আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ফকীহে আজম মাওলানা শাহ আহমদ রজা খান রহমতুল্লাহি আলায়হি এর সাড়া জাগানাে ফতওয়া।
(ইহা রজভীয়া লাইব্রেরী, আরামবাগ, করাচী কর্তৃক মুদ্রিত ফতওয়ায়ে রজভীয়ার ষষ্ঠ খন্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় ছাপানাে হয়েছে।)
++++++++++++++++
জবাবঃ
رب أعوذ بك من همزات الشياطين - واعوذ بك رب أن يحضرون - والذين يوذون رسول ا الله لهم عذاب اليم - أن الذين يوذون ال له ورسوله لعنهم ا الله في الدنیا والآخرة واعد لهم عذابا مهينا - الا لعنة ا الله على الظالمين.
তরজমাঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররােচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালন কর্তা, আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক সাজা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শান্তি। সাবধান! জালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। মুসলিম নামধারীদের মধ্যে যারা (শানে রেছালতের অবমাননা সম্বলিত) ঐ অভিশপ্ত পত্র খানা রচনা করেছে তারা কাফের-মুরতাদ (অর্থাৎ ধর্মত্যাগী) যারা ঐ পত্র খানার উপর দ্বিতীয় দফায় নজর দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছে তারাও কাফের, মুরতাদ। যাদের তত্তাবধানে তৈরী হয়েছে তারাও কাফের, মুরতাদ। মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঐ অভিশপ্ত পত্রের বক্তব্য এর অনুবাদ করে নবীজীর অপমান-অবমাননার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, বা উহার বক্তব্যকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছে কিংবা অভিশপ্ত পত্রকে
নিজেদের নম্বর কমিয়ে দেয়া বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার চেয়ে সহজ বিষয় বলে ধারণা করেছে তারা সবাই কাফের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) প্রাপ্ত বয়স্ক হউক অপ্রাপ্তবয়স্ক।
উপরােক্ত চার দলের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে সালাম কালাম করা, মেলামেশা, উঠা-বসা করা সবই সম্পূর্ণ রূপে হারাম। তাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করলে তাকে গােসল দেয়া, কাফন পরানাে, তাঁর মৃতদেহবাহী খাট বহন করা, তার জানাযার নামাযে অংশগ্রহন করা, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তার আত্মায় ছওয়াব পৌঁছানাে ইত্যাদী সন্দেহাতীত ভাবে হারাম, বরং এহেন মৃত কাফের, মুরতাদগণের নিকটাত্মীয়রা যদি শরিয়তের বিধি-বিধান মান্য করেন তবে তাদের কর্তব্য হবে এই অভিশপ্তদের মৃতদেহগুলাে কুকুর মরা-শৃগাল মরার ন্যায় চামার-কুমার এর সাহায্যে পর্বত চূড়ায় উঠিয়ে কোন সরু-সংকীর্ণ গর্তের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করে যাতে গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের গলিত লাশের দূর্গন্ধে আল্লাহর সৃষ্ট জীবরা কষ্ট না পায়। এই বিধান সকল নবী-বিদ্বেষীদের জন্য সমান ভাবে প্রযােজ্য।
উপরােক্ত কাফের,মুরতাদ গণের বিবাহিত স্ত্রীরা বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পরস্পর কাছাকাছি হলে ব্যভিচার হিসাবে গন্য হবে এবং এর কারণে সন্তান হলে অলদুজ যেনা তথা ব্যভিচারের সন্তান বলে ধর্তব্য হবে। ইসলামী শরিয়তের পক্ষ থেকে এদের স্ত্রীরা অধিকার লাভ করেছে যে, নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত হলে তারা নিজেদের পছন্দনীয় যে কোন লােকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
যদি এ সকল কাফের,মুরতাদগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, "কুফরী"কে স্বীকার করে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় তবে তাদের ব্যাপারে মৃত্যু সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান
গুলাে স্থগিত হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে সালাম-কালাম, মেলামেশা সংক্রান্ত নিষধাজ্ঞা গুলাে পুরােপুরী বহাল থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক আচার-আচরণ এর দ্বারা তাদের ইখলাছ-আন্তরিকতা সহকারে তাওবা করার সত্যতা এবং ঈমান- ইসলাম গ্রহণের বিশুদ্ধতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হয়, তবে এরপরও তাদের পূর্বের স্ত্রীগণ তাদের নিকট ফিরে আসতে বাধ্য নয়। বরং তাদের এখতেয়ার বহাল থাকবে যে তারা তাদের পছন্দানুসারে কোন লােকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিংবা আদৌ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না।হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে পূর্বের স্বামীর সঙ্গেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
অতঃপর ঈমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রজা খান (রঃ) তাঁর প্রদত্ত উপরােক্ত ফতওয়ার সমর্থনে শরিয়তের ইমামগণের বিভিন্ন অভিমত এবং বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ফতওয়া গ্রন্থের বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিম্নে উপস্থাপন করেছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রহঃ) তাঁর রচিত বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ শেফা শরীফের।৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اجمع العلماء ان شاتم النبي صلى ا الله عليه وسلم والمنقص له كافر والوعید چار। عليه بعذاب ا الله تعالي ومن شك في کفره وعذابه فقد كفر
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ইজমায়" (অর্থাৎ সর্বসম্মত শরয়ী সিদ্ধান্ত) উপনীত হয়েছেন যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে অবমাননা কারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাবের হুঁশয়ারী কার্যকরী। আর।যারা সে ব্যক্তির কাফের হওয়ার এবং আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহঃ) তাঁর রচিত নছীমুর রেয়াজ" গ্রন্থের চতুর্থ খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
ماصرح به من كفر الساب والشاك في كفره هو ماعليه ائمتنا وغيرهم
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর মহান শানে অবমাননাকারী কাফের হওয়া এবং যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও
কাফের হওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মহান ইমামগণ এবং অন্যান্য ইমামদের মাজহাব।
ওয়াযীযে ইমাম কুরদরী, তৃতীয় খন্ডের ৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
لو ارتد والعياذ بالله تعالی تحرم امرأته يجدد التكاح بعد اسلامه والمولود بينهما قبل تجديد النكاح بالوطى بعد التكلم بكلمة الكفر ولد زنا ثم ان آتی بكلمة الشهادة على العادة لايجد به مالم يرجع عما قاله لأن باتيانهما علی العادة لايرتفع الكفر اذا سب الرسول صلى ال له عليه وسلم او واحدا من
الأنبياء عليهم الصلوة والسلام فلاتوية له واذا شتمه عليه الصلوة والسلام سکران لايعفي واجمع العلماء ان شاتمه كافر ومن شك في عذابه وكفره كفر ملنقط كاكثر الأواني ل لاختصار
অর্থাৎ যে ব্যক্তি (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদ হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। অতঃপর ইসলাম গ্রহনের পর বিবাহ বন্ধনকে নবায়ন করা অপরিহার্য হয়। ইতিপূর্বে কুফরী বাক্য উচ্চারনের পর যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয় আর তা হতে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে উহা জারজ সম্তান হবে। আর যদি সে ব্যক্তি কুফরী বাক্য থেকে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা না করে শুধু অভ্যাসগত ভাবে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তবে এর দ্বারা সে কোনরূপ উপকৃত হবে না। কেননা অভ্যাস বশতঃ কলেমা পাঠের দ্বারা মুরতাদ ব্যক্তির কুফরী রহিত হয় না। যে ব্যক্তি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী -রাসূল আলায়হিমুসসালামের শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করবে তার তাওবা কবুল হবে না। আর যে লােক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা করবে তাও ক্ষমা করা হবে না এবং উম্মতের সকল ওলামায়ে কেরাম ইজমায়' অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, নবী করীম রউফুর রহীম (সাঃ) এর শানে অপমান-অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
ইমামে মুহাক্বিক ইবনুল হুম্মাম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "ফাতহুল ক্বদীর"এর চতুর্থ খন্ডের ৪০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
كل من آبغض رسول الله صلی الله عليه وسلم بقلبه کان مرتدا فالساب بطريق أولى وان سب سكران لايعفى عنه.
: অর্থাৎ যার অন্তরে রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্ধেষভাব লুকায়িত থাকবে সে মুরতাদ। অতএব রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী অধিকতর সঙ্গত কারণে কাফের বলে গন্য হবে। আর যে ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অবমাননা করবে তাও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
বাহুরুর রায়েক' পঞ্চম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখিত হওয়ার পর ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে-
سب واحدا من الانبياء كذلك فلا يفید الانكار مع البينة . . . . . فجعل انکار الردة توية أن كانت مقبولة.
অর্থাৎ যে কোন নবীর শানে অবমাননাকারীর হুকুম অনুরূপ অর্থাৎ সে কাফের, তাকে ক্ষমা করা হবে না। কেননা অবমাননা প্রমানিত হওয়ার পর অস্বীকার এর দ্বারা কোন উপকার পাওয়া যায় না। তাছাড়া মুরতাদ এর অস্বীকার তাে সাজা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে তাওবা তাে সেই বিষয়ে হয়ে থাকে যেখানে গ্রহনযােগ্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, এখানে মােটেও ক্ষমা পাওয়ার অবকাশ নেই।
আল্লামা মাওলানা খছরু "দুরারুল আহকাম" এর প্রথম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبياء صلوات ال له عليهم اجمعين مسلم فلاتوية له اصلا واجمع العلماء أن شاتمه كافر ومن شك في عذابه. وكفره كفر.
অর্থাৎ যদি কোন নামধারী মুসলিম রাসূলে আকরম ফখরে দোআলম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা করে তাকে কখনাে ক্ষমা করা হবে না। কেননা, তার জন্য আদৌ তাওবার সুযােগ নেই। কেননা উম্মতের সকল উলামায়ে কেরাম এ মাসআলায় "ইজমায়" উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে, ব্যক্তি তার কাফের ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
শুনইয়াযুল আহকাম" এর ৩০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
محل قبول توية المرتد مالم تكن ردة بسب النبی صلى الله عليه وسلم او بغضه صلى الله عليه وسلم فان كان به لاتقبل تويته سواء جاء تانيا من نفسه او شهد عليه بذلك بخلاق غيره من المكفرات.
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত শানে অবমাননা করা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, অন্যান্য কুফরীর কারণে মুরতাদ ব্যক্তির তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী মুরতাদের জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের সুযােগ নেই।
আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের" "আর রিদ্দাহ" অধ্যায় উল্লেখিত আছে-
الاقصح ردة السكران الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم فانه لايعفی عنه وكذا في البزازية وحکم الردة بينونة امرأته مطلقا )ای سواء رجع او لم يرجع غمز العيون( واذا مات على ردته لم يدفن فی مقابر المسلمين ولا احل ملة وانما يلقي في حفرة كالكلب والمرتد اقبح كفرا من الكافر الاصلی واذا شهدوا على مسلم بالردة وهو منكر لايتعرض له لالتکذيب الشهود العدول بل لأن انکاره توية ورجوع فتثبت الأحكام التي للمرتد ماتاب من حبط الأعمال وبينونة الزوجة وقوله لايتعرض له اغا هو في مرتد تقبل توتبه في الدنيا الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم الأولى تنكير النبي كما عبر به سبق غمز العيون
অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যদি কারাে মুখ দিয়ে কোন প্রকার কুফরী বাক্য বের হয়ে যায় তবে তাকে নেশার কারণে কাফের বলা হবে না কিংবা কুফরীর সাজাও দেয়া হবে না।
কিন্তু নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমামন্ডিত শানে অবমাননা করা এমন কুফরী-যা নেশাগ্রস্থ হওয়ার অজুহাতে ক্ষমার যােগ্য হবে না (বজজাযিয়া গ্রন্থেও অনুরূপ উল্লেখিত আছে) আর (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদের হুকুম হলাে- সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। যদি সে পরবর্তীতে নতুন ভাবে ইসলাম গ্রহণ করে তবুও তার স্ত্রী বিবাহ বদ্ধনে ফিরে আসবে না। আর যদি মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যু হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে কিংবা ইয়াহুদী-নাছারাদের কবরস্থানেও দাফন করা যাবে না। বরং কুকুর মরার ন্যায় কোন গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। মুরতাদের কুফরী প্রকাশ্য ও মৌলিক কাফের এর কুফরীর চেয়ে নিকৃষ্টতর । যদি ন্যায় পরায়ন সাক্ষীর কোন মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, অমুক বক্তব্য বা কাজের দরুন সে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর সে লােকটি উহা অস্বীকার করে। তাহলে তার উপর কোন রূপ শাস্তি আরােপ করা যাবে না। এই বিধান ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্যকে মিথ্যা বলে গন্য করার প্রেক্ষিতে নয়। বরং এজন্য যে, মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার করাকে তার কুফরী বক্তব্য বা আচরণ থেকে তাওবা হিসেবে গ্রহন করে।
অতএব ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার উভয়ের ফলাফল হলাে- ঐ ব্যক্তি কুফরী বক্তব্য বা আচরনের কারণে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তাওবা করেছে। তাই এখন সেই ব্যক্তির উপর ঐ মুরতাদের হুকুম কার্যকরী হবে, যে কুফরী থেকে তাওবা করেছে। আর তা হলাে তার আমল সমূহ বরবাদ হয়ে যাবে। স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কোন শাস্তি প্রয়ােগ করা হবে না। কিন্তু রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করা এমন কুফরী যার সাজা দুনিয়ায় তাওবা করার পরও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
"দুররে মুখতার"গ্রন্থকারের উস্তাদ ইমাম খাইরুদ্দীন রমলী (রহঃ) "ফাতাওয়া খাইরিয়া"এর প্রথম খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
من سب رسول ال له صلى الله عليه وسلم فانه مرتد وحكمه حكم المرتدین ويفعل به مايفعل بالمرتدين ولاتوية له اصلا واجمع العلماء انه كافر ومن شك في كفره كفر.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে সে মুরতাদ। তার হুকুম হলাে মুরতাদের হুকুম। তার সঙ্গে ঐ আচরণ করা হবে যা মুরতাদগনের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। তার জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রাপ্তির অবকাশ নেই। উম্মতের আলেমগণ ইজমায় উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি এতে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
মাজমাউল আনহার শরহে মুলতাকাল আবহার' নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৬১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে যে-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبيا، مسلم ولو سکران فلا توية له تنجیه کالزنديق ومن شك في عذابه وكفره فقد كفر.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলমান নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে যদি নেশাগ্রস্থাবস্থায়ও অবমাননা করে সে এমন মুরতাদ- কাফের হয়ে যাবে যার জন্য তাওবার সুযােগ নেই। যেমন যিন্দীক এর জন্য তাওবার অবকাশ নেই। আর যে লােক এই মুরতাদের কুফুরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
আল্লামা আখী ইউসুফ (রহঃ) "জখিরাতুল উকবা" নামক গ্রন্থের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قد اجمعت الامة على أن الاستخفاف بنبينا صلى ال له عليه وسلم وبای نبئ كان عليهم الصلوة والسلام كفر سواء فعله على ذلك مستحلا أم فعله معتقدا لحرمته وليس بين العلماء خلاف في ذلك ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ সকল উম্মত সন্দেহাতীতভাবে এই বিষয়ে ইজমায় (অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ,পৌছেছেন
যে, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে অবমাননা কারী কাফের। চাই সে অবমাননা করাকে হালাল জেনে করুক অথবা হারাম জেনে করুক, সর্বাবস্থায় সে কাফের। এ মাসআলায় উলামাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। আর যে লােক অবমাননাকারী কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
উপরােক্ত কিতাবের ২৪২পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
لايغسل ولايصل عليه ولايكفن اما اذا تاب وتبرأ عن الارتداد ودخل فی دین الإسلام ثم مات غسل وكفن وصلى فيه ودفن في مقاير المسلمين.
অর্থাৎ সেই অবমাননাকারী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল, কাফন কিছুই দেয়া যাবে না। এবং তার উপর জানাযার নামাজও পড়া যাবে না। কিন্তু যদি সে তাওবা করে পূর্বের কুফরী হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায় এবং ইসলাম ধর্মে আন্তরিকভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় অতঃপর মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল-কাফন দেয়া যাবে, তার উপর জনাযার নামাজ পড়া যাবে এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে।
শাইখুল ইসলাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ "তানভীরুল আবচার" নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
كل مسلم ارتد فتوبته مقبولة الا الكافر سب النبی صلى الله عليه وسلم.
অর্থাৎ সকল মুরতাদ ব্যক্তির তাওবা কবুল হয় কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী এমন কাফের যার তাওবা কবুল হবে না এবং দুনিয়ার সাজা থেকে রক্ষাও হবে না।
"দুররে মুখতার" গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
لكافر بسب نبي من الانبياء لاتقبل تويته مطلقا ومن شك في عذابه كفره كفر.
অর্থাৎ কোন নবীর শানে অপমান-অবমাননা কারী এমন কাফের যার তাওবা কখনো কবুল হবে না এবং দুনিয়ায় কোনরূপ শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না। আর যে ব্যক্তি
তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) "কিতাবুল খারাজের ১১২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
يما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او كذبه او عابه او تنقُّصه فقد كفر بال له تعالی وبانت زوجته
অর্থাৎ যে লােক মুসলমান হওয়ার পর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, নবীর শানে দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। উপরােল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের কাফের এবং মুরতাদ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা করলে তা কবুল হবে।
তবে এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে যে, ইসলামী সরকার প্রধান তাদেরকে তাওবা করে ইসলাম গ্রহণের পর শুধু কি তা'যীর অর্থাৎ নাকি তখনও মৃত্যুদন্ড দান করবে। বজ্জাযিয়া এবং অন্যান্য অনেক নির্ভরযােগ্য কিতাবে যে রয়েছে তাদের তাওবা কবুল হবে না তার ব্যাখ্যা ইহাই। উহার আলােচনা এখানে নিস্প্রয়োেজন। কেননা কোথায় ইসলামী সুলতান-বাদশা আর কোথায় মৃত্যুদন্ডের বিধান। শত - সহস্র দুশ্চরিত্র, ধূর্ত, অভিশপ্ত, সীমালংঘনকারী যারা উঁচু স্তরের মুসলমান তথা মুফতী,
মুদাররিছ, ওয়ায়েজ এবং শাইখুল ইসলাম বলে আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকর বড় বড় অভিশপ্ত বুলি আওড়ায় যাদের বাধা প্রদান করার কিংবা বারণ করার কেউ নেই। আর কেউ প্রতিবাদ করলে তা তথাকথিত সভ্যতার ধবজাধারী অভিজাত মুসলমানদের নিকট অসভ্যতা আর ধর্মীয় গোঁড়ামী বলে বিবেচিত হয় (নাউযুবিল্লাহ)।
فانظر الی آثار مقت الله الغيور - كيف انقلبت القلوب وانعکست الأمور ، ولاحول ولاقرة الا با الله العلى العظيم - وسيعلم الذین ظلموا ای منقلب ينقلبون. والله تعالی اعلم.
(ইহা রজভীয়া লাইব্রেরী, আরামবাগ, করাচী কর্তৃক মুদ্রিত ফতওয়ায়ে রজভীয়ার ষষ্ঠ খন্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় ছাপানাে হয়েছে।)
++++++++++++++++
জবাবঃ
رب أعوذ بك من همزات الشياطين - واعوذ بك رب أن يحضرون - والذين يوذون رسول ا الله لهم عذاب اليم - أن الذين يوذون ال له ورسوله لعنهم ا الله في الدنیا والآخرة واعد لهم عذابا مهينا - الا لعنة ا الله على الظالمين.
তরজমাঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররােচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালন কর্তা, আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক সাজা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শান্তি। সাবধান! জালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। মুসলিম নামধারীদের মধ্যে যারা (শানে রেছালতের অবমাননা সম্বলিত) ঐ অভিশপ্ত পত্র খানা রচনা করেছে তারা কাফের-মুরতাদ (অর্থাৎ ধর্মত্যাগী) যারা ঐ পত্র খানার উপর দ্বিতীয় দফায় নজর দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছে তারাও কাফের, মুরতাদ। যাদের তত্তাবধানে তৈরী হয়েছে তারাও কাফের, মুরতাদ। মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঐ অভিশপ্ত পত্রের বক্তব্য এর অনুবাদ করে নবীজীর অপমান-অবমাননার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, বা উহার বক্তব্যকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছে কিংবা অভিশপ্ত পত্রকে
নিজেদের নম্বর কমিয়ে দেয়া বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার চেয়ে সহজ বিষয় বলে ধারণা করেছে তারা সবাই কাফের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) প্রাপ্ত বয়স্ক হউক অপ্রাপ্তবয়স্ক।
উপরােক্ত চার দলের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে সালাম কালাম করা, মেলামেশা, উঠা-বসা করা সবই সম্পূর্ণ রূপে হারাম। তাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করলে তাকে গােসল দেয়া, কাফন পরানাে, তাঁর মৃতদেহবাহী খাট বহন করা, তার জানাযার নামাযে অংশগ্রহন করা, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তার আত্মায় ছওয়াব পৌঁছানাে ইত্যাদী সন্দেহাতীত ভাবে হারাম, বরং এহেন মৃত কাফের, মুরতাদগণের নিকটাত্মীয়রা যদি শরিয়তের বিধি-বিধান মান্য করেন তবে তাদের কর্তব্য হবে এই অভিশপ্তদের মৃতদেহগুলাে কুকুর মরা-শৃগাল মরার ন্যায় চামার-কুমার এর সাহায্যে পর্বত চূড়ায় উঠিয়ে কোন সরু-সংকীর্ণ গর্তের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করে যাতে গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের গলিত লাশের দূর্গন্ধে আল্লাহর সৃষ্ট জীবরা কষ্ট না পায়। এই বিধান সকল নবী-বিদ্বেষীদের জন্য সমান ভাবে প্রযােজ্য।
উপরােক্ত কাফের,মুরতাদ গণের বিবাহিত স্ত্রীরা বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পরস্পর কাছাকাছি হলে ব্যভিচার হিসাবে গন্য হবে এবং এর কারণে সন্তান হলে অলদুজ যেনা তথা ব্যভিচারের সন্তান বলে ধর্তব্য হবে। ইসলামী শরিয়তের পক্ষ থেকে এদের স্ত্রীরা অধিকার লাভ করেছে যে, নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত হলে তারা নিজেদের পছন্দনীয় যে কোন লােকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
যদি এ সকল কাফের,মুরতাদগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, "কুফরী"কে স্বীকার করে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় তবে তাদের ব্যাপারে মৃত্যু সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান
গুলাে স্থগিত হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে সালাম-কালাম, মেলামেশা সংক্রান্ত নিষধাজ্ঞা গুলাে পুরােপুরী বহাল থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক আচার-আচরণ এর দ্বারা তাদের ইখলাছ-আন্তরিকতা সহকারে তাওবা করার সত্যতা এবং ঈমান- ইসলাম গ্রহণের বিশুদ্ধতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হয়, তবে এরপরও তাদের পূর্বের স্ত্রীগণ তাদের নিকট ফিরে আসতে বাধ্য নয়। বরং তাদের এখতেয়ার বহাল থাকবে যে তারা তাদের পছন্দানুসারে কোন লােকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিংবা আদৌ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না।হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে পূর্বের স্বামীর সঙ্গেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
অতঃপর ঈমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রজা খান (রঃ) তাঁর প্রদত্ত উপরােক্ত ফতওয়ার সমর্থনে শরিয়তের ইমামগণের বিভিন্ন অভিমত এবং বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ফতওয়া গ্রন্থের বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিম্নে উপস্থাপন করেছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রহঃ) তাঁর রচিত বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ শেফা শরীফের।৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اجمع العلماء ان شاتم النبي صلى ا الله عليه وسلم والمنقص له كافر والوعید چار। عليه بعذاب ا الله تعالي ومن شك في کفره وعذابه فقد كفر
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ইজমায়" (অর্থাৎ সর্বসম্মত শরয়ী সিদ্ধান্ত) উপনীত হয়েছেন যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে অবমাননা কারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাবের হুঁশয়ারী কার্যকরী। আর।যারা সে ব্যক্তির কাফের হওয়ার এবং আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহঃ) তাঁর রচিত নছীমুর রেয়াজ" গ্রন্থের চতুর্থ খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
ماصرح به من كفر الساب والشاك في كفره هو ماعليه ائمتنا وغيرهم
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর মহান শানে অবমাননাকারী কাফের হওয়া এবং যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও
কাফের হওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মহান ইমামগণ এবং অন্যান্য ইমামদের মাজহাব।
ওয়াযীযে ইমাম কুরদরী, তৃতীয় খন্ডের ৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
لو ارتد والعياذ بالله تعالی تحرم امرأته يجدد التكاح بعد اسلامه والمولود بينهما قبل تجديد النكاح بالوطى بعد التكلم بكلمة الكفر ولد زنا ثم ان آتی بكلمة الشهادة على العادة لايجد به مالم يرجع عما قاله لأن باتيانهما علی العادة لايرتفع الكفر اذا سب الرسول صلى ال له عليه وسلم او واحدا من
الأنبياء عليهم الصلوة والسلام فلاتوية له واذا شتمه عليه الصلوة والسلام سکران لايعفي واجمع العلماء ان شاتمه كافر ومن شك في عذابه وكفره كفر ملنقط كاكثر الأواني ل لاختصار
অর্থাৎ যে ব্যক্তি (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদ হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। অতঃপর ইসলাম গ্রহনের পর বিবাহ বন্ধনকে নবায়ন করা অপরিহার্য হয়। ইতিপূর্বে কুফরী বাক্য উচ্চারনের পর যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয় আর তা হতে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে উহা জারজ সম্তান হবে। আর যদি সে ব্যক্তি কুফরী বাক্য থেকে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা না করে শুধু অভ্যাসগত ভাবে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তবে এর দ্বারা সে কোনরূপ উপকৃত হবে না। কেননা অভ্যাস বশতঃ কলেমা পাঠের দ্বারা মুরতাদ ব্যক্তির কুফরী রহিত হয় না। যে ব্যক্তি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী -রাসূল আলায়হিমুসসালামের শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করবে তার তাওবা কবুল হবে না। আর যে লােক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা করবে তাও ক্ষমা করা হবে না এবং উম্মতের সকল ওলামায়ে কেরাম ইজমায়' অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, নবী করীম রউফুর রহীম (সাঃ) এর শানে অপমান-অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
ইমামে মুহাক্বিক ইবনুল হুম্মাম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "ফাতহুল ক্বদীর"এর চতুর্থ খন্ডের ৪০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
كل من آبغض رسول الله صلی الله عليه وسلم بقلبه کان مرتدا فالساب بطريق أولى وان سب سكران لايعفى عنه.
: অর্থাৎ যার অন্তরে রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্ধেষভাব লুকায়িত থাকবে সে মুরতাদ। অতএব রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী অধিকতর সঙ্গত কারণে কাফের বলে গন্য হবে। আর যে ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অবমাননা করবে তাও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
বাহুরুর রায়েক' পঞ্চম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখিত হওয়ার পর ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে-
سب واحدا من الانبياء كذلك فلا يفید الانكار مع البينة . . . . . فجعل انکار الردة توية أن كانت مقبولة.
অর্থাৎ যে কোন নবীর শানে অবমাননাকারীর হুকুম অনুরূপ অর্থাৎ সে কাফের, তাকে ক্ষমা করা হবে না। কেননা অবমাননা প্রমানিত হওয়ার পর অস্বীকার এর দ্বারা কোন উপকার পাওয়া যায় না। তাছাড়া মুরতাদ এর অস্বীকার তাে সাজা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে তাওবা তাে সেই বিষয়ে হয়ে থাকে যেখানে গ্রহনযােগ্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, এখানে মােটেও ক্ষমা পাওয়ার অবকাশ নেই।
আল্লামা মাওলানা খছরু "দুরারুল আহকাম" এর প্রথম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبياء صلوات ال له عليهم اجمعين مسلم فلاتوية له اصلا واجمع العلماء أن شاتمه كافر ومن شك في عذابه. وكفره كفر.
অর্থাৎ যদি কোন নামধারী মুসলিম রাসূলে আকরম ফখরে দোআলম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা করে তাকে কখনাে ক্ষমা করা হবে না। কেননা, তার জন্য আদৌ তাওবার সুযােগ নেই। কেননা উম্মতের সকল উলামায়ে কেরাম এ মাসআলায় "ইজমায়" উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে, ব্যক্তি তার কাফের ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
শুনইয়াযুল আহকাম" এর ৩০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
محل قبول توية المرتد مالم تكن ردة بسب النبی صلى الله عليه وسلم او بغضه صلى الله عليه وسلم فان كان به لاتقبل تويته سواء جاء تانيا من نفسه او شهد عليه بذلك بخلاق غيره من المكفرات.
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত শানে অবমাননা করা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, অন্যান্য কুফরীর কারণে মুরতাদ ব্যক্তির তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী মুরতাদের জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের সুযােগ নেই।
আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের" "আর রিদ্দাহ" অধ্যায় উল্লেখিত আছে-
الاقصح ردة السكران الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم فانه لايعفی عنه وكذا في البزازية وحکم الردة بينونة امرأته مطلقا )ای سواء رجع او لم يرجع غمز العيون( واذا مات على ردته لم يدفن فی مقابر المسلمين ولا احل ملة وانما يلقي في حفرة كالكلب والمرتد اقبح كفرا من الكافر الاصلی واذا شهدوا على مسلم بالردة وهو منكر لايتعرض له لالتکذيب الشهود العدول بل لأن انکاره توية ورجوع فتثبت الأحكام التي للمرتد ماتاب من حبط الأعمال وبينونة الزوجة وقوله لايتعرض له اغا هو في مرتد تقبل توتبه في الدنيا الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم الأولى تنكير النبي كما عبر به سبق غمز العيون
অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যদি কারাে মুখ দিয়ে কোন প্রকার কুফরী বাক্য বের হয়ে যায় তবে তাকে নেশার কারণে কাফের বলা হবে না কিংবা কুফরীর সাজাও দেয়া হবে না।
কিন্তু নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমামন্ডিত শানে অবমাননা করা এমন কুফরী-যা নেশাগ্রস্থ হওয়ার অজুহাতে ক্ষমার যােগ্য হবে না (বজজাযিয়া গ্রন্থেও অনুরূপ উল্লেখিত আছে) আর (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদের হুকুম হলাে- সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। যদি সে পরবর্তীতে নতুন ভাবে ইসলাম গ্রহণ করে তবুও তার স্ত্রী বিবাহ বদ্ধনে ফিরে আসবে না। আর যদি মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যু হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে কিংবা ইয়াহুদী-নাছারাদের কবরস্থানেও দাফন করা যাবে না। বরং কুকুর মরার ন্যায় কোন গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। মুরতাদের কুফরী প্রকাশ্য ও মৌলিক কাফের এর কুফরীর চেয়ে নিকৃষ্টতর । যদি ন্যায় পরায়ন সাক্ষীর কোন মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, অমুক বক্তব্য বা কাজের দরুন সে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর সে লােকটি উহা অস্বীকার করে। তাহলে তার উপর কোন রূপ শাস্তি আরােপ করা যাবে না। এই বিধান ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্যকে মিথ্যা বলে গন্য করার প্রেক্ষিতে নয়। বরং এজন্য যে, মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার করাকে তার কুফরী বক্তব্য বা আচরণ থেকে তাওবা হিসেবে গ্রহন করে।
অতএব ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার উভয়ের ফলাফল হলাে- ঐ ব্যক্তি কুফরী বক্তব্য বা আচরনের কারণে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তাওবা করেছে। তাই এখন সেই ব্যক্তির উপর ঐ মুরতাদের হুকুম কার্যকরী হবে, যে কুফরী থেকে তাওবা করেছে। আর তা হলাে তার আমল সমূহ বরবাদ হয়ে যাবে। স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কোন শাস্তি প্রয়ােগ করা হবে না। কিন্তু রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করা এমন কুফরী যার সাজা দুনিয়ায় তাওবা করার পরও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
"দুররে মুখতার"গ্রন্থকারের উস্তাদ ইমাম খাইরুদ্দীন রমলী (রহঃ) "ফাতাওয়া খাইরিয়া"এর প্রথম খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
من سب رسول ال له صلى الله عليه وسلم فانه مرتد وحكمه حكم المرتدین ويفعل به مايفعل بالمرتدين ولاتوية له اصلا واجمع العلماء انه كافر ومن شك في كفره كفر.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে সে মুরতাদ। তার হুকুম হলাে মুরতাদের হুকুম। তার সঙ্গে ঐ আচরণ করা হবে যা মুরতাদগনের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। তার জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রাপ্তির অবকাশ নেই। উম্মতের আলেমগণ ইজমায় উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি এতে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
মাজমাউল আনহার শরহে মুলতাকাল আবহার' নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৬১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে যে-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبيا، مسلم ولو سکران فلا توية له تنجیه کالزنديق ومن شك في عذابه وكفره فقد كفر.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলমান নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে যদি নেশাগ্রস্থাবস্থায়ও অবমাননা করে সে এমন মুরতাদ- কাফের হয়ে যাবে যার জন্য তাওবার সুযােগ নেই। যেমন যিন্দীক এর জন্য তাওবার অবকাশ নেই। আর যে লােক এই মুরতাদের কুফুরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
আল্লামা আখী ইউসুফ (রহঃ) "জখিরাতুল উকবা" নামক গ্রন্থের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قد اجمعت الامة على أن الاستخفاف بنبينا صلى ال له عليه وسلم وبای نبئ كان عليهم الصلوة والسلام كفر سواء فعله على ذلك مستحلا أم فعله معتقدا لحرمته وليس بين العلماء خلاف في ذلك ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ সকল উম্মত সন্দেহাতীতভাবে এই বিষয়ে ইজমায় (অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ,পৌছেছেন
যে, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে অবমাননা কারী কাফের। চাই সে অবমাননা করাকে হালাল জেনে করুক অথবা হারাম জেনে করুক, সর্বাবস্থায় সে কাফের। এ মাসআলায় উলামাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। আর যে লােক অবমাননাকারী কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
উপরােক্ত কিতাবের ২৪২পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
لايغسل ولايصل عليه ولايكفن اما اذا تاب وتبرأ عن الارتداد ودخل فی دین الإسلام ثم مات غسل وكفن وصلى فيه ودفن في مقاير المسلمين.
অর্থাৎ সেই অবমাননাকারী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল, কাফন কিছুই দেয়া যাবে না। এবং তার উপর জানাযার নামাজও পড়া যাবে না। কিন্তু যদি সে তাওবা করে পূর্বের কুফরী হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায় এবং ইসলাম ধর্মে আন্তরিকভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় অতঃপর মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল-কাফন দেয়া যাবে, তার উপর জনাযার নামাজ পড়া যাবে এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে।
শাইখুল ইসলাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ "তানভীরুল আবচার" নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
كل مسلم ارتد فتوبته مقبولة الا الكافر سب النبی صلى الله عليه وسلم.
অর্থাৎ সকল মুরতাদ ব্যক্তির তাওবা কবুল হয় কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী এমন কাফের যার তাওবা কবুল হবে না এবং দুনিয়ার সাজা থেকে রক্ষাও হবে না।
"দুররে মুখতার" গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
لكافر بسب نبي من الانبياء لاتقبل تويته مطلقا ومن شك في عذابه كفره كفر.
অর্থাৎ কোন নবীর শানে অপমান-অবমাননা কারী এমন কাফের যার তাওবা কখনো কবুল হবে না এবং দুনিয়ায় কোনরূপ শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না। আর যে ব্যক্তি
তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) "কিতাবুল খারাজের ১১২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
يما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او كذبه او عابه او تنقُّصه فقد كفر بال له تعالی وبانت زوجته
অর্থাৎ যে লােক মুসলমান হওয়ার পর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, নবীর শানে দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। উপরােল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের কাফের এবং মুরতাদ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা করলে তা কবুল হবে।
তবে এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে যে, ইসলামী সরকার প্রধান তাদেরকে তাওবা করে ইসলাম গ্রহণের পর শুধু কি তা'যীর অর্থাৎ নাকি তখনও মৃত্যুদন্ড দান করবে। বজ্জাযিয়া এবং অন্যান্য অনেক নির্ভরযােগ্য কিতাবে যে রয়েছে তাদের তাওবা কবুল হবে না তার ব্যাখ্যা ইহাই। উহার আলােচনা এখানে নিস্প্রয়োেজন। কেননা কোথায় ইসলামী সুলতান-বাদশা আর কোথায় মৃত্যুদন্ডের বিধান। শত - সহস্র দুশ্চরিত্র, ধূর্ত, অভিশপ্ত, সীমালংঘনকারী যারা উঁচু স্তরের মুসলমান তথা মুফতী,
মুদাররিছ, ওয়ায়েজ এবং শাইখুল ইসলাম বলে আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকর বড় বড় অভিশপ্ত বুলি আওড়ায় যাদের বাধা প্রদান করার কিংবা বারণ করার কেউ নেই। আর কেউ প্রতিবাদ করলে তা তথাকথিত সভ্যতার ধবজাধারী অভিজাত মুসলমানদের নিকট অসভ্যতা আর ধর্মীয় গোঁড়ামী বলে বিবেচিত হয় (নাউযুবিল্লাহ)।
فانظر الی آثار مقت الله الغيور - كيف انقلبت القلوب وانعکست الأمور ، ولاحول ولاقرة الا با الله العلى العظيم - وسيعلم الذین ظلموا ای منقلب ينقلبون. والله تعالی اعلم.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন