ইলিয়াছ মেওয়াতীর ‘মালফুজাত' তারই অনুসারী ভক্ত মৌলভী মনজুর নােমানী
সংগ্রহ ও সংকলন করে প্রকাশ করেছেন। মালফুজাত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ পাওয়া
যায়। মােহাম্মদী লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা কর্তৃক মালফুজাতের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ
প্রকাশ হয়, যা অনুবাদ করেন ডক্টর মােহাম্মদ ছানাউল্লাহ (ব্যারিষ্টার)। আমি মােহাম্মদী
লাইব্রেরীর অনুবাদকৃত মালফুজাত থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি। আবার মাওলানা
সাখাওয়াতুল্লাহ সাহেবও উক্ত কিতাবের বঙ্গানুবাদ করেন, তবে মূল উর্দু কিতাবের
অনেক কিছু তিনি বাদ দিয়েছেন।
‘মালফুজাত' প্রকাশ হলে ইলিয়াছ মেওয়াতীর আসল রূপ ও উদ্দেশ্য বের হয়ে যায়। কেননা সত্যকে কোনদিন চেপে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশ হবে এবং মিথ্যা ধ্বংস হবেই। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
وقل جاء الحق وزهق الباطل إن الباطل كان زهوقا
অর্থাৎ “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই
ছিল” (সূরা বনী ইসরাইল-৮১)।
মালফুজাত' নামক কিতাবে ঈমান বিধ্বংসী আকিদা রয়েছে, যা মুসলমানের জন্য খুবই মারাত্মক। এ রকম কিছু প্রসঙ্গ ও তার জবাব
পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরছি।
১। উক্ত কিতাবের ৪২ নং মালফুজাতের ভেতরে আছে “মুসলমান দুই প্রকার।
তৃতীয় কোন প্রকার নাই। প্রথমতঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগে) বাহির হয়ে
যাবে। দ্বিতীয়তঃ যারা তাদের সাহায্য করবে।”
জবাব : তাদের নিকট মুসলমান হওয়ার জন্য দুটি শর্ত। একটি হলাে তাবলীগে যাওয়া এবং অন্যটি হলাে তাদের সাহায্য করা। এ দুটি কাজে যারা সম্পৃক্ত নয়, তাদের মতে তারা মুসলমান নয় (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে বুঝা যায় যে, ইলিয়াছ মেওয়াতীর পিতা মুসলমান ছিলেন না। কেননা ইলিয়াছ মেওয়াতীর তাবলীগ আবিস্কারের আগেই তার পিতা মারা গেছেন। ফলে তিনি ইলিয়াছের তাবলীগ করতেও পারেননি এবং সাহায্য করতেও পারেননি। এমনকি নবীজি ও সাহাবায়ে কেরামগণও ইলিয়াছি তাবলীগ করেননি। তাহলে তারাও মুসলমান নন? যে ব্যক্তি নবী ও সাহাবীদের মুসলমান বলে না, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফের। ইলিয়াছ মেওয়াতী পরােক্ষভাবে নবী ও সাহাবায়ে কেরামগণকে মুসলমান স্বীকার না করে কাফেরে পরিণত হয়ে গেছে। যারা এই ইলিয়াছ কাফের এর অনুসারী হবে তারাও কাফের হয়ে যাবে।
২। উক্ত কিতাবের ৫০ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তােমরা
নবীদের মত মানুষের উপকার করার জন্য প্রেরিত ইহয়াছ।”
জবাব ঃ উপরােক্ত কথা দ্বারা ইলিয়াছ মেওয়াতী উম্মতকে নবীদের সাথে তুলনা
করেছেন যা, সম্পূর্ণ কুরআন-হাদীস অর্থাৎ ইসলাম বিরােধী। যে ব্যক্তি ইহা বিশ্বাস
করবে, সে বেঈমান হয়ে যাবে। কারণ উম্মতের সাথে নবীর কখনও তুলানা হতে পারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “লাসতুকা আহাদিম মিনকুম” অর্থাৎ আমি তােমাদের কারাে মতই না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে নিজেকে কারাে সাথে তুলনা করতে নিষেধ করেছেন, সেখানে ইলিয়াছ মেওয়াতী তাবলীগ বাহিনীকে নবীর সাথে তুলনা করেছেন। যার অন্তরে চুল পরিমান ঈমান আছে, সে কখনও এই কথা মেনে নিবে না। এ কথা জানা সত্ত্বেও যারা ইলিয়াছী তাবলীগ করবে, তারা নিঃসন্দেহে বেঈমান, যদিও তারা নামাজী হয়। কেননা নবীজির লাশ মুবারক চুরি করতে যারা গিয়েছিল, তারা সকলেই নামাজী ছিল, কিন্তু তাদের ঈমান ছিল না তারা ছিল ইহুদী।
৩। উক্ত কিতাবের ৫১ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “যাকাতের মর্যাদা হাদিয়ার নিচে, এ কারণেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য
সদকা হারাম ছিল, হাদিয়া হারাম ছিল না।”
জবাবঃ যাকাত হলাে ইসলামী পঞ্চবেনা তথা ৫টি ভিত্তির একটি। ইহা ফরজ অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত না দিলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। অথচ ইলিয়াছ মেওয়াতী ফরজ যাকাতকে মােস্তাহাব হাদিয়ার নিচে স্থান দিয়েছে, যা ইসলামী শরিয়ত বিরােধী।
এজন্যই হয়তাে ইলিয়াছ মেওয়াতী তার ৬টি উসুলের মধ্যে যাকাত কে বাদ দিয়েছে।
যে ব্যক্তি যাকাতকে (ফরজকে) হাদিয়ার (মােস্তাহাব) নিচে স্থান দেয়, সে ব্যক্তি কোন
প্রকৃতির মুসলমান তা আপনাদের বিচারে ছেড়ে দিলাম।
৪। উক্ত কিতাবের ৫৬ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তাবলীগের
তরিকা হবে আমার আর তালীম হবে মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর।"
জবাবঃ উপরােক্ত উক্তি দ্বারা স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে যে, মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতীর
আবিস্কৃত তাবলীগ ইসলাম বহির্ভূত। কারণ তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, তাবলীগের
তরিকা তার নিজের অর্থাৎ ইসলামী আকিদার নয়। কেননা ইসলামী তাবলীগের তরিকা ও তালীম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি আল্লাহ হতে প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু ইলিয়াছি তাবলীগের তরিকা হলাে ইলিয়াছ মেওয়াতীর এবং তালীম হলাে মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর।
৫। উক্ত কিতাবের ৯৩ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “এই তাবলীগি
সফর জিহাদের বিশেষত্ব ও বরকত নিজের মধ্যে রাখে। সেই জন্য ঐ পুরস্কারও আশা
করা যায়। যদিও ইহা যুদ্ধ নয়, এ কাজ জিহাদেরই একটি অংশ নিশ্চয়ই বটে। ইহা
(তাবলীগি সফর) কোন কোন হিসাবে কাটাকাটি-রক্তারক্তি হতে যদিও নিম্নস্তরের, কিন্তু আবার কোন কোন হিসাবে উহা (জিহাদ) হতে উচ্চস্তরের।" (মাও. সাখাওয়াতুল্লাহ কর্তৃক অনুবাদকৃত মালফুজাত নং ৯৩)
জবাবঃ ইলিয়াছ মেওয়াতি বােঝাতে চাচ্ছেন যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে তাবলীগ জামাত উত্তম। আল্লাহর রাস্তায় হানাহানী-যুদ্ধের কষ্ট এবং প্রাণহানীর ভয়
থাকে। তাবলীগ জামাতের চিল্লায় এসব দ্বন্দ হানহানী নেই। উপরােক্ত উদ্দেশ্যমূলক কথা কুরআন-হাদীস বিরুদ্ধ। পাক কালামে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহে আত্মত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারের অনেক মর্যাদা বর্ণিত আছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
وجاهدوا في سبيل الله باموالهم وانفسهم اعظم درجه عند الله وأولئك هم الفائزون
অর্থাৎ “নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জেহাদ করেছে তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম।" (সূরা তাওবা-২০)
এ হলাে জিহাদের গুরুত্ব। স্বয়ং আল্লাহ বললেন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ উত্তম।
আর ইলিয়াছ মেওয়াতী বললেন তাবলীগ উত্তম। এখানেও তিনি আল্লাহর কালামের
বিরােধীতা করলেন। ইলিয়াছ মেওয়াতীর মনগড়া বক্তব্য আল কুরআনের বিরােধী।
কোথায় জিহাদ, আর কোথায় ইলিয়াছ মেওয়াতীর মসজিদ সফর। ভন্ডামীর একটা
সীমা আছে, কিন্তু ইলিয়াছ মেওয়াতীর ভন্ডামী সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ইলিয়াছি তাবলীগীদের আসল চেহারা উন্মোচন হয় সূরা তাওবার ১০৭ নং আয়াত দ্বারা।
তাবুকের যুদ্ধে কিছু মুনাফিক যুদ্ধে (জিহাদ) না গিয়ে মসজিদে কুবার নিকট মসজিদে
জেরা নির্মাণ করেছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম যখন তাবুক যুদ্ধে
জয়লাভ করে ফিরছিলেন। তখন সেই মুনাফিকেরা নবীজির সামনে এসে বললাে ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি, আপনি আসুন এবং সালাত আদায় করুন। মুনাফিকদের ইচ্ছা ছিল তারা নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দিয়ে মসজিদ উদ্বোধন করাবে। কিন্তু সাথে সাথে
আল্লাহ পাক ওহি নাজিল করলেন।
والذين اتخذوا مسجدا ضيرارا وكفرا وتفريقا بين المؤمنين
অর্থাৎ “আর যারা নির্মাণ করেছে মসজিদ জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায়
মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে” (সুরা তাওবা-১০৭)
উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবাদেরকে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সাথে সাথে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা
হলাে। বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' গ্রন্থের ৫ম খন্ডে এ ঘটনা বিস্তরিত উল্লেখ আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, মুনাফিকদের ইচ্ছা ছিল তারা মসজিদে কুবার
মুসল্লীদেরকে দুই ভাগে বিভক্ত করবে। বর্তমানে তাবলীগ জামাতিরা বিভিন্ন স্থানে
মসজিদ তৈরি করছে। দেখা গেছে আশেপাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও তারা মসিজদ তৈরি
করছে এবং তার নাম দিচ্ছে মারকাজ মসজিদ। এভাবে এলাকার মুসল্লীদের মধ্যে
মসজিদ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে এবং মুসল্লী বিভক্ত হচ্ছে, যা কিনা মসজিদে জেরার
সমতুল্য। অধিকাংশ মারকাজ মসজিদ জিদের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা। লক্ষ্য করলে
দেখা যায়, ঐ সমস্ত মারকাজ মসজিদে তাবলীগ জামাতের লােক ব্যতিত অন্য কেউ
নামাজ আদায় করতে যায় না। তাই মারকাজ মসজিদ আর মসজিদে জেরা একই।
উল্লেখ্য যে, উপরােক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথে জিদের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা
মসজিদে জেরা ভেঙ্গে ফেলা হলাে। তাই উক্ত আয়াত হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যে
সমস্ত মসজিদ জিদের বশবর্তী হয়ে এবং মুসল্লীদেরকে বিভক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়, সে সব মসজিদে নামাজ পড়া জায়েজ নাই, তা ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ। এরকম অনেক
মসজিদ আছে যা অন্যের জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে। দখলকারী নিচ তলায়
মার্কেট, দ্বিতীয় তলায় মসজিদ এবং তৃতীয় তলা থেকে বসবাস করার এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি
করেছে। দখলকারী চিন্তা করেছে যে, যেহেতু মসজিদ আছে তা কেউ ভাঙ্গতে পারবেনা।
এভাবে সারা জীবন অন্যের সম্পদ ভােগ করতে পারবাে। উপরােক্ত আয়াত দ্বারা ঐ
সমস্ত মসজিদও ভেঙ্গে ফেলা যাবে
৬। উক্ত কিতাবের ১১১ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “আম্বিয়া
আলাইহিচ্ছালামগণ যদিও মাছুম (বেগুনাহ), মাহফুজ (সংরক্ষিত) এবং এলেম ও শিক্ষা-দীক্ষা সরাসরি আল্লাহর তরফ হতে লাভ করেছেন- তথাপিও তারা যখন তালিম
ও হেদায়েতের তাবলীগের জন্য সাধারণ লােকদের সাথে মেলামেশা করতেন তখন
তাদের অন্তরসমূহে সেই সাধারণ লােকদের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত
হত।”
জবাব : এ উক্তি দ্বারা নবীগণের প্রতি অবমাননা প্রকাশ পেয়েছে। নবীগণ তাে অন্যের অন্তরের ময়লা দূর করেন। তাদের অন্তরে আবার কেমন করে ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত হবে? এ ধরণের কুফুরী আকিদা যে ব্যক্তি পােষন করবে তার অন্তরই ময়লা ও আবর্জনা তথা কুফুরীতে ভরা। সেই দৃষ্টিতে ইলিয়াছ মেওয়াতীর অন্তরই কুফুরীতে পরিপূর্ণ। তা নাহলে সে কিভাবে নবীদের প্রতি এমন ধারণা করতে পারে? নবীগণ হেদায়েত দেওয়ার জন্য দুনিয়াতে আসছেন, হেদায়েত নেওয়ার জন্য নয়।
৭। উক্ত কিতাবের ১১৩নং মালফুজাত (৪) এ ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “জাকাত ও সদকা তাে পাতিলের ময়লা ও দূষিত অংশের মত, উহা বের করে ফেলা জরুরী। হাদিয়া হলাে তৈরি খাবারে খুসবু সুগন্ধি ঢেলে দেয়া।”
জবাব ঃ যাকাত হলাে ইসলামী পঞ্চবেনা তথা ৫টি ভিত্তির একটি। ইহা ফরজ অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত না দিলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। অথচ ইলিয়াছ মেওয়াতী ফরজ যাকাতকে ময়লা ও আবর্জনার সাথে তুলনা করেছেন অর্থাৎ তার মতে ফরজ (যাকাত) হলাে ময়লা ও আবর্জনা (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্যই ইলিয়াছ মেওয়াতী তার ৬টি উসুলের মধ্যে যাকাত কে বাদ দিয়েছে। যে ব্যক্তি ফরজকে ময়লা ও আবর্জনার সাথে তুলনা করে, সে বেঈমান অর্থাৎ তার ঈমান বলতে কিছুই নাই যদিও সে লেবাছধারী। কাদিয়ানীরাও লেবাছধারী কিন্তু মুসলিম নয়।।
* ৮। উক্ত কিতাবের ১১৩ নং মালফুজাত (৩) এ ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তাবলীগী কাজে বের হওয়া হলাে হিজরত।”
জবাব: তার কথায় বুঝা যায় যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মদীনা হিজরত করা আর তাবলীগ জামাতীদের মসজিদে মসজিদে অবস্থান করা এক সমান সওয়াব। ইলিয়াছ মেওয়াতীর এ ধরণের উক্তি ইসলাম ও নবীজি (সা) এর প্রতি কটাক্ষ ছাড়া কিছুই নয়। কেননা হিজরত কাকে বলে তিনি জানেন না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন মক্কায় কাফেরগণ হত্যা করার পরিকল্পনা করছিল, তখন মহান আল্লাহর হুকুমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করলেন। কোথায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত আর কোথায় তাবলীগ জামাতীদের মসজিদ ভ্রমন। হিজরত আর ভ্রমন কি এক হয়? হায়রে ভন্ড ইলিয়াছ! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের অত্যাচারে হিজরত করেছেন, আর তাবলীগ জামাতের লােকজন পরিবারের ভােরণ-পােষনের ভয়ে মসজিদ ভ্রমন করেন। আবার কিছু আসামী পুলিশের ভয়ে তাবলীগ জামাতে গিয়ে সামিল হয়।
আরও কিছু বিদ্বান লােক (নিজেদের মতে) সত্যের মানদন্ডে বিচার না করে সওয়াবের
আশায় বুক বেঁধে তাবলীগের ভ্রমনে বের হয়। কোথায় হিজরত আর কোথায় ভ্রমন!
কোথায় হিজরত আর কোথায় আসামীর পলায়ন?
আরও উল্লেখ্য যে, যেদিন মক্কা বিজয় হয়েছে সেদিন থেকে হিজরত বন্ধ হয়ে গেছে। প্রমান স্বরূপ দেখুন বুখারী শরীফের কিতাবুল জিহাদের বাবু লা হিজরাতা বা'দাল ফাত'ই পরিচ্ছেদ (জিহাদ অধ্যায়ের ‘বিজয়ের পর হিজরতের দরকার নেই’ পরিচ্ছেদ)।
পাঠকগণের সুবিধার্থে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বুখারী শরীফের ৫ম খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা জিহাদ অধ্যায়ের বিজয়ের পর হিজরতের দরকার নেই' পরিচ্ছেদ হতে ২টি হাদিস শরীফ উল্লেখ করছি।
۲۸۹۹) حدثنا ابراهيم بن موسى أخبرنا يزيد بن زريع عن خالد عن أبي عثمان النهدي عن مجاشع بن مسعود قال جاء مجاشع بأخيه مجالد بن مسعود الى النبي في تقال هذا مجالد يبايعك على الهجرة فقال لا هجرة بعد فتح مكة ولكن أباي على الإسلام
২৮৬১ নং হাদিসঃ হযরত মজাশি' ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
মুজাশি তার ভাই মুজালিদ ইবনে মাসউদ (রা.) কে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, 'এ মুজালিদ আপনার কছে হিজরত করার জন্য
বাইয়াত করতে চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়ােজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম
সম্পর্কে বাইয়াত নিচ্ছি।'
[۲۸۹۲ حدثنا علي بن عبد الله حدثنا سفيان قال عمرو وابن جري اسمنت عطاء يقول : ذهبت مع عبيد بن عمير الى عائشة رضي الله عثها وهي مجاورة بثبير قالت لنا : انقطعت الهجرة من الله
في مكة على نبيه
২৮৬২ নং হাদিস ঃ হযরত আতা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমাইর (রা:) সহ আয়িশা (রা:) এর নিকট গমন করি।তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদের বললেন, 'যখন থেকে আল্লাহ তা'য়ালা তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন হিজরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।'
বুখারী শরীফের উপরােক্ত ২টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মক্কা বিজয়ের পরে আর কোন হিজরত নেই। তাই তাবলীগ জামাতের মসজিদ সফর কোন হিজরত নয় ।
ইলিয়াছ মেওয়াতির উক্তি “তাবলীগী কাজে বের হওয়া হলাে হিজরত" ইহা সম্পূর্ণ
মনগড়া ও হাদীস বিরােধী উক্তি। এ ধরণের উক্তি করা ভন্ডামীর লক্ষণ বৈ কিছু নয়।
৯। উক্ত কিতাবের ১৪০ নং মালফুজাতে বলেন-“তাবলীগের কাজে তিন দিন দাও, পাঁচদিন দাও অথবা সাতদিন দাও-এসব কথা ছেড়ে দাও। শুধু এ কথাই বলতে থাক যে, ইহাই একমাত্র রাস্তা, যে যত বেশি করবে, ততই বেশি পাবে। এর কোন সীমা নাই শেষ নাই।"
জবাবঃ ইলিয়াছ মেওয়াতী এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তার আবিষ্কার
করা তাবলীগই একমাত্র রাস্তা বা সঠিক পথ। এখন যারা প্রচলিত তাবলীগ করে না,
তারা কি মুসলমান নয়? হযরত হাসান বসরী (রহ.), বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী
(রহ.), খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.), শাহ জালাল (রহ.) প্রমুখ আউলিয়ায়ে কেরামগণ এই তাবলীগ করেননি। তাঁদের সময় এই তাবলীগ ছিল না। তাহলে তারা কি ভ্রান্ত ছিলেন? (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্যই কি তাবলীগ জামাতের সদস্যরা মসজিদে মসজিদে ঘুরে তাবলীগ করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন মুসলমান বানানাের জন্য?
ইলিয়াছ মেওয়াতীর কথায় বােঝা যায় যে, তার তাবলীগী রাস্তা সঠিক আর সাহাবা ও
আউলিয়ায়ে কেরামের রাস্তা ভ্রান্ত (নাউযুবিল্লাহ)।
১০। উক্ত কিতাবের ২০৯ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব আমার নিকট বর্তমানে এত জরুরী যে, যদি কোন ব্যক্তি নামাজরত অবস্থায় দেখে যে, একজন নতুন মানুষ আসছে এবং ফিরে যাচ্ছে, পুনরায় তাকে পাবার সম্ভাবনা নেই। তবে আমার মতে মধ্যখানে নামাজ ভেঙ্গে ঐ ব্যক্তির সাথে দ্বীনি কথাবার্তা সেরে নেয়া উচিত।
জবাব ঃ ইসলামী শরিয়তে দ্বীনের কথা বলার উদ্দেশ্যে নামাজ ভেঙ্গে ফেলার কোন
অনুমতি নাই। ইহা একটি মনগড়া আকিদা যা, ইলিয়াস মেওয়াতী নিজেও স্বীকার করেছেন। কেননা তিনি নিজেই বলেছেন আমার মতে অর্থাৎ ইসলামী মত তথা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতে নয়। যারা ইলিয়াছ মেওয়াতীর এ কথা বিশ্বাস করবে তারা নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাদ দিয়ে ইলিয়াছকেই নবী বানিয়ে নিবে (নাউযুবিল্লাহ)। আর নামাজের মধ্যে একাগ্রতা থাকলে তথা হুজুরী কলবে নামাজ হলে কে আসলাে বা গেলাে তা বােঝা যাবে না।
নামাজের মধ্যে একাগ্রতা না থাকলে কি নামাজ হবে? উপরের উক্তি ও তার জবাব হতে প্রতীয়মান হয় যে, তাবলীগ জামাতীরা ইসলামী মতবাদ বাদ দিয়ে নিজেদের তথা ইলিয়াছের মতবাদ অর্থাৎ বদমাযহাব গ্রহণ ও প্রচার করছে। শক্ত হাতে ইহা প্রতিরােধ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঈমানী দায়িত্ব। বিশ্ব
বিখ্যাত দার্শনিক হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) এহইয়াউ উলুমিদ্দীন' কিতাবে মন্তব্য
করেন যে, কোন বদমাযহাবীকে ওয়াজ করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওয়াজ বন্ধ
করার নির্দেশ দিবে। অনুরূপভাবে বদমাযহাবীদের ওয়াজ মাহফিলে গমন করা
ঈমানদার মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই। তবে তার বদমাযহাব খন্ডন করা বা তার
সাথে বাহাছ করার উদ্দেশ্যে তার মাহফিলে গমন করা বৈধ।
আল্লামা ইমাম তাহতাবী বলেন, বদমাযহাবী আলেমের ওয়াজ শ্রবণ করা জায়েজ নাই। এরূপ আলেমকে দিয়ে ইমামতির দায়িত্ব অর্পণ করাও নাজায়েজ। ভুলবশতঃ যদি তার পিছনে নামাজ আদায় করা হয়, তবে সেই নামাজ পুনরায় পড়তে হয়। তাই ভ্রান্ত তাবলীগ জামাতের অনুসারী আলেমের ওয়াজ শুনা হতে এবং তাদের পিছনে
নামাজ আদায় হতে বিরত থাকুন। কেননা তাবলীগ জামাতীগণ বদমাযহাব অনুসরণ
করে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বােঝার তাওফিক দান করুন এবং সঠিক পথে
পরিচালনা করুন। আমিন!!!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন