শরীয়তের বিধান সম্পর্কিত পিটিশন
প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা
মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালত শরয়ী আদালত, পাকিস্তান।
পক্ষে-সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী
সভাপতি- কেন্দ্রীয় জামাতে আহলে সুন্নাত, পাকিস্তান ও শায়খুল হাদীছ মাদরাসায়ে আরাবিয়া ইসলামিয়া আনওয়ারুল উলুম, মুলতান জনাব মুহাম্মদ ইসমাঈল কুরাইশী, সিনিয়র এডভােকেট, সুপ্রীম কোর্ট, পাকিস্তান,
লাহাের বনাম গণতান্ত্রিক পাকিস্তান-পাকিস্তান দন্ডবিধি, দফা নম্বর ২৯৫ আলিফ এবং দফা নম্বর ২৯৮ আলিফ এর বিরুদ্ধে শরয়ী আদালতে এক আবেদন পেশ করেন। শানে রেছালত-নবুওয়ত এর অপমান-অবমাননা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের সঙ্গে ঐ আবেদনের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে ঐকমত্য পােষন করি এবং শরীয়তের প্রমাণাদি অর্থাৎ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমায়ে উম্মৎ এবং ইমামগণের
অভিমতের আলােকে উহাকে পূর্ণাঙ্গরূপে সমর্থন ও প্রমান করার প্রয়াস পাচ্ছি। নিম্নে উহার বিস্তারিত বর্নণা উপস্থাপিত হলাে।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মৎ এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমতের আলােকে সুম্পষ্টরূপে প্রমানিত হয় যে, রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর সাজা একমাত্র মৃত্যুদন্ড। রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রকাশ্যে বিরােধিতা করা তাঁর মহান শানে অবমাননার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড বলে ঘােষিত হয়েছে। এই অপরাধের কারণে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ذلك بانهم شأقوا الله ورسوله.
অর্থাৎ (কাফেরদেরকে হত্যা করার) হুকুম এজন্য দেয়া হয়েছে যে "নিশ্চয় তারাআল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচরণ করে অবমাননাকারী হিসেবে গন্য হলাে। আর পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা কুফরী।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض ونلعب قل ابا الله وآياته ورسوله کنتم تستهزؤن - لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন তবে তারা অবশ্যই বলবে আমরা তাে শুধু ঠাটা -বিদ্রুপ করছিলাম। (ওহে রাসূল (দঃ) আপনি (তাদের উদ্দেশ্যে) বলুন- তােমরা কি আল্লাহ, তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা -বিদ্রুপ করছাে? তােমরা কোন ওযর-অজুহাত পেশ করাে না। নিশ্চয় তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছে।
মুসলিম হিসেবে পরিচয় দানের পর কুফরী কারী মুরতাদ" হিসেবে গন্য হয়। আর পবিত্র কুরআনের আলােকে মুরতাদ এর সাজা ক্বতল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লহ্ পাক এরশাদ করেন।
قل للمخلفين من الاعراب ستدعون إلى قوم اولی بأس شديد تقانلون أو يسلمون.
(ওহে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) আপনি (যুদ্ধে আপনার সঙ্গে বের না হয়ে) গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তােমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তােমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গ যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। (সূরা ফাতহ, ১৬নং আয়াত)
এই আয়াত খানা আরবের "ইয়ামামা" বাসী মুরতাদগণ প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎ বানী স্বরূপ অবতীর্ণ হয়। যদিও বা কোন কোন আলেম পারস্য, রােম ইত্যাদী দেশের অধিবাসীদের
প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতের আলােকে প্রমাণিত হয়- আয়াত খানা "ইয়ামামা" বাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগনের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ।
যেমন বর্ণিত আছে-
عن رافع بن خديج انا كنا نقرا هذه الاية فيما مضى ولانعلم من هم حتی دعا أبويكر رضى الله عنه إلى قتال بنی حنيفة فاعلمنا أنهم أريدوا بها.
তরজমাঃ হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) বলেন- অতীতে আমরা এ আয়াতখানা তেলাওয়াত করতাম, কিন্তু আমরা অবগত ছিলাম না যে, এ আয়াতে বর্ণিত লােকগুলাে কারা? অবশেষে যখন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) আরবের ইয়ামামাবাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুসলমানদেরকে আহবান জানালেন তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, আয়াত খানা তাদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।
এই রেওয়াতের আলােকে প্রমানিত হলাে যে, যদি মুরতাদ ইসলাম গ্রহন না করে তবে পবিত্র কুরআনের ফয়সালানুযায়ী তার সাজা হলাে একমাত্র ক্বতল। কুরআনে করীমের এই রায়ের সপক্ষে অসংখ্য হাদীসে নববী বর্ণিত হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় শুধু
একটি হাদীসে রাসূল (দঃ) নিম্নে উদ্ধৃত হলাে-
آتی على بزنادقة فاحرقهم )وفي رواية ابی داؤد ان عليا احرق ناسا ارتدوا عن الاسلام( فبلغ ذلك این عباس فقال لوكنت انا لم احرتهم لنهى رسول الله صلی ال له عليه وسلم: لا تعذبوا بعذاب الله ولقتلتهم لقول رسول الله صلی الله عليه وسلم: من بدل دينه فاقتلوه.
তরজমাঃ আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযেরত আলী (রঃ) এর নিকট ধর্মত্যাগী "যিন্দিক" উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের জ্বালিয়ে ফেললেন ইমাম আবু দাউদ (রঃ)
এর রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, হযরত শেরে খােদা আলী মুরতজা (রঃ) একদল ইসলাম ত্যাগী মুরতাদ কে জ্বালিয়ে ফেললেন।) এ সংবাদ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন-যদি হযরত আলী (রঃ) এর স্থলে আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতাম তবে আমি তাদের প্রজ্বলিত করতাম না। কেননা,
রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, তােমরা আল্লাহর সাজা (অর্থাৎ আগুন) প্রয়াগ করে কাউকে সাজা দিও না। তবে আমি অবশ্যই তাদের ক্বতল করে দিতাম। কেননা, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন- যেই মুসলমান নিজের ধর্ম পরিবর্তন করবে তােমরা তাকে ক্বতল করাে।
মুরতাদ এর সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর রায়ঃ
আমিরুল মুমেনীন সাইয়ােদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) খেলাফতের মসনদে আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অত্যন্ত কঠোর ভাবে মুরতাদগণকে ক্বতল করে দিয়েছিলেন তা আজ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুরতাদগণকে জীবিতাবস্থায় দেখা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর নিকট অসহ্যকর ছিল। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এবং হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে আরবের ইয়ামন প্রদেশের পৃথক দুই অঞ্চলে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। একদা হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে বন্দী অবস্থায় এক ব্যক্তি কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-এ লােকটি কে? জবাবে হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) বললেন-
كان يهوديا فاسلم ثم تهود قال اجلس قال لاأجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فامر به فقتل.
অর্থাৎ লােকটি ইয়াহুদী ছিল পরবর্তীতে মুসলমান হওয়ার পর আবার ইয়াহুদী হয়ে মুরতাদ হয়ে গেলাে। সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত মুয়াজ বিন জবল (রঃ) কে বসার জন্য অনুরােধ জানালে তিনি তিন দফায় বলে উঠলেন-যতক্ষন পর্যন্ত এই মুরতাদ কে ক্বতল করা হবেনা ততক্ষন আমি বসতে পারিনা। আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর ফয়সালানুযায়ী মুরতাদ এর একমাত্র সাজা হলাে ক্বতল। অতঃপর সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এর আদেশে ঐ মুরতাদ কে ক্বতল করা হয়।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) অবমাননা কারীর সাজা ক্বতলঃ
----------------------
রাসূলে করীম রউফুর রহীম আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম তাঁর শানে অবমাননাকারী মুরতাদকে খানায়ে কাবার পূত পবিত্র ও মহিমান্বিত গিলাফের নীচে আশ্রয় গ্রহন করা অবস্থায় মসজিদে হারামেই ক্বতল করার হুকুম দিয়েছিলেন। যেমন প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আনাস বিন মালিক (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম মক্কা শরীফে বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোন এক ব্যক্তি এসে আরজ করলেন - ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ), আপনার শানে অবমাননাকারী ইবনে খতল খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আল্লাহর রাসূল (দঃ) হুকুম দিলেন- তাকে সেখানেই ক্বতল করাে।
এই আবদুল্লাহ্ বিন খতল মুরতাদ ছিল। মুরতাদ হওয়ার পর সে কিছু লােককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-
অবমাননা সম্বলিত কবিতা লিখে প্রচার করেছে। সে দু'জন গায়িকা এ উদ্দেশ্যেই রিজার্ভ করে রেখেছিল যে তারা রাসূলে পাক (দঃ) এর অপমান-অবমাননা সম্বলিত কবিতা গেয়ে বেড়াবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন তাকে হত্যার আদেশ দিলেন তাকে খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরার অবস্থা হতে বের করে এনে মকামে ইব্রাহীম এবং জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে শিরচ্ছেদ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিবসে রসূলে করীম (দঃ) এর জন্য হারমে মক্কায় হত্যা এক ঘন্টার জন্য হালাল করা হয়েছিল। তবে বিশেষ করে মসজিদে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে মকামে ইব্রাহীম এবং পবিত্র জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে ইবনে খতল মকে হত্যা করা এ বিষয়ের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারী মুরতাদ,অন্যান্য মুরতাদগনের চেয়ে জগন্যতম ও অধিকতর নিকৃষ্ট।
উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা বা ঐকমত্য
---------------
প্রথমঃ
قال محمد بن سحنون أجمع العلماء ان شاتم النبی صلى الله عليه وسلم والمتنقص له كافر والوعید جار عليه بعذاب الله له وحكمه عند الأمة القتل ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ বিন ছাহনুন (রঃ) বলেন- উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ওলামাগণের ইজমা তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলাে যে রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে গালি-গালাজকারী এবং অপমান-অবমাননাকারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাব এর হুমকি বহাল রয়েছে। সকল উম্মতের নিকট এই ব্যক্তির সাজা হলাে ক্বতল। যে ব্যক্তি তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
দ্বিতীয়ঃ
وقال ابوسلیمان الخطابی لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله اذا كان مسلما،
অর্থাৎ ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (রঃ) বলেন- যখন কোন মুসলিম পরিচয় দানকারী ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করবে আমার জানামত এমন কোন মুসলমান নেই যে তার সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য করবে। (অর্থাৎ সবাই তার ক্বতল এর ব্যাপারে ঐকমত্য পােষন করবে।)
তৃতীয়ঃ
واجمعت الامة على قتل متنقصه صلى الله عليه وسلم من المسلمين وسابه
অর্থাৎ মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি যদি রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি গালাজ বা অবমাননা করে তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার
বিষয়ে সকল উম্মৎ একমত।
চতুর্থঃ
قال ابویکر این المنذر اجمع عوام اهل العلم على أن من سب النبي صلى الله عليه وسلم يقتل قال ذلك الامام مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى قال القاضی ابوالفضل وهو منتضی قول أبي بكر الصديق رضي الله عنه لاتقبل توبته عند هؤلاء ويمثله قال أبوحنيفة واصحابه والثوری واهل الكوفة والأرزاعي في المسلمين لكنهم قالوا هي ردة.
অর্থাৎ ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনযির বর্ণনা করেন- সকল উলামায়ে ইসলামের ইজমা বা ঐকমত্য হলাে যে ব্যক্তি নবী করীম (দঃ) এর শানে গালি-গালাজ করবে তাকে ক্বতল করা হবে। আর এই ইজমা বা ঐকমত্য পােষনকারীদের মধ্যে হযরত ইমাম মালেক বিন আনাছ (রঃ), ইমাম লাইছ (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম ইছহাক (রঃ) হলেন- অন্যতম। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এর মজহাব ও এ বিষয়ে একমত। ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রঃ) এর ফরমানের দাবী ও এটা। (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজকারীর সাজা ক্বতল হওয়া)। উপরােক্ত ইমামগনের মতে ঐ ব্যক্তির তাওবাও কবুল হবে না। ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ)তাঁর শিষ্যত্ববরনকারী ইমামগণ, ইমাম ছৌরী (রঃ) কুফার অন্যান্য ইমাম এবং ইমাম আউযায়ী (রঃ) এর অভিমত ও উপরােক্ত ইমামগণের সিদ্ধান্তের অনুরূপ । তাঁদের মতে এটা (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করা) "রিদ্দত" তথা ধর্ম ত্যাগ করার নামান্তর।
পঞ্চমঃ
أن جميع من سب النبی صلى الله عليه وسلم او عابه او الحق به نقصا في نفسه او نسبه او دينه او خصلة من خصاله او عرض به او شبه ه بشيئ على طريق السب له أو الازراء عليه او التصغبر بشانه او الغض منه والعيب له فهو ساب له والحكم فيه حكم الساب يقتل كما نبينه ولانستثنی فصلا من
فصول هذا الباب على هذا المقصد ولانمترى فيه تصریحا كان او تلويحا وهذا كله اجماع من العلماء وائمة الفتوى من لدن الصحابة رضوان الله عليهم الى هلم زراء
অর্থাৎ যারা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি-গালাজ করবে, দোষারােপ করবে, হুজুর (দঃ) এর পূত-পবিত্র মহান সত্ত্বা, বংশ, দ্বীন অথবা কোন চরিত্রের প্রতি দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে কিংবা বিরূপ সমলােচনা করবে অথবা যারা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায়ে বা রাসূলের মহান সত্ত্বার প্রতি কোন প্রকার দোষ-ক্রুটি আরােপ করার অসদুদ্দেশ্যে হুজুর আকরম (দঃ) কে কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে তারা প্রকাশ্যে গালি- গালাজকারী হিসেবে গন্য হবে। আর তাদের হত্যা করাই হবে একমাত্র সাজা।
আমরা এই হুকুম কার্যকরী করার ক্ষেত্রের কোন প্রকার রদ-বদল করবােনা বা এ হুকুম এর বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ পােষন করিনা। প্রকাশ্য অবমাননা হউক কিংবা
অপ্রকাশ্য ইঙ্গিতমূলক উভয়ের হুকুম একই। আর এটা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) থেকে অদ্যাবধি উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর সকল উলামায়ে কেরাম, মুজতাহিদগণ এবং ফতওয়া প্রদানকারী ইমামগণের সর্বসম্মত ফত্ওয়া।
যষ্ঠঃ
والحاصل انه لاشك ولاشبهة في كفر شاتم النبی صلى الله عليه وسلم وفی استباحة قتله وهو المنقول عن الأئمة الأريعة.
অর্থাৎ সার বক্তব্য হলাে এই যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালিগালাজকারী কাফের হওয়া এবং তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার বিষয়ে কোন রূপ সংশয় সন্দেহ নেই। আর এই ফতওয়া চারি মজহাবের ইমাম গণ তথা ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত সর্বসম্মত ফতওয়া।
সপ্তমঃ
كل من أبغض رسول الله صلى الله عليه وسلم بقليه كان مرتدا فالساب بطريق أولى ثم يقتل حدا عندنا.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি মনে মনে বিদ্বেষভাব পােষন করবে সে মুরতাদ। অতএব প্রকাশ্যে গালি-গালাজকারী আরাে বহুগুন বেশী মুরতাদ হবে। ফলে তাকে হত্যা করা হবে শরিয়ত সম্মত সাজা আমাদের মতে।
অষ্টমঃ
ایما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او کذبه او عابه او تنقصه فقد كفر با الله ويانت منه زوجته.
অর্থাৎ যে মুসলিম রাসূলে আকরম (দঃ)এর প্রতি গালি-গালাজ করবে বা মিথ্যা আরােপ করবে বা দোষারােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে সর্বাবস্থায় সে যেন আল্লাহর সাথে কুফরী করলাে। অতঃপর তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেলাে।
নবমঃ
اذا عاب الرجل النبي صلى الله عليه وسلم في شيئ كان كافرا وكذا قال بعض العلماء لو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم شعیر فقد كفر وعن ابی حفص الكبير من عاب النبی صلی الله عليه وسلم بشعرة من شعراته الكرية فقد كفر وذكر في الاصل أن شتم النبی کفر.
অর্থাৎ রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কোন বৈশিষ্ট বা বিষয়ে যদি দোষারােপ করে তাহলে সে কাফের হিসেবে গন্য হবে। এভাবে কতিপয় ইমাম বর্ণনা করেছেন- যদি কোন ব্যক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর পবিত্র চুল মুবারককে তাছগীর" তথা ক্ষুদ্র জ্ঞাপক শব্দে "শুআয়রুন" অর্থাৎ ছােট চুল হিসেবে বর্ণনা করে তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে কাফের হয়ে যাবে। হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হাফছ আল- কবীর (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের একটি পবিত্র চুল মুবারকের প্রতিও দোষারােপ করে তবে তৎক্ষনাত কাফের হয়ে যাবে। ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) তাঁর রচিত গ্রন্থ "মাবছুত" এ বর্ণনা করেন যে, রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি দেয়া কুফরী।
দশমঃ
ولاخلاف بين المسلمين أن من قصد النبي صلى الله عليه وسلم بذلك فهو من ينتحل الاسلام انه مرتد يستحق القتل.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলিম যদি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর শানে অপমান-অবমাননা করার কিংবা রাসূল (দঃ) কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে সে সঙ্গে সঙ্গে মুরতাদ এবং ক্বতল হওয়ার যােগ্য বলে গন্য হবে। এ মাসআলায় মুসলিম মিল্লাতের ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে কোন প্রকার মতানৈক্য নেই।
আমাদের উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, পবিত্র কুরআন, হাদীছে রাসূল (দঃ) উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমত অনুযায়ী নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করাই হলাে একমাত্র সাজা। এরপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে স্পষ্টভাবে অবগত হওয়া অপরিহার্য।
যথাঃ (১) নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান- অবমাননা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকে দন্ডযােগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্থ করার জন্য এই শর্তারােপ করা শুদ্ধ হবে না-"অপমান-অবমানকারী মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে অবমাননা করেছে।" এমন হতে হবে। কেননা এহেন শর্তারােপ নবীর শানে অবমাননাকারীদের রক্ষা করার নামান্তর হবে। শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার দ্বার চিরতরে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এর প্রেক্ষিতে প্রত্যেক নবীর শানে
অবমাননাকারী ব্যক্তি সাজা ভােগ করা হতে এই বলে পার পেয়ে যাবে যে ধর্মীয় জজবা উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে আমি এটা করি নাই। তাছাড়া এহেন শর্ত আল্লাহর কুরআনের ও পরিপন্থী। যেমন সূরা তাওবার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শানে রেছালতে অবমাননাকারী মুনাফিকদের এই অজুহাত "আমরা তা পরস্পরের মধ্যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। শানে রেছালতের অবমাননা করা আমাদের লক্ষ্য নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।" মহান আল্লাহ্ পাক প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন এবং স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন- মুসলমানদের
لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم
অর্থাৎ তােমরা অযুহাত পেশ করাে না অবশ্য তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছো।
(দুই) প্রকাশ্য অপমান- অবমাননা করার ক্ষেত্রে নিয়তের মূল্যায়ন প্রয়ােজন হয় না। রায়েনা" বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের পরও যদি কোন ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) অপমান-অবমাননার উদ্দেশ্য না করে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের
শানে "রায়েনা" উচ্চারণ করতেন তাহলে আল্লাহ্র বাণী-
واسمعوا وللكافرین عذاب اليم
অনুযায়ী কুরআনী সাজার উপযুক্ত বলে গন্য হতেন। আর ইহা এ কথার প্রমাণ বহন করে-শানে রেছালাতে অবমাননার উদ্দেশ্য না করেও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা কুফরী।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম শিহাবউদ্দীন খিফাযী (রঃ) বর্ণনা করেন-
المدار في الحكم بالكفر على الظواهر ولانظر للمقصود والنيات ولانظر لقرائ ن حاله
অর্থাৎ শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার কারণে কুফরী হুকুম প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্য অবমাননাকর শব্দমালার উপর নির্ভর করে। অবমাননাকারীর উদ্দেশ্য, নিয়্যত কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থাবলীর প্রতি নজর করার আবশ্যকতা নেই। নতুবা শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার দরওয়াজা কখনাে বন্ধ হবে না। কেননা, প্রত্যেক অবমাননাকারী এই বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাইবে যে, অপমান-অবমাননা করা আমার নিয়্যত বা উদ্দেশ্য ছিল না। অতএব এই বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে পড়লাে যে, শানে রেছালতে অপমান-অবমাননাকারীর নিয়্ত কিংবা উদ্দেশ্যের যাতে মূল্যায়ন করা না হয় কুফরীর হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে।
(৩) এখানে এই সন্দেহটি নিরসন হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে যে, "যদি কোন মুসলমানের বক্তব্যে নিরানব্বই ভাগ কুফরীর দিক এবং শুধু এক ভাগই ইসলামের দিক এর সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয় তখন ফকীহগনের অভিমত হলাে তাকে কুফরীর ফত্ওয়া দেয়া যাবে না।"
ফকীহগনের উপরােক্ত অভিমতের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে এভাবে যে, কোন মুসলমানের বক্তব্যে যদি নিরানব্বই ভাগ কুফরলীর সম্ভাবনা থাকে এবং প্রকাশ্য কুফরী মূলক শব্দ বা বাক্য না থাকে তখন ফকীহগনের উপরােক্ত হুকুম কিন্তু যেবক্তব্য প্রকাশ্যরূপে অবমাননাকর সেখানে কোনরূপ "তাভীল" তথা ব্যাখ্যা -বিশ্লেষন করা বৈধ নয়। কারণ , প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দে "তাভীল" বা ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্য নয়।
ইমাম কাজী আবুল ফজল আয়াজ মালেকী (রঃ) বর্ণনা করেন -
قال حبيب ابن الريبيع لأن ادعاء التاويل في لفط صريح لايقبل.
অর্থাৎ হাবীব বিন রবী (রঃ) বলেন- প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দমালায় তাভীল" তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লোষন করার দাবী গ্রহনযােগ্য নয়।
কোন বক্তব্য প্রকাশ্য অবমাননাকর হওয়াটা নির্ভর করে সমাজ এবং পরিভাষাগত ব্যবহারের উপর। উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাই যে, যদি কোন ব্যক্তিকে ওয়ালাদুল
হারাম" বা হারামজাদা বলে আখ্যায়িত করা হয় আর পরবর্তীতে "হারাম" শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে, আমি "হারাম" শব্দটিকে "আল মসজিদুল হারাম" ও "বাইতুল হারাম"এ ব্যবহৃত "হারাম" এর ন্যায় সম্মানিত ও মহিমান্বিত অর্থে বলেছি।
এ ব্যাখ্যা কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে আদৌ গ্রহণযােগ্য হতে পারে না। কেননা সামাজিক পরিভাষায় ওয়ালাদুল হারাম" শব্দটা গালি এবং অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বক্তব্য-যেখানে সামাজিক পরিভাষাগত অর্থে
অপমান-অবমাননার অর্থ পাওয়া যায় সেটা অবমাননাকর বক্তব্য হিসাবে স্বীকৃত হবে যদিও বা হাজার "তাভীল" ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হউক না কেন। কেননা সামাজিক পরিভাষাগত অর্থের বরখেলাপ কোন ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্যা নয়।
(চার) এখানে এই সন্দেহের ও অপনােদন হওয়া অপরিহার্য মনে করছি যে, যদি রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা করার সাজা ক্বতল হয়ে থাকে তবে কতিপয় মুনাফিক রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে স্পষ্ট অপমান-অবমাননা করতাে। এমন কি কোন কোন সময় ছাহাবায়ে কেরম (রঃ) আরজ করতেন- ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ)। আমাদের অনুমতি দিন যে আমরা এ সকল
অবমাননাকারী মুনাফিকদের ক্বতল করে দেবাে। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (দঃ) তাদের অনুমতি দেন নাই।
উপরােক্ত বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের অপনােদনকল্পে ইবনে তাইমিয়া বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন। যার সারাংশ হলাে এই যে, (ক) সে সময়ে ঐ সকল মুনাফিকদের উপর সাজা কার্যকরী করা ব্যাপক ফিতনা- ফ্যাসাদের কারণ ছিল। তাই তাদের অবমাননাকর বক্তব্যে ছবর করা ফিতনা-ফ্যাসাদ এর মােকাবিলার চেয়ে সহজতর বিবেচিত হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয় নাই।
(খ) মুনাফিকরা প্রকাশ্য ভাবে শানে রেছালতে অবমাননা করতাে না। বরং পরস্পরের মধ্যে অতি গােপনে শানে রেছালতে অপমানজনক কথােপকথন করতাে।
(গ) ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী মুনাফিকদের হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা এ কথার প্রমান বহন করে যে, ছাহাবায়ে
কেরাম অবগত ছিলেন-রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল। কেননা, নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং শানে রেছালতে অবমাননাকারী আবু রাফে ইয়াহুদী এবং কাব বিন আশরফ কে হত্যা করার নির্দেশ জারি করেছিলেন। এ আদেশ জারীর কারণে ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) জানতেন যে,শানে রেছালতে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল বৈ আর কিছু নয়।
(পাঁচ) রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বৈধ ছিল যে, তিনি তাঁর শানে অবমাননাকারী কিংবা তাকে কষ্টদানকারীকে জাগতিক হায়াতে থাকাবস্থায় ক্ষমা করবেন। কিন্তু উম্মতের জন্য এটা বৈধ নয় যে, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্ষমা করে দিবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং
অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মহান আল্লাহর এই আদেশকে অনুসরণ করেছেন- "আপনি ক্ষমাশীলতার বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করুন, অজ্ঞ-মূর্খদের এড়িয়ে চলুন এবং সৎ কর্মের আদেশ দান করুন।" (সূরা আরাফ ১৯৯ নং আয়াত)।
আমি আরজ করতে চাই যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর উপর ক্বতলের সাজা কার্যকরী করা স্বয়ং রাসূল (দঃ) এর হক। যদিওবা রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননাকর আচরণ করা উম্মতের জন্য ও ভীষন কষ্টদায়ক ব্যাপার এবং একারণে এহেন অবমাননা কারীর উপর সাজা প্রয়ােগ করা উম্মতের হক ও বটে। তবে এটা সরাসরি নহে। বরং রাসূলে আকরম (দঃ) এর পবিত্র মহান সত্বার মাধ্যমে। আল্লাহপাক হজুর (দঃ) কে এ ধরনের এখতিয়ার দান করেছেন যে, তিনি নিজস্ব হক কারাে জন্য মাফ করে দিবেন।
যেমন শরিয়তের অন্যান্য বিধান এর ক্ষেত্রে দলীল সহকারে প্রমাণিত আছে যে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঐ সকল বিধি-বিধানের বিষয়ে রাসূল পাক (দঃ) কে এখতিয়ার দান করেছেন। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) হযরত বারা বিন আযেব (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে খােদা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত আবুদ্দারদা (রঃ) কে একটি ছাগল ছানা কুরবানী করার হুকুম দিয়ে বললেন-
ولن تجزي عن أحد بعدك
অর্থাৎ এই কুরবানী তুমি বিনে অন্য কারাে জন্য কখনাে বৈধ হবে না। এভাবে প্রখ্যাত ছাহাবীয়ে রসূল হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হারাম শরীফের ঘাস কর্তন করাকে হারাম ঘােষনা করলেন-তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) আরজ করলেন-"ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ওহে আল্লাহ রাসূল (দঃ), ইজখার নামী ঘাস কে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখুন। জবাবে আল্লাহর হাবীব (দঃ) এরশাদ করলেন "ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ইজখার নামী ঘাসকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। এটা কর্তন করা তােমাদের জন্য জায়েজ।
এই হাদীছে রাসূল (দঃ) এর ব্যাখ্যায় শেখে মুহাককিক হযরত আবদুল হক মুহাদ্দীছে দেহলভী (রঃ) এবং নওয়াব ছিদ্দীক হাছান খান ভূপালী লিপিবদ্ধ করছেন-
ودرمذهب بعضے آن است که احکام مفوض بود بو صلى الله عليه وسلم هرچه خواهد ویر هرکه خواهد حلال وحرام گرداند وبعضے گویند با اجتهاد گفت واول اصح واظهر است.
অর্থাৎ কতিপয় ইমামগনের মাজহাব হলাে যে, শরিয়তের বিধি-বিধান প্রবর্তন রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-রে জিম্মায় সােপর্দ করা হয়েছে। তিনি যার জন্য যা কিছু চান হারাম-হালাল করতে পারেন।
কেউ কেউ বলেন-রাসূলে পাক (দঃ) এটা ইজতিহাদ বা গবেষনার মাধ্যমে করেছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত ইখতিয়ার এর মাধ্যমে নয়। উভয় মাজহাবের মধ্যে প্রথম মাজহাব টি অধিকতর বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট।
উপরােক্ত হাদীছে রাসূল (দঃ) এর আলােকে প্রমানিত হয় যে রাসূলে পাক (দঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এখতিয়ারের অধিকারী যার প্রেক্ষিতে তিনি কোনরূপ
হিকমত কিংবা কল্যান এর প্রত্যাশায় ঐ সকল মুনাফিকদের উপর ক্বতল এর সাজা কার্যকরী করেন নাই। তবে হুজুরে আকরম (দঃ) এর পরে অন্য কারাে জন্য এ এখতিয়ার বাকী নাই যে, তিনি ও ক্বতল এর সাজা প্রয়ােগে গড়িমসি করবেন।
পরিশেষে আরজ করতে চাই যে, শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার সাজা ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকরী হবে যার পক্ষ থেকে এই অপরাধ সংগঠিত হওয়াটা দৃঢ়তার সাথে অকাট্ট্যরূপে প্রমানিত হয়। এছাড়া অন্য কাউকে এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্থ করে ক্বতল করা কখনাে বৈধ হবে না। খবরে মুতাওয়াতির বা ব্যাপক এবং ধারাবাহিক সাক্ষ্য প্রমান ভিত্তিক সংবাদ এ বিষয়ে অকাট্য দলীল হিসেবে গন্য হবে। তাছাড়া কোন ব্যক্তি যদি অবমাননাকর স্পষ্ট অর্থবােধক কথা
বলে কিংবা লিপিবদ্ধ করে অতঃপর স্বীকারােক্তি করে যে, এই অবমাননাকর কথা আমি বলেছি বা লিপিবদ্ধ করেছি তবে ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে। পরবর্তীতে যতই বাহানা বা কৌশল অবলম্বন করুক না কেন বা বলাবলী করুক যে, অবমাননা করা আমার নিয়্যতের মধ্যে ছিল না। অথবা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা-সেন্টিমেন্টে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। যত কিছুই বলুক না কেন, সর্বাবস্থায় তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে।
যারা রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে স্পষ্ট অবমাননাকর বক্তব্যের তাভীল" বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অবমাননাকারীকে রক্ষা করতে তৎপর হয় তারাও সমান ভাবে অবমাননাকারীর ন্যায় ক্বতলযােগ্য অপরাধী। রাসূলের শানে গালি-গালাজকারীর সাজা প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাহনুন (রঃ) এর অভিমত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) রচিত শেফা শরীফ এবং আছ-ছারেমুল মাসলুল এর বরাতে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি-
من شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ যারা শানে রেছালতে অবমাননাকরীর কুফরী এবং সাজা প্রসঙ্গে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ছাইয়্যেদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (রঃ)
২৫শে নডেম্বর, ১৯৮৫ ইং
প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা
মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালত শরয়ী আদালত, পাকিস্তান।
পক্ষে-সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী
সভাপতি- কেন্দ্রীয় জামাতে আহলে সুন্নাত, পাকিস্তান ও শায়খুল হাদীছ মাদরাসায়ে আরাবিয়া ইসলামিয়া আনওয়ারুল উলুম, মুলতান জনাব মুহাম্মদ ইসমাঈল কুরাইশী, সিনিয়র এডভােকেট, সুপ্রীম কোর্ট, পাকিস্তান,
লাহাের বনাম গণতান্ত্রিক পাকিস্তান-পাকিস্তান দন্ডবিধি, দফা নম্বর ২৯৫ আলিফ এবং দফা নম্বর ২৯৮ আলিফ এর বিরুদ্ধে শরয়ী আদালতে এক আবেদন পেশ করেন। শানে রেছালত-নবুওয়ত এর অপমান-অবমাননা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের সঙ্গে ঐ আবেদনের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে ঐকমত্য পােষন করি এবং শরীয়তের প্রমাণাদি অর্থাৎ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমায়ে উম্মৎ এবং ইমামগণের
অভিমতের আলােকে উহাকে পূর্ণাঙ্গরূপে সমর্থন ও প্রমান করার প্রয়াস পাচ্ছি। নিম্নে উহার বিস্তারিত বর্নণা উপস্থাপিত হলাে।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মৎ এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমতের আলােকে সুম্পষ্টরূপে প্রমানিত হয় যে, রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর সাজা একমাত্র মৃত্যুদন্ড। রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রকাশ্যে বিরােধিতা করা তাঁর মহান শানে অবমাননার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড বলে ঘােষিত হয়েছে। এই অপরাধের কারণে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ذلك بانهم شأقوا الله ورسوله.
অর্থাৎ (কাফেরদেরকে হত্যা করার) হুকুম এজন্য দেয়া হয়েছে যে "নিশ্চয় তারাআল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচরণ করে অবমাননাকারী হিসেবে গন্য হলাে। আর পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা কুফরী।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض ونلعب قل ابا الله وآياته ورسوله کنتم تستهزؤن - لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন তবে তারা অবশ্যই বলবে আমরা তাে শুধু ঠাটা -বিদ্রুপ করছিলাম। (ওহে রাসূল (দঃ) আপনি (তাদের উদ্দেশ্যে) বলুন- তােমরা কি আল্লাহ, তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা -বিদ্রুপ করছাে? তােমরা কোন ওযর-অজুহাত পেশ করাে না। নিশ্চয় তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছে।
মুসলিম হিসেবে পরিচয় দানের পর কুফরী কারী মুরতাদ" হিসেবে গন্য হয়। আর পবিত্র কুরআনের আলােকে মুরতাদ এর সাজা ক্বতল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লহ্ পাক এরশাদ করেন।
قل للمخلفين من الاعراب ستدعون إلى قوم اولی بأس شديد تقانلون أو يسلمون.
(ওহে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) আপনি (যুদ্ধে আপনার সঙ্গে বের না হয়ে) গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তােমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তােমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গ যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। (সূরা ফাতহ, ১৬নং আয়াত)
এই আয়াত খানা আরবের "ইয়ামামা" বাসী মুরতাদগণ প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎ বানী স্বরূপ অবতীর্ণ হয়। যদিও বা কোন কোন আলেম পারস্য, রােম ইত্যাদী দেশের অধিবাসীদের
প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতের আলােকে প্রমাণিত হয়- আয়াত খানা "ইয়ামামা" বাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগনের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ।
যেমন বর্ণিত আছে-
عن رافع بن خديج انا كنا نقرا هذه الاية فيما مضى ولانعلم من هم حتی دعا أبويكر رضى الله عنه إلى قتال بنی حنيفة فاعلمنا أنهم أريدوا بها.
তরজমাঃ হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) বলেন- অতীতে আমরা এ আয়াতখানা তেলাওয়াত করতাম, কিন্তু আমরা অবগত ছিলাম না যে, এ আয়াতে বর্ণিত লােকগুলাে কারা? অবশেষে যখন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) আরবের ইয়ামামাবাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুসলমানদেরকে আহবান জানালেন তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, আয়াত খানা তাদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।
এই রেওয়াতের আলােকে প্রমানিত হলাে যে, যদি মুরতাদ ইসলাম গ্রহন না করে তবে পবিত্র কুরআনের ফয়সালানুযায়ী তার সাজা হলাে একমাত্র ক্বতল। কুরআনে করীমের এই রায়ের সপক্ষে অসংখ্য হাদীসে নববী বর্ণিত হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় শুধু
একটি হাদীসে রাসূল (দঃ) নিম্নে উদ্ধৃত হলাে-
آتی على بزنادقة فاحرقهم )وفي رواية ابی داؤد ان عليا احرق ناسا ارتدوا عن الاسلام( فبلغ ذلك این عباس فقال لوكنت انا لم احرتهم لنهى رسول الله صلی ال له عليه وسلم: لا تعذبوا بعذاب الله ولقتلتهم لقول رسول الله صلی الله عليه وسلم: من بدل دينه فاقتلوه.
তরজমাঃ আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযেরত আলী (রঃ) এর নিকট ধর্মত্যাগী "যিন্দিক" উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের জ্বালিয়ে ফেললেন ইমাম আবু দাউদ (রঃ)
এর রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, হযরত শেরে খােদা আলী মুরতজা (রঃ) একদল ইসলাম ত্যাগী মুরতাদ কে জ্বালিয়ে ফেললেন।) এ সংবাদ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন-যদি হযরত আলী (রঃ) এর স্থলে আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতাম তবে আমি তাদের প্রজ্বলিত করতাম না। কেননা,
রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, তােমরা আল্লাহর সাজা (অর্থাৎ আগুন) প্রয়াগ করে কাউকে সাজা দিও না। তবে আমি অবশ্যই তাদের ক্বতল করে দিতাম। কেননা, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন- যেই মুসলমান নিজের ধর্ম পরিবর্তন করবে তােমরা তাকে ক্বতল করাে।
মুরতাদ এর সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর রায়ঃ
আমিরুল মুমেনীন সাইয়ােদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) খেলাফতের মসনদে আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অত্যন্ত কঠোর ভাবে মুরতাদগণকে ক্বতল করে দিয়েছিলেন তা আজ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুরতাদগণকে জীবিতাবস্থায় দেখা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর নিকট অসহ্যকর ছিল। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এবং হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে আরবের ইয়ামন প্রদেশের পৃথক দুই অঞ্চলে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। একদা হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে বন্দী অবস্থায় এক ব্যক্তি কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-এ লােকটি কে? জবাবে হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) বললেন-
كان يهوديا فاسلم ثم تهود قال اجلس قال لاأجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فامر به فقتل.
অর্থাৎ লােকটি ইয়াহুদী ছিল পরবর্তীতে মুসলমান হওয়ার পর আবার ইয়াহুদী হয়ে মুরতাদ হয়ে গেলাে। সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত মুয়াজ বিন জবল (রঃ) কে বসার জন্য অনুরােধ জানালে তিনি তিন দফায় বলে উঠলেন-যতক্ষন পর্যন্ত এই মুরতাদ কে ক্বতল করা হবেনা ততক্ষন আমি বসতে পারিনা। আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর ফয়সালানুযায়ী মুরতাদ এর একমাত্র সাজা হলাে ক্বতল। অতঃপর সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এর আদেশে ঐ মুরতাদ কে ক্বতল করা হয়।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) অবমাননা কারীর সাজা ক্বতলঃ
----------------------
রাসূলে করীম রউফুর রহীম আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম তাঁর শানে অবমাননাকারী মুরতাদকে খানায়ে কাবার পূত পবিত্র ও মহিমান্বিত গিলাফের নীচে আশ্রয় গ্রহন করা অবস্থায় মসজিদে হারামেই ক্বতল করার হুকুম দিয়েছিলেন। যেমন প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আনাস বিন মালিক (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম মক্কা শরীফে বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোন এক ব্যক্তি এসে আরজ করলেন - ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ), আপনার শানে অবমাননাকারী ইবনে খতল খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আল্লাহর রাসূল (দঃ) হুকুম দিলেন- তাকে সেখানেই ক্বতল করাে।
এই আবদুল্লাহ্ বিন খতল মুরতাদ ছিল। মুরতাদ হওয়ার পর সে কিছু লােককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-
অবমাননা সম্বলিত কবিতা লিখে প্রচার করেছে। সে দু'জন গায়িকা এ উদ্দেশ্যেই রিজার্ভ করে রেখেছিল যে তারা রাসূলে পাক (দঃ) এর অপমান-অবমাননা সম্বলিত কবিতা গেয়ে বেড়াবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন তাকে হত্যার আদেশ দিলেন তাকে খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরার অবস্থা হতে বের করে এনে মকামে ইব্রাহীম এবং জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে শিরচ্ছেদ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিবসে রসূলে করীম (দঃ) এর জন্য হারমে মক্কায় হত্যা এক ঘন্টার জন্য হালাল করা হয়েছিল। তবে বিশেষ করে মসজিদে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে মকামে ইব্রাহীম এবং পবিত্র জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে ইবনে খতল মকে হত্যা করা এ বিষয়ের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারী মুরতাদ,অন্যান্য মুরতাদগনের চেয়ে জগন্যতম ও অধিকতর নিকৃষ্ট।
উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা বা ঐকমত্য
---------------
প্রথমঃ
قال محمد بن سحنون أجمع العلماء ان شاتم النبی صلى الله عليه وسلم والمتنقص له كافر والوعید جار عليه بعذاب الله له وحكمه عند الأمة القتل ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ বিন ছাহনুন (রঃ) বলেন- উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ওলামাগণের ইজমা তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলাে যে রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে গালি-গালাজকারী এবং অপমান-অবমাননাকারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাব এর হুমকি বহাল রয়েছে। সকল উম্মতের নিকট এই ব্যক্তির সাজা হলাে ক্বতল। যে ব্যক্তি তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
দ্বিতীয়ঃ
وقال ابوسلیمان الخطابی لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله اذا كان مسلما،
অর্থাৎ ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (রঃ) বলেন- যখন কোন মুসলিম পরিচয় দানকারী ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করবে আমার জানামত এমন কোন মুসলমান নেই যে তার সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য করবে। (অর্থাৎ সবাই তার ক্বতল এর ব্যাপারে ঐকমত্য পােষন করবে।)
তৃতীয়ঃ
واجمعت الامة على قتل متنقصه صلى الله عليه وسلم من المسلمين وسابه
অর্থাৎ মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি যদি রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি গালাজ বা অবমাননা করে তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার
বিষয়ে সকল উম্মৎ একমত।
চতুর্থঃ
قال ابویکر این المنذر اجمع عوام اهل العلم على أن من سب النبي صلى الله عليه وسلم يقتل قال ذلك الامام مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى قال القاضی ابوالفضل وهو منتضی قول أبي بكر الصديق رضي الله عنه لاتقبل توبته عند هؤلاء ويمثله قال أبوحنيفة واصحابه والثوری واهل الكوفة والأرزاعي في المسلمين لكنهم قالوا هي ردة.
অর্থাৎ ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনযির বর্ণনা করেন- সকল উলামায়ে ইসলামের ইজমা বা ঐকমত্য হলাে যে ব্যক্তি নবী করীম (দঃ) এর শানে গালি-গালাজ করবে তাকে ক্বতল করা হবে। আর এই ইজমা বা ঐকমত্য পােষনকারীদের মধ্যে হযরত ইমাম মালেক বিন আনাছ (রঃ), ইমাম লাইছ (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম ইছহাক (রঃ) হলেন- অন্যতম। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এর মজহাব ও এ বিষয়ে একমত। ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রঃ) এর ফরমানের দাবী ও এটা। (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজকারীর সাজা ক্বতল হওয়া)। উপরােক্ত ইমামগনের মতে ঐ ব্যক্তির তাওবাও কবুল হবে না। ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ)তাঁর শিষ্যত্ববরনকারী ইমামগণ, ইমাম ছৌরী (রঃ) কুফার অন্যান্য ইমাম এবং ইমাম আউযায়ী (রঃ) এর অভিমত ও উপরােক্ত ইমামগণের সিদ্ধান্তের অনুরূপ । তাঁদের মতে এটা (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করা) "রিদ্দত" তথা ধর্ম ত্যাগ করার নামান্তর।
পঞ্চমঃ
أن جميع من سب النبی صلى الله عليه وسلم او عابه او الحق به نقصا في نفسه او نسبه او دينه او خصلة من خصاله او عرض به او شبه ه بشيئ على طريق السب له أو الازراء عليه او التصغبر بشانه او الغض منه والعيب له فهو ساب له والحكم فيه حكم الساب يقتل كما نبينه ولانستثنی فصلا من
فصول هذا الباب على هذا المقصد ولانمترى فيه تصریحا كان او تلويحا وهذا كله اجماع من العلماء وائمة الفتوى من لدن الصحابة رضوان الله عليهم الى هلم زراء
অর্থাৎ যারা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি-গালাজ করবে, দোষারােপ করবে, হুজুর (দঃ) এর পূত-পবিত্র মহান সত্ত্বা, বংশ, দ্বীন অথবা কোন চরিত্রের প্রতি দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে কিংবা বিরূপ সমলােচনা করবে অথবা যারা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায়ে বা রাসূলের মহান সত্ত্বার প্রতি কোন প্রকার দোষ-ক্রুটি আরােপ করার অসদুদ্দেশ্যে হুজুর আকরম (দঃ) কে কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে তারা প্রকাশ্যে গালি- গালাজকারী হিসেবে গন্য হবে। আর তাদের হত্যা করাই হবে একমাত্র সাজা।
আমরা এই হুকুম কার্যকরী করার ক্ষেত্রের কোন প্রকার রদ-বদল করবােনা বা এ হুকুম এর বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ পােষন করিনা। প্রকাশ্য অবমাননা হউক কিংবা
অপ্রকাশ্য ইঙ্গিতমূলক উভয়ের হুকুম একই। আর এটা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) থেকে অদ্যাবধি উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর সকল উলামায়ে কেরাম, মুজতাহিদগণ এবং ফতওয়া প্রদানকারী ইমামগণের সর্বসম্মত ফত্ওয়া।
যষ্ঠঃ
والحاصل انه لاشك ولاشبهة في كفر شاتم النبی صلى الله عليه وسلم وفی استباحة قتله وهو المنقول عن الأئمة الأريعة.
অর্থাৎ সার বক্তব্য হলাে এই যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালিগালাজকারী কাফের হওয়া এবং তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার বিষয়ে কোন রূপ সংশয় সন্দেহ নেই। আর এই ফতওয়া চারি মজহাবের ইমাম গণ তথা ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত সর্বসম্মত ফতওয়া।
সপ্তমঃ
كل من أبغض رسول الله صلى الله عليه وسلم بقليه كان مرتدا فالساب بطريق أولى ثم يقتل حدا عندنا.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি মনে মনে বিদ্বেষভাব পােষন করবে সে মুরতাদ। অতএব প্রকাশ্যে গালি-গালাজকারী আরাে বহুগুন বেশী মুরতাদ হবে। ফলে তাকে হত্যা করা হবে শরিয়ত সম্মত সাজা আমাদের মতে।
অষ্টমঃ
ایما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او کذبه او عابه او تنقصه فقد كفر با الله ويانت منه زوجته.
অর্থাৎ যে মুসলিম রাসূলে আকরম (দঃ)এর প্রতি গালি-গালাজ করবে বা মিথ্যা আরােপ করবে বা দোষারােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে সর্বাবস্থায় সে যেন আল্লাহর সাথে কুফরী করলাে। অতঃপর তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেলাে।
নবমঃ
اذا عاب الرجل النبي صلى الله عليه وسلم في شيئ كان كافرا وكذا قال بعض العلماء لو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم شعیر فقد كفر وعن ابی حفص الكبير من عاب النبی صلی الله عليه وسلم بشعرة من شعراته الكرية فقد كفر وذكر في الاصل أن شتم النبی کفر.
অর্থাৎ রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কোন বৈশিষ্ট বা বিষয়ে যদি দোষারােপ করে তাহলে সে কাফের হিসেবে গন্য হবে। এভাবে কতিপয় ইমাম বর্ণনা করেছেন- যদি কোন ব্যক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর পবিত্র চুল মুবারককে তাছগীর" তথা ক্ষুদ্র জ্ঞাপক শব্দে "শুআয়রুন" অর্থাৎ ছােট চুল হিসেবে বর্ণনা করে তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে কাফের হয়ে যাবে। হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হাফছ আল- কবীর (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের একটি পবিত্র চুল মুবারকের প্রতিও দোষারােপ করে তবে তৎক্ষনাত কাফের হয়ে যাবে। ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) তাঁর রচিত গ্রন্থ "মাবছুত" এ বর্ণনা করেন যে, রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি দেয়া কুফরী।
দশমঃ
ولاخلاف بين المسلمين أن من قصد النبي صلى الله عليه وسلم بذلك فهو من ينتحل الاسلام انه مرتد يستحق القتل.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলিম যদি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর শানে অপমান-অবমাননা করার কিংবা রাসূল (দঃ) কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে সে সঙ্গে সঙ্গে মুরতাদ এবং ক্বতল হওয়ার যােগ্য বলে গন্য হবে। এ মাসআলায় মুসলিম মিল্লাতের ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে কোন প্রকার মতানৈক্য নেই।
আমাদের উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, পবিত্র কুরআন, হাদীছে রাসূল (দঃ) উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমত অনুযায়ী নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করাই হলাে একমাত্র সাজা। এরপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে স্পষ্টভাবে অবগত হওয়া অপরিহার্য।
যথাঃ (১) নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান- অবমাননা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকে দন্ডযােগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্থ করার জন্য এই শর্তারােপ করা শুদ্ধ হবে না-"অপমান-অবমানকারী মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে অবমাননা করেছে।" এমন হতে হবে। কেননা এহেন শর্তারােপ নবীর শানে অবমাননাকারীদের রক্ষা করার নামান্তর হবে। শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার দ্বার চিরতরে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এর প্রেক্ষিতে প্রত্যেক নবীর শানে
অবমাননাকারী ব্যক্তি সাজা ভােগ করা হতে এই বলে পার পেয়ে যাবে যে ধর্মীয় জজবা উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে আমি এটা করি নাই। তাছাড়া এহেন শর্ত আল্লাহর কুরআনের ও পরিপন্থী। যেমন সূরা তাওবার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শানে রেছালতে অবমাননাকারী মুনাফিকদের এই অজুহাত "আমরা তা পরস্পরের মধ্যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। শানে রেছালতের অবমাননা করা আমাদের লক্ষ্য নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।" মহান আল্লাহ্ পাক প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন এবং স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন- মুসলমানদের
لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم
অর্থাৎ তােমরা অযুহাত পেশ করাে না অবশ্য তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছো।
(দুই) প্রকাশ্য অপমান- অবমাননা করার ক্ষেত্রে নিয়তের মূল্যায়ন প্রয়ােজন হয় না। রায়েনা" বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের পরও যদি কোন ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) অপমান-অবমাননার উদ্দেশ্য না করে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের
শানে "রায়েনা" উচ্চারণ করতেন তাহলে আল্লাহ্র বাণী-
واسمعوا وللكافرین عذاب اليم
অনুযায়ী কুরআনী সাজার উপযুক্ত বলে গন্য হতেন। আর ইহা এ কথার প্রমাণ বহন করে-শানে রেছালাতে অবমাননার উদ্দেশ্য না করেও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা কুফরী।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম শিহাবউদ্দীন খিফাযী (রঃ) বর্ণনা করেন-
المدار في الحكم بالكفر على الظواهر ولانظر للمقصود والنيات ولانظر لقرائ ن حاله
অর্থাৎ শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার কারণে কুফরী হুকুম প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্য অবমাননাকর শব্দমালার উপর নির্ভর করে। অবমাননাকারীর উদ্দেশ্য, নিয়্যত কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থাবলীর প্রতি নজর করার আবশ্যকতা নেই। নতুবা শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার দরওয়াজা কখনাে বন্ধ হবে না। কেননা, প্রত্যেক অবমাননাকারী এই বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাইবে যে, অপমান-অবমাননা করা আমার নিয়্যত বা উদ্দেশ্য ছিল না। অতএব এই বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে পড়লাে যে, শানে রেছালতে অপমান-অবমাননাকারীর নিয়্ত কিংবা উদ্দেশ্যের যাতে মূল্যায়ন করা না হয় কুফরীর হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে।
(৩) এখানে এই সন্দেহটি নিরসন হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে যে, "যদি কোন মুসলমানের বক্তব্যে নিরানব্বই ভাগ কুফরীর দিক এবং শুধু এক ভাগই ইসলামের দিক এর সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয় তখন ফকীহগনের অভিমত হলাে তাকে কুফরীর ফত্ওয়া দেয়া যাবে না।"
ফকীহগনের উপরােক্ত অভিমতের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে এভাবে যে, কোন মুসলমানের বক্তব্যে যদি নিরানব্বই ভাগ কুফরলীর সম্ভাবনা থাকে এবং প্রকাশ্য কুফরী মূলক শব্দ বা বাক্য না থাকে তখন ফকীহগনের উপরােক্ত হুকুম কিন্তু যেবক্তব্য প্রকাশ্যরূপে অবমাননাকর সেখানে কোনরূপ "তাভীল" তথা ব্যাখ্যা -বিশ্লেষন করা বৈধ নয়। কারণ , প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দে "তাভীল" বা ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্য নয়।
ইমাম কাজী আবুল ফজল আয়াজ মালেকী (রঃ) বর্ণনা করেন -
قال حبيب ابن الريبيع لأن ادعاء التاويل في لفط صريح لايقبل.
অর্থাৎ হাবীব বিন রবী (রঃ) বলেন- প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দমালায় তাভীল" তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লোষন করার দাবী গ্রহনযােগ্য নয়।
কোন বক্তব্য প্রকাশ্য অবমাননাকর হওয়াটা নির্ভর করে সমাজ এবং পরিভাষাগত ব্যবহারের উপর। উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাই যে, যদি কোন ব্যক্তিকে ওয়ালাদুল
হারাম" বা হারামজাদা বলে আখ্যায়িত করা হয় আর পরবর্তীতে "হারাম" শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে, আমি "হারাম" শব্দটিকে "আল মসজিদুল হারাম" ও "বাইতুল হারাম"এ ব্যবহৃত "হারাম" এর ন্যায় সম্মানিত ও মহিমান্বিত অর্থে বলেছি।
এ ব্যাখ্যা কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে আদৌ গ্রহণযােগ্য হতে পারে না। কেননা সামাজিক পরিভাষায় ওয়ালাদুল হারাম" শব্দটা গালি এবং অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বক্তব্য-যেখানে সামাজিক পরিভাষাগত অর্থে
অপমান-অবমাননার অর্থ পাওয়া যায় সেটা অবমাননাকর বক্তব্য হিসাবে স্বীকৃত হবে যদিও বা হাজার "তাভীল" ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হউক না কেন। কেননা সামাজিক পরিভাষাগত অর্থের বরখেলাপ কোন ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্যা নয়।
(চার) এখানে এই সন্দেহের ও অপনােদন হওয়া অপরিহার্য মনে করছি যে, যদি রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা করার সাজা ক্বতল হয়ে থাকে তবে কতিপয় মুনাফিক রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে স্পষ্ট অপমান-অবমাননা করতাে। এমন কি কোন কোন সময় ছাহাবায়ে কেরম (রঃ) আরজ করতেন- ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ)। আমাদের অনুমতি দিন যে আমরা এ সকল
অবমাননাকারী মুনাফিকদের ক্বতল করে দেবাে। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (দঃ) তাদের অনুমতি দেন নাই।
উপরােক্ত বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের অপনােদনকল্পে ইবনে তাইমিয়া বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন। যার সারাংশ হলাে এই যে, (ক) সে সময়ে ঐ সকল মুনাফিকদের উপর সাজা কার্যকরী করা ব্যাপক ফিতনা- ফ্যাসাদের কারণ ছিল। তাই তাদের অবমাননাকর বক্তব্যে ছবর করা ফিতনা-ফ্যাসাদ এর মােকাবিলার চেয়ে সহজতর বিবেচিত হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয় নাই।
(খ) মুনাফিকরা প্রকাশ্য ভাবে শানে রেছালতে অবমাননা করতাে না। বরং পরস্পরের মধ্যে অতি গােপনে শানে রেছালতে অপমানজনক কথােপকথন করতাে।
(গ) ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী মুনাফিকদের হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা এ কথার প্রমান বহন করে যে, ছাহাবায়ে
কেরাম অবগত ছিলেন-রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল। কেননা, নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং শানে রেছালতে অবমাননাকারী আবু রাফে ইয়াহুদী এবং কাব বিন আশরফ কে হত্যা করার নির্দেশ জারি করেছিলেন। এ আদেশ জারীর কারণে ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) জানতেন যে,শানে রেছালতে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল বৈ আর কিছু নয়।
(পাঁচ) রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বৈধ ছিল যে, তিনি তাঁর শানে অবমাননাকারী কিংবা তাকে কষ্টদানকারীকে জাগতিক হায়াতে থাকাবস্থায় ক্ষমা করবেন। কিন্তু উম্মতের জন্য এটা বৈধ নয় যে, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্ষমা করে দিবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং
অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মহান আল্লাহর এই আদেশকে অনুসরণ করেছেন- "আপনি ক্ষমাশীলতার বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করুন, অজ্ঞ-মূর্খদের এড়িয়ে চলুন এবং সৎ কর্মের আদেশ দান করুন।" (সূরা আরাফ ১৯৯ নং আয়াত)।
আমি আরজ করতে চাই যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর উপর ক্বতলের সাজা কার্যকরী করা স্বয়ং রাসূল (দঃ) এর হক। যদিওবা রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননাকর আচরণ করা উম্মতের জন্য ও ভীষন কষ্টদায়ক ব্যাপার এবং একারণে এহেন অবমাননা কারীর উপর সাজা প্রয়ােগ করা উম্মতের হক ও বটে। তবে এটা সরাসরি নহে। বরং রাসূলে আকরম (দঃ) এর পবিত্র মহান সত্বার মাধ্যমে। আল্লাহপাক হজুর (দঃ) কে এ ধরনের এখতিয়ার দান করেছেন যে, তিনি নিজস্ব হক কারাে জন্য মাফ করে দিবেন।
যেমন শরিয়তের অন্যান্য বিধান এর ক্ষেত্রে দলীল সহকারে প্রমাণিত আছে যে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঐ সকল বিধি-বিধানের বিষয়ে রাসূল পাক (দঃ) কে এখতিয়ার দান করেছেন। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) হযরত বারা বিন আযেব (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে খােদা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত আবুদ্দারদা (রঃ) কে একটি ছাগল ছানা কুরবানী করার হুকুম দিয়ে বললেন-
ولن تجزي عن أحد بعدك
অর্থাৎ এই কুরবানী তুমি বিনে অন্য কারাে জন্য কখনাে বৈধ হবে না। এভাবে প্রখ্যাত ছাহাবীয়ে রসূল হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হারাম শরীফের ঘাস কর্তন করাকে হারাম ঘােষনা করলেন-তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) আরজ করলেন-"ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ওহে আল্লাহ রাসূল (দঃ), ইজখার নামী ঘাস কে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখুন। জবাবে আল্লাহর হাবীব (দঃ) এরশাদ করলেন "ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ইজখার নামী ঘাসকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। এটা কর্তন করা তােমাদের জন্য জায়েজ।
এই হাদীছে রাসূল (দঃ) এর ব্যাখ্যায় শেখে মুহাককিক হযরত আবদুল হক মুহাদ্দীছে দেহলভী (রঃ) এবং নওয়াব ছিদ্দীক হাছান খান ভূপালী লিপিবদ্ধ করছেন-
ودرمذهب بعضے آن است که احکام مفوض بود بو صلى الله عليه وسلم هرچه خواهد ویر هرکه خواهد حلال وحرام گرداند وبعضے گویند با اجتهاد گفت واول اصح واظهر است.
অর্থাৎ কতিপয় ইমামগনের মাজহাব হলাে যে, শরিয়তের বিধি-বিধান প্রবর্তন রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-রে জিম্মায় সােপর্দ করা হয়েছে। তিনি যার জন্য যা কিছু চান হারাম-হালাল করতে পারেন।
কেউ কেউ বলেন-রাসূলে পাক (দঃ) এটা ইজতিহাদ বা গবেষনার মাধ্যমে করেছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত ইখতিয়ার এর মাধ্যমে নয়। উভয় মাজহাবের মধ্যে প্রথম মাজহাব টি অধিকতর বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট।
উপরােক্ত হাদীছে রাসূল (দঃ) এর আলােকে প্রমানিত হয় যে রাসূলে পাক (দঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এখতিয়ারের অধিকারী যার প্রেক্ষিতে তিনি কোনরূপ
হিকমত কিংবা কল্যান এর প্রত্যাশায় ঐ সকল মুনাফিকদের উপর ক্বতল এর সাজা কার্যকরী করেন নাই। তবে হুজুরে আকরম (দঃ) এর পরে অন্য কারাে জন্য এ এখতিয়ার বাকী নাই যে, তিনি ও ক্বতল এর সাজা প্রয়ােগে গড়িমসি করবেন।
পরিশেষে আরজ করতে চাই যে, শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার সাজা ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকরী হবে যার পক্ষ থেকে এই অপরাধ সংগঠিত হওয়াটা দৃঢ়তার সাথে অকাট্ট্যরূপে প্রমানিত হয়। এছাড়া অন্য কাউকে এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্থ করে ক্বতল করা কখনাে বৈধ হবে না। খবরে মুতাওয়াতির বা ব্যাপক এবং ধারাবাহিক সাক্ষ্য প্রমান ভিত্তিক সংবাদ এ বিষয়ে অকাট্য দলীল হিসেবে গন্য হবে। তাছাড়া কোন ব্যক্তি যদি অবমাননাকর স্পষ্ট অর্থবােধক কথা
বলে কিংবা লিপিবদ্ধ করে অতঃপর স্বীকারােক্তি করে যে, এই অবমাননাকর কথা আমি বলেছি বা লিপিবদ্ধ করেছি তবে ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে। পরবর্তীতে যতই বাহানা বা কৌশল অবলম্বন করুক না কেন বা বলাবলী করুক যে, অবমাননা করা আমার নিয়্যতের মধ্যে ছিল না। অথবা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা-সেন্টিমেন্টে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। যত কিছুই বলুক না কেন, সর্বাবস্থায় তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে।
যারা রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে স্পষ্ট অবমাননাকর বক্তব্যের তাভীল" বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অবমাননাকারীকে রক্ষা করতে তৎপর হয় তারাও সমান ভাবে অবমাননাকারীর ন্যায় ক্বতলযােগ্য অপরাধী। রাসূলের শানে গালি-গালাজকারীর সাজা প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাহনুন (রঃ) এর অভিমত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) রচিত শেফা শরীফ এবং আছ-ছারেমুল মাসলুল এর বরাতে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি-
من شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ যারা শানে রেছালতে অবমাননাকরীর কুফরী এবং সাজা প্রসঙ্গে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ছাইয়্যেদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (রঃ)
২৫শে নডেম্বর, ১৯৮৫ ইং
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন