রসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা

মুফতীয়ে আজম পাঞ্জাব হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ কাদেরী রজভী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর অভিমতঃ
-----------------------

মুসলিম মিল্লাতের বিজয় ও সাফল্য, সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকৃত এবং পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার মধ্যে নিহিত।
যেমন, মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-

وانتم الأعلون أن كنتم مؤمنين

"অর্থাৎ আর তােমরাই বিজয়ী হবে যদি মুমিন হও"
পরিপূর্ণ ঈমানের প্রান হলাে রসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-প্রীতি ভালবাসা।

হাদীসে নববীতে এরশাদ হয়েছে-

لايؤمن أحدكم حتى اكون احب اليه من والده ر ولده والناس اجمعين

অর্থাৎ তােমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন রূপে গন্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নবী তার নিকট নিজের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল লােকের চেয়ে অধিকতর প্রিয়ভাজন হবাে না (ছহীহ বুখারী শরীফ)।

প্রেম-ভালবাসার দাবী হলাে প্রেমাস্পদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। তাই পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার নিমিত্তে অপরিহার্য হয়ে যায় যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা কারী নবী-বিদ্বেষীদের প্রতি শত্রুতা- বিদ্বেষ পােষন করা।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

لاتجد قوما يؤمنون بالله واليوم الآخر يوادون من  حاد الله ورسوله

অর্থাৎ (ওহে রসূল (দঃ) আপনি আল্লাহ্ এবং আখেরাতে বিশ্বাসী মুমিন সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (দঃ) এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কারী রূপে দেখতে পাবেন না। (সূরা মুজাদালাহ)

উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যায় মালেকী মজহাবের বিখ্যাত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) তাঁর রচিত "শেফা শরীফের দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণনা করেন-

ومنها بغض من ابغض ا الله ورسوله ومعاداة من عاداه
অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল (দঃ) এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (দঃ) এর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পােষণ কারীদের প্রতি বিদ্বেষ-পােষন করা এবং তাঁদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর মহিমান্বিত ছুহবত-সান্নিধ্য লাভে ধন্য ছাহাবায়ে কেরাম-যাদের ঈমানকে পরবর্তী সকল মুমিনের জন্য "মাপকাঠি স্বরূপ" ঘােষণা করে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন-

آمنوا كما آمن الناس

"তােমরা ঈমান আনয়ন করাে যেমন ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) ঈমান আনয়ন করেছেন। (সূরা বাকারা) তাঁদের প্রসঙ্গে ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- ছাহাবায়ে কেরাম খােদায়ী ফরমানের উপর আমল করে-

قد قتلوا أحيائهم وقاتلوا آبانهم وابنائهم في مرضاته

অর্থাৎ তাদের বন্ধু-বান্ধবদের ক্বতল করেছেন এবং বাপ-চাচা ও সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন একমাত্র রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশায়।"
শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ "নছীমুর রেয়াজ" এ বর্ণিত আছে যে-

کابی عبيدة بن الجراح قتل آباه بیدر، وعمر رضي ا الله عنه قتل خاله العاص ومصعب ابن عمبر رضى ا الله عنه قتل اخاه ونحوه ما هو مذكور في السير.

অর্থাৎ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল যাররাহ (রঃ) ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে নিজের পিতা যাররাহ কে ক্বতল করেছেন, আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রঃ) নিজের মামা "আছ" কে হত্যা করেছেন এবং হযরত মুছআব বিন ওমাইর (রঃ) নিজের ভাই কে হত্যা করেছেন। এছাড়া আরাে বিভিন্ন ঘটনা "সীরত" সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত আছে।

কুরআন-হাদীস এবং ছাহাবায়ে কেরাম এর আমালের আলােকে প্রমাণিত হয় যে, নবী - বিদ্বেষী ও শানে রেছালাতে অবমাননা কারীদের পৃথিবী পৃষ্ঠে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাফসীরে রুহুল বয়ান শরীফে" উল্লেখিত আছে যে, আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর শাসনামলে-জনৈক মুনাফিক মুসলিম প্রতিদিন নামাজের জামাতে "সূরা আবাছা" তেলাওয়াত করতাে।
 এ সংবাদ খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ফারুকে আজম (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি ঐ মুনাফিককে ক্বতল করে দেয়ার হুকম দিলেন। কেননা, এ সূরায় বাহ্যিকভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে মৃদু তিরস্কার করা হয়েছে। প্রতিদিন নামাজে এ সূরা তেলাওয়াৎ করার পেছনে মুনাফিকের অন্তরে লুকায়িত কপটতা-ভন্ডামী এবং রাসূল (দঃ) এর প্রতি অবমাননামূলক মনােভাব কে উপলব্ধি করে তৎক্ষনাৎ তাকে ক্বতল করে দেয়ার হুকুম দিলেন। পাকিস্তানে জনৈক নবী-বিদ্বেষী রাসূলে আকরম নূরে মুজাসূসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াছাল্লামের শানে হাস্যকর ও বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে এক পুস্তক প্রকাশ
করে। গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ রহমতুল্লাহ আলায়হি নামক এক আশেকে রাসূল ঐ পু্স্তক রচয়িতাকে হত্যা করে জাহান্নামে পৌঁছায়ে দেয়।
পরবর্তীতে গাজী ইলমুদ্দীন (রহ:) বন্দী হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। আর তথায় রাসূলে খােদা (দঃ) স্বীয় মহিমান্বিত দীদার দানে এই আশেক কে ধন্য করলেন। বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দীছ আলীপুরী এক আরেফে কামেল হযরত পীর সৈয়্যদ জামাত আলী শাহ রহমতুল্লাহ আলায়হি গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর নামাজে যানাজা পড়ানাের সময় বল্লেন-আমার সমগ্র জীবন হাদীসে রাসূল (দঃ) এর অধ্যয়ন-অধ্যাপনা এবং দেশ-জাতি ,মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে অতিবাহিত হয়। চল্লিশ বারেরও অধিক আল্লাহর ঘরের হজ্ব করার সৌভাগ নসীব হয়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নিয়ে যায় কামারের সন্তান গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ)।

আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করা, স্বপ্নযােগে গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর পরম
সৌভাগ্যের দীদারে রাসূল (দঃ) লাভে ধন্য হওয়া এবং তাঁর এই আমলের উপর মুহাদ্দীছে আলী পুরী হযরত পীর সৈয়্যদ আলী শাহ্ (রহঃ) এর ঈর্ষা করা এই কথাকে
জোরদার করে যে রাসূল পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা এক মাত্র ক্বতল।
সর্বদা ইসলামের শত্রুদের বিশেষতঃ ইয়াহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত লেগে রয়েছে যে, কিভাবে মুমিনদের,
হৃদয় থেকে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব - শ্ৰেষ্ঠত্বকে বের করে ঈমানী চেতনা ও আকিদাগত জযবা থেকে বঞ্চিত করা যায় এবং বিশ্বের দরবারে নেতৃত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পরিবর্তে অধঃপতন ও অপমান-অবমাননার গর্তে নিক্ষেপ করা যায়। তাদের এহেন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লামা ইকবাল (রহঃ) বলেছেন -

به فاقه کش جو موت سے ذرتا نهیں کبهی

روح محمدی اس کے بدن سے نکال دو

অর্থাৎ এই ভুক্ষা ও ক্ষুৎপীড়িত মুসলিম জাতি যারা মৃত্যুকে পরােয়া করে না আদৌ। ঈমানী রুহ তথা ঈমানী চেতনা তাদের অন্তর থেকে বের করে দাও। (তারপর তােমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।)

অতঃপর তিনি মুসলমানদের সতর্ক করলেন এভাবে-
مصطف برسان خویش را که دین همه اوست

اگر باو نرسیدی تمام بولهبی است

অর্থাৎ হে মুমিন! নিজেকে নবীয়ে করীম রউফুর রহীম (দঃ) এর পবিত্র চরন তলে সমর্পন করাে। কারণ তিনিই তাে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রতিচ্ছবি। যদি তাঁর চরন যুগলে সমর্পিত হতে সক্ষম না হও তবে সবাই আবু লাহাবের দলভূক্ত হবে। মুমিন হবে না।

ইসলামের শত্রু ইয়াহুদী-নাছারা চক্র সাউদী আরব সহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলাে কে নিজেদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আবদ্ধ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশের প্রতি এখন তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে। নিকট অতীতেও রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী খৃষ্টানদেরকে পাকিস্তান হতে নিরাপদে স্বদেশে সরিয়ে নিয়েছে তারা। ইসমাঈল দেহলভীর পূজারী দেওবন্দী ওয়াহাবীদের মাধ্যমে মুমিনদের হৃদয় ও মস্তিস্ক হতে রাসূলে আকরম নূরে
মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব মুছে ফেলার অপচেষ্টা-অপতৎপরতা তাে সক্রিয় রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বেরেলভী সর্বদা বক্তৃতা - বক্তব্য লিখনীর মাধ্যমে সর্বস্তরের মুসলমানদের হৃদয় এবং মস্তিষ্কে ঈমানী জযবা-চেতনা জাগিয়ে তােলার লক্ষ্যে রাসূলে আকরম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা-মহিমা-শ্রেষ্ঠত্বকে জাগরুক করার মহৎ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ আনজুমানে আনুওয়ারে কাদেরীয়া পাকিস্তান এর সকল প্রয়াস-প্রচেষ্টা- পরিকল্পনা এ মহান উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিবেদিত। এলাকায় এলাকায় মাদ্রাসা,মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মাজহাব-মিল্লতের প্রচার-প্রসারের ধারাবাহিক কর্ম তৎপরতা চালু রয়েছে।
"রাসূল (সঃ) অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা নামে এই কিতাব প্রচারে ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠ প্রকাশনা। এর পূর্বেও পাঁচ খানা কিতাব প্রকাশিত হয়েছে এ সংস্থার উদ্যোগে। আলােচ্য রেছালায় ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত আজীমুল বরকত আহমদ রজা খান ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) এর মহা মূল্যবান ফতওয়া এবং গাজ্জালীয়ে যমান হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) এর তত্ত্ব, তথ্য ও প্রমাণ বহুল প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। যা তিনি পাকিস্তানের ফেডারেল শরয়ী আদালতের প্রধান
বিচারপতির ফতওয়া প্রার্থনার প্রেক্ষিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাও এখানে সংকলিত হলাে যা গভীর মনােনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করলে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলা আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াছাল্লামের প্রেম-মহব্বত মুমিনের হৃদ রাজ্যে জেগে উঠবে এবং ইসলামের শত্রুদের সকল প্রকার যড়যন্ত্র চিরতরে নির্মূল হবে।

আনজুমানে আনওয়ারে কাদেরীয়ার সভাপতি জনাব মাওলানা মুহাম্মদ আলতাফ কাদের এবং অন্যান্য সকল কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি জানাই শত-সহস্র মুবারক বাদ। আর যারা প্রকাশনার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন সকলের জন্য মহান আল্লাহর পাক দরবারে ফরিয়াদ করি আল্লাহ্ সকলের সার্বিক কর্ম-তৎপরতা কবুল করুন এবং তাদের সকল প্রকার শ্রম-সাধনাকে মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে উত্তরােত্তর উন্নতি ও সাফল্য দান
করুন। আমীন।

-মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ (গুফেরালাহ)
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খানিওয়াল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন