক পরে দুনিয়ায় এসেছেন, তাই তাঁর সৃষ্টিও অন্যান্য মানবের ন্যায় নুতফার দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায়ই বিবেক সম্মত। অথচ কোরআন সুন্নাহ বলে এ আক্বিধা ধারণকারী নিজে গোমরাহ এবং অপরকে গোমরাহকারী। এবার আসল কথায় আশা যাক, পাঠকবর্গ! এ যুক্তি তখনই কার্যকর হবে যখন রাসূল (ﷺ)-এর শেষে প্রেরণ হওয়ার সাথে সাথে সৃষ্টিও শেষে হতো, কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত; কেননা তিনি সৃষ্টিতে সকল মানবের প্রথম এবং নবী হিসেবে মননীত হওয়ার দিক থেকেও প্রথম, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সবার শেষে। রাসূল (ﷺ) সমস্ত নবীর মধ্যে সৃষ্টিতে প্রথম নবী এবং এমনকি আদম (عليه السلام) মাটি পানির সাথে মিশ্রিত থাকাকালীন সময়েও তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে নবী, এ বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে, পাঠকবৃন্দের সেখানে আবার নজর দেবার অনুরোধ থাকবে। এবার আমরা প্রমাণের রাসূল (ﷺ) আদম عليه السلام এর আগে না পরে সৃষ্টি সে) আলোচনায় আসি।
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র উস্তাদ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) [ওফাত. ২৩০ হি.] একটি হাদিস সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে দুই ধারায় বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’ ৩৩
➥{ইমাম ইবনে সা‘দ, আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, শিফা শরীফ, ১/১১৪ পৃ. কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃ.।}
সনদ পর্যালোচনা:
❏ আহলে হাদিসদের এবং জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের ইমাম, ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) [ওফাত. ৭৭৪ হি.] এ হাদিস সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি অধিক দৃঢ় ও অধিক বিশুদ্ধ।’’ ৩৪
➥{ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.}
আপনারাই দেখুন ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এই হাদিসটির দুটি ধারায় বর্ণনা করেছেন আর প্রত্যেকটিই সনদই অনেক শক্তিশালী। হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর আরেকজন ছাত্রও এই হাদিসটি তার থেকে বর্ণনা করেছেন।
❏ ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وروى ابن إسحاق عن قتادة مرسلا قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، كنت أول الناس في الخلق وآخرهم في البعث
-‘‘ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) তিনি কাতাদা (رضي الله عنه) হতে মুরসাল হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’ ৩৫
➥{ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৮ পৃ.}
❏ ইবনে ইসহাক সহীহ মুসলিমের রাবী এবং সত্যবাদী।
(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৬৭ পৃষ্ঠা, ক্রমিক. ৫৭২৫)
বুঝা গেল কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে এই হাদিসটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
❏ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর চতুর্থ সূত্রটি ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) মারফূ মুত্তাসিল সনদে উল্লেখ করেন এভাবে-
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.
-‘‘তিনি যথাক্রমে...জাফর ইবনু আহমাদ ইবনে আসেম থেকে তিনি হিশাম ইবনু আম্মার তেকে তিনি ওয়ালীদ থেকে তিনি তার দুই উস্তাদ খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর থেকে তিনি তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি হাসান বসরী (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিওবা প্রেরিত হয়েছি (নবীদের ক্ষেত্রে) সবার শেষে।’’ ৩৬
➥{ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৪৮৮-৪৮৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০৬}
সনদ পর্যালোচনা:
এই সনদটিও সহীহ লিগাইরিহী; কেননা এই সনদের তাবেয়ী কাতাদার দুই ছাত্র খুলাইদ এর হাদিসের মান ‘হাসান’ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর এর হাদিসের মান ‘সহীহ’ পর্যায়ের।
খুলাইদ ইবনে দা‘লাজের গ্রহণযোগ্যতা:
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: هُوَ صَالِحٌ.
-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি।’’ ৩৭
➥{যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/১৯৬ পৃ. যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৬৬৩ পৃ. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৫৪ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ. }
❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وَقَال أَبُو حاتم الرازي : صالح.
-‘‘ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’ ৩৮
তার হাদিসের মান ‘হাসান’ বলে বুঝা যায়।
➥{ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.}
❏ তবে ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার দুটি সনদ সংকলন করেন; আর দুটোকেই সহীহ বলেছেন। যেমন-
حَدَّثَنَا مُكْرَمُ بْنُ أَحْمَدَ الْقَاضِي، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الْأَبَّارُ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَرْكُونُ الدِّمَشْقِيُّ، ثنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ أَبُو عَمْرٍو السَّدُوسِيُّ، أَظُنُّهُ عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ...... هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘...খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি আবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে..........ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন, এই সনদটি সহীহ।’’ ৩৯
➥{ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/১৬২ পৃ. হা/৪৭১৫, তিনি তার আরেকটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন। দেখুন-ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৮৫ পৃ. হা/৬৯৫৯ }
এবার আমরা তার সাথী ‘সাঈদ’ সম্পর্কে জানবো।
কাতাদার দ্বিতীয় ছাত্র সাঈদ ইবনে বাশিরের গ্রহণযোগ্যতা:
হযরত কাতাদার অপর ছাত্র ‘সাঈদ ইবনু বাশীর বাছরী’ এর হাদিস সর্বনিম্ন ‘সহীহ’ পর্যায়ের। কেনান তিনি হাফেযুল হাদিস ছিলেন।
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، الصَّدُوْقُ، الحَافِظُ
-‘‘তিনি হাদিসের ইমাম, মুহাদ্দিস, সত্যবাদী, হাফেযুল হাদিস ছিলেন।’’ ৪০
➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ.
-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার স্থান হচ্ছে সত্যবাদী বলা।’’ ৪১
➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ بَقِيَّةُ: سَأَلْتُ شُعْبَةَ عَنْ سَعِيْدِ بنِ بَشِيْرٍ، فَقَالَ: ذَاكَ صَدُوْقُ اللِّسَانِ.
-‘‘বাকিয়্যাত তিনি ইমাম শুবা (رحمة الله) কে সাঈদ ইবনে বাশীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি সত্যবাদী।’’ ৪২
➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }
❏ তবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
قال بقية عن شعبة ذاك صدوق اللسان وفي رواية صدوق اللسان في الحديث
-‘‘তার থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী।’’ ৪৩
➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
قال عثمان الدارمي سمعت دحيما يوثقه
-‘‘হযরত উসমান দারেমী (رحمة الله) বলেন, আমি আমি দুহাইম (رحمة الله) কে তাকে সিকাহ বলতে শুনেছি।’’ ৪৪
➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال أبو بكر البزار هو عندنا صالح ليس به بأس.
-‘‘ইমাম আবু বকর বাজ্জার (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট তিনি সৎ হাদিস বর্ণনাকারী, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’৪৫
➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}
❏ ইমাম যাহাবী আরও উল্লেখ করেন-
وَقَالَ مَرْوَانُ الطَّاطَرِيُّ: سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ يَقُوْلُ: حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بنُ بَشِيْرٍ، وَكَانَ حَافِظاً. وَقَالَ دُحَيْمٌ: يُوَثِّقُونَهُ، كَانَ حَافِظاً.
-‘‘মারওয়ান আত-তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়ানাকে বলতে শুনেছি, সাঈদ ইবনে বাশীর হাফেযুল হাদিস ছিলেন। ইমাম দুহাইম (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ, হাফেযুল হাদিস।’’৪৬
➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }
❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
ولما ذكره ابن شاهين في الثقات قال: قال شعبة بن الحجاج: هو مأمون خذوا عنه. وذكره الحاكم في الثقات وخرج حديثه في مستدركه، وقال: كان إمام أهل الشام في عصره إلا أن الشيخين لما يخرجاه.
-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ইমাম শু‘বা ইবনে হাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, তিনি নেককার আমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতাম, ইমাম হাকেম (رحمة الله) তাকে সিকাহ তে রেখেছেন এবং মুস্তাদরাকে তার হাদিস সংকলন করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শাম দেশের তৎকালিন যুগের ইমাম ছিলেন যদিও বুখারী, মুসলিমে তার হাদিস সংকলন হয়নি।’’ ৪৭
➥{ইমাম ইবনে শাহীন, তারিখু আসমাউ সিকাত, ১/৯৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৩২, মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال البزار: سعيد بن بشير عندنا صالح ليس به بأس حسن الحديث
-‘‘ইমাম বাজ্জার বলেন, সাঈদ ইবনে বাশার আমাদের নিকট সৎ ব্যক্তি, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। তার হাদিস ‘সুন্দর’ পর্যায়ের।’’ ৪৮
➥{ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
ولما ذكره ابن خلفون في الثقات
-‘‘ইমাম ইবনে খালফুন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ ৪৯
➥{ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}
❏ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার একটি হাদিস সংকলন করেন লিখেন-
حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ مُحَمَّدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ الْفَقِيهُ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الدَّارِمِيُّ، ثنا أَبُو الْجُمَاهِرِ مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ التَّنُوخِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ..... هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَسَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ إِمَامُ أَهْلِ الشَّامِ فِي عَصْرِهِ إِلَّا أَنَّ الشَّيْخَيْنِ لَمْ يُخَرِّجَاهُ [التعليق - من تلخيص الذهبي] صحيح
-‘‘...সাঈদ বিন বাশীর তাবেয়ী কাতাদা থেকে তিনি হাসান বসরী হতে তিনি সামুরা ইবনে জুনদুব (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন,.....। ইমাম হাকেম বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ। সাঈদ ইবনে বাসীর শাম দেশের তার সময়ের হাদিসের ইমাম ছিলেন, যদিও শাইখাইন তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) একমত পোষণ করে বলেন, এটি সহীহ।’’ ৫০
➥{ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০৩ পৃ. হা/৯৯৫, তিনি এ হাদিসকে সহীহ বলেছেন আর ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। আল-মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ২/১২৫ পৃ. হা/২৫৩৬, ২/১৬২ পৃ. হা/২৫১, ৩/১৩০ পৃ. হা/৪৬১৭, ৩/৭৪৫ পৃ. হা/৬৭০৯, ৪/১৪১পৃ. হা/৭১৬২, ৪/১৭৭ পৃ. হা/৭২৭৯, হা/৮১০৪, ৪/৫০৬পৃ. হা/৮৪২১}
❏ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ইমাম তাবরানী, বাগভী (رحمة الله)সহ একজামাত মুহাদ্দিগণ সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ، ثَنَا أَبُو الْجُمَاهِرِ، ثَنَا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ قَالَ كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, আমি সৃষ্টিতে সমস্ত নবীদের পূর্বে এবং প্রেরণের দিক দিয়ে নবীদের শেষ।’’ ৫১
➥{ইমাম তাবরানী, মুসনাদিশ শামেয়্যীন, ৪/৩৪ পৃ. হা/২৬৬২, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ৩/২৮২ পৃ. হা/৪৮৫০, ৭১৯৫, ইমাম বাগভী : মাআলিমুত তানজীল : ৩/৫০৮ পৃ., আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৩/৪৭০ পৃ., আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১২/১৫৪ পৃ., আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর : ৬/৫৭০ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা : ১/৫পৃ. হা/১, ইমাম ইবনে আদি : আল কামিল : ৩/৩৭৩ পৃ.}
উপরের হাদিসে এবং এ হাদিসে কোনো প্রার্থক্য নেই, কেননা সকল নবীই মানব জাতিতে দুনিয়ায় এসেছেন। এ হাদিসের সনদও সহীহ, সনদে রাবী ‘সাঈদ বিন বশীর’ রয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বে আলোকপাত করেছি।
পর্যালোচনা:
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের সহীহ হাদিসের আলোকে দীবালকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মহান রব তা‘য়ালা সমস্ত নবী-রাসূল এবং মানবের মধ্যে প্রথম যাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)। তাই তাঁর সৃষ্টিকে আদম (عليه السلام)-এর পরে আগমনকরা বণী আদমের ন্যায় নাপাক নুতফার তৈরী বলা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়, যেমনটি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের মত কতিপয় দুনিয়াধারী জাহেল আলেমগণ করেছেন। এবার আমরা মূল আলোচনায় আসবো যে, সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ বিষয়ে সনদ ভিত্তিক কোনো বর্ণনা রয়েছে কিনা।
হাদিস নং-৪
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سِيمَاءَ الْمُقْرِئُ، قَدِمَ عَلَيْنَا حَاجًّا، حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخَلِيلُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْخَلِيلِ الْقَاضِي السِّجْزِيُّ، أَنْبَأَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে, হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’ ৫২
➥{ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩, আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬, আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ., র্সারাজ, হাদিসাহ, হাদিস নং.২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখালিসিয়্যাত, ৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০, সালিম র্জারার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭১ পৃ., ইফরাকী, মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক, ২/১১১ পৃ.}
পর্যালোচনা:
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এর কে সৃকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে!
❏ এ বিষয়ে মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
-‘‘আলেমগণই কেবল আল্লাহকে ভয় করেন।’’
(সূরা ফাতির, আয়াত নং-২৮)
এ হাদিস থেকে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) কে নূর রূপেই দেখেছিলেন, আজ উনার কতিপয় মানব রূপী সন্তানগণ তাঁর বিপরীত আক্বিদা পোষণ করেন।
সনদ পর্যালোচনা:
❏ এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري
-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’৫৩
➥{আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২}
আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন। আমি বলবো, এ রাবী সিকাহ এবং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য।
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وقال عثمان الدارمي سألت بن معين عن الربيع فقال ليس به بأس
-‘‘উসমান দারেমী (রহ.) এ রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله)‘র কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ৫৪
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং.৪৯ }
❏ উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-
وقال عمرو بن علي سمعت عفان يقول كان مبارك معتبرا
-‘‘হযরত আমর বিন আলী বলেন, আমি শায়খ আফ্ফান ইবনে মুসলিম (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, মোবারকের তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’ ৫৫
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৭/১৮৪ পৃ.}
❏ ইমাম ইবনে হাজার আরও উল্লেখ করেন- وذكره بن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’ ৫৬
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}
❏ উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-
وقال العجلي لا بأس به. وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة
-‘‘ইমাম ইজলী বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আবু যারওয়া বলেন, তিনি অনেক হাদিসে তাদলীস করতেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে যখন (حدثنا) বলে বর্ণনা করবেন অর্থাৎ তাদলীস করবেন না তখন তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ ৫৭
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}
তাই প্রমাণিত হল এ হাদিস সহীহ, কেননা তিনি এ হাদিসে তাদলীস করেননি।
❏ এমনকি আলবানীও লিখেছে-
والذي عليه المحققون أنه صدوق لا بأس به؛ إذا صرح بالتحديث
-‘‘তাঁর বিষয়ে মুহাক্কিকগণ বলেছেন, নিশ্চয় তিনি সত্যবাদীর অর্ন্তভুক্ত, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে যখন তিনি তাদলীসবিহীন বর্ণনা করবেন।’’ ৫৮
➥{আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, ১৩/১০৮৩ পৃ. হা/৬৪৮২}
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী আরও উল্লেখ করেন-
وقال بن أبي خيثمة عن بن معين ثقة
-‘‘মুহাদ্দিস ইবনে আবি খায়ছামা তিনি ইমাম ইবনে মাঈন থেকে বর্ণনা করেন যে, মোবারাক সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’ ৫৯
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}
তাই প্রমাণিত হল সনদটি সহীহ তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ধোঁকাবাজদের চিনে রাখুন!
‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২১৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক আমার বিরোদ্ধে লিখতে গিয়ে এক চরম পর্যায়ের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন, তিনি লিখেন-‘‘এ ক্ষেত্রে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত হাওয়ালা দিয়েছেন তার সবগুলোই সনদহীন।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার যদি একটুও আল্লাহর ভয় থাকতো এবং লজ্জা থাকলে তিনি কি এ কথা লিখতে পারতেন! ইতিহাস সাক্ষী এ পৃথিবীতে যত ধর্ম ব্যবসায়িক ছিল তাদের কারোই আল্লাহর ভয় এবং লজ্জা কোনোটিই ছিল না।
হাদিস নং-৫
❏ ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-
وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة
-‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’
(ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.)
পর্যালোচনা:
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিসটি ইমাম ইবনে মোবারক (رحمة الله) সংকলন করেছেন এ হাদিসের সনদ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন’ গ্রন্থ দেখুন।
হাদিস নং-৬
❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর তাফসীরে সূরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত-
قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ
-‘‘হে হাবিব! আপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম হতাম।’’
❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উপরের হাদিসের শাওয়াহেদে মুরসাল সূত্র উল্লেখ করেন এভাবে-
قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء
-‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক বলেন, সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ্ ‘নূরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’ ৬০
➥{ইসমাঈল হাক্কী : রুহুল বায়ান : ৮/৩৯৬ পৃ., সূরা যুখরুফ, আয়াত.৮১}
এখন হয়তো কারো প্রশ্ন জাগতে পারে এ নূর থেকে যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা কে দিল!
❏ বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উল্লেখ করেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’ ৬১
➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯}
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন