১০নং হাদিস
❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) সংকলন করেন-
حدثنا أبو غسان روح بن حاتم حدثنا عَبْد الله بن غالب حدثنا هشام بن عَبْد الرَّحْمن عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صالح عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، يَغْفِرُ اللَّهُ لِعِبَادِهِ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। আঁকা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, যখন শাবানের ১৫ই তারিখের রাত আগমন করে তখন ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, শুধু মুশরিক (আল্লাহর সাথে শরীককারী) ও হিংসুক ব্যতীত।’’ ৬০
➥{ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ১৬/১৬১ পৃ. : হা/৯২৬৮ (২) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ, হাদিস, ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৮ (৩) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৪ পৃ. হাদিস, ২৬২৩, (৪) খতিবে বাগদাদ, তারীখে বাগদাদ, ১৪/২৮৫ পৃ. (৫) ইবনুল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ, ২/৫৬০ পৃ. হা/৯২১ (৬) ইমাম তবারী, শরহে উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৫ পৃ. হা/৭৬৩, হাইসামী, কাশফুল আশতার, ২/৪৩৬পৃ. হা/২০৪৬}
সনদ পর্যালোচনা:
❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَلَمْ أَعْرِفْهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.-
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সনদে ‘হিশাম ইবনে আব্দুর রহমান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, তাকে আমি চিনি না। সনদের বাকী সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ ৬১
➥{ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ, হাদিস, ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৮ }
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবতার বিপরীত।
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)ই স্বয়ং তাঁর জীবনী বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- هِشام بْن عَبد الرَّحمَن، الكُوفيُّ. -‘‘হিশাম বিন আব্দুর রহমান তিনি কুফার অধিবাসী একজন মুহাদ্দিস।’’
(বুখারী, আত-তারিখুল কাবীর, ৮/১৯৯ পৃ. ক্রমিক.২৭০০)
❏ অথচ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) তার আরেক কিতাবে উক্ত রাবীর হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে-
حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ حَاتِمٍ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ غَالِبٍ، ثنا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، ثنا عَلْقَمَةُ بْنُ مَرْثَدٍ، عَنْ أَبِي الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘হিশাম বিন আব্দুর রহমান কুফী তিনি তার শায়খ আলকামা ইবনে মারছাদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আবি রাবে‘ঈ (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে।’’
(হাইসামী, কাশফুল আশতার, ১/১৪০ পৃ. হা/৯৩০)
এখানে উক্ত রাবীর শায়খ আ‘মাশ (رحمة الله)-এর স্থানে আলকামা ইবনে মারছাদ, তিনি সিহাহ সিত্তার রাবী। উসূলে হাদিসের নীতিমালা হলো যে রাবী থেকে দুজন সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাদিস বর্ণনা করবে এবং তিনিও দুজন হতে বর্ণনা করবেন তিনি মাজহুল বা অপরিচিত নন। সে হিসেবে উক্ত রাবী মাজহুল নন। অনুরূপ আরেকটি সনদ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেছেন।
(তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/২০২ পৃ. হা/৬১৮৮)
❏ শুধু তাই নয় উক্ত রাবীর আরেকটি সূত্র ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তুলে ধরেন এভাবে-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زَكَرِيَّا الْغَلَابِيُّ قَالَ: نا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ ابْنُ عَائِشَةَ التَّيْمِيُّ قَالَ: ثَنَا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘এখানে হিশামের শায়খ হলেন বিখ্যাত ফকীহ, ইমাম আযমের ফিকহের উস্তাদ ইমাম হাম্মাদ বিন সুলাইমান (رحمة الله), আর শিষ্য হলেন উবায়দুল্লাহ।’’
(তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/১৭৮ পৃ. হা/৬১২১)
❏ ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَأَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عُمَرَ الْقَاسِمُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ عَبْدِ الْوَاحِدِ الْهَاشِمِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو بِشْرٍ عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عِيسَى الصَّيْدَلانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو يُوسُفَ الْقُلُوسِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ غَالِبٍ الْعَبَّادَانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
-‘‘এ সনদে তাঁর শায়খ হলেন তাবেয়ী ‘আমাশ (رحمة الله) এবং তাঁর ছাত্র হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে গালেব।’’
(ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১৬/৪১৬ পৃ. ক্রমিক.৭৫৩২)
তাই বাস্তবতার আলোকে তিনি কখনই মাজহুল রাবী নন।
১১ নং হাদিস:
❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو صَالِحٍ الْحَرَّانِيُّ يَعْنِي عَبْدَ الْغَفَّارِ بْنَ دَاوُدَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعَمَ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ نُسَيٍّ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَوْفٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَطَّلِعُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لَهُمْ كُلَّهُمْ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ
-‘‘হযরত আওফ বিন মালেক আশজারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূলে খোদা (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তাবারাকা ও তা‘য়ালা ১৫ই শাবানের রাত্রে (শবে বরাত) সকল ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সবাইকে।’’ ৬২
➥{(১) ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ :৭/১৮৬ পৃ. হা/২৭৫৪ (২) ইবনে হাজার হায়সামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/৬৫পৃ. (৩) খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : হা/১৩০৬ : কিয়ামে রামাদ্বান (৪) ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ৬/৬৯১পৃ. হাদিস, ৮৫৩৯}
সনদ পর্যালোচনা:
❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী উক্ত হাদিসটি সংকলন করে বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمٍ، وَثَّقَهُ أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ وَضَعَّفَهُ جُمْهُورُ الْأَئِمَّةِ، وَابْنُ لَهِيعَةَ لَيِّنٌ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, উক্ত সনদে ‘আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনআম’ ইমাম আহমদ বিন সালেহ বলেন, তিনি সিকাহ, জমহুর ইমামদের দৃষ্টিতে সে দুর্বল রাবী; সনদে নরম প্রকৃতির রাবী ‘ইবনে লাহি‘আহ’ নামক রাবীও রয়েছে, এছাড়া সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।’’ ৬৩
➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়িদ : ৮/৬৫ পৃ:}
ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর দৃষ্টিকোণে রাবী আব্দুর রহমানকে শুধু একজন মুহাদ্দিসই সিকাহ বলেছেন, কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত।
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সম্পর্কে লিখেন-
الإِمَامُ، القُدْوَةُ، شَيْخُ الإِسْلاَمِ، أَبُو أَيُّوْبَ الشَّعْبَانِيُّ، الإِفْرِيْقِيُّ، قَاضِي إِفْرِيْقِيَةَ، وَعَالِمُهَا، وَمُحَدِّثُهَا، عَلَى سُوءٍ فِي حِفْظِه.
-‘‘তিনি ছিলেন ইমাম, অনুসরণযোগ্য, ইসলামের শাইখ যার উপনাম আবু আইয়্যুব শা‘বানী, ইফরাকী, কাযীয়ে ইফরীকী। তিনি একজন আলেম এবং মুহাদ্দিসও ছিলেন, তবে হিফয বা স্মরণ শক্তিতে কিছুটা ক্রুটি ছিল।’’ ৬৪
➥{যাহাবী, সিয়ারু আলামিন আন্-নুবালা, ৬/৪১১পৃ. ক্রমিক. ১৬৯}
❏ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওইয়্যাহ (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম সাঈদ ইবনে কাত্তান (رحمة الله) কে তার সর্ম্পকে বলতে শুনেছি যে তিনি (ثقة) ‘সিকাহ’ বা বিশ্বস্ত রাবী ছিলেন।’’ ৬৫
➥{ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৫/৪৫৮ পৃ. ক্রমিক. ১১০৮, মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ১৭/১০২ পৃ. ক্রমিক.৩৮১৭, ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/১৭৬ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৮}
❏ ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাতে সিকাহ বলেছেন। ৬৬
➥{ইমাম ইবনে শাহীন, আস্-সিকাত, ক্রমিক. ৮০৬}
❏ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, মুহাদ্দিস আবু উসমান তানবাযী বলেন- كان الإفريقي رجلا صالحا-‘‘ইফরাকী হাদিস বর্ণনায় তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন।’’ ৬৭
➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/১৭৬ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৮}
বুঝা গেল অনেকে তাকে সিকাহও বলেছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত রাবীকে কেউ যদি দাবীও করেন যে, তার স্মৃতিশক্তিতে সামান্য ক্রুটি ছিল তাহলেও উসূলে হাদিসের নীতিমালা অনুসারে এটি ‘হাসান’, যা আমি এ গ্রন্থের শুরুতে নীতিমালা অধ্যায়ে আলোচনা করে এসেছি। তবে অনেকে ধোঁকা দিতে পারেন যে ইমাম নাসায়ীসহ কিছু ইমামগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। আমার বক্তব্য হলো তার দুর্বলতা তো আমরাও স্বীকার করলাম, কিন্তু দেখতে হবে তিনি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দুর্বল। সন্দেহ ছাড়া তার হাদিস দুর্বল বলা যাবে না।
❏ ইমাম নুরুদ্দীন হাইসামী তার বর্ণিত একটি সনদ আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-
وَاخْتُلِفَ فِي الِاحْتِجَاجِ بِهِ.
-‘‘তার হাদিস হুজ্জাত কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য আছে।’’ ৬৮
➥{হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/২১৮ পৃ. হা/৩৩০৮}
তার হাদিস একেবারেই হুজ্জাত হবার উপযোগী নয় তেমনটি ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেননি। আলবানীও তার সর্ম্পকে অনুরূপ বলেছেন। ৬৯
➥{আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ২/২৩৬ পৃ.}
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন-
قاضي إفريقية وعالمها
-‘‘ইফরাকীর তৎকালিন কাযি ও আলেম ছিলেন।’’ ৭০
➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}
❏ ইমাম যাহাবী আরও উল্লেখ করেছেন মুহাদ্দিস সালেহ যাযরাহ তার সম্পর্কে বলেছেন- كان رجلا صالحا، -‘‘তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন।’’ ৭১
➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}
❏ তিনি আরও বলেন ইমাম তিরমিযি বলেন ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেছেন- هُوَ مقارب الحديث -‘‘তার হাদিস সহীহ এর নিকটবর্তী।’’ ৭২
➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}
❏ ইমাম নুরুদ্দীন হাইসামী (رحمة الله) তার বর্ণনার একটি হাদিস সর্ম্পকে বলেন-
وَقَدْ وَثَّقَهُ أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ
-‘‘মুহাদ্দিস আহমদ ইবনে সালেহ (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ ৭৩
➥{হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৫/২৪ পৃ. হা/৯০৩১ ও ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৯}
প্রমাণিত হল নিঃসন্দেহে হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’।
আর ‘ইবনে লাহি‘আহ’ এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে আমি ইতোপূর্বে ৭নং হাদিসের সনদ পর্যালোচনায় আলোচনা করেছি, পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইলো।
১২ নং হাদিস:
❏ ইমাম আবদুর রাজ্জাক (ওফাত.২১১ হি.} একটি হাদিস সংকলন করেন এভাবে-
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ رَاشِدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مَكْحُولٌ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ :أَنَّ اللَّهَ يَطَّلِعُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى الْعِبَادِ، فَيَغْفِرُ لِأَهْلِ الْأَرْضِ إِلَّا رَجُلًا مُشْرِكًا أَوْ مُشَاحِنًا
-‘‘হযরত কাসীর ইবনে হাদ্বরামী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা শাবানের ১৫ই তারিখ রাতে ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে হ্যা, দুই ধরনের ব্যক্তি ছাড়া, তারা হল মুশরিক ও হিংসুক।’’ ৭৪
➥{ইবনে আবী শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ৬/১০৮পৃ.হা/২৯৮৫৯ (২) ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ : হা/৭৯২৩(৩) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৯পৃ.হা/৩৫৫০ (৪) ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০পৃ. : হা/২১ (৫) সুয়ূতি : জামেউল আহাদিস, ৬/২৮৮ : হা/১৪৯০১ (৬) যায়লাঈ, তাখরীজে আহাদিসুল কাশ্শাফ, ৩/২৬৫ পৃ. (৭) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৩ পৃ. হা/৩৫১৭৫ (৮) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/২৬৩পৃ. হা/৮২৫৭ (৯) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/৭৭১৭ পৃ. হা/৭৭১৭, (১০) ও জামিউল আহাদিস, ১৫/৪পৃ. হাদিস, ১৪৮৩৪, তিনি বলেন, সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী। (১১) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৩৮১পৃ. হা/৩৮৩১, তিনি বলেন, সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী (১০) আলবানী, সহিহুল জামে, হাদিস, ৪২৬৮}
সনদ পর্যালোচনা:
❏ উক্ত হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আহলে হাদিসের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী এবং ইমাম মুনযির এর অভিমত নকল করে লিখেন-
قَالَ الْمُنْذِرِيُّ رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ وَقَالَ هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ
-‘‘ইমাম মুনযির বলেন, উক্ত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন, উক্ত হাদিসটি মুরসাল, তবে সনদ শক্তিশালী।’’ ৭৫
➥{ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৩৮১ পৃ. হা/৩৮৩১, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৪৪১ পৃ. হা/৭৩৯, ইমাম মুনযির : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/৩০৮ পৃ. হা/৪১৯৩}
❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এ হাদিসটির আরকেটি সনদ সংকলন করেন এভাবে-
عَنِ الْمُثَنَّى بْنِ الصَّبَّاحِ قَالَ: حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ حَدِيثِ مُحَمَّدِ بْنِ رَاشِدٍ
-‘‘আমি আমার শায়খ মুসান্না বিন ছুব্বাহ থেকে শুনেছি তিনি কায়েস বিন সা‘দ থেকে তিনি তাবেয়ী মিকহুল থেকে তিনি হযরত কাসীর বিন র্মুরাহ উপরের মুহাম্মদ বিন রাশেদেও সনদ ও মতনের ন্যায় হাদিস সংকলন করেন। ৭৬
এ সনদটিতে মিকহুলের ছাত্র কায়েস বিন সা‘দ অর্থাৎ ভিন্ন ছাত্রের মাধ্যমে বর্ণিত।
➥{ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ : হা/৭৯২৪}।
১৩ নং হাদিস:
❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: تُنْسَخُ فِي النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ الْآجَالُ، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ ليَخْرُجُ مُسَافِرًا، وَقَدْ نُسِخَ مِنَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ، وَيَتَزَوَّجُ وَقَدْ نُسِخَ مِنَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ
-‘‘হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আয়ূ নির্ধারণ করা হয়। ফলে দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃত্যুর খাতায় লিখা হয়ে গেছে।’’ ৭৭
➥{ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ৪/৩১৭ পৃ. হা/৭৯২৫ (২) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৪১/৬৯পৃ. হা/৪৪৩১৪ (৩) ইবনে রাহবিয়্যাহ, মুসনাদ, ৩/৯৮১ পৃ. হাদিস, ১৭০২ (৪) তবারী, শরহে উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৯ পৃ. হাদিস, ৭৬৯}
এ হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ তবে সনদে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মিস‘আর (رحمة الله) তাঁর শায়খের নাম গোপন করেছেন অর্থাৎ তাদলীস করেছেন। তবে তিনি যেহেতু সিহাহ সিত্তার নির্ভরযোগ্য রাবী বা মুহাদ্দিস তাই তার তাদলীস গ্রহণযোগ্য, কোনো মুহাদ্দিস মিস‘আরের তাদলীস নিয়ে সমালোচনা করেননি।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন