পবিত্র শবে বরাত হাদিসের আলোকে (২য় পর্ব)


৪নং হাদিসঃ


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ قَالَ: أَخْبَرَنَا الحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: فَقَدْتُ النَّبِيَّ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَخَرَجْتُ أَطْلُبُهُ، فَإِذَا هُوَ بِالْبَقِيعِ رَافِعٌ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ. فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ؟ قَالَتْ، قَدْ قُلْتُ: وَمَا بِي ذَلِكَ، وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعَرِ غَنَمِ كَلْبٍ


-‘‘উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন,  এক রাতে আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) কে হারিয়ে ফেললাম। অর্থাৎ- মধ্যরাতে তাঁকে আমি বিছনায় দেখতে পেলাম না। এ সময় ঘর ছেড়ে গিয়ে তিনি জান্নাতুল বাকীতে অবস্থান করতে ছিলেন। (এবং এ সময় মুনাজাত রোনাজারীতে মশগুল ছিলেন) আমাকে লক্ষ করে তিনি বলেন তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ্ ও রাসূল তোমার প্রতি জুলুম করেছেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি ধারণা করেছি আপনি আপনার পবিত্র বিবিদের থেকে কারো গৃহে অবস্থান করতেছেন। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা অর্ধ শাবান (শবে বরাত) এর রজনীতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন (রহমত নেমে আসে) এরপর বনী কালীবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করেন।’’  ৩৬

➥{(১) ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৩/১১৫ পৃ. হা/৭৩৯ (২) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল  : আল-মুসনাদ : ১৮/১১৪ : হা/২৫৮৯৬ (৩) ইমাম আবি শায়বাহ : আল-মুসান্নাফ : ১০/৪৩৮ : হা/৯৯০৭ (৪) ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান :১/৪৪৪ পৃ. হা/১৩৮৯ (৫) ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ৪/১২৬ : হা/৯৯২ (৬) ইমাম ইবনে মুনযিরী : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০ পৃ. হা/২৪ (৭) ইমাম ইবনে ইসহাক রাহবিয়্যাহ : আল মুসনাদ : ২/৩২৬ পৃ. হা/৮৫০ ও ৩/৯৭৯ পৃ. হা/১৭০০ (৮) শায়খ খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/২৫৩ পৃ:  হা/১২৯৯ (৯) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল ওয়াক্ত,  ১/১৩০ পৃ. হা/২৮ (১০) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ৩/৩৪০ পৃ: হা/১২৯৯ (১১) ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১৬/১২৬-১২৭ পৃ.(১২) সুয়ূতি : আল-জামেউস সগীর : ১/১৪৬ পৃ. হা/১৯৪২ (১৩) আব্বাস আল-মাক্কী ফিকহী, আখবারুল মক্কা, ৩/৬৬ পৃ. হাদিস,  ১৮০৬ ও ১৮৪০ (১৪) শায়খ ইউসুফ নাবহানী,  ফতহুল কাবীর, ১/১৩৯ পৃ. হা/১৪২০ (১৫-১৬) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৩/৪৬৪ পৃ. হা/৭৪৫০,  ও ১২/৩১৪পৃ. হাদিস,  ৩৫১৭৯ (১৭) মুত্তাকী হিন্দী, ইকমাল. ১২/৩১৫ পৃ. হা/৩৫১৮,  (১৮) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৫ পৃ. হাদিস,  ৩৫১৮৪ (১৯) সুয়ূতি, জামেউস সগীর,  ১/১৬৬৭ পৃ. হা/১৬৬৭ ও জামিউল আহাদিস,  ৩/৪৮৫ পৃ. হা/২৬২৪ (১৩) আলবানী : দ্বঈফু মিশকাত : হা/১২৯৯, দ্বঈফু জামে, হা/৬৫৪,  তিনি বলেন সনদটি দ্বঈফ।}



সনদ পর্যালোচনা


❏ অপরদিকে ইমাম তিরমিযী  উক্ত হাদিসটি বর্ণনার পর বলেন,


وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ


-‘‘ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন,  এ পরিচ্ছেদে (এ বিষয়ে) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।’’  ৩৭

➥{তিরিমিযী,  আস্-সুনান, ৩/১১৫পৃ. হা/৭৩৯, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩/৩৬৫ পৃ. হা/৭৩৯}



❏ এ হাদিসের সনদের কোন রাবীর বিষয়ে কোন সমস্যা নেই, শুধু ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন যে-


وقَالَ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ عُرْوَةَ، وَالحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ.


-‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) বর্ণনাকারী উরওয়া (রহ.) হতে কিছুই শুনেনি, আর হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত (رحمة الله) ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) হতে কিছুই শুনেনি।’’  ৩৮

➥{তিরিমিযী,  আস্-সুনান, ৩/১১৫ পৃ. হা/৭৩৯}


বুঝা গেল এখানে দুজনে তাদলীস করেছেন সে কারণেই ইমাম বুখারী  এ সনদকে যঈফ বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) নিজেই একজন তাবেয়ী তাই এটা মুরসাল বলা হবে।


❏ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ফাকেহী (ওফাত. ২৭২ হি.) আরেকটি সূত্র এভাবে সংকলন করেন, যেখানে উরওয়া নেই। যেমন -


حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ عَمْرٍو الْجَنْبِيُّ، قَالَ: ثنا أَبِي عَمْرُو بْنُ هَاشِمٍ أَبُو مَالِكٍ الْجَنْبِيُّ، قَالَ: ثنا الْحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَأَةَ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘ হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত তিনি তার শায়খ তাবেয়ী মেকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেছেন, আর তিনি এটি তার শায়খ কাসির ইবনে র্মুরাহ হাদ্বরামী হতে তিনি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন।’’


(তথ্য সূত্র: ইমাম ফাকেহী, আখবারুল মাক্কা, ৩/৬৬ পৃ. হা/১৮৩৯)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে এ সনদ আর উপরের সনদ এক নয়, কেননা হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত এখানে তার উস্তাদের নাম প্রকাশ করেছে, আর এ সনদে রাবী উরওয়া-ই নেই। রাবী হাজ্জাজ মিকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা প্রমাণিত।


❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) লিখেন-


وَرَوَى عَنْ: عِكْرِمَةَ، وَعَطَاءٍ، وَالحَكَمِ، وَنَافِعٍ، وَمَكْحُوْلٍ


-‘‘তিনি তাবেয়ী ইকরামা, আতা ইবনে রাবাহ, হাকাম, না‘ফে এবং মিকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করতেন।’’


(ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৭/৬৯ পৃ. ক্রমিক.২৭)


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম উপরের হাদিসের ন্যায় আরেকটি সূত্র সংকলন করেন এভাবে-


أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: ...... فَقَالَ:  أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ ، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ


-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। .......এক পর্যায়ে রাসূল (ﷺ) মা আয়েশা (رضي الله عنه) কে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি জান আজ কোন রাত? তিনি জবাবে বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেন, আজ হল শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত, এ রাতে মহান রব ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, রহমত প্রার্থনাকারীদের প্রতি রহমত নাযিল করেন, আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন,  যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।’’


(বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৩৬১ পৃ. হা/৩৫৫৪, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৭৪ পৃ. হা/১৫৪৯, পরিচ্ছেদ: التَّرْغِيب فِي صَوْم شعْبَان )



সনদ পর্যালোচনা:


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি সংকলন করে লিখেন- قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ -‘‘আমি (বায়হাকী) বলি, এটি মুরসাল, তবে সনদ শক্তিশালী।’’


(বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৩৬১ পৃ. হা/৩৫৫৪)


❏ ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) এ হাদিস সংকলন করে লিখেন-


رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ من طَرِيق الْعَلَاء بن الْحَارِث عَنْهَا وَقَالَ هَذَا مُرْسل جيد


-‘এ সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী।’’


(ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৭৪ পৃ. হা/১৫৪৯)


❏ তাই আহলে হাদিসদের সমর্থক মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী লিখেন- هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ -‘‘এটি মুরসাল, তবে শক্তিশালী।’’ 


(মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ৩/৩৬৬ পৃ.)


❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-


وَأخرج الْخَطِيب فِي رُوَاة مَالك عَن عَائِشَة: سَمِعت النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: يفتح الله الْخَيْر فِي أَربع لَيَال لَيْلَة الْأَضْحَى وَالْفطر وَلَيْلَة النّصْف من شعْبَان ينْسَخ فِيهَا الْآجَال والأرزاق وَيكْتب فِيهَا الْحَاج وَفِي لَيْلَة عَرَفَة إِلَى الْأَذَان .


-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) সংকলন করেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, চার রাতে খায়ের বরকতের দরজা খুলে দেয়া হয়, ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতে, ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের রাতে, (শবে বরাতের) রজনীতে আয়ূ এবং রিযিক নির্ধারণ করা হয়। এ রাতে কে হজ্জ করতে পারবে তাও লিপিবদ্ধ করা হয়। রহমতের দরজার খুলার আরেকটি সময় হল আরাফার রাত থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত।’’


(ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে আদ-দুররুল মানসুর, ৭/৪০২ পৃ.)


পরিশেষে বলতে চাই, অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত, অপরদিকে তিরমিযির সূত্রকে অন্য সূত্র শক্তিশালী করেছে, সব মিলিয়ে এ বিষয়ক মা আয়েশা (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।



৫নং হাদিস


حَدَّثَنَا الْقَاضِي أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: ثنا شُعَيْبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّبَيْلِيُّ، ثنا أَزْهَرُ بْنُ الْمَرْزُبَانِ، ثنا عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ أَبُو خُلَيْدٍ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يَخَامِرَ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍؓ، عَنِ النَّبِيِّ - ﷺ- قَالَ:يَطَّلِعُ اللَّهُ إِلَى جَمِيعِ خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ-


-‘‘হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা শাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ (শবে বরাত) এর রাতে সমস্ত মাখলুকাতের দিকে রহমতের নজরে তাকান। সমস্ত মাখলুকাতকে আল্লাহ্ তা‘য়ালা মাফ করে দিবেন। তবে মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত।’’  ৩৯

➥{ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/২২২ পৃ. (২) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৬০ পৃ. হা/৩৫৫২ এবং ৬৬২৮ (৩) ইমাম ইবনে মুনযিরী : তারগীব ওয়াত্তারহীব : ২/২২ হা/১৫১৭, দারুল ইবনে হায়সামী, মিশর,  (৪) ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১/১৪২ পৃ.: হা/২১৫ (৫) ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১২/৪৮১ পৃ. : হা/৫৬৬৫ (৬) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে ওয়াক্ত, ১/১১৮পৃ. হা/২২ (৭) ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৭/৩৬ পৃ. হা/৬৭৭৬ (৮) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ. হাদিস,  ১২৯৫৬ (৮) আলবানী : সহিহুত তারগীব : হা/১৫১৭, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান, সহীহ (৯) ইবনে আছিম,  আস্-সুন্নাহ,  ১/২২৪পৃ. হা/৫১২ (১০) ইবনে আসাকীর, তারীখে দামেস্ক,  ৫৪/৯৭ পৃ. (১১) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর,  ২০/১০৮ পৃ. হা/২১৫ (১২-১৩) ও মুসনাদিস্-শামীন, ১/১২৮ পৃ. হাদিস,  ২০৩ও ৪/৩৬৫পৃ. হাদিস,  ৩৫৭০ (১৪) আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/১৯১ পৃ. (১৫) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৯/২৪ পৃ. হা/৬২০৪ (১৬-১৮) সাজারী, তারতীবুল আমালি,  ১/৩৭২পৃ. হাদিস,  ১৩২০ ও ২/৪৫পৃ. হাদিস,  ১৫২৫ ও ২/১৪০ পৃ. হা/১৮৮১ (১৯) হাইসামী, মাওয়ারিদুয্-যামান,  ১/৪৮৬পৃ. হা/১৯৮০, (২০) দারাকুতনী, আল-নূযুল,  ১/১৫৮ পৃ. হাদিস,  ৭৭, (২১) মিয্যী, তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ, ৬/৪২০পৃ. হাদিস,  ৯০০৬ (২২) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল,  ৩/৪৬৮ পৃ. হা/৭৪৬৪ (২৩) সালিম র্জারার, ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৫/৫১৭ পৃ. হাদিস,  ৫০৭২ (২৪) ইবনে কাসীর,  জামিউল মাসানিদ,  ৭/৫৩০ পৃ. হা/৯৬৯৭ (২৫) আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুল সহীহাহ, ৩/১৩৫ পৃ. হাদিস,  ১১৪৪,  তিনি বলেন, সনদটি সহীহ।}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন :


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالْأَوْسَطِ وَرِجَالُهُمَا ثِقَاتٌ.


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী  তার ‘মু’জামুল কাবীর’ ও ‘মু’জামুল আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; উভয় কিতাবের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ৪০

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ:}



❏ আহলে হাদিস নাসীরুদ্দীন আলবানী এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-


حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق


-‘‘এ হাদিসের সনদটি সহীহ, বিভিন্ন এক জামাত সাহাবায়ে কিরাম থেকে এটি বর্ণিত।’’


(আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসিস সহীহ, ৩/১৩৫ পৃ. হা/১১৪৪)


❏ তিনি আরও লিখেছেন-


فإن رجاله موثوقون، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد  (৮ / ৬৫) :  رواه الطبراني في  الكبير  و  الأوسط ورجالهما ثقات


-‘‘নিশ্চয় এ সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ এবং ইমাম হাইসামী (رحمة الله) তার মাযমাউয-যাওয়াইদ গ্রন্থে বলেছেন, উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী  তার ‘মু’জামুল কাবীর’ ও ‘মু’জামুল আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; উভয় কিতাবের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহহা, ৩/১৩৫ পৃ. হা/১১৪৪)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তথাকথিত আহলে হাদিসগণ তারা তাদের ইমামকেই মানে না, আমরা তাদেরকে কে কিভাবে মানতে পারি!


❏ মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি উল্লেখ করেন-


وَقَالَ مُحَمَّد بن عبد الْبَاقِي الزّرْقَانِيّ فِي شرح الْمَوَاهِب اللدنية للقسطلاني عِنْد ذكر حَدِيث يطلع الله لَيْلَة النّصْف من شعْبَان فَيغْفر لجَمِيع خلقه الا لمشترك اَوْ مُشَاحِن وَنقل الْقُسْطَلَانِيّ عَن ابْن رَجَب ان ابْن حبان صَححهُ فِيهِ رد على قَول ابْن دحْيَة لم يَصح فِي لَيْلَة نصف شعْبَان شَيْء الا ان يُرِيد نفي الصِّحَّة الاصطلاحية فان حَدِيث معَاذ هَذَا حسن لَا صَحِيح


-‘‘আল্লামা মুহাম্মদ বি আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) তার শারহুল মাওয়াহিব গ্রন্থে  শবে বরাত সম্পর্কিত হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিস যেখানে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, শবে বরাতে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ......প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে দাহিয়াহ  বলেছেন শবে বরাত সম্পর্কিত ‘কোনো হাদিসই সহীহ নয়’ (আল্লামা জুরকানী বলেন), নিশ্চয়ই সহীহ হওয়া নিষেধ দ্বারা উসূলে হাদিসের পারিভাষায় হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি ‘হাসান’ হওয়া প্রমাণিত, তবে (সহীহ নয় শব্দ দ্বারা) সহীহ লিজাতিহী নয় (উদ্দেশ্য)।’’


(লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৭ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১০/৫৬১ পৃ.)


আমাদের কতিপয় আহলে হাদিসগণ রাবী ‘আবু খুলাইদ’ সম্পর্কে বলে থাকেন তিনি নাকি যঈফ। আমি বলবো, যে এ কথা বলবে, সে আমার মনে হয় কখনো আসমাউর রিজালের কিতাব পড়েই নি।


❏ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ, ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর উস্তাদ, ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


وَقَال أَبُو عَلِي النيسابوري الْحَافِظ، وأَبُو بَكْر الخطيب: ثقة وذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات


-‘‘ইমাম আবু আলী নিশাপুরী  এবং খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে তার সিকাহ রাবীর গ্রন্থে অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’


(মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১৯/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৩৭৭২, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৬৬ পৃ. ক্রমিক. ২০০)


❏ তারা যখন উক্ত রাবী যঈফ প্রমাণ করতে পারেন না, তখন বলেন, তাবেয়ী মেকহুল শামী (رحمة الله)-এর সাথে তাঁর শায়খ ‘ইমাম মালেক ইবনে ইয়াখামীর’ (رحمة الله)-এর সাথে সাক্ষাত ঘটেনি।


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-


روى عنه معاوية بحضرته. وحديثه عنه، عن معاذ في صحيح البخاري: وروى عنه أيضا ابناه: عبد اللَّه، وعبد الرحمن: وعمير بن هانئ، وجبير بن نفير، وشريح بن عبيد، ومكحول


-‘‘ইমাম মালেক ইবনে ইয়াখামীর (رحمة الله) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন, ........শুরাই ইবনে উবায়দ এবং মিকহুল শামী।’’


(ইবনে হাজার, আল-ইসাবা, ৫/৫৬৩ পৃ.)


❏ ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) লিখেছেন-


وروى عنه معاوية بن أبي سفيان وجبير بن نفير ومكحول وخالد بن معدان


-‘‘তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন, .......মেকহুল শামী এবং খালেদ ইবনে মা‘দান।’’

(ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৬/৫১৮ পৃ. ক্রমিক. ৭১৯৩)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাই প্রমাণিত হলো যে, এ হাদিসটি সহীহ তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।


৬ নং হাদিস:


❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَالِكٍ قَالَ: نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ قَالَ: نا عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ أَوْ عَمِّهِ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ-: إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ، إِلَّا مَا كَانَ مِنْ مُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ لِأَخِيهِ. -


-‘‘হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  যখন ১৫ই শাবান রাত (শবে বরাত) তখন আল্লাহ্ পৃথিবীর আকাশে রহমতের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং সকল শ্রেণীর বান্দাদের ক্ষমা করেন, একমাত্র মুশরিক ও মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীকে ছাড়া।’’  ৪১

➥{ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ১/২০৬পৃ : হা/১০৩ এবং ১/১৫৭ পৃ. হা/৮০ (২) ইমাম ইবনে মুনযিরী : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৩৮৭ পৃ.(৩) ইমাম ইবনে আদি : আল-কামিল : ৫/১৯৪৬ পৃ. (৪) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৩৮০ : হা/৩৮২৭ (৫) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয  যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ: হাদিস,  ১২৯৫৬ (৬) হাইসামী,  কাশফুল আশতার, ২/৪৩৫ পৃ. হাদিস,  ২০৪৪ (৭) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৬পৃ. হাদিস,  ২৬২৫}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন,


رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ، ذَكَرَهُ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ فِي الْجَرْحِ وَالتَّعْدِيلِ، وَلَمْ يُضَعِّفْهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার বর্ণনা করেছেন, সনদে ‘আবদুল মালিক ইবনে আবদুল মালিক’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) ‘আল জরাহু ওয়া তা’দিল’ গ্রন্থে তার জীবনী আলোচনা করেছেন, তবে তাকে কেউ দুর্বল বলেনি, এছাড়া বাকী সব বর্ণনাকারীও সিকাহ বা বিশুদ্ধ।’’  ৪২

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৮/৬৫ পৃ}



❏ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম মোবারকপুরী ইমাম মুনযিরের রায়কে এভাবে বর্ণনা করেন-


أَخْرَجَهُ الْبَزَّارُ وَالْبَيْهَقِيُّ بِإِسْنَادٍ لَا بَأْسَ بِهِ كَذَا فِي التَّرْغِيبِ وَالتَّرْهِيبِ لِلْمُنْذِرِيِّ فِي بَابِ التَّرْهِيبِ مِنَ التَّهَاجُرِ


-‘‘হাদিসটি ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, সনদে কোন অসুবিধা নেই। এমনটি ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীবে এমনটি উল্লেখ করেছেন।’’  ৪৩

অতএব বুঝা গেল, হাদিসটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।

➥{মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৩৬৫ পৃ. হা/৭৩৯}


━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন