পবিত্র শবে বরাত হাদিসের আলোকে (১ম পর্ব)


১নং হাদিস পর্যালোচনা:


حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَنْبَأَنَا ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا، فَإِنَّ اللهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ وفى رواية حتى تطلع الشمس-


-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের চৌদ্দ তারিখ আসবে, সে রাতে তোমরা কিয়াম করবে (নামায ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে) এবং দিনে রোযা রাখবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালার রহমত এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন,  কেউ আছ কি? ক্ষমা চাইলে আমি গুনাহ ক্ষমা করে দেবো। কেউ রোগাগ্রস্ত আছ কি? (রোগ মুক্তি প্রার্থনা করলে) আমি আরোগ্য দান করব। কেউ রিযিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাকে রিযিক (জীবন উপকরণ) দেব। কেউ আছ কি? কেউ আছ কি? এভাবে ফযর পর্যন্ত ঘোষণা আসতে থাকে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে সূর্যাদোয় পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে।’’  ২৯

➥{ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : ১/৪৪৪ : হা/১৩৮৮ (২) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৪ পৃ. হা/৩৮২২ (৩) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল ওয়াক্ত : হা/৩৩ (৪) দায়লামী : আল ফিরদাউস : ১/২৫৯ : হা/১০০৭ (৫) ইমাম মুনযির : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৭৫ : হা/১৫৫ (৬) ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/২৪৫পৃ. : হা/১২৩৩ (৭) আল্লামা ইমাম আবু বকর কেনানী : মিসবাহুয যুজ্জাহ: ২/১০ পৃ. হা/৮০ (৮) আল্লামা আবু বকর কেনানী : মিসবাহুয যুজ্জাহ: ২/১০ : হা/৪৯১ (৯) মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ৩/১৯৫ : হা/১৩০৮ (১০) সুয়ূতি : তাফসীরে র্দুররে মানসূর, : ৭/৪০২ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত (১১) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : আশিআতুল লুমআত : ৪/২১২ পৃ: হা/১২৩৩ (১২) ইমাম তিব্বী : শরহে মেশকাত : ৩/৪৪৮ পৃ: হা/১২৩৩ (১৩) ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১৬/১২৬-১২৭ পৃ.(১৪) ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : হা/১৩৮৮ (১৫) ইমাম তায়মী ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াত তারহীব,  ২/৩৯৭ পৃ. হা/১৮৬০ (১৬) ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়া, ১/২৪০ পৃ. শাওকানী,  ফাওয়াইদুল মাওদ্বুআত, ১/৫১ পৃ. (১৭) মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল, মুসনাদে জামে, ১৩/২১৬ পৃ. হা/১০০৭০ (১৮) বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/৮২ পৃ. (১৯) মোবারকপুরী, মের‘আত, ৪/৩৪৩ পৃ. হা/১৩১৬ (২০) ইবনে জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়্যাত, ২/৭১ পৃ. হা/৯২২ (২১) তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১/৪৫ পৃ. (২২) আবদুল হাই লাখনৌভী, ১/৮১ পৃ. (২৩) কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৩০০ পৃ. (২৪) জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১০/৫৬১ পৃ. (২৫) ইমাম রমলী, ফাতওয়ায়ে রমলী, ২/৭৯ পৃ. (২৬) ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে ফিকহিয়্যাতুল কোবরা, ২/৮০ পৃ. (২৭) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৪ পৃ. হা/৩৫১৭৭ (২৮) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/১৬৬৫ পৃ. হা/১৬৬৫ (২৯) জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৩ পৃ. হাদিস,  ২৬২১ (৩০) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ১/১৩৮পৃ. হাদিস,  ১৪১৮ (৩১) দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/২৫৯ পৃ. হা/১০০৭ (৩২) বায়হাকী, ফাযায়েলুল ওয়াক্ত, ১/১২২ পৃ. হা/২৪ (৩৩) আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ৫/১৫৪ পৃ. হা/২১৩২ (৩৪) আবদুল আযিয বিন বায, মাজমূউল ফাতওয়া,  ১/১৯০ পৃ.}।




বাতিল পন্থীদের  আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


উক্ত হাদিসে আহলে হাদিসদের যে রাবী সম্পর্কে আপত্তি তিনি হচ্ছেন হাফেযুল কাবীর, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله)-এর উস্তাদ ‘ইবনু আবি সাবরা’। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫৪৪ পৃষ্ঠায় উক্ত রাবীকে ব্যবহার করে এটি সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘সনদটি বানোয়াট।’’ তারা বলে থাকেন তিনি নাকি জাল হাদিস বানাতেন। অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ নাকি তার সমালোচনা করেছেন। এখন আমরা দেখবো প্রকৃতপক্ষে তার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে রিজাল শাস্ত্রের কিতাবে।


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


الفَقِيْهُ الكَبِيْرُ، قَاضِي العِرَاقِ، أَبُو بَكْرٍ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ مُحَمَّدِ بنِ أَبِي سَبْرَةَ بنِ أَبِي رُهْمٍ - وَكَانَ جَدُّ أَبِيْهِ أَبُو سَبْرَةَ بَدْرِيّاً مِنَ السَّابِقِيْنَ المُهَاجِرِيْنَ - ابْنِ عَبْدِ العُزَّى القُرَشِيُّ، ثُمَّ العَامِرِيُّ.


تُوُفِّيَ: زَمَنَ عُثْمَانَ -رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا-


-‘‘তিনি অনেক বড় ফকীহ, ইরাকের কাযি ছিলেন......তার দাদা বদরী মুহাজীর সাহাবী ছিলেন, তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর যামানায় ওফাত বরণ করেন।’’  ৩০

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. রাবী নং- ১০৫১৭ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬}



❏ ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله)ও তার জীবনীতে লিখেছেন- مفتي المدينة -‘‘ তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন।’’


(ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল, ৯/১৯৭ পৃ. ক্রমিক. ২২০০)


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


قَالَ أَبُو دَاوُدَ: كَانَ مُفْتِي أَهْلِ المَدِيْنَةِ.


-‘‘ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন।’’   ৩১

➥{ইবনে হাজার আসকালানী : তাহযীবুত তাহযীব : ১২/২৭ পৃ., যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই’তিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. তবে ইমাম বুখারী, ইমাম নাসায়ী আর কেউ কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন বলে ইমাম যাহাবী উলে­খ করেছেন।}



সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) এর মত এতবড় একজন ইমাম বললেন, তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন, আমি বলবো, জাল হাদিস বানোয়াটকারী কীভাবে এতবড় ফকীহ হন? ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উলে­খ করেন, উনার ওফাতের পর ইমাম কাযি আবু ইউসূফ (رحمة الله) কাযী বা বিচারপতি হন।


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)


❏ ইমাম যাহাবী  উলে­খ করেছেন,  তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী আ‘রায,  হযরত আতা ইবন রিবাহ (رحمة الله) সহ অনেক তাবেয়ী থেকে হাদিস শুনেছেন এবং তার থেকে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, ইমাম আবু আছেম (رحمة الله) সহ এক জামাত হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ হাদিস শুনেছেন। ইমাম যাহাবী  বলেন,  মুহাদ্দিস আব্বাস দূরী (رحمة الله) তিনি ইমাম ইয়াইয়া ইবন মাঈন  হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,  লোকেরা তার নিকট হাদিস শ্রবণ করার জন্য গিয়েছিলেন, আর তাদেরকে তিনি বলেছিলেন আমার নিকট সত্তর হাজার হাদিস রয়েছে যা আমি বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবন জুরাইয (رحمة الله) থেকে যেভাবে অর্জন করেছি সেভাবেও তোমরা আমার থেকে গ্রহণ করলে করতে পারো অন্যথায় নয়।’’  ৩২

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. রাবী নং- ১০৫১৭}



❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


وَرَوَى: مَعْنٌ، عَنْ مَالِكٍ: قَالَ لِي أَبُو جَعْفَرٍ المَنْصُوْرُ: يَا مَالِكُ! مَنْ بَقِيَ بِالمَدِيْنَةِ مِنَ المَشْيَخَةِ؟ قُلْتُ: ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، وَابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، وَابْنُ أَبِي سَلَمَةَ المَاجَشُوْنُ.


-‘‘মুহাদ্দিস মা‘নুন তিনি ইমাম মালেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা খলিফা আবূ জাফর মানসুর (رحمة الله) ইমাম মালেক (رحمة الله) কে লক্ষ্য করে বলেন, মদিনায় মাশায়েখগণের মধ্যে আর কে বাকি আছে? আমি বললাম, ইবনে আবি যিব, ইবনে আবি সাবরাহ, ইবনে আবি সালামা মাজাশুন (রহ.)।’’


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম মালেক (رحمة الله)-এর মত মহান ইমাম যার প্রশংসা করেছেন অন্যান্যরা যারা তার সমালোচনা তারা বহু পরের, তাই যারা তাঁর সমসাময়িক যুগে ছিলেন তাদের মতই অগ্রগণ্য হবে।


❏ ইমাম যাহাবী  আরও উল্লেখ করেন-


قَالَ أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ: قَالَ لِيَ الحَجَّاجُ:

قَالَ لِي ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ: عِنْدِي سَبْعُوْنَ أَلفَ حَدِيْثٍ فِي الحَلاَلِ وَالحَرَامِ.


-‘‘ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, আমাকে মুহাদ্দিস হাজ্জাজ বলেছেন, তিনি বলেন, আমাকে ইবনে আবি সাবরাহ (رحمة الله) লক্ষ্য করে বলেছেন, আমার নিকট হালাল-হারাম সংক্রান্ত ৭০ হাজার হাদিস রয়েছে।’’


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর মত মহান ইমাম তাঁর বিষয়ে এমনটি উল্লেখ করে কোনো সমালোচনা করেননি, আর আজ কতিপয় আহলে হাদিসগণ উক্ত রাবীর সমালোচনা করে তাঁর থেকেও বড় মুহাদ্দিস সাজতে চাচ্ছেন।


❏ ইমাম ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন- وَقَالَ البُخَارِيُّ: ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ. -‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, হাদিস বর্ণনায় তিনি দুর্বল।’’


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)



উক্ত রাবীর দুর্বলতা কোথায়?


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


وَهُوَ ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.


-‘‘তিনি হেফযের (স্মৃতিশক্তির) কারণে হাদিসে দুর্বল।’’


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)

তবে আমার মনে হয় উক্ত রাবীর শেষ জীবনে স্মৃতিশক্তি দুর্বলতায় পড়েছিল।


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি এ গ্রন্থের শুরুতে হাদিসের নীতিমালায় উল্লেখ করেছি যে, কোনো রাবীর হেফযে সামান্য দুর্বলতা থাকলে সে রাবীর হাদিসের মান ‘হাসান’ স্তরের বলে বিবেচিত হবে।


এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের সিদ্ধান্ত:


একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো আলবানী হাদিসটি জাল বলেছেন। অথচ আলবানীর দলের অনুসারী আবদুল আযিয বিন বায তার ফাতওয়ার কিতাবে সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন। আলবানীর পূর্বে একজন মুহাদ্দিসও হাদিসটিকে জাল বলেননি। তবে ইমাম কাস্তাল্লানী, সুয়ূতি, জুরকানী,  ইবনে ইরাকী, কিনানী,  ইবনে হাজার মক্কী,  ইমাম ইবনে আবেদীন শামী সকলেই তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে দ্বঈফ বলেছেন; একজনও জাল বলেননি।


❏ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-


وَإِسْنَاده ضَعِيف، وَابْن أبي سُبْرَة هُوَ أَبُو بكر بن عبد الله بن مُحَمَّد بن سُبْرَة مفتي الْمَدِينَة وقاضي بَغْدَاد ضَعِيف


-‘‘এ সনদটি যঈফ, ইবনে আবি সাবরাহ......সে মদিনার মুফতী ছিলেন এবং বাগদাদের কাযি ছিলেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।’’


(আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/৮২ পৃ.)


❏ আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-


إِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ لِضَعْفِ ابْنِ أَبِي سبرَةَ


-‘‘এ সনদটি যঈফ, কেননা ইবনে আবি সাবরাহ রাবী হিসেবে যঈফ।’’


(হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানি ইবনে মাযাহ, ১/৪২১ পৃ.)


❏ ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) লিখেন-


وفى سنن ابن ماجه: بإسناد ضعيف، عن على مرفوعا


-‘‘এ সনদটি ইবনে মাযাহ (رحمة الله) সংকলন করেন, সনদটি যঈফ, যা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন।’’


(আল্লামা কাস্তাল্লানী, আল - মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৩০০ পৃ.)


উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল এক জামাত হাদিসের ইমামগণ এ সনদকে শুধু মাত্র যঈফ বলেছেন, কেউ তাকে জাল বলেননি। তাই এ সনদটি যঈফ হলেও আরও অনেক শাওয়াহেদ থাকায় এ হাদিসকে শক্তিশালী করেছে।



২নং হাদিস:


❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: وَأَخْبَرَنِي مَنْ، سَمِعَ الْبَيْلَمَانِيَّ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ:  خَمْسُ لَيَالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءَ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَأَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না।

১. জুম‘আর রাত্র, 

২. রজবের প্রথম রাত,

৩. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত) এবং

৪-৫ দুই ঈদের রাত্র।’’  ৩৩

➥{ক. ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ পৃ. হাদিস:৭৯২৭

খ. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/২৮৮ পৃ. হাদিসঃ৩৪৪০

গ. ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল আওকাত, : ৩১১ পৃ. হা/১৪৯

ঘ. ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : হা/৭৯২৭

ঙ. সুয়ূতি: জামেউস সগীর : ১/৬১০ : হা/৮৩৪২, তিনি হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه) এর সূত্রে।}



সনদ পর্যালোচনা:


এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত, তবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এ হাদিসে তার শায়খের নাম গোপন করেছেন, তিনি বিশ্বস্ত হাদিসের ইমাম, তাই তার তাদলীস গ্রহণযোগ্য, তাঁর তাদলীস সমালোচিত বলে কেহই অভিমত পেশ করেননি।


❏ অপরদিকে এ সনদেরর রাবী মুহাদ্দিস ‘বায়লামানী’ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন- وذكره ابن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান  তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’


(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৫৫১ পৃ. ক্রমিক.৪৮২৭)


তবে এ হাদিসটির শাওয়াহেদে আরেকটি যঈফ সনদের হাদিস রয়েছে, তাই এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।


❏ ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-


خَمْسُ لَيالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدَّعْوَةُ أوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبانَ وَلَيْلَةُ الجُمُعَةِ وَلَيْلَةُ الفِطْرِ وَلَيْلَةُ النَّحْرِ


-‘‘পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না।

১. রজবের প্রথম রাত, 

২. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত),

৩. জুম‘আর রাত্র, 

৪-৫ দুই ঈদের রাত্র।’’


(ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ১০/৪০৮ পৃ. ক্রমিক.৯৬৮, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/৮৭ পৃ. হা/৬০৭৫, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/৩৯৩৬)



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন- باسناد ضَعِيف -‘‘এ সনদটি যঈফ।’’ (আল্লামা মানাভী, তাইসীর, ১/৫২০ পৃ.) তাই উভয় সনদ মিলিয়ে এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ الشَّافِعِيُّ: وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ إِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبَ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, আগের যুগে (সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে) বলা হতো, পাঁচ রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন,

১. জুম‘আর রাতের দোয়া,

২-৩. ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া,

৪. রযব মাসের প্রথম মাসের রাতের দোয়া এবং

৫. শবে বরাতের দোয়া।’’


(ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/২৮৭ পৃ. হা/৩৪৩৮)

বুঝা গেল সনদে একজন রাবী সমস্যা হলেও পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের নিকট হাদিসটি বিশুদ্ধ বলেই পৌঁছেছে।



৩নং হাদিস


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ بِشْرانَ، أَخْبَرَنَا أَبُو جَعْفَرٍ الرَّزَّازُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الرِّيَاحِيُّ، حَدَّثَنَا جَامِعُ بْنُ صُبَيْحٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا مَرْحُومُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ نَادَى مُنَادٍ: هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ، هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ فَلَا يَسْأَلُ أَحَدٌ شَيْئًا إِلَّا أُعْطِيَ إِلَّا زَانِيَةٌ بِفَرْجِهَا أَوْ مُشْرِكٌ– وقال محققه عدنان عبد الرحمن : اسناده حسن- مكتبة المنارة مكة المكرمة


-‘‘হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  মহানবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে প্রথম আকাশে একজন ঘোষক অবতরণ করে ডাকতে থাকে। কেউ ক্ষমা চাওয়ার আছ কি? চাইলেই ক্ষমা করা হবে। কেউ কিছু চাওয়ার আছ কি? তাকে দেয়া হবে। যা চাওয়া হবে তাই দেয়া হবে শুধু জিনাকারী ও আল্লাহর সাথে শরীককারী ব্যক্তি এ সৌভাগ্য লাভ করবে না।’’  ৩৪

➥{(১) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৬২ পৃ. হা/৩৫৫৫ (২) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে আওকাত: পৃ- ১২৪ : হা/২৫ (৩) সাহল বিন শাকের আল-খারাতী, মুসাভীউল আখলাক, ১/২২৬পৃ. হাদিস,  ৪৬৭ (৪) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১৩৯পৃ. হাদিস,  ১৪১৯ (৫) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৪পৃ. হাদিস,  ৩৫১৭৮ (৬) সালিম র্জারার, ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৫/১৮পৃ. হাদিস,  ৪২৩৭ (৭) সুয়ূতি, জামিউস সগীর, ১/১৬৬৬পৃ. হাদিস,  ১৬৬৬ (৮) আলবানী, দ্বঈফু জামে, হাদিস,  ৬৫৩}



পর্যালোচনা:


এ সনদটি সম্পর্কে আল্লামা আদনান হাদিসটিকে “হাসান” বলেছেন। আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী এটিকে যঈফ বলেছেন।


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১৪/১০৯৯ পৃ. হা/৭০০০)


❏ আলবানী লিখেছে-


قلت: وهذا إسناد ضعيف؛ وله علتان: إحداهما: عنعنة الحسن - وهو: البصري -؛ فقد كان يدلس. والأخرى: ضعف (جامع ين صَبِيح الرملي)


-‘‘আমি (আলবানী) বলি, এ হাদিসটির সনদ দুর্বল, আর তার দুটি কারণ রয়েছে, প্রথমটি হলো, তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) এখানে তাদলীস করে বর্ণনা করেছেন, তাই তিনি এখানে তাদলীসকারী, আর দ্বিতীয়টি হলো, রাবী জা‘মে ইবনে ছাবিহ্ রমলী’ যঈফ।’’


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১৪/১০৯৯ পৃ. হা/৭০০০)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত হাসান বসরী (رحمة الله)-এর মত মহান তাবেয়ীর যিনি দোষ ধরতে পারেন তিনি আর অন্য রাবীর বিষয়ে কিবাই না বলতে পারেন।  ৩৫

➥{ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ‘হাসান বসরীর’ জীবনীতে লিখেন-

قَالَ مُحَمَّدُ بنُ سَعْدٍ: كَانَ الحَسَنُ -رَحِمَهُ اللهُ- جَامِعاً، عَالِماً، رَفِيْعاً، فَقِيْهاً، ثِقَةً، حُجَّةً، مَأْمُوْناً، عَابِداً، نَاسِكاً، كَثِيْرَ العِلْمِ، فَصِيْحاً، جَمِيْلاً، وَسِيْماً

-‘‘ইমাম বুখারীর উস্তাদ মুহাম্মদ বিন সা‘দ (رحمة الله) বলেন, তিনি ছিলেন ....আলিম,.....ফকীহ, বিশ্বস্ত, হুজ্জাত, নিরাপদ ব্যক্তি, আবেদ, ....অনেক ইলমের অধিকারী, সুস্পষ্ট ভাষী, অনেক সুন্দর ব্যক্তি,....।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/১৪৩ পৃ. ক্রমিক.২২৩) }


❏ আর রাবী জা‘মে কে একক একজন মুহাদ্দিস ছাড়া কেহই যঈফ বলেননি। পৃথিবী বিখ্যাত মশহুর মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার জীবনী বর্ণনা করে তার ভাল বলেছেন কোন সমালোচনা করেননি। ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি আবু যারওয়া এবং আবু মুঈনের মত মুহাদ্দিসের শায়খ ছিলেন।

(ইবনে আবি হাতেম, আল-জারহু ওয়া তা‘দীল, ২/৫৩০ পৃ. ক্রমিক.২২০৪, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/১৬৬ পৃ.)

তাই তার ভুয়া তাহকীক মানা যায় না।

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন