বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম।
গ্রন্থ:- রসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা
মূল লেখক
আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রজা খান ফাজেলে বেরেলভী (রহঃ)
ও
গাযালীয়ে যমান রাজীয়ে দাওন আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ শাহ কাযেমী (রহঃ)
অনুবাদক
মাওলানা হাফেজ কাজী মুহাম্মদ আবদুল আলীম রিজভী
উছতাজুত তাফসীর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
খতীব বিপণি বিতান বাইতুল ইকরাম জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রকাশনায়:
আল-ইমাম আহমদ রজা ওয়াশ শায়খ তৈয়্যব শাহ রিসার্চ একাডেমী বাংলাদেশ, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
প্রকাশকালঃ
১৮ সফর, ১৪২২ হিজরী
১৩ মে, ২০০১ ইংরেজী
৩০ বৈশাখ ১৪০৮ বাংলা
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মুদ্রণ তত্ত্বাবধানেঃ
এট্যাচ এড
আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। ফোনঃ ৬১০১৪৯-১০২
উৎসর্গ
--------
গাউছে জমান, কুতুবে দাওরান, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও ত্বরীকত, মুরশেদে বরহক, আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী শাহ সূফী, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (কুদ্দিছা ছিররুহুল আজীজ) এর পবিত্র চরণ যুগলে| যাঁর মহিমান্বিত পদধূলিই অধমের চলার পথের একমাত্র পাথেয়।
অনুবাদকের অভিব্যক্তি
----------------
ইসলামের ইতিহাসে আত্মপ্রকাশকারী সর্বপ্রথম গােমরাহ দল 'খারেজী' থেকে শুরু করে অদ্যাবধি আবির্ভূত সকল বাতিল ফিরকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম, আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে-মানে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ও অবমাননা করা। জগদ্বাসীর সম্মুখে সৃষ্টিকুল সরদার, অনুপম আদর্শ, সুন্দরতম ও মহত্তম নূরানী সত্ত্বা হাবীবে খােদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে বিতর্কিত করে তােলা, যা মু'মিন নরনারীর ঈমান-আকীদা-আমলকে ধ্বংস করে মুরতাদ এ রূপান্তরিত করে। যার একমাত্র সাজা হলাে ক্বতল।
এভাবে তারা প্রিয় নবীর মাধ্যমে এই পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত মহান আল্লাহর একত্ববাদ, নবী-রাসূলের রিসালত, পরকালীন জীবনের অস্তিত্ব ও বাস্তবতা,পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযােগ্যতাসহ ঈমান-ইসলামকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে বিতর্কিত ও বিকৃত বিষয়ে পরিণত করে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যদি বিশ্বমানবের সামনে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হন তবে তারই বদৌলতে জগতের বুকে প্রতিষ্ঠিত দ্বীন-ঈমান কোন দিন কোন মানবের নিকট সমাদৃত ও গ্রহণযােগ্য হতে পারে না।
এটাই হলাে ইয়াহুদী-নাসারাসহ সকল মুসলিম ছদ্মবেশী মুনাফিকের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র ঈমান-আকীদার বিরুদ্ধে।
কিন্তু আল্লাহ পাকের ঘােষণা- “তারা চায় আল্লাহর নূর-জ্যোতি (অর্থাৎ দ্বীন ঈমান-কুরআন ও ছাহেবে কুরআন নবী (দঃ)কে নিভিয়ে দিতে ফুৎকার দিয়ে।
অথচ আল্লাহ স্বীয় নূরকে পরিপূর্ণ করে কায়েম রাখবেন। যদিও কাফের মুশরিকতা অপছন্দ করে।"
এই খােদায়ী ফরমানের বাস্তবতায় বিগত চৌদ্দশত বছর ব্যাপী ঈমান-ইসলামের পবিত্র বাগানকে সকল বাতিল দল-উপদলের হামলা ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করে আবাদ রেখেছেন- ছাহাবী, তাবেয়ী, গাউছ, কুতুব, আবদালসহ অসংখ্য মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ইমাম ও হক্কানী উলামা। এহেন মুসলিম মনীষীদের অন্যতম হলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, জ্ঞানের বিশ্বকোষ, দেড় সহস্রাধিক গ্রন্থ প্রণেতা,আশেকে রাসূল (দঃ), আলা হযরত ইমাম আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) ও গাযযালীয়ে জমান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রঃ)।
যাঁদের বর্ণাঢ্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গীত হয় দেওবন্দী-ওহাবী, কাদিয়ানীসহ সকল বাতিল ফিরকার মূলােৎপাটন করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শের হেফাজতে অজস্র গ্রন্থ-রেসালা রচনায়। যার অন্যতম হলাে আলােচ্য 'রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা’ নামক কিতাবখানি।
উর্দু ভাষায় রচিত ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমদ রজা খান বেরেলভী (রঃ) এবং গাযযালীয়ে যমান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাযেমী (রঃ) এর অনবদ্য সৃষ্টি “রসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা' নামক কিতাবখানীর বঙ্গানুবাদ বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের খেদমতে পেশ করতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। লক্ষ-কোটি দরূদ সালাম আরজ করছি হাবীবে খােদা সরদারে আম্বিয়া (দঃ) এর পবিত্র রওজায়। শতসহস্র মােবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের যারা উৎসাহ-উদ্দীপনা, মূল্যবান পরামর্শ ও সহযােগিতা দিয়ে ধন্য করেছেন অধমের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে।
সব রকমের সীমাবদ্ধতার ভেতরও সাধ্যানুসারে চেষ্টা করেছি বঙ্গানুবাদকে নির্ভুল ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে। তবে শত চেষ্টা সত্ত্বেও ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাওয়া
অস্বাভাবিক নয়। সহৃদয় পাঠকের গঠনমূলক পরামর্শ গ্রন্থখানাকে আরও সুন্দর এবং মার্জিত করবে আগামীতে এই প্রত্যাশা রাখি।
বিনীত
হাফেজ কাজী মুহাম্মদ আবদুল আলীম রিজভী
১৮ সফর, ১৪২২ হিজরী
১৩ মে, ২০০১ ইংরেজী
সূচীক্রম
বিষয়
** মুফতীয়ে আজম পাঞ্জাব হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ কাদেরী রজভী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর অভিমত -
** ইমামে আহলে সুন্নাত রহমতুল্লাহি তাআলা আলায়হি -
** আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ফকীহে আজম মাওলানা শাহ আহমদ রজা খান (রহঃ) এর সাড়া জাগানাে ফতওয়া -
** গজ্জালিয়ে যমান হযরত সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ) -
** শরীয়তের বিধান সম্পর্কিত পিনিশন প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা -
** ঈমান' প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) এর বক্তব্য -
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
মুফতীয়ে আজম পাঞ্জাব হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ কাদেরী রজভী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর অভিমতঃ
-----------------------
মুসলিম মিল্লাতের বিজয় ও সাফল্য, সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকৃত এবং পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার মধ্যে নিহিত।
যেমন, মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-
وانتم الأعلون أن كنتم مؤمنين
"অর্থাৎ আর তােমরাই বিজয়ী হবে যদি মুমিন হও"
পরিপূর্ণ ঈমানের প্রান হলাে রসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-প্রীতি ভালবাসা।
হাদীসে নববীতে এরশাদ হয়েছে-
لايؤمن أحدكم حتى اكون احب اليه من والده ر ولده والناس اجمعين
অর্থাৎ তােমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন রূপে গন্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নবী তার নিকট নিজের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল লােকের চেয়ে অধিকতর প্রিয়ভাজন হবাে না (ছহীহ বুখারী শরীফ)।
প্রেম-ভালবাসার দাবী হলাে প্রেমাস্পদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। তাই পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার নিমিত্তে অপরিহার্য হয়ে যায় যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা কারী নবী-বিদ্বেষীদের প্রতি শত্রুতা- বিদ্বেষ পােষন করা।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
لاتجد قوما يؤمنون بالله واليوم الآخر يوادون من حاد الله ورسوله
অর্থাৎ (ওহে রসূল (দঃ) আপনি আল্লাহ্ এবং আখেরাতে বিশ্বাসী মুমিন সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (দঃ) এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কারী রূপে দেখতে পাবেন না। (সূরা মুজাদালাহ)
উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যায় মালেকী মজহাবের বিখ্যাত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) তাঁর রচিত "শেফা শরীফের দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণনা করেন-
ومنها بغض من ابغض ا الله ورسوله ومعاداة من عاداه
অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল (দঃ) এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (দঃ) এর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পােষণ কারীদের প্রতি বিদ্বেষ-পােষন করা এবং তাঁদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর মহিমান্বিত ছুহবত-সান্নিধ্য লাভে ধন্য ছাহাবায়ে কেরাম-যাদের ঈমানকে পরবর্তী সকল মুমিনের জন্য "মাপকাঠি স্বরূপ" ঘােষণা করে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন-
آمنوا كما آمن الناس
"তােমরা ঈমান আনয়ন করাে যেমন ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) ঈমান আনয়ন করেছেন। (সূরা বাকারা) তাঁদের প্রসঙ্গে ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- ছাহাবায়ে কেরাম খােদায়ী ফরমানের উপর আমল করে-
قد قتلوا أحيائهم وقاتلوا آبانهم وابنائهم في مرضاته
অর্থাৎ তাদের বন্ধু-বান্ধবদের ক্বতল করেছেন এবং বাপ-চাচা ও সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন একমাত্র রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশায়।"
শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ "নছীমুর রেয়াজ" এ বর্ণিত আছে যে-
کابی عبيدة بن الجراح قتل آباه بیدر، وعمر رضي ا الله عنه قتل خاله العاص ومصعب ابن عمبر رضى ا الله عنه قتل اخاه ونحوه ما هو مذكور في السير.
অর্থাৎ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল যাররাহ (রঃ) ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে নিজের পিতা যাররাহ কে ক্বতল করেছেন, আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রঃ) নিজের মামা "আছ" কে হত্যা করেছেন এবং হযরত মুছআব বিন ওমাইর (রঃ) নিজের ভাই কে হত্যা করেছেন। এছাড়া আরাে বিভিন্ন ঘটনা "সীরত" সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত আছে।
কুরআন-হাদীস এবং ছাহাবায়ে কেরাম এর আমালের আলােকে প্রমাণিত হয় যে, নবী - বিদ্বেষী ও শানে রেছালাতে অবমাননা কারীদের পৃথিবী পৃষ্ঠে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাফসীরে রুহুল বয়ান শরীফে" উল্লেখিত আছে যে, আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর শাসনামলে-জনৈক মুনাফিক মুসলিম প্রতিদিন নামাজের জামাতে "সূরা আবাছা" তেলাওয়াত করতাে।
এ সংবাদ খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ফারুকে আজম (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি ঐ মুনাফিককে ক্বতল করে দেয়ার হুকম দিলেন। কেননা, এ সূরায় বাহ্যিকভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে মৃদু তিরস্কার করা হয়েছে। প্রতিদিন নামাজে এ সূরা তেলাওয়াৎ করার পেছনে মুনাফিকের অন্তরে লুকায়িত কপটতা-ভন্ডামী এবং রাসূল (দঃ) এর প্রতি অবমাননামূলক মনােভাব কে উপলব্ধি করে তৎক্ষনাৎ তাকে ক্বতল করে দেয়ার হুকুম দিলেন। পাকিস্তানে জনৈক নবী-বিদ্বেষী রাসূলে আকরম নূরে মুজাসূসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াছাল্লামের শানে হাস্যকর ও বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে এক পুস্তক প্রকাশ
করে। গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ রহমতুল্লাহ আলায়হি নামক এক আশেকে রাসূল ঐ পু্স্তক রচয়িতাকে হত্যা করে জাহান্নামে পৌঁছায়ে দেয়।
পরবর্তীতে গাজী ইলমুদ্দীন (রহ:) বন্দী হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। আর তথায় রাসূলে খােদা (দঃ) স্বীয় মহিমান্বিত দীদার দানে এই আশেক কে ধন্য করলেন। বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দীছ আলীপুরী এক আরেফে কামেল হযরত পীর সৈয়্যদ জামাত আলী শাহ রহমতুল্লাহ আলায়হি গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর নামাজে যানাজা পড়ানাের সময় বল্লেন-আমার সমগ্র জীবন হাদীসে রাসূল (দঃ) এর অধ্যয়ন-অধ্যাপনা এবং দেশ-জাতি ,মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে অতিবাহিত হয়। চল্লিশ বারেরও অধিক আল্লাহর ঘরের হজ্ব করার সৌভাগ নসীব হয়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নিয়ে যায় কামারের সন্তান গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ)।
আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করা, স্বপ্নযােগে গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর পরম
সৌভাগ্যের দীদারে রাসূল (দঃ) লাভে ধন্য হওয়া এবং তাঁর এই আমলের উপর মুহাদ্দীছে আলী পুরী হযরত পীর সৈয়্যদ আলী শাহ্ (রহঃ) এর ঈর্ষা করা এই কথাকে জোরদার করে যে রাসূল পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা এক মাত্র ক্বতল।
সর্বদা ইসলামের শত্রুদের বিশেষতঃ ইয়াহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত লেগে রয়েছে যে, কিভাবে মুমিনদের,
হৃদয় থেকে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব - শ্ৰেষ্ঠত্বকে বের করে ঈমানী চেতনা ও আকিদাগত জযবা থেকে বঞ্চিত করা যায় এবং বিশ্বের দরবারে নেতৃত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পরিবর্তে অধঃপতন ও অপমান-অবমাননার গর্তে নিক্ষেপ করা যায়। তাদের এহেন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লামা ইকবাল (রহঃ) বলেছেন -
به فاقه کش جو موت سے ذرتا نهیں کبهی
روح محمدی اس کے بدن سے نکال دو
অর্থাৎ এই ভুক্ষা ও ক্ষুৎপীড়িত মুসলিম জাতি যারা মৃত্যুকে পরােয়া করে না আদৌ। ঈমানী রুহ তথা ঈমানী চেতনা তাদের অন্তর থেকে বের করে দাও। (তারপর তােমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।)
অতঃপর তিনি মুসলমানদের সতর্ক করলেন এভাবে-
مصطف برسان خویش را که دین همه اوست
اگر باو نرسیدی تمام بولهبی است
অর্থাৎ হে মুমিন! নিজেকে নবীয়ে করীম রউফুর রহীম (দঃ) এর পবিত্র চরন তলে সমর্পন করাে। কারণ তিনিই তাে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রতিচ্ছবি। যদি তাঁর চরন যুগলে সমর্পিত হতে সক্ষম না হও তবে সবাই আবু লাহাবের দলভূক্ত হবে। মুমিন হবে না।
ইসলামের শত্রু ইয়াহুদী-নাছারা চক্র সাউদী আরব সহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলাে কে নিজেদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আবদ্ধ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশের প্রতি এখন তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে। নিকট অতীতেও রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী খৃষ্টানদেরকে পাকিস্তান হতে নিরাপদে স্বদেশে সরিয়ে নিয়েছে তারা। ইসমাঈল দেহলভীর পূজারী দেওবন্দী ওয়াহাবীদের মাধ্যমে মুমিনদের হৃদয় ও মস্তিস্ক হতে রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব মুছে ফেলার অপচেষ্টা-অপতৎপরতা তাে সক্রিয় রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বেরেলভী সর্বদা বক্তৃতা - বক্তব্য লিখনীর মাধ্যমে সর্বস্তরের মুসলমানদের হৃদয় এবং মস্তিষ্কে ঈমানী জযবা-চেতনা জাগিয়ে তােলার লক্ষ্যে রাসূলে আকরম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা-মহিমা-শ্রেষ্ঠত্বকে জাগরুক করার মহৎ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ আনজুমানে আনুওয়ারে কাদেরীয়া পাকিস্তান এর সকল প্রয়াস-প্রচেষ্টা- পরিকল্পনা এ মহান উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিবেদিত। এলাকায় এলাকায় মাদ্রাসা,মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মাজহাব-মিল্লতের প্রচার-প্রসারের ধারাবাহিক কর্ম তৎপরতা চালু রয়েছে।
"রাসূল (সঃ) অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা নামে এই কিতাব প্রচারে ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠ প্রকাশনা। এর পূর্বেও পাঁচ খানা কিতাব প্রকাশিত হয়েছে এ সংস্থার উদ্যোগে। আলােচ্য রেছালায় ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত আজীমুল বরকত আহমদ রজা খান ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) এর মহা মূল্যবান ফতওয়া এবং গাজ্জালীয়ে যমান হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) এর তত্ত্ব, তথ্য ও প্রমাণ বহুল প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। যা তিনি পাকিস্তানের ফেডারেল শরয়ী আদালতের প্রধান বিচারপতির ফতওয়া প্রার্থনার প্রেক্ষিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাও এখানে সংকলিত হলাে যা গভীর মনােনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করলে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলা আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াছাল্লামের প্রেম-মহব্বত মুমিনের হৃদ রাজ্যে জেগে উঠবে এবং ইসলামের শত্রুদের সকল প্রকার যড়যন্ত্র চিরতরে নির্মূল হবে।
আনজুমানে আনওয়ারে কাদেরীয়ার সভাপতি জনাব মাওলানা মুহাম্মদ আলতাফ কাদের এবং অন্যান্য সকল কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি জানাই শত-সহস্র মুবারক বাদ। আর যারা প্রকাশনার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন সকলের জন্য মহান আল্লাহর পাক দরবারে ফরিয়াদ করি আল্লাহ্ সকলের সার্বিক কর্ম-তৎপরতা কবুল করুন এবং তাদের সকল প্রকার শ্রম-সাধনাকে মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে উত্তরােত্তর উন্নতি ও সাফল্য দান
করুন। আমীন।
-মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ (গুফেরালাহ)
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খানিওয়াল।
ইমামে আহলে সুন্নাত রহমতুল্লাহি তাআলা আলায়হি
---------------------
"ইমামে আহলে সুন্নাত" এই মহিমান্বিত শব্দামালা যখনই আমাদের কানে ভেসে আসে সঙ্গে সঙ্গে এক মহান ব্যক্তিত্বের স্বরণ আমাদের মনােজগতকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর তিনি হলেন, ইমামে আহলে সুন্নাত মুজা্দিদে দ্বীনও মিল্লাত আলা হযরত ইমাম আহমদ রজা খান ফাযেলে বেরেলভী রহমতুল্লাহ্ আলায়হি।
ইমাম আহমদ রজা ফাযেলে বেরেলভী (রহঃ) বংশ পরস্পরায় পাঠান। মাযহাব চর্চায় হানাফী এবং ত্বরিক্বতে কাদেরী ছিলেন। সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরীয়ায় আলা হযরতের দাখিল হওয়া প্রসঙ্গে সংঘটিত একটি মহিমান্বিত কারামতের বর্ণনা বিভিন্ন জীবন চরিত গ্রন্থে পাওয়া যায়। আর তা হলাে তিনি এবং তাঁর বুযুর্গ পিতা ভারতের মারহারা শরীফে "আসতানায়ে আলিয়া বরকাতিয়ায়" উপস্থিত হলে মহান অলীয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহ সৈয়্দ আলে রাসূল রহমতুল্লাহ আলায়হি এর সঙ্গে সর্ব প্রথম তাঁদের সাক্ষাত হয়। শাহ সৈয়্যদ আলে রাসূল (রহঃ) আলা হযরত (রঃ) কে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন , আসুন, আমি তাে কয়েক দিন থেকে আপনার এন্তেজারে রয়েছি। ইমামে আহলে সুন্নাত বায়আত গ্রহন করলেন। আর তখনই মহান অলী শাহ আলে রাসূল (রহঃ) সকল সিলসিলার ইযাজত প্রদান করতঃ আলা হযরতের মুবারক মস্তকে খেলাফতের তাজ পরিয়ে দিলেন। উপস্থিত মুরীদগণ আরজ করলেন-হুজুর! আপনি উনাদেরকে কোন প্রকার রেয়াজত কিংবা সাধনার হুকুম দিলেন না। বরং বায়আতের সঙ্গে সঙ্গে খেলাফতও দান করলেন। এর অন্তর্নিহিত ভেদ কি? জবাবে শাহ আলে রাসূল (রহঃ) বললেন, "তাঁরা সম্পূর্ণ রুপে তৈরী হয়ে এসেছেন। তাঁদের শুধু একজন শেখে কামেল এর সাথে "নিসবত (সম্পর্ক) স্থাপনের প্রয়ােজন ছিল।" এ বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আর বলতে লাগলেন যে, মহান আল্লাহ্ যদি কিয়ামত দিবসে আমায় জিজ্ঞাসা করেন-হে আলে রাসূল! তুমি দুনিয়া হতে আমার জন্য কি নিয়ে এসছাে? তখন আমি আল্লাহর আলিশান দরবারে ইমাম আহমদ রজা কে পেশ করবাে।
ইমাম আহমদ রজা খান (রহঃ) ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিঃ মােতাবেক ১৪ই জুন ১৮৫৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী শহরে জন্মগ্রহন করেন। নামকরণ করা হয় মুহাম্মদ। ঐতিহাসিক নাম মুখতার। সম্মানিত পিতামহ নাম রাখলেন-আহমদ রজা পরবর্তীতে আলা হযরত নিজেই আবদুল মুছতফা" অংশটুকু নিজের নামের সঙ্গে সংযােজন করলেন। ভক্ত অনুরক্তরা "ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত ফাযেলে বেরেলভী ইত্যাদী অভিধায় তাঁকে স্মরণ করে থাকে।
আলা হযরতের খেদমতঃ
----------------
প্রায় বাহাত্তরটি বিষয়ের উপর আলা হযরতের পরিপূর্ণ দখল ও দক্ষতা ছিল, তিনি মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে দুগ্ধপান সংক্রান্ত বিষয়ে জীবনের সর্বপ্রথম ফত্ওয়া লিপিবদ্ধ করেন বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন বিষয় বস্তুর উপর প্রায় দেড় সহস্রাধিক মহামূল্যবান পুস্তক রচনা করে মুসলিম বিশ্বে আলােড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব হলাে উর্দু ভাষায় পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ অনুবাদ। যাতে শানে উলুহিয়ত এবং রাসূলে আকরম (দঃ) এর মর্যাদা-মহিমা -মহত্বের উপর সর্বাধিক শুরুত্ব আরােপিত হয়। এর নামকরণ করা হয়, "কানযুল ঈমান অর্থাৎ "ঈমানের ভান্ডার" নামে। উর্দু ভাষায় কৃত পবিত্র কুরআনের অন্যান্য অনুবাদ এর সঙ্গে কানযুল ঈমান এর তুলনামূলক পর্যালােচনা করে জ্ঞানীগণ অনায়াসে এ সিন্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হবেন যে, "কানযুল ঈমান", ই উর্দু ভাষায় পবিত্র কুরআনের সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও উৎকৃষ্ট অনুবাদ। যা আলা হযরতের উচ্চতর এবং গভীর পান্ডিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। তাঁর আরেকটি উল্লেখযােগ্য ও অবিস্মরনীয় খেদমত হলাে ফিক্হ শান্ত্রের জগতে সর্বাধিক আলােড়ন সৃষ্টিকারী বিশাল ফতওয়ার ভান্ডার ফাতাওয়ায়ে রজভীয়া শরীফ" যা বারাে খন্ডে সুবিন্যান্ত, প্রতিটি খন্ড সহস্রাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত। যাকে মুসলিম গবেষক, পন্ডিত ও মনীষীগণ ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম" অর্থাৎ ইসলামের বিশ্বকোষ নামে অভিহিত করে থাকে। আলা হযরতের এহেন বিস্ময়কর, খেদমতে ধর্মীয় মনীষীরা এক বাক্যে তাঁকে চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইমাম আহমদ রজা ফাযেলে বেরেলভী (রহঃ) ছিলেন শানে রেছালতের উপর তিনি অজস্র নাত,গজল, রচনা করেন। হুজুরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে রচিত প্রসিদ্ধ "ছালাত-ছালাম" (মুছতফ জানে রহমত পে লাখাে সালাম)যার একেকটি পংক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর একেকটি বরকতময় সুন্নাত এবং আমলকে নির্দেশ করে লিখিত হয়েছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বিশেষতঃ পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায় শত বর্ষ ধরে সর্বজন সমাদৃত হয়ে পঠিত হয়ে আসছে। তাঁর নাত-সংকলন "হাদায়েকে বখশিশ" নামে সুপ্রসিদ্ধ।
ملك سخن کی شاهی تمکو رضا مسلم
جس سمت آگئ هيں سکے بتها دیئے هیں
মূলতঃ সমগ্র জীবনকে তিনি দ্বীনের খেদমতে অতিবাহিত করেন। তাঁর হৃদয়ে সদা।মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণ কামনা জাগরুক থাকতাে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে তিনি মুসলিম জাতির পথ-প্রদর্শক এর ভূমিকা পালন করেছেন। যখন বড় বড় কংগ্রেসী মৌলভীরা "অখন্ড ভারত" আন্দোলনের শ্লোগানে মুখর, আলা হযরত তখন মুসলমানদেরকে এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাবধান করে দ্বি জাতি তত্ত্বের ফর্মূলা পেশ করলেন। অতঃপর ১৮৯৭ সালে পাটনায় অনুষ্ঠিত "অল ইন্ডিয়া ছুন্নী কনফারেন্সে" দ্বিজাতি তত্ত্বের ফর্মূলা উপস্থাপন করে মুসলিম জাতিকে সচেতন করে দিলেন যে, মুসলমান এক স্বতন্ত্র জাতি এবং হিন্দু আরেক স্বতন্ত্র জাতি। সুতরাং এই স্বতন্ত্র ধর্ম এবং জাতি সত্তার ভিত্তিতে তাদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি নির্ধারিত হতে হবে। এভাবে আলা হযরত মুসলিম জাতির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায় যে, তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক সমুজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন।
২৫শে ছফর ১৩৪০ হিঃ মােতাবেক ২৮শে অক্টোবর ১৯২১ইং বেরেলী শরীফে তিনি বেছাল প্রাপ্ত হন। সেখানেই তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত। যা আজো ইসলামী বিশ্বের মুসলিম জাতির নিকট হেদায়তের জ্যোতি বিকিরণ করে যাচ্ছে।
মুহাম্মদ আলতাফ আহমদ কাদেরী রজভী
আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ফকীহে আজম মাওলানা শাহ আহমদ রজা খান রহমতুল্লাহি আলায়হি এর সাড়া জাগানাে ফতওয়া।
(ইহা রজভীয়া লাইব্রেরী, আরামবাগ, করাচী কর্তৃক মুদ্রিত ফতওয়ায়ে রজভীয়ার ষষ্ঠ খন্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় ছাপানাে হয়েছে।)
++++++++++++++++
জবাবঃ
رب أعوذ بك من همزات الشياطين - واعوذ بك رب أن يحضرون - والذين يوذون رسول ا الله لهم عذاب اليم - أن الذين يوذون ال له ورسوله لعنهم ا الله في الدنیا والآخرة واعد لهم عذابا مهينا - الا لعنة ا الله على الظالمين.
তরজমাঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররােচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালন কর্তা, আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক সাজা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শান্তি। সাবধান! জালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। মুসলিম নামধারীদের মধ্যে যারা (শানে রেছালতের অবমাননা সম্বলিত) ঐ অভিশপ্ত পত্র খানা রচনা করেছে তারা কাফের-মুরতাদ (অর্থাৎ ধর্মত্যাগী) যারা ঐ পত্র খানার উপর দ্বিতীয় দফায় নজর দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছে তারাও কাফের, মুরতাদ। যাদের তত্তাবধানে তৈরী হয়েছে তারাও কাফের, মুরতাদ। মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঐ অভিশপ্ত পত্রের বক্তব্য এর অনুবাদ করে নবীজীর অপমান-অবমাননার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, বা উহার বক্তব্যকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছে কিংবা অভিশপ্ত পত্রকে
নিজেদের নম্বর কমিয়ে দেয়া বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার চেয়ে সহজ বিষয় বলে ধারণা করেছে তারা সবাই কাফের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) প্রাপ্ত বয়স্ক হউক অপ্রাপ্তবয়স্ক।
উপরােক্ত চার দলের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে সালাম কালাম করা, মেলামেশা, উঠা-বসা করা সবই সম্পূর্ণ রূপে হারাম। তাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করলে তাকে গােসল দেয়া, কাফন পরানাে, তাঁর মৃতদেহবাহী খাট বহন করা, তার জানাযার নামাযে অংশগ্রহন করা, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তার আত্মায় ছওয়াব পৌঁছানাে ইত্যাদী সন্দেহাতীত ভাবে হারাম, বরং এহেন মৃত কাফের, মুরতাদগণের নিকটাত্মীয়রা যদি শরিয়তের বিধি-বিধান মান্য করেন তবে তাদের কর্তব্য হবে এই অভিশপ্তদের মৃতদেহগুলাে কুকুর মরা-শৃগাল মরার ন্যায় চামার-কুমার এর সাহায্যে পর্বত চূড়ায় উঠিয়ে কোন সরু-সংকীর্ণ গর্তের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করে যাতে গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের গলিত লাশের দূর্গন্ধে আল্লাহর সৃষ্ট জীবরা কষ্ট না পায়। এই বিধান সকল নবী-বিদ্বেষীদের জন্য সমান ভাবে প্রযােজ্য।
উপরােক্ত কাফের,মুরতাদ গণের বিবাহিত স্ত্রীরা বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পরস্পর কাছাকাছি হলে ব্যভিচার হিসাবে গন্য হবে এবং এর কারণে সন্তান হলে অলদুজ যেনা তথা ব্যভিচারের সন্তান বলে ধর্তব্য হবে। ইসলামী শরিয়তের পক্ষ থেকে এদের স্ত্রীরা অধিকার লাভ করেছে যে, নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত হলে তারা নিজেদের পছন্দনীয় যে কোন লােকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
যদি এ সকল কাফের,মুরতাদগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, "কুফরী"কে স্বীকার করে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় তবে তাদের ব্যাপারে মৃত্যু সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান গুলাে স্থগিত হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে সালাম-কালাম, মেলামেশা সংক্রান্ত নিষধাজ্ঞা গুলাে পুরােপুরী বহাল থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক আচার-আচরণ এর দ্বারা তাদের ইখলাছ-আন্তরিকতা সহকারে তাওবা করার সত্যতা এবং ঈমান- ইসলাম গ্রহণের বিশুদ্ধতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হয়, তবে এরপরও তাদের পূর্বের স্ত্রীগণ তাদের নিকট ফিরে আসতে বাধ্য নয়। বরং তাদের এখতেয়ার বহাল থাকবে যে তারা তাদের পছন্দানুসারে কোন লােকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিংবা আদৌ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না।হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে পূর্বের স্বামীর সঙ্গেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
অতঃপর ঈমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রজা খান (রঃ) তাঁর প্রদত্ত উপরােক্ত ফতওয়ার সমর্থনে শরিয়তের ইমামগণের বিভিন্ন অভিমত এবং বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ফতওয়া গ্রন্থের বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিম্নে উপস্থাপন করেছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রহঃ) তাঁর রচিত বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ শেফা শরীফের।৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اجمع العلماء ان شاتم النبي صلى ا الله عليه وسلم والمنقص له كافر والوعید چار। عليه بعذاب ا الله تعالي ومن شك في کفره وعذابه فقد كفر
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ইজমায়" (অর্থাৎ সর্বসম্মত শরয়ী সিদ্ধান্ত) উপনীত হয়েছেন যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে অবমাননা কারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাবের হুঁশয়ারী কার্যকরী। আর।যারা সে ব্যক্তির কাফের হওয়ার এবং আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহঃ) তাঁর রচিত নছীমুর রেয়াজ" গ্রন্থের চতুর্থ খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
ماصرح به من كفر الساب والشاك في كفره هو ماعليه ائمتنا وغيرهم
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর মহান শানে অবমাননাকারী কাফের হওয়া এবং যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও
কাফের হওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মহান ইমামগণ এবং অন্যান্য ইমামদের মাজহাব।
ওয়াযীযে ইমাম কুরদরী, তৃতীয় খন্ডের ৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
لو ارتد والعياذ بالله تعالی تحرم امرأته يجدد التكاح بعد اسلامه والمولود بينهما قبل تجديد النكاح بالوطى بعد التكلم بكلمة الكفر ولد زنا ثم ان آتی بكلمة الشهادة على العادة لايجد به مالم يرجع عما قاله لأن باتيانهما علی العادة لايرتفع الكفر اذا سب الرسول صلى ال له عليه وسلم او واحدا من
الأنبياء عليهم الصلوة والسلام فلاتوية له واذا شتمه عليه الصلوة والسلام سکران لايعفي واجمع العلماء ان شاتمه كافر ومن شك في عذابه وكفره كفر ملنقط كاكثر الأواني ل لاختصار
অর্থাৎ যে ব্যক্তি (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদ হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। অতঃপর ইসলাম গ্রহনের পর বিবাহ বন্ধনকে নবায়ন করা অপরিহার্য হয়। ইতিপূর্বে কুফরী বাক্য উচ্চারনের পর যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয় আর তা হতে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে উহা জারজ সম্তান হবে। আর যদি সে ব্যক্তি কুফরী বাক্য থেকে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা না করে শুধু অভ্যাসগত ভাবে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তবে এর দ্বারা সে কোনরূপ উপকৃত হবে না। কেননা অভ্যাস বশতঃ কলেমা পাঠের দ্বারা মুরতাদ ব্যক্তির কুফরী রহিত হয় না। যে ব্যক্তি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী -রাসূল আলায়হিমুস সালামের শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করবে তার তাওবা কবুল হবে না। আর যে লােক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা করবে তাও ক্ষমা করা হবে না এবং উম্মতের সকল ওলামায়ে কেরাম ইজমায়' অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, নবী করীম রউফুর রহীম (সাঃ) এর শানে অপমান-অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
ইমামে মুহাক্বিক ইবনুল হুম্মাম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "ফাতহুল ক্বদীর"এর চতুর্থ খন্ডের ৪০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
كل من آبغض رسول الله صلی الله عليه وسلم بقلبه کان مرتدا فالساب بطريق أولى وان سب سكران لايعفى عنه.
: অর্থাৎ যার অন্তরে রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্ধেষভাব লুকায়িত থাকবে সে মুরতাদ। অতএব রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী অধিকতর সঙ্গত কারণে কাফের বলে গন্য হবে। আর যে ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অবমাননা করবে তাও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
বাহুরুর রায়েক' পঞ্চম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখিত হওয়ার পর ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে-
سب واحدا من الانبياء كذلك فلا يفید الانكار مع البينة . . . . . فجعل انکار الردة توية أن كانت مقبولة.
অর্থাৎ যে কোন নবীর শানে অবমাননাকারীর হুকুম অনুরূপ অর্থাৎ সে কাফের, তাকে ক্ষমা করা হবে না। কেননা অবমাননা প্রমানিত হওয়ার পর অস্বীকার এর দ্বারা কোন উপকার পাওয়া যায় না। তাছাড়া মুরতাদ এর অস্বীকার তাে সাজা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে তাওবা তাে সেই বিষয়ে হয়ে থাকে যেখানে গ্রহনযােগ্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, এখানে মােটেও ক্ষমা পাওয়ার অবকাশ নেই।
আল্লামা মাওলানা খছরু "দুরারুল আহকাম" এর প্রথম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبياء صلوات ال له عليهم اجمعين مسلم فلاتوية له اصلا واجمع العلماء أن شاتمه كافر ومن شك في عذابه. وكفره كفر.
অর্থাৎ যদি কোন নামধারী মুসলিম রাসূলে আকরম ফখরে দোআলম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা করে তাকে কখনাে ক্ষমা করা হবে না। কেননা, তার জন্য আদৌ তাওবার সুযােগ নেই। কেননা উম্মতের সকল উলামায়ে কেরাম এ মাসআলায় "ইজমায়" উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে, ব্যক্তি তার কাফের ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
শুনইয়াযুল আহকাম" এর ৩০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
محل قبول توية المرتد مالم تكن ردة بسب النبی صلى الله عليه وسلم او بغضه صلى الله عليه وسلم فان كان به لاتقبل تويته سواء جاء تانيا من نفسه او شهد عليه بذلك بخلاق غيره من المكفرات.
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত শানে অবমাননা করা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, অন্যান্য কুফরীর কারণে মুরতাদ ব্যক্তির তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী মুরতাদের জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের সুযােগ নেই।
আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের" "আর রিদ্দাহ" অধ্যায় উল্লেখিত আছে-
الاقصح ردة السكران الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم فانه لايعفی عنه وكذا في البزازية وحکم الردة بينونة امرأته مطلقا )ای سواء رجع او لم يرجع غمز العيون( واذا مات على ردته لم يدفن فی مقابر المسلمين ولا احل ملة وانما يلقي في حفرة كالكلب والمرتد اقبح كفرا من الكافر الاصلی واذا شهدوا على مسلم بالردة وهو منكر لايتعرض له لالتکذيب الشهود العدول بل لأن انکاره توية ورجوع فتثبت الأحكام التي للمرتد ماتاب من حبط الأعمال وبينونة الزوجة وقوله لايتعرض له اغا هو في مرتد تقبل توتبه في الدنيا الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم الأولى تنكير النبي كما عبر به سبق غمز العيون
অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যদি কারাে মুখ দিয়ে কোন প্রকার কুফরী বাক্য বের হয়ে যায় তবে তাকে নেশার কারণে কাফের বলা হবে না কিংবা কুফরীর সাজাও দেয়া হবে না।
কিন্তু নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমামন্ডিত শানে অবমাননা করা এমন কুফরী-যা নেশাগ্রস্থ হওয়ার অজুহাতে ক্ষমার যােগ্য হবে না (বজজাযিয়া গ্রন্থেও অনুরূপ উল্লেখিত আছে) আর (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদের হুকুম হলাে- সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। যদি সে পরবর্তীতে নতুন ভাবে ইসলাম গ্রহণ করে তবুও তার স্ত্রী বিবাহ বদ্ধনে ফিরে আসবে না। আর যদি মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যু হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে কিংবা ইয়াহুদী-নাছারাদের কবরস্থানেও দাফন করা যাবে না। বরং কুকুর মরার ন্যায় কোন গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। মুরতাদের কুফরী প্রকাশ্য ও মৌলিক কাফের এর কুফরীর চেয়ে নিকৃষ্টতর । যদি ন্যায় পরায়ন সাক্ষীর কোন মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, অমুক বক্তব্য বা কাজের দরুন সে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর সে লােকটি উহা অস্বীকার করে। তাহলে তার উপর কোন রূপ শাস্তি আরােপ করা যাবে না। এই বিধান ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্যকে মিথ্যা বলে গন্য করার প্রেক্ষিতে নয়। বরং এজন্য যে, মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার করাকে তার কুফরী বক্তব্য বা আচরণ থেকে তাওবা হিসেবে গ্রহন করে।
অতএব ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার উভয়ের ফলাফল হলাে- ঐ ব্যক্তি কুফরী বক্তব্য বা আচরনের কারণে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তাওবা করেছে। তাই এখন সেই ব্যক্তির উপর ঐ মুরতাদের হুকুম কার্যকরী হবে, যে কুফরী থেকে তাওবা করেছে। আর তা হলাে তার আমল সমূহ বরবাদ হয়ে যাবে। স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কোন শাস্তি প্রয়ােগ করা হবে না। কিন্তু রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করা এমন কুফরী যার সাজা দুনিয়ায় তাওবা করার পরও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
"দুররে মুখতার"গ্রন্থকারের উস্তাদ ইমাম খাইরুদ্দীন রমলী (রহঃ) "ফাতাওয়া খাইরিয়া"এর প্রথম খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
من سب رسول ال له صلى الله عليه وسلم فانه مرتد وحكمه حكم المرتدین ويفعل به مايفعل بالمرتدين ولاتوية له اصلا واجمع العلماء انه كافر ومن شك في كفره كفر.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে সে মুরতাদ। তার হুকুম হলাে মুরতাদের হুকুম। তার সঙ্গে ঐ আচরণ করা হবে যা মুরতাদগনের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। তার জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রাপ্তির অবকাশ নেই। উম্মতের আলেমগণ ইজমায় উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি এতে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
মাজমাউল আনহার শরহে মুলতাকাল আবহার' নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৬১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে যে-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبيا، مسلم ولو سکران فلا توية له تنجیه کالزنديق ومن شك في عذابه وكفره فقد كفر.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলমান নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে যদি নেশাগ্রস্থাবস্থায়ও অবমাননা করে সে এমন মুরতাদ- কাফের হয়ে যাবে যার জন্য তাওবার সুযােগ নেই। যেমন যিন্দীক এর জন্য তাওবার অবকাশ নেই। আর যে লােক এই মুরতাদের কুফুরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
আল্লামা আখী ইউসুফ (রহঃ) "জখিরাতুল উকবা" নামক গ্রন্থের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قد اجمعت الامة على أن الاستخفاف بنبينا صلى ال له عليه وسلم وبای نبئ كان عليهم الصلوة والسلام كفر سواء فعله على ذلك مستحلا أم فعله معتقدا لحرمته وليس بين العلماء خلاف في ذلك ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ সকল উম্মত সন্দেহাতীতভাবে এই বিষয়ে ইজমায় (অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ,পৌছেছেন যে, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে অবমাননা কারী কাফের। চাই সে অবমাননা করাকে হালাল জেনে করুক অথবা হারাম জেনে করুক, সর্বাবস্থায় সে কাফের। এ মাসআলায় উলামাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। আর যে লােক অবমাননাকারী কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
উপরােক্ত কিতাবের ২৪২পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
لايغسل ولايصل عليه ولايكفن اما اذا تاب وتبرأ عن الارتداد ودخل فی دین الإسلام ثم مات غسل وكفن وصلى فيه ودفن في مقاير المسلمين.
অর্থাৎ সেই অবমাননাকারী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল, কাফন কিছুই দেয়া যাবে না। এবং তার উপর জানাযার নামাজও পড়া যাবে না। কিন্তু যদি সে তাওবা করে পূর্বের কুফরী হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায় এবং ইসলাম ধর্মে আন্তরিকভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় অতঃপর মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল-কাফন দেয়া যাবে, তার উপর জনাযার নামাজ পড়া যাবে এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে।
শাইখুল ইসলাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ "তানভীরুল আবচার" নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
كل مسلم ارتد فتوبته مقبولة الا الكافر سب النبی صلى الله عليه وسلم.
অর্থাৎ সকল মুরতাদ ব্যক্তির তাওবা কবুল হয় কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী এমন কাফের যার তাওবা কবুল হবে না এবং দুনিয়ার সাজা থেকে রক্ষাও হবে না।
"দুররে মুখতার" গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
لكافر بسب نبي من الانبياء لاتقبل تويته مطلقا ومن شك في عذابه كفره كفر.
অর্থাৎ কোন নবীর শানে অপমান-অবমাননা কারী এমন কাফের যার তাওবা কখনো কবুল হবে না এবং দুনিয়ায় কোনরূপ শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না। আর যে ব্যক্তি
তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) "কিতাবুল খারাজের ১১২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
يما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او كذبه او عابه او تنقُّصه فقد كفر بال له تعالی وبانت زوجته
অর্থাৎ যে লােক মুসলমান হওয়ার পর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, নবীর শানে দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। উপরােল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের কাফের এবং মুরতাদ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা করলে তা কবুল হবে।
তবে এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে যে, ইসলামী সরকার প্রধান তাদেরকে তাওবা করে ইসলাম গ্রহণের পর শুধু কি তা'যীর অর্থাৎ নাকি তখনও মৃত্যুদন্ড দান করবে। বজ্জাযিয়া এবং অন্যান্য অনেক নির্ভরযােগ্য কিতাবে যে রয়েছে তাদের তাওবা কবুল হবে না তার ব্যাখ্যা ইহাই। উহার আলােচনা এখানে নিস্প্রয়োেজন। কেননা কোথায় ইসলামী সুলতান-বাদশা আর কোথায় মৃত্যুদন্ডের বিধান। শত - সহস্র দুশ্চরিত্র, ধূর্ত, অভিশপ্ত, সীমালংঘনকারী যারা উঁচু স্তরের মুসলমান তথা মুফতী, মুদাররিছ, ওয়ায়েজ এবং শাইখুল ইসলাম বলে আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকর বড় বড় অভিশপ্ত বুলি আওড়ায় যাদের বাধা প্রদান করার কিংবা বারণ করার কেউ নেই। আর কেউ প্রতিবাদ করলে তা তথাকথিত সভ্যতার ধবজাধারী অভিজাত মুসলমানদের নিকট অসভ্যতা আর ধর্মীয় গোঁড়ামী বলে বিবেচিত হয় (নাউযুবিল্লাহ)।
فانظر الی آثار مقت الله الغيور - كيف انقلبت القلوب وانعکست الأمور ، ولاحول ولاقرة الا با الله العلى العظيم - وسيعلم الذین ظلموا ای منقلب ينقلبون. والله تعالی اعلم.
গাজ্জালিয়ে যমান হযরত সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ)
---------------
গাজ্জালিয়ে যমান হযরত শাহ সৈয়যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) পবিত্র হারামে রাসূল মদীনা মুনাওয়ারায় দরবারে রেছালতে আবেগ ভরা হৃদয়ে মনের আবেদন- নিবেদন-ফরিয়াদ পেশ করছিলেন। মুখমন্ডল কাবার কাবা সরদারে আম্বিয়া, মাহবুবে কিবরিয়া আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দিকে আর পৃষ্ঠদেশ খানায়ে কাবা বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে ছিল। আর ইহাই বুজুর্গানে দ্বীনের অনুসৃত দরবারে রেছালতে উপস্থিতির চিরাচরিত আদব যে, যখনই রাসূলে আকরম নূরে মুজাসুসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের দরবারে পাকে উপস্থিত হবেন মুখ মন্ডল রওজায়ে রাসূল (দঃ) এর দিকে এবং পৃষ্ঠদেশ খানায়ে কাবার দিকে হবে।
রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজায় নিযােজিত নজদী প্রহরীরা নিষেধ করলাে এবং বললোে খানায়ে কাবার দিকে পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করবেন না। বরং বাইতুল্লাহর দিকে মুখমন্ডল করে রাসূলে খােদার রওজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিন। আল্লামা কাজেমী (রহঃ) তাঁদের কথায় আমল দিলেন না। তই দ্বিতীয় দিন তাঁকে সাউদী বিচারকের সামনে উপস্থিত করা হলাে। বিচারক মহােদয় আল্লামা কাজেমী (রহঃ) কে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন-আপনি কি রওজায়ে রাসূল (দঃ) কে পবিত্র খানায়ে কাবা থেকে অধিকতর উত্তম মনে করেন? জবাবে তিনি বললেন- আপনি খানায়ে কাবার কথা বলছেন? আমিতাে শুধু খানায়ে কা'বা নয় বরং রওজায়ে রসূল (দঃ) এর মহিমাম্বিত স্থানকে আরশে আজম থেকে ও উৎকৃষ্টতর বলে বিশ্বাস করি। বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, এ কথার স্বপক্ষে দলীল প্রমান কি? আল্লামা কাজেমী (রহঃ) প্রতি উত্তরে বললেন- বিচারক মহােদয় লক্ষ্য করুন , পবিত্র কুরআনের আলােকে প্রমানিত হয় -সাইয়্যেদুনা হযরত ঈছা আলায়হিস সালাম আল্লাহ পাকের শুকরগুজার মহিমান্বিত বান্দা। আল্লাহ্ পাক বলেন- আমি তাঁকে শুকরগুজার কৃতজ্ঞচিত্ত হওয়ার বদৌলতে চতুর্থ আসমানে উত্তোলন করে মহিমান্বিত আসনে অধিষ্ঠিত করেছি। আর সেখানেও তিনি আল্লাহর শােকর আদায় করছেন। পবিত্র কুরআনের ঘােষনা হলাে - لئن شكرتم لازيدنكم অর্থাৎ নেয়ামতের শুকর আদায় করলে নেয়ামতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেবে বহুগুনে।
খােদায়ী ঘােষণার প্রেক্ষিতে প্রত্যাশিত ছিল আল্লাহপাক হযরত ঈছা আলায়হিস সালাম এর মহিমান্বিত অবস্থান চতুর্থ আসমান থেকে উন্নীত করে আরশে মুয়াল্লায় উপনীত করবেন তাঁর শুকরগুজারীর বদৌলতে । কিন্তু আল্লাহপাক তাঁকে সবশেষে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পার্শ্বদেশে রওজা শরীফের অভ্যন্তরে চির শয্যায় শায়িত করবেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যেই মর্যাদা-মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব রাসূলে খােদা (দঃ) এর পার্শ্বদেশে অবস্থানের মধ্যে রয়েছে তা আরশে আজমে নেই। আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর এহেন অকাট্য দলীল শ্রবণে নজদী বিচারক নির্বাক নিরুত্তর হয়ে রইলেন।
আল্লামা শাহ সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী রহমতুল্লাহি আলায়হি মুসলিম মিল্লাতের গৌরব, অদ্বিতীয় মুহাদ্দিছ, যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহ, মহান গবেষক এবং মনীষী ছিলেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি হাদীসে নববীর খেদমত এবং প্রচার-প্রসারে অতিবাহিত করেন।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞানগর্ভ ও গবেষণালক অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। মুসলিম জাতির প্রতি অন্তরে গভীর দরদ লালন করতেন। দেশ এবং জাতির প্রয়ােজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি কুন্ঠিত হতেন না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ পদদলিত হওয়ার আশংকায় তিনি সর্বদা বিচলিত থাকতেন। জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে আহলে সুন্নাতের আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় আজীবন সচেষ্ট ছিলেন।
গজ্জালিয়ে যমান, রাজীয়ে ওয়াক্ত সৈয়াদ আবুন নজুম আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) এর বংশ পরম্পরা আহলে বাইতে রাসূল এর অন্যতম ইমাম সাইয়্যেদুনা মুছা কাজেম (রহঃ) এর সঙ্গে মিলিত হয়। ১৯১৩ সালে মুরাদাবাদ এর আঞ্চলিক শহর আমরূহায় তিনি ভূমিষ্ট হন। বাল্যকালেই তিনি বুজুর্গ পিতা সৈয়্যদ মুহাম্মদ মুখতার কাজেমীর স্নেহ ছায়া থেকে বঞ্চিত হন। জীবনের সূচনা পর্ব থেকে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা-দীক্ষা, তালীম-তরবিয়ত সবই তাঁর সম্মানিত বড় ভাই হযরত আল্লামা উস্তাজুল উলামা সৈয়্যদ খলীল ছাহেব কাজেমী, খাকী, মুহাদ্দীসে আমরুহী রহমতুল্লাহি আলায়হির সযত্ন তত্তাবধানে সুসম্পন্ন হয়। এবং তাঁরই বরকতময় হাতে "সিলসিলায়ে চিশতীয়া চাবেরীয়া" এর বায়আত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সম্মানিত বড় ভাই সৈয়্যদ খলীল ছাহেব কাজেমী (রহঃ) তাকে খেলাফত দানে ধন্য করলেন।
আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর খেদমতঃ
----------------
ষোল বছর বয়সে আল্লামা শাহ সৈয়দ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী(রহঃ) শিক্ষা জীবনের সমাপনী সনদ অর্জন করলেন। অতঃপর দস্তারবন্দী উপলক্ষে আয়ােজিত আজিমুশশান জলসায় জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং আরেফে কামেল হযরত ছুদরুল আফাযিল সৈয়্যদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রহঃ) , হযরত মাওলানা মে'ওয়া ছাহেব রামপুরী (রহঃ), হযরত মাওলানা নেছার আহমদ ছাহেব কানপুরী এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ওলামা- মাশায়েখে আহলে সুন্নাত এর উপস্থিতিতে মহান অলীয়ে কামেল হযরত শাহ সূর্ফী আলী হুছাইন ছাহেব আশরফী কছুছভী রহমতুল্লাহি আলায়হি বরকতময় হাতে আল্লামা কাজেমী (রঃ) এর মাথায় দস্তারে ফজিলত বেঁধে দিলেন।
শিক্ষা সমাপনীর পর আল্লামা কাজেমী (রহঃ) লাহুর আগমন করে জামেয়া নূমানিয়ায় অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়ােজিত হলেন। এক পর্যায়ে একই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ আটাশটি পাঠের অধ্যাপনার দায়িত্ব তাঁর জিম্মায় সােফর্দ হলাে। ১৯৩১ সালে তিনি লাহুর থেকে নিজের জন্মস্থান আমরুহায় আগমন করে চার বছর পর্যন্ত মাদ্রাসায়ে মুহাম্মদীয়া হানফীয়ায় সম্মানিত বড় ভাই ও পীর মুহাদ্দীস খলীল ছাহেব কাজেমীর পৃষ্ঠপােষকতায় শিক্ষকতায় আত্মনিয়ােগ করলেন। ১৯৩৫ সালের প্রারম্ভে তিনি মূলতানে শুভাগমন করলেন। প্রাথমিক অবস্থায় নিজের বাসস্থানেই অধ্যয়ন-অধ্যাপনার কার্যক্রম শুরু করে দিলেন। কিছু দিন পর মূলতান শরীফের মধ্যভাগে ভূমি ক্রয় করে মাদ্রাসা আনওয়ারুর উলুম' প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে দিলেন।
আল্লামা কাজেমী (রহঃ) ভারত উপমহাদেশ বিভক্তি এবং মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও শুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে বেনারস কনফারেন্সে যােগদান করেছিলেন। যে যুগে কংগ্রেসী এবং আজাদী আন্দোলনের উলামারা জানবাজি করে পাকিস্তানের বিরােধিতা করছিল সে সময়ে খাজা ক্বমরুদ্দীন সিয়ালভী, পীর সৈয়্যদ জামাত আলী শাহ (রহঃ), মাওলানা আবুল হাছানাত, মাওলানা আবদুল হামেদ বদায়ূনী, মাওলানা আবদুল গফুর হাজারভী(রহঃ) প্রমুখের সঙ্গে আল্লামা কাজেমী (রহঃ) পৃথক জাতীয়তা এবং স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ধারাবাহিক সংগ্রামে ও লাগাতার কর্মসূচী পালনে নিয়ােজিত ছিলেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি নুতন অবস্থার পর্যবেক্ষনে দেখলেন- যারা এতােদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘাের বিরােধিতা করেছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির পর তারা মুসলিম লীগে যােগদান করে শাসক গােষ্ঠীর নজরে চোখের সুরমার ন্যায় গ্রহণযােগ্য হয়ে গেলেন। সে সময়ে আল্লামা কাজেমী (রহঃ) আহলে সুন্নাতের ঐক্য এবং সাংগঠনিক শক্তির প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করলেন যাতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের রাজনৈতিক অবস্থান ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়। মূলতানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক বিশাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে হযরত আল্লামা মাওলানা আবুল হাছানাত (রহঃ)কে সভাপতি, আল্লামা শাহ সৈয়দ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ) কে জেনারেল সেক্রেটারী করে "জমিয়তে উলামায়ে পকিস্তান নামে আহলে সুন্নাতের একটি সাংগঠনিক প্লাটফরম তৈরী করা হয়।আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর সুযােগ্য নেতৃত্বে "জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তানের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়।
দেশ ও মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়। যার মধ্যে "কাশ্মীর সংগ্রাম, সংবিধান রচনা, খতমে নবুওয়ত আন্দোলন, প্রচার-প্রসার, বন্যার্তদের সাহায্য ইত্যাদী উল্লেখ্যযােগ্য। এক কথায় প্রতিটি প্রয়ােজনীয় মূহুর্তে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় এই জমিয়ত।
২৫শে রমজান শরীফ ১৪০৬ হিঃ মুতাবেক ১৯৮৬ইং গাজ্জালিয়ে যমান আল্লামা শাহ সৈয়্যদ আহমদ কাজেমী (রহঃ) এই নশ্বর জগত ত্যাগ করে মাওলায়ে হাকীকীর একান্ত সান্নিধ্যে গমন করেন। (ইন্না লিল্লাহি, ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন) তার ইন্তেকালে সর্বস্তরের ছু্নী মুসলমান এবং মাজহাব-মিল্লাত অসহায়ত্বের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হন।
আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (আল্লহ পাক তাঁর মর্যাদাকে বুলন্দ করুন) এর মহান সত্তা প্রকৃত পরিচয় প্রদানের মুখাপেক্ষী নন। যখনই তাঁর মহিমান্বিত নাম উল্লেখ করা হয় বড় বড় উপাধী-অভিধাগুলাে তাঁর আজীমুশশান ব্যক্তিত্বের মূল্যায়নে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বলে মনে হয়। নিঃসেন্দেহে তিনি যুগের "নাবেগা" ছিলেন- যারা শতাব্দীর পর পৃথিবী পৃষ্ঠে আবির্ভূত হন। তাঁর মহা মূল্যবান জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থগুলাে অধ্যয়ন করলে তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও মহান ব্যক্তিসত্তা দিবালােকের ন্যায় সকলের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। নিম্নে কতিপয় গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলাে- (১) তাছবীহর রহমান (২) মুযিলাতুন নিযা আন মাসআলাতিস সেমা (৩) তাছকীনুল খাওয়াতির (৪) হায়াতুন্নবী (দঃ) (৫) মি'রাজুন্নবী (দঃ) (৬) মীলাদুন্নবী (দঃ) (৭) তাকরীরে মুনীর (৮) ইসলাম এবং খৃষ্টবাদ (৯) তাহকীকে কুরবানী (১০) ইসলাম এবং সমাজতন্ত্র (১১) আল-হাক্কুল মুবীন (১২) মওদুদী দৰ্পন (১৩) কিতাবুত তারাবীহ (১৪) নাফযুজ জিল্লেওয়াল ফাইয়ে (১৫) আত্-তাবশীর বিরদ্দিত্ তাহজীর (১৬)
পবিত্র কুরআনে করীমের উর্দু অনুবাদ ইত্যাদী।
- মুহাম্মদ আলতাফ কাদেরী রজভী
প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা
মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালত শরয়ী আদালত, পাকিস্তান।
পক্ষে-সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী
সভাপতি- কেন্দ্রীয় জামাতে আহলে সুন্নাত, পাকিস্তান ও শায়খুল হাদীছ মাদরাসায়ে আরাবিয়া ইসলামিয়া আনওয়ারুল উলুম, মুলতান জনাব মুহাম্মদ ইসমাঈল কুরাইশী, সিনিয়র এডভােকেট, সুপ্রীম কোর্ট, পাকিস্তান,
লাহাের বনাম গণতান্ত্রিক পাকিস্তান-পাকিস্তান দন্ডবিধি, দফা নম্বর ২৯৫ আলিফ এবং দফা নম্বর ২৯৮ আলিফ এর বিরুদ্ধে শরয়ী আদালতে এক আবেদন পেশ করেন। শানে রেছালত-নবুওয়ত এর অপমান-অবমাননা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের সঙ্গে ঐ আবেদনের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে ঐকমত্য পােষন করি এবং শরীয়তের প্রমাণাদি অর্থাৎ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমায়ে উম্মৎ এবং ইমামগণের অভিমতের আলােকে উহাকে পূর্ণাঙ্গরূপে সমর্থন ও প্রমান করার প্রয়াস পাচ্ছি। নিম্নে উহার বিস্তারিত বর্নণা উপস্থাপিত হলাে।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মৎ এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমতের আলােকে সুম্পষ্টরূপে প্রমানিত হয় যে, রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর সাজা একমাত্র মৃত্যুদন্ড। রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রকাশ্যে বিরােধিতা করা তাঁর মহান শানে অবমাননার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড বলে ঘােষিত হয়েছে। এই অপরাধের কারণে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ذلك بانهم شأقوا الله ورسوله.
অর্থাৎ (কাফেরদেরকে হত্যা করার) হুকুম এজন্য দেয়া হয়েছে যে "নিশ্চয় তারাআল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচরণ করে অবমাননাকারী হিসেবে গন্য হলাে। আর পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা কুফরী।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض ونلعب قل ابا الله وآياته ورسوله کنتم تستهزؤن - لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন তবে তারা অবশ্যই বলবে আমরা তাে শুধু ঠাটা -বিদ্রুপ করছিলাম। (ওহে রাসূল (দঃ) আপনি (তাদের উদ্দেশ্যে) বলুন- তােমরা কি আল্লাহ, তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা -বিদ্রুপ করছাে? তােমরা কোন ওযর-অজুহাত পেশ করাে না। নিশ্চয় তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছে।
মুসলিম হিসেবে পরিচয় দানের পর কুফরী কারী মুরতাদ" হিসেবে গন্য হয়। আর পবিত্র কুরআনের আলােকে মুরতাদ এর সাজা ক্বতল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লহ্ পাক এরশাদ করেন।
قل للمخلفين من الاعراب ستدعون إلى قوم اولی بأس شديد تقانلون أو يسلمون.
(ওহে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) আপনি (যুদ্ধে আপনার সঙ্গে বের না হয়ে) গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তােমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তােমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গ যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। (সূরা ফাতহ, ১৬নং আয়াত)।
এই আয়াত খানা আরবের "ইয়ামামা" বাসী মুরতাদগণ প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎ বানী স্বরূপ অবতীর্ণ হয়। যদিও বা কোন কোন আলেম পারস্য, রােম ইত্যাদী দেশের অধিবাসীদের
প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতের আলােকে প্রমাণিত হয়- আয়াত খানা "ইয়ামামা" বাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগনের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ।
যেমন বর্ণিত আছে-
عن رافع بن خديج انا كنا نقرا هذه الاية فيما مضى ولانعلم من هم حتی دعا أبويكر رضى الله عنه إلى قتال بنی حنيفة فاعلمنا أنهم أريدوا بها.
তরজমাঃ হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) বলেন- অতীতে আমরা এ আয়াতখানা তেলাওয়াত করতাম, কিন্তু আমরা অবগত ছিলাম না যে, এ আয়াতে বর্ণিত লােকগুলাে কারা? অবশেষে যখন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) আরবের ইয়ামামাবাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুসলমানদেরকে আহবান জানালেন তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, আয়াত খানা তাদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।
এই রেওয়াতের আলােকে প্রমানিত হলাে যে, যদি মুরতাদ ইসলাম গ্রহন না করে তবে পবিত্র কুরআনের ফয়সালানুযায়ী তার সাজা হলাে একমাত্র ক্বতল। কুরআনে করীমের এই রায়ের সপক্ষে অসংখ্য হাদীসে নববী বর্ণিত হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় শুধু একটি হাদীসে রাসূল (দঃ) নিম্নে উদ্ধৃত হলাে-
آتی على بزنادقة فاحرقهم )وفي رواية ابی داؤد ان عليا احرق ناسا ارتدوا عن الاسلام( فبلغ ذلك این عباس فقال لوكنت انا لم احرتهم لنهى رسول الله صلی ال له عليه وسلم: لا تعذبوا بعذاب الله ولقتلتهم لقول رسول الله صلی الله عليه وسلم: من بدل دينه فاقتلوه.
তরজমাঃ আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযেরত আলী (রঃ) এর নিকট ধর্মত্যাগী "যিন্দিক" উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের জ্বালিয়ে ফেললেন ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এর রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, হযরত শেরে খােদা আলী মুরতজা (রঃ) একদল ইসলাম ত্যাগী মুরতাদ কে জ্বালিয়ে ফেললেন।) এ সংবাদ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন-যদি হযরত আলী (রঃ) এর স্থলে আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতাম তবে আমি তাদের প্রজ্বলিত করতাম না। কেননা, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, তােমরা আল্লাহর সাজা (অর্থাৎ আগুন) প্রয়াগ করে কাউকে সাজা দিও না। তবে আমি অবশ্যই তাদের ক্বতল করে দিতাম। কেননা, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন- যেই মুসলমান নিজের ধর্ম পরিবর্তন করবে তােমরা তাকে ক্বতল করাে।
মুরতাদ এর সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর রায়ঃ
আমিরুল মুমেনীন সাইয়ােদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) খেলাফতের মসনদে আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অত্যন্ত কঠোর ভাবে মুরতাদগণকে ক্বতল করে দিয়েছিলেন তা আজ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুরতাদগণকে জীবিতাবস্থায় দেখা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর নিকট অসহ্যকর ছিল। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এবং হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে আরবের ইয়ামন প্রদেশের পৃথক দুই অঞ্চলে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। একদা হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে বন্দী অবস্থায় এক ব্যক্তি কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-এ লােকটি কে? জবাবে হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) বললেন-
كان يهوديا فاسلم ثم تهود قال اجلس قال لاأجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فامر به فقتل.
অর্থাৎ লােকটি ইয়াহুদী ছিল পরবর্তীতে মুসলমান হওয়ার পর আবার ইয়াহুদী হয়ে মুরতাদ হয়ে গেলাে। সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত মুয়াজ বিন জবল (রঃ) কে বসার জন্য অনুরােধ জানালে তিনি তিন দফায় বলে উঠলেন-যতক্ষন পর্যন্ত এই মুরতাদ কে ক্বতল করা হবেনা ততক্ষন আমি বসতে পারিনা। আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর ফয়সালানুযায়ী মুরতাদ এর একমাত্র সাজা হলাে ক্বতল। অতঃপর সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এর আদেশে ঐ মুরতাদ কে ক্বতল করা হয়।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) অবমাননা কারীর সাজা ক্বতলঃ
----------------------
রাসূলে করীম রউফুর রহীম আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম তাঁর শানে অবমাননাকারী মুরতাদকে খানায়ে কাবার পূত পবিত্র ও মহিমান্বিত গিলাফের নীচে আশ্রয় গ্রহন করা অবস্থায় মসজিদে হারামেই ক্বতল করার হুকুম দিয়েছিলেন। যেমন প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আনাস বিন মালিক (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম মক্কা শরীফে বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোন এক ব্যক্তি এসে আরজ করলেন - ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ), আপনার শানে অবমাননাকারী ইবনে খতল খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আল্লাহর রাসূল (দঃ) হুকুম দিলেন- তাকে সেখানেই ক্বতল করাে।
এই আবদুল্লাহ্ বিন খতল মুরতাদ ছিল। মুরতাদ হওয়ার পর সে কিছু লােককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-
অবমাননা সম্বলিত কবিতা লিখে প্রচার করেছে। সে দু'জন গায়িকা এ উদ্দেশ্যেই রিজার্ভ করে রেখেছিল যে তারা রাসূলে পাক (দঃ) এর অপমান-অবমাননা সম্বলিত কবিতা গেয়ে বেড়াবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন তাকে হত্যার আদেশ দিলেন তাকে খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরার অবস্থা হতে বের করে এনে মকামে ইব্রাহীম এবং জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে শিরচ্ছেদ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিবসে রসূলে করীম (দঃ) এর জন্য হারমে মক্কায় হত্যা এক ঘন্টার জন্য হালাল করা হয়েছিল। তবে বিশেষ করে মসজিদে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে মকামে ইব্রাহীম এবং পবিত্র জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে ইবনে খতল মকে হত্যা করা এ বিষয়ের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারী মুরতাদ,অন্যান্য মুরতাদগনের চেয়ে জগন্যতম ও অধিকতর নিকৃষ্ট।
উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা বা ঐকমত্য
---------------
প্রথমঃ
قال محمد بن سحنون أجمع العلماء ان شاتم النبی صلى الله عليه وسلم والمتنقص له كافر والوعید جار عليه بعذاب الله له وحكمه عند الأمة القتل ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ বিন ছাহনুন (রঃ) বলেন- উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ওলামাগণের ইজমা তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলাে যে রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে গালি-গালাজকারী এবং অপমান-অবমাননাকারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাব এর হুমকি বহাল রয়েছে। সকল উম্মতের নিকট এই ব্যক্তির সাজা হলাে ক্বতল। যে ব্যক্তি তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
দ্বিতীয়ঃ
وقال ابوسلیمان الخطابی لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله اذا كان مسلما،
অর্থাৎ ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (রঃ) বলেন- যখন কোন মুসলিম পরিচয় দানকারী ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করবে আমার জানামত এমন কোন মুসলমান নেই যে তার সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য করবে। (অর্থাৎ সবাই তার ক্বতল এর ব্যাপারে ঐকমত্য পােষন করবে।)
তৃতীয়ঃ
واجمعت الامة على قتل متنقصه صلى الله عليه وسلم من المسلمين وسابه
অর্থাৎ মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি যদি রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি গালাজ বা অবমাননা করে তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার
বিষয়ে সকল উম্মৎ একমত।
চতুর্থঃ
قال ابویکر این المنذر اجمع عوام اهل العلم على أن من سب النبي صلى الله عليه وسلم يقتل قال ذلك الامام مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى قال القاضی ابوالفضل وهو منتضی قول أبي بكر الصديق رضي الله عنه لاتقبل توبته عند هؤلاء ويمثله قال أبوحنيفة واصحابه والثوری واهل الكوفة والأرزاعي في المسلمين لكنهم قالوا هي ردة.
অর্থাৎ ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনযির বর্ণনা করেন- সকল উলামায়ে ইসলামের ইজমা বা ঐকমত্য হলাে যে ব্যক্তি নবী করীম (দঃ) এর শানে গালি-গালাজ করবে তাকে ক্বতল করা হবে। আর এই ইজমা বা ঐকমত্য পােষনকারীদের মধ্যে হযরত ইমাম মালেক বিন আনাছ (রঃ), ইমাম লাইছ (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম ইছহাক (রঃ) হলেন- অন্যতম। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এর মজহাব ও এ বিষয়ে একমত। ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রঃ) এর ফরমানের দাবী ও এটা। (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজকারীর সাজা ক্বতল হওয়া)। উপরােক্ত ইমামগনের মতে ঐ ব্যক্তির তাওবাও কবুল হবে না। ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ)তাঁর শিষ্যত্ববরনকারী ইমামগণ, ইমাম ছৌরী (রঃ) কুফার অন্যান্য ইমাম এবং ইমাম আউযায়ী (রঃ) এর অভিমত ও উপরােক্ত ইমামগণের সিদ্ধান্তের অনুরূপ । তাঁদের মতে এটা (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করা) "রিদ্দত" তথা ধর্ম ত্যাগ করার নামান্তর।
পঞ্চমঃ
أن جميع من سب النبی صلى الله عليه وسلم او عابه او الحق به نقصا في نفسه او نسبه او دينه او خصلة من خصاله او عرض به او شبه ه بشيئ على طريق السب له أو الازراء عليه او التصغبر بشانه او الغض منه والعيب له فهو ساب له والحكم فيه حكم الساب يقتل كما نبينه ولانستثنی فصلا من
فصول هذا الباب على هذا المقصد ولانمترى فيه تصریحا كان او تلويحا وهذا كله اجماع من العلماء وائمة الفتوى من لدن الصحابة رضوان الله عليهم الى هلم زراء
অর্থাৎ যারা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি-গালাজ করবে, দোষারােপ করবে, হুজুর (দঃ) এর পূত-পবিত্র মহান সত্ত্বা, বংশ, দ্বীন অথবা কোন চরিত্রের প্রতি দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে কিংবা বিরূপ সমলােচনা করবে অথবা যারা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায়ে বা রাসূলের মহান সত্ত্বার প্রতি কোন প্রকার দোষ-ক্রুটি আরােপ করার অসদুদ্দেশ্যে হুজুর আকরম (দঃ) কে কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে তারা প্রকাশ্যে গালি- গালাজকারী হিসেবে গন্য হবে। আর তাদের হত্যা করাই হবে একমাত্র সাজা।
আমরা এই হুকুম কার্যকরী করার ক্ষেত্রের কোন প্রকার রদ-বদল করবােনা বা এ হুকুম এর বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ পােষন করিনা। প্রকাশ্য অবমাননা হউক কিংবা
অপ্রকাশ্য ইঙ্গিতমূলক উভয়ের হুকুম একই। আর এটা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) থেকে অদ্যাবধি উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর সকল উলামায়ে কেরাম, মুজতাহিদগণ এবং ফতওয়া প্রদানকারী ইমামগণের সর্বসম্মত ফত্ওয়া।
যষ্ঠঃ
والحاصل انه لاشك ولاشبهة في كفر شاتم النبی صلى الله عليه وسلم وفی استباحة قتله وهو المنقول عن الأئمة الأريعة.
অর্থাৎ সার বক্তব্য হলাে এই যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালিগালাজকারী কাফের হওয়া এবং তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার বিষয়ে কোন রূপ সংশয় সন্দেহ নেই। আর এই ফতওয়া চারি মজহাবের ইমাম গণ তথা ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত সর্বসম্মত ফতওয়া।
সপ্তমঃ
كل من أبغض رسول الله صلى الله عليه وسلم بقليه كان مرتدا فالساب بطريق أولى ثم يقتل حدا عندنا.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি মনে মনে বিদ্বেষভাব পােষন করবে সে মুরতাদ। অতএব প্রকাশ্যে গালি-গালাজকারী আরাে বহুগুন বেশী মুরতাদ হবে। ফলে তাকে হত্যা করা হবে শরিয়ত সম্মত সাজা আমাদের মতে।
অষ্টমঃ
ایما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او کذبه او عابه او تنقصه فقد كفر با الله ويانت منه زوجته.
অর্থাৎ যে মুসলিম রাসূলে আকরম (দঃ)এর প্রতি গালি-গালাজ করবে বা মিথ্যা আরােপ করবে বা দোষারােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে সর্বাবস্থায় সে যেন আল্লাহর সাথে কুফরী করলাে। অতঃপর তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেলাে।
নবমঃ
اذا عاب الرجل النبي صلى الله عليه وسلم في شيئ كان كافرا وكذا قال بعض العلماء لو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم شعیر فقد كفر وعن ابی حفص الكبير من عاب النبی صلی الله عليه وسلم بشعرة من شعراته الكرية فقد كفر وذكر في الاصل أن شتم النبی کفر.
অর্থাৎ রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কোন বৈশিষ্ট বা বিষয়ে যদি দোষারােপ করে তাহলে সে কাফের হিসেবে গন্য হবে। এভাবে কতিপয় ইমাম বর্ণনা করেছেন- যদি কোন ব্যক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর পবিত্র চুল মুবারককে তাছগীর" তথা ক্ষুদ্র জ্ঞাপক শব্দে "শুআয়রুন" অর্থাৎ ছােট চুল হিসেবে বর্ণনা করে তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে কাফের হয়ে যাবে। হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হাফছ আল- কবীর (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের একটি পবিত্র চুল মুবারকের প্রতিও দোষারােপ করে তবে তৎক্ষনাত কাফের হয়ে যাবে। ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) তাঁর রচিত গ্রন্থ "মাবছুত" এ বর্ণনা করেন যে, রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি দেয়া কুফরী।
দশমঃ
ولاخلاف بين المسلمين أن من قصد النبي صلى الله عليه وسلم بذلك فهو من ينتحل الاسلام انه مرتد يستحق القتل.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলিম যদি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর শানে অপমান-অবমাননা করার কিংবা রাসূল (দঃ) কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে সে সঙ্গে সঙ্গে মুরতাদ এবং ক্বতল হওয়ার যােগ্য বলে গন্য হবে। এ মাসআলায় মুসলিম মিল্লাতের ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে কোন প্রকার মতানৈক্য নেই।
আমাদের উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, পবিত্র কুরআন, হাদীছে রাসূল (দঃ) উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমত অনুযায়ী নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করাই হলাে একমাত্র সাজা। এরপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে স্পষ্টভাবে অবগত হওয়া অপরিহার্য।
যথাঃ (১) নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান- অবমাননা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকে দন্ডযােগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্থ করার জন্য এই শর্তারােপ করা শুদ্ধ হবে না-"অপমান-অবমানকারী মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে অবমাননা করেছে।" এমন হতে হবে। কেননা এহেন শর্তারােপ নবীর শানে অবমাননাকারীদের রক্ষা করার নামান্তর হবে। শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার দ্বার চিরতরে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এর প্রেক্ষিতে প্রত্যেক নবীর শানে
অবমাননাকারী ব্যক্তি সাজা ভােগ করা হতে এই বলে পার পেয়ে যাবে যে ধর্মীয় জজবা উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে আমি এটা করি নাই। তাছাড়া এহেন শর্ত আল্লাহর কুরআনের ও পরিপন্থী। যেমন সূরা তাওবার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শানে রেছালতে অবমাননাকারী মুনাফিকদের এই অজুহাত "আমরা তা পরস্পরের মধ্যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। শানে রেছালতের অবমাননা করা আমাদের লক্ষ্য নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।" মহান আল্লাহ্ পাক প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন এবং স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন- মুসলমানদের
لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم
অর্থাৎ তােমরা অযুহাত পেশ করাে না অবশ্য তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছো।
(দুই) প্রকাশ্য অপমান- অবমাননা করার ক্ষেত্রে নিয়তের মূল্যায়ন প্রয়ােজন হয় না। রায়েনা" বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের পরও যদি কোন ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) অপমান-অবমাননার উদ্দেশ্য না করে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের
শানে "রায়েনা" উচ্চারণ করতেন তাহলে আল্লাহ্র বাণী-
واسمعوا وللكافرین عذاب اليم
অনুযায়ী কুরআনী সাজার উপযুক্ত বলে গন্য হতেন। আর ইহা এ কথার প্রমাণ বহন করে-শানে রেছালাতে অবমাননার উদ্দেশ্য না করেও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা কুফরী।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম শিহাবউদ্দীন খিফাযী (রঃ) বর্ণনা করেন-
المدار في الحكم بالكفر على الظواهر ولانظر للمقصود والنيات ولانظر لقرائ ن حاله
অর্থাৎ শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার কারণে কুফরী হুকুম প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্য অবমাননাকর শব্দমালার উপর নির্ভর করে। অবমাননাকারীর উদ্দেশ্য, নিয়্যত কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থাবলীর প্রতি নজর করার আবশ্যকতা নেই। নতুবা শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার দরওয়াজা কখনাে বন্ধ হবে না। কেননা, প্রত্যেক অবমাননাকারী এই বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাইবে যে, অপমান-অবমাননা করা আমার নিয়্যত বা উদ্দেশ্য ছিল না। অতএব এই বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে পড়লাে যে, শানে রেছালতে অপমান-অবমাননাকারীর নিয়্ত কিংবা উদ্দেশ্যের যাতে মূল্যায়ন করা না হয় কুফরীর হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে।
(৩) এখানে এই সন্দেহটি নিরসন হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে যে, "যদি কোন মুসলমানের বক্তব্যে নিরানব্বই ভাগ কুফরীর দিক এবং শুধু এক ভাগই ইসলামের দিক এর সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয় তখন ফকীহগনের অভিমত হলাে তাকে কুফরীর ফত্ওয়া দেয়া যাবে না।"
ফকীহগনের উপরােক্ত অভিমতের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে এভাবে যে, কোন মুসলমানের বক্তব্যে যদি নিরানব্বই ভাগ কুফরলীর সম্ভাবনা থাকে এবং প্রকাশ্য কুফরী মূলক শব্দ বা বাক্য না থাকে তখন ফকীহগনের উপরােক্ত হুকুম কিন্তু যেবক্তব্য প্রকাশ্যরূপে অবমাননাকর সেখানে কোনরূপ "তাভীল" তথা ব্যাখ্যা -বিশ্লেষন করা বৈধ নয়। কারণ , প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দে "তাভীল" বা ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্য নয়।
ইমাম কাজী আবুল ফজল আয়াজ মালেকী (রঃ) বর্ণনা করেন -
قال حبيب ابن الريبيع لأن ادعاء التاويل في لفط صريح لايقبل.
অর্থাৎ হাবীব বিন রবী (রঃ) বলেন- প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দমালায় তাভীল" তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লোষন করার দাবী গ্রহনযােগ্য নয়।
কোন বক্তব্য প্রকাশ্য অবমাননাকর হওয়াটা নির্ভর করে সমাজ এবং পরিভাষাগত ব্যবহারের উপর। উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাই যে, যদি কোন ব্যক্তিকে ওয়ালাদুল
হারাম" বা হারামজাদা বলে আখ্যায়িত করা হয় আর পরবর্তীতে "হারাম" শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে, আমি "হারাম" শব্দটিকে "আল মসজিদুল হারাম" ও "বাইতুল হারাম"এ ব্যবহৃত "হারাম" এর ন্যায় সম্মানিত ও মহিমান্বিত অর্থে বলেছি।
এ ব্যাখ্যা কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে আদৌ গ্রহণযােগ্য হতে পারে না। কেননা সামাজিক পরিভাষায় ওয়ালাদুল হারাম" শব্দটা গালি এবং অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বক্তব্য-যেখানে সামাজিক পরিভাষাগত অর্থে
অপমান-অবমাননার অর্থ পাওয়া যায় সেটা অবমাননাকর বক্তব্য হিসাবে স্বীকৃত হবে যদিও বা হাজার "তাভীল" ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হউক না কেন। কেননা সামাজিক পরিভাষাগত অর্থের বরখেলাপ কোন ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্যা নয়।
(চার) এখানে এই সন্দেহের ও অপনােদন হওয়া অপরিহার্য মনে করছি যে, যদি রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা করার সাজা ক্বতল হয়ে থাকে তবে কতিপয় মুনাফিক রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে স্পষ্ট অপমান-অবমাননা করতাে। এমন কি কোন কোন সময় ছাহাবায়ে কেরম (রঃ) আরজ করতেন- ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ)। আমাদের অনুমতি দিন যে আমরা এ সকল
অবমাননাকারী মুনাফিকদের ক্বতল করে দেবাে। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (দঃ) তাদের অনুমতি দেন নাই।
উপরােক্ত বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের অপনােদনকল্পে ইবনে তাইমিয়া বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন। যার সারাংশ হলাে এই যে, (ক) সে সময়ে ঐ সকল মুনাফিকদের উপর সাজা কার্যকরী করা ব্যাপক ফিতনা- ফ্যাসাদের কারণ ছিল। তাই তাদের অবমাননাকর বক্তব্যে ছবর করা ফিতনা-ফ্যাসাদ এর মােকাবিলার চেয়ে সহজতর বিবেচিত হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয় নাই।
(খ) মুনাফিকরা প্রকাশ্য ভাবে শানে রেছালতে অবমাননা করতাে না। বরং পরস্পরের মধ্যে অতি গােপনে শানে রেছালতে অপমানজনক কথােপকথন করতাে।
(গ) ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী মুনাফিকদের হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা এ কথার প্রমান বহন করে যে, ছাহাবায়ে
কেরাম অবগত ছিলেন-রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল। কেননা, নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং শানে রেছালতে অবমাননাকারী আবু রাফে ইয়াহুদী এবং কাব বিন আশরফ কে হত্যা করার নির্দেশ জারি করেছিলেন। এ আদেশ জারীর কারণে ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) জানতেন যে,শানে রেছালতে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল বৈ আর কিছু নয়।
(পাঁচ) রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বৈধ ছিল যে, তিনি তাঁর শানে অবমাননাকারী কিংবা তাকে কষ্টদানকারীকে জাগতিক হায়াতে থাকাবস্থায় ক্ষমা করবেন। কিন্তু উম্মতের জন্য এটা বৈধ নয় যে, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্ষমা করে দিবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং
অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মহান আল্লাহর এই আদেশকে অনুসরণ করেছেন- "আপনি ক্ষমাশীলতার বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করুন, অজ্ঞ-মূর্খদের এড়িয়ে চলুন এবং সৎ কর্মের আদেশ দান করুন।" (সূরা আরাফ ১৯৯ নং আয়াত)।
আমি আরজ করতে চাই যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর উপর ক্বতলের সাজা কার্যকরী করা স্বয়ং রাসূল (দঃ) এর হক। যদিওবা রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননাকর আচরণ করা উম্মতের জন্য ও ভীষন কষ্টদায়ক ব্যাপার এবং একারণে এহেন অবমাননা কারীর উপর সাজা প্রয়ােগ করা উম্মতের হক ও বটে। তবে এটা সরাসরি নহে। বরং রাসূলে আকরম (দঃ) এর পবিত্র মহান সত্বার মাধ্যমে। আল্লাহপাক হজুর (দঃ) কে এ ধরনের এখতিয়ার দান করেছেন যে, তিনি নিজস্ব হক কারাে জন্য মাফ করে দিবেন।
যেমন শরিয়তের অন্যান্য বিধান এর ক্ষেত্রে দলীল সহকারে প্রমাণিত আছে যে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঐ সকল বিধি-বিধানের বিষয়ে রাসূল পাক (দঃ) কে এখতিয়ার দান করেছেন। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) হযরত বারা বিন আযেব (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে খােদা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত আবুদ্দারদা (রঃ) কে একটি ছাগল ছানা কুরবানী করার হুকুম দিয়ে বললেন-
ولن تجزي عن أحد بعدك
অর্থাৎ এই কুরবানী তুমি বিনে অন্য কারাে জন্য কখনাে বৈধ হবে না। এভাবে প্রখ্যাত ছাহাবীয়ে রসূল হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হারাম শরীফের ঘাস কর্তন করাকে হারাম ঘােষনা করলেন-তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) আরজ করলেন-"ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ওহে আল্লাহ রাসূল (দঃ), ইজখার নামী ঘাস কে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখুন। জবাবে আল্লাহর হাবীব (দঃ) এরশাদ করলেন "ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ইজখার নামী ঘাসকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। এটা কর্তন করা তােমাদের জন্য জায়েজ।
এই হাদীছে রাসূল (দঃ) এর ব্যাখ্যায় শেখে মুহাককিক হযরত আবদুল হক মুহাদ্দীছে দেহলভী (রঃ) এবং নওয়াব ছিদ্দীক হাছান খান ভূপালী লিপিবদ্ধ করছেন-
ودرمذهب بعضے آن است که احکام مفوض بود بو صلى الله عليه وسلم هرچه خواهد ویر هرکه خواهد حلال وحرام گرداند وبعضے گویند با اجتهاد گفت واول اصح واظهر است.
অর্থাৎ কতিপয় ইমামগনের মাজহাব হলাে যে, শরিয়তের বিধি-বিধান প্রবর্তন রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-রে জিম্মায় সােপর্দ করা হয়েছে। তিনি যার জন্য যা কিছু চান হারাম-হালাল করতে পারেন।
কেউ কেউ বলেন-রাসূলে পাক (দঃ) এটা ইজতিহাদ বা গবেষনার মাধ্যমে করেছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত ইখতিয়ার এর মাধ্যমে নয়। উভয় মাজহাবের মধ্যে প্রথম মাজহাব টি অধিকতর বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট।
উপরােক্ত হাদীছে রাসূল (দঃ) এর আলােকে প্রমানিত হয় যে রাসূলে পাক (দঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এখতিয়ারের অধিকারী যার প্রেক্ষিতে তিনি কোনরূপ
হিকমত কিংবা কল্যান এর প্রত্যাশায় ঐ সকল মুনাফিকদের উপর ক্বতল এর সাজা কার্যকরী করেন নাই। তবে হুজুরে আকরম (দঃ) এর পরে অন্য কারাে জন্য এ এখতিয়ার বাকী নাই যে, তিনি ও ক্বতল এর সাজা প্রয়ােগে গড়িমসি করবেন।
পরিশেষে আরজ করতে চাই যে, শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার সাজা ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকরী হবে যার পক্ষ থেকে এই অপরাধ সংগঠিত হওয়াটা দৃঢ়তার সাথে অকাট্ট্যরূপে প্রমানিত হয়। এছাড়া অন্য কাউকে এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্থ করে ক্বতল করা কখনাে বৈধ হবে না। খবরে মুতাওয়াতির বা ব্যাপক এবং ধারাবাহিক সাক্ষ্য প্রমান ভিত্তিক সংবাদ এ বিষয়ে অকাট্য দলীল হিসেবে গন্য হবে। তাছাড়া কোন ব্যক্তি যদি অবমাননাকর স্পষ্ট অর্থবােধক কথা
বলে কিংবা লিপিবদ্ধ করে অতঃপর স্বীকারােক্তি করে যে, এই অবমাননাকর কথা আমি বলেছি বা লিপিবদ্ধ করেছি তবে ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে। পরবর্তীতে যতই বাহানা বা কৌশল অবলম্বন করুক না কেন বা বলাবলী করুক যে, অবমাননা করা আমার নিয়্যতের মধ্যে ছিল না। অথবা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা-সেন্টিমেন্টে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। যত কিছুই বলুক না কেন, সর্বাবস্থায় তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে।
যারা রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে স্পষ্ট অবমাননাকর বক্তব্যের তাভীল" বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অবমাননাকারীকে রক্ষা করতে তৎপর হয় তারাও সমান ভাবে অবমাননাকারীর ন্যায় ক্বতলযােগ্য অপরাধী। রাসূলের শানে গালি-গালাজকারীর সাজা প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাহনুন (রঃ) এর অভিমত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) রচিত শেফা শরীফ এবং আছ-ছারেমুল মাসলুল এর বরাতে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি-
من شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ যারা শানে রেছালতে অবমাননাকরীর কুফরী এবং সাজা প্রসঙ্গে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ছাইয়্যেদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (রঃ)
২৫শে নডেম্বর, ১৯৮৫ ইং
"ঈমান " প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী রদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্যঃ
--------------------
তােমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-
يحلفون با الله ماقالوا - ولقد قالوا كلمة الكفر وكفروا بعد اسلامهم
তরজমাঃ তারা (অর্থাৎ মুনাফিকরা) আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, নবীর শানে অবমাননা করে নাই। আর (আল্লাহ্ পাক বলেন) নিশ্চয় তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং মুসলমান হওয়ার পর কাফের হয়ে গেছে। (সূরা তাওবা, ১৬ নং রুকু)।
ইমাম ইবনে জরীর, তবরানী, আবুশ শেখ এবং ইবনে মারদুয়া মুফাসসীরকুল সরদার সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একদা এক বৃক্ষের ছায়ায় অবস্থানরত ছিলেন। রাসূল (দঃ) এরশাদ করলেন- অতিসত্বর এমন এক ব্যক্তির আগমন হবে যে ব্যক্তি তােমাদেরকে শয়তানের দৃষ্টিতে দেখবে। যদি সে আসে তবে তােমরা তার সঙ্গে কথা বলবে না। অল্প কিছুক্ষণ পর ছােট চোখ বিশিষ্ট এক লােক আমাদের সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাে। রাসূলে আকরাম (দঃ) তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি এবং তােমার সঙ্গী কোন বিষয়ে আমার শানে অবমাননাকর কথা বলছাে? সে লােকটি গিয়ে তার সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে এলাে। অতঃপর সবাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে লাগলাে- আমরা হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম শানে অবমাননাকর কোন বাক্য উচ্চারন করিনি। তখনই আল্লাহ্ পাক এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন- আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, তারা অবমাননা করে নাই। অথচ অবশ্য তারা (রাসূলের শানে) কুফরী বাক্য বলেছে এবং রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করে মুসলমান হওয়ার পর কাফের হযে গেছে। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, আল্লাহ্ পাক স্বয়ং সাক্ষ্য দিচ্ছেন-নবীর শানে অবমাননাকর শব্দ বা বাক্য কুফরী এবং এই অবমাননাকারী শত-সহস্র বার মুসলমানীর দাবী কিংবা কলেমা পাঠ করলেও সে তৎক্ষনাৎ কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ পাক আরাে এরশাদ করেন-
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض وتلعب - قل ابا الله واياته ورسوله کنتم تستهزؤن لاتعتذروا قدكفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন তাদেরকে অবশ্যই তারা বলবে আমরা তাে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। (ও হে রাসূল (দঃ)! আপনি তাদের বলুন- তােমরা কি আল্লাহপাক তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছাে। কোনরুপ উযর-অজুহাত পেশ করাে না। তােমরা ঈমান আনয়নের পর কাফের হয়ে গেছো।
ইমাম ইবনে আবি শাইবা (রঃ), ইবনে জরীর (রঃ), ইবনুল মুনাযির (রঃ) , ইবনে আবী হাতেম (রঃ), ইমাম আবুশ শেখ (রঃ) এবং ইমাম মুজাহিদ (রঃ) মুফাসসিরকুল শিরমনী হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে-
انه قال في قوله تعالی ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض وتلعب قال رجل من المنافقين يحدكنا محمد ان ناقة فلان بوادي كذا واما يدريه بالغيب
অর্থাৎ কোন এক ব্যক্তির উষ্ট্রী হারিয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তা তালাশ করা হচ্ছিল। রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলের অমুক স্থানে আছে। তখন এক মুনাফিক মন্তব্য করে বসলাে- মুহাম্মদ (দঃ) কি গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান জানেনঃ তখনই আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন- "আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা করছো? তবে কোন অজুহাত পেশ করােনা তােমরা মুসলমানীর দাবীদার হয়েও শানে রেছালতে এহেন অবমাননাকর শব্দ উচ্চারণ করার কারণে কাফের হয়ে গেছে।
(তাফসীরে ইবনে জরীর, দশম খন্ড, ১০৫ পৃঃ, তাফসীর দুররে মনছুর তৃতীয় খন্ড ২৫৪ পৃঃ)
মুমিনগণ!
লক্ষ্য করুন, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে এতটুকু অবমাননাকর শব্দ- মুহাম্মদ (দঃ) কি "গায়ব" জানেনঃশত-সহস্র বারের কলেমা পাঠ কিংবা ইবাদত-রেয়াজত কোন কাজে আসে নাই। বরং আল্লাহ পাক সাফ জানিয়ে দিলেন- কোন অজুহাত গ্রহনযােগ্য নয় তােমরা মুসলমান হওয়ার পর কাফের হয়ে গেছে।
- সমাপ্ত -
বিনীত
হাফেজ কাজী মুহাম্মদ আবদুল আলীম রিজভী
১৮ সফর, ১৪২২ হিজরী
১৩ মে, ২০০১ ইংরেজী
সূচীক্রম
বিষয়
** মুফতীয়ে আজম পাঞ্জাব হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ কাদেরী রজভী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর অভিমত -
** ইমামে আহলে সুন্নাত রহমতুল্লাহি তাআলা আলায়হি -
** আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ফকীহে আজম মাওলানা শাহ আহমদ রজা খান (রহঃ) এর সাড়া জাগানাে ফতওয়া -
** গজ্জালিয়ে যমান হযরত সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ) -
** শরীয়তের বিধান সম্পর্কিত পিনিশন প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা -
** ঈমান' প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) এর বক্তব্য -
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
মুফতীয়ে আজম পাঞ্জাব হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ কাদেরী রজভী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) এর অভিমতঃ
-----------------------
মুসলিম মিল্লাতের বিজয় ও সাফল্য, সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকৃত এবং পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার মধ্যে নিহিত।
যেমন, মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-
وانتم الأعلون أن كنتم مؤمنين
"অর্থাৎ আর তােমরাই বিজয়ী হবে যদি মুমিন হও"
পরিপূর্ণ ঈমানের প্রান হলাে রসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-প্রীতি ভালবাসা।
হাদীসে নববীতে এরশাদ হয়েছে-
لايؤمن أحدكم حتى اكون احب اليه من والده ر ولده والناس اجمعين
অর্থাৎ তােমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিন রূপে গন্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নবী তার নিকট নিজের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল লােকের চেয়ে অধিকতর প্রিয়ভাজন হবাে না (ছহীহ বুখারী শরীফ)।
প্রেম-ভালবাসার দাবী হলাে প্রেমাস্পদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। তাই পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার নিমিত্তে অপরিহার্য হয়ে যায় যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা কারী নবী-বিদ্বেষীদের প্রতি শত্রুতা- বিদ্বেষ পােষন করা।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
لاتجد قوما يؤمنون بالله واليوم الآخر يوادون من حاد الله ورسوله
অর্থাৎ (ওহে রসূল (দঃ) আপনি আল্লাহ্ এবং আখেরাতে বিশ্বাসী মুমিন সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (দঃ) এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কারী রূপে দেখতে পাবেন না। (সূরা মুজাদালাহ)
উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যায় মালেকী মজহাবের বিখ্যাত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) তাঁর রচিত "শেফা শরীফের দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণনা করেন-
ومنها بغض من ابغض ا الله ورسوله ومعاداة من عاداه
অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল (দঃ) এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (দঃ) এর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পােষণ কারীদের প্রতি বিদ্বেষ-পােষন করা এবং তাঁদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পােষন করা। রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর মহিমান্বিত ছুহবত-সান্নিধ্য লাভে ধন্য ছাহাবায়ে কেরাম-যাদের ঈমানকে পরবর্তী সকল মুমিনের জন্য "মাপকাঠি স্বরূপ" ঘােষণা করে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন-
آمنوا كما آمن الناس
"তােমরা ঈমান আনয়ন করাে যেমন ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) ঈমান আনয়ন করেছেন। (সূরা বাকারা) তাঁদের প্রসঙ্গে ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- ছাহাবায়ে কেরাম খােদায়ী ফরমানের উপর আমল করে-
قد قتلوا أحيائهم وقاتلوا آبانهم وابنائهم في مرضاته
অর্থাৎ তাদের বন্ধু-বান্ধবদের ক্বতল করেছেন এবং বাপ-চাচা ও সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন একমাত্র রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশায়।"
শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ "নছীমুর রেয়াজ" এ বর্ণিত আছে যে-
کابی عبيدة بن الجراح قتل آباه بیدر، وعمر رضي ا الله عنه قتل خاله العاص ومصعب ابن عمبر رضى ا الله عنه قتل اخاه ونحوه ما هو مذكور في السير.
অর্থাৎ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল যাররাহ (রঃ) ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে নিজের পিতা যাররাহ কে ক্বতল করেছেন, আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রঃ) নিজের মামা "আছ" কে হত্যা করেছেন এবং হযরত মুছআব বিন ওমাইর (রঃ) নিজের ভাই কে হত্যা করেছেন। এছাড়া আরাে বিভিন্ন ঘটনা "সীরত" সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত আছে।
কুরআন-হাদীস এবং ছাহাবায়ে কেরাম এর আমালের আলােকে প্রমাণিত হয় যে, নবী - বিদ্বেষী ও শানে রেছালাতে অবমাননা কারীদের পৃথিবী পৃষ্ঠে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাফসীরে রুহুল বয়ান শরীফে" উল্লেখিত আছে যে, আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর শাসনামলে-জনৈক মুনাফিক মুসলিম প্রতিদিন নামাজের জামাতে "সূরা আবাছা" তেলাওয়াত করতাে।
এ সংবাদ খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ফারুকে আজম (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি ঐ মুনাফিককে ক্বতল করে দেয়ার হুকম দিলেন। কেননা, এ সূরায় বাহ্যিকভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে মৃদু তিরস্কার করা হয়েছে। প্রতিদিন নামাজে এ সূরা তেলাওয়াৎ করার পেছনে মুনাফিকের অন্তরে লুকায়িত কপটতা-ভন্ডামী এবং রাসূল (দঃ) এর প্রতি অবমাননামূলক মনােভাব কে উপলব্ধি করে তৎক্ষনাৎ তাকে ক্বতল করে দেয়ার হুকুম দিলেন। পাকিস্তানে জনৈক নবী-বিদ্বেষী রাসূলে আকরম নূরে মুজাসূসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াছাল্লামের শানে হাস্যকর ও বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে এক পুস্তক প্রকাশ
করে। গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ রহমতুল্লাহ আলায়হি নামক এক আশেকে রাসূল ঐ পু্স্তক রচয়িতাকে হত্যা করে জাহান্নামে পৌঁছায়ে দেয়।
পরবর্তীতে গাজী ইলমুদ্দীন (রহ:) বন্দী হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। আর তথায় রাসূলে খােদা (দঃ) স্বীয় মহিমান্বিত দীদার দানে এই আশেক কে ধন্য করলেন। বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দীছ আলীপুরী এক আরেফে কামেল হযরত পীর সৈয়্যদ জামাত আলী শাহ রহমতুল্লাহ আলায়হি গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর নামাজে যানাজা পড়ানাের সময় বল্লেন-আমার সমগ্র জীবন হাদীসে রাসূল (দঃ) এর অধ্যয়ন-অধ্যাপনা এবং দেশ-জাতি ,মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে অতিবাহিত হয়। চল্লিশ বারেরও অধিক আল্লাহর ঘরের হজ্ব করার সৌভাগ নসীব হয়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নিয়ে যায় কামারের সন্তান গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ)।
আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রঃ) এর রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করা, স্বপ্নযােগে গাজী ইলমুদ্দীন শহীদ (রহঃ) এর পরম
সৌভাগ্যের দীদারে রাসূল (দঃ) লাভে ধন্য হওয়া এবং তাঁর এই আমলের উপর মুহাদ্দীছে আলী পুরী হযরত পীর সৈয়্যদ আলী শাহ্ (রহঃ) এর ঈর্ষা করা এই কথাকে জোরদার করে যে রাসূল পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা এক মাত্র ক্বতল।
সর্বদা ইসলামের শত্রুদের বিশেষতঃ ইয়াহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত লেগে রয়েছে যে, কিভাবে মুমিনদের,
হৃদয় থেকে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব - শ্ৰেষ্ঠত্বকে বের করে ঈমানী চেতনা ও আকিদাগত জযবা থেকে বঞ্চিত করা যায় এবং বিশ্বের দরবারে নেতৃত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পরিবর্তে অধঃপতন ও অপমান-অবমাননার গর্তে নিক্ষেপ করা যায়। তাদের এহেন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লামা ইকবাল (রহঃ) বলেছেন -
به فاقه کش جو موت سے ذرتا نهیں کبهی
روح محمدی اس کے بدن سے نکال دو
অর্থাৎ এই ভুক্ষা ও ক্ষুৎপীড়িত মুসলিম জাতি যারা মৃত্যুকে পরােয়া করে না আদৌ। ঈমানী রুহ তথা ঈমানী চেতনা তাদের অন্তর থেকে বের করে দাও। (তারপর তােমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।)
অতঃপর তিনি মুসলমানদের সতর্ক করলেন এভাবে-
مصطف برسان خویش را که دین همه اوست
اگر باو نرسیدی تمام بولهبی است
অর্থাৎ হে মুমিন! নিজেকে নবীয়ে করীম রউফুর রহীম (দঃ) এর পবিত্র চরন তলে সমর্পন করাে। কারণ তিনিই তাে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রতিচ্ছবি। যদি তাঁর চরন যুগলে সমর্পিত হতে সক্ষম না হও তবে সবাই আবু লাহাবের দলভূক্ত হবে। মুমিন হবে না।
ইসলামের শত্রু ইয়াহুদী-নাছারা চক্র সাউদী আরব সহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলাে কে নিজেদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আবদ্ধ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশের প্রতি এখন তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে। নিকট অতীতেও রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী খৃষ্টানদেরকে পাকিস্তান হতে নিরাপদে স্বদেশে সরিয়ে নিয়েছে তারা। ইসমাঈল দেহলভীর পূজারী দেওবন্দী ওয়াহাবীদের মাধ্যমে মুমিনদের হৃদয় ও মস্তিস্ক হতে রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রেম-ভালবাসা এবং মর্যাদা-মহত্ব মুছে ফেলার অপচেষ্টা-অপতৎপরতা তাে সক্রিয় রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বেরেলভী সর্বদা বক্তৃতা - বক্তব্য লিখনীর মাধ্যমে সর্বস্তরের মুসলমানদের হৃদয় এবং মস্তিষ্কে ঈমানী জযবা-চেতনা জাগিয়ে তােলার লক্ষ্যে রাসূলে আকরম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা-মহিমা-শ্রেষ্ঠত্বকে জাগরুক করার মহৎ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ আনজুমানে আনুওয়ারে কাদেরীয়া পাকিস্তান এর সকল প্রয়াস-প্রচেষ্টা- পরিকল্পনা এ মহান উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিবেদিত। এলাকায় এলাকায় মাদ্রাসা,মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মাজহাব-মিল্লতের প্রচার-প্রসারের ধারাবাহিক কর্ম তৎপরতা চালু রয়েছে।
"রাসূল (সঃ) অবমাননাকারীর শরয়ী সাজা নামে এই কিতাব প্রচারে ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠ প্রকাশনা। এর পূর্বেও পাঁচ খানা কিতাব প্রকাশিত হয়েছে এ সংস্থার উদ্যোগে। আলােচ্য রেছালায় ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত আজীমুল বরকত আহমদ রজা খান ফাজেলে বেরেলভী (রঃ) এর মহা মূল্যবান ফতওয়া এবং গাজ্জালীয়ে যমান হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) এর তত্ত্ব, তথ্য ও প্রমাণ বহুল প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। যা তিনি পাকিস্তানের ফেডারেল শরয়ী আদালতের প্রধান বিচারপতির ফতওয়া প্রার্থনার প্রেক্ষিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাও এখানে সংকলিত হলাে যা গভীর মনােনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করলে রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলা আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াছাল্লামের প্রেম-মহব্বত মুমিনের হৃদ রাজ্যে জেগে উঠবে এবং ইসলামের শত্রুদের সকল প্রকার যড়যন্ত্র চিরতরে নির্মূল হবে।
আনজুমানে আনওয়ারে কাদেরীয়ার সভাপতি জনাব মাওলানা মুহাম্মদ আলতাফ কাদের এবং অন্যান্য সকল কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি জানাই শত-সহস্র মুবারক বাদ। আর যারা প্রকাশনার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন সকলের জন্য মহান আল্লাহর পাক দরবারে ফরিয়াদ করি আল্লাহ্ সকলের সার্বিক কর্ম-তৎপরতা কবুল করুন এবং তাদের সকল প্রকার শ্রম-সাধনাকে মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে উত্তরােত্তর উন্নতি ও সাফল্য দান
করুন। আমীন।
-মুহাম্মদ ইশফাক আহমদ (গুফেরালাহ)
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খানিওয়াল।
ইমামে আহলে সুন্নাত রহমতুল্লাহি তাআলা আলায়হি
---------------------
"ইমামে আহলে সুন্নাত" এই মহিমান্বিত শব্দামালা যখনই আমাদের কানে ভেসে আসে সঙ্গে সঙ্গে এক মহান ব্যক্তিত্বের স্বরণ আমাদের মনােজগতকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর তিনি হলেন, ইমামে আহলে সুন্নাত মুজা্দিদে দ্বীনও মিল্লাত আলা হযরত ইমাম আহমদ রজা খান ফাযেলে বেরেলভী রহমতুল্লাহ্ আলায়হি।
ইমাম আহমদ রজা ফাযেলে বেরেলভী (রহঃ) বংশ পরস্পরায় পাঠান। মাযহাব চর্চায় হানাফী এবং ত্বরিক্বতে কাদেরী ছিলেন। সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরীয়ায় আলা হযরতের দাখিল হওয়া প্রসঙ্গে সংঘটিত একটি মহিমান্বিত কারামতের বর্ণনা বিভিন্ন জীবন চরিত গ্রন্থে পাওয়া যায়। আর তা হলাে তিনি এবং তাঁর বুযুর্গ পিতা ভারতের মারহারা শরীফে "আসতানায়ে আলিয়া বরকাতিয়ায়" উপস্থিত হলে মহান অলীয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহ সৈয়্দ আলে রাসূল রহমতুল্লাহ আলায়হি এর সঙ্গে সর্ব প্রথম তাঁদের সাক্ষাত হয়। শাহ সৈয়্যদ আলে রাসূল (রহঃ) আলা হযরত (রঃ) কে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন , আসুন, আমি তাে কয়েক দিন থেকে আপনার এন্তেজারে রয়েছি। ইমামে আহলে সুন্নাত বায়আত গ্রহন করলেন। আর তখনই মহান অলী শাহ আলে রাসূল (রহঃ) সকল সিলসিলার ইযাজত প্রদান করতঃ আলা হযরতের মুবারক মস্তকে খেলাফতের তাজ পরিয়ে দিলেন। উপস্থিত মুরীদগণ আরজ করলেন-হুজুর! আপনি উনাদেরকে কোন প্রকার রেয়াজত কিংবা সাধনার হুকুম দিলেন না। বরং বায়আতের সঙ্গে সঙ্গে খেলাফতও দান করলেন। এর অন্তর্নিহিত ভেদ কি? জবাবে শাহ আলে রাসূল (রহঃ) বললেন, "তাঁরা সম্পূর্ণ রুপে তৈরী হয়ে এসেছেন। তাঁদের শুধু একজন শেখে কামেল এর সাথে "নিসবত (সম্পর্ক) স্থাপনের প্রয়ােজন ছিল।" এ বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আর বলতে লাগলেন যে, মহান আল্লাহ্ যদি কিয়ামত দিবসে আমায় জিজ্ঞাসা করেন-হে আলে রাসূল! তুমি দুনিয়া হতে আমার জন্য কি নিয়ে এসছাে? তখন আমি আল্লাহর আলিশান দরবারে ইমাম আহমদ রজা কে পেশ করবাে।
ইমাম আহমদ রজা খান (রহঃ) ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিঃ মােতাবেক ১৪ই জুন ১৮৫৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী শহরে জন্মগ্রহন করেন। নামকরণ করা হয় মুহাম্মদ। ঐতিহাসিক নাম মুখতার। সম্মানিত পিতামহ নাম রাখলেন-আহমদ রজা পরবর্তীতে আলা হযরত নিজেই আবদুল মুছতফা" অংশটুকু নিজের নামের সঙ্গে সংযােজন করলেন। ভক্ত অনুরক্তরা "ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত ফাযেলে বেরেলভী ইত্যাদী অভিধায় তাঁকে স্মরণ করে থাকে।
আলা হযরতের খেদমতঃ
----------------
প্রায় বাহাত্তরটি বিষয়ের উপর আলা হযরতের পরিপূর্ণ দখল ও দক্ষতা ছিল, তিনি মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে দুগ্ধপান সংক্রান্ত বিষয়ে জীবনের সর্বপ্রথম ফত্ওয়া লিপিবদ্ধ করেন বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন বিষয় বস্তুর উপর প্রায় দেড় সহস্রাধিক মহামূল্যবান পুস্তক রচনা করে মুসলিম বিশ্বে আলােড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব হলাে উর্দু ভাষায় পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ অনুবাদ। যাতে শানে উলুহিয়ত এবং রাসূলে আকরম (দঃ) এর মর্যাদা-মহিমা -মহত্বের উপর সর্বাধিক শুরুত্ব আরােপিত হয়। এর নামকরণ করা হয়, "কানযুল ঈমান অর্থাৎ "ঈমানের ভান্ডার" নামে। উর্দু ভাষায় কৃত পবিত্র কুরআনের অন্যান্য অনুবাদ এর সঙ্গে কানযুল ঈমান এর তুলনামূলক পর্যালােচনা করে জ্ঞানীগণ অনায়াসে এ সিন্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হবেন যে, "কানযুল ঈমান", ই উর্দু ভাষায় পবিত্র কুরআনের সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও উৎকৃষ্ট অনুবাদ। যা আলা হযরতের উচ্চতর এবং গভীর পান্ডিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। তাঁর আরেকটি উল্লেখযােগ্য ও অবিস্মরনীয় খেদমত হলাে ফিক্হ শান্ত্রের জগতে সর্বাধিক আলােড়ন সৃষ্টিকারী বিশাল ফতওয়ার ভান্ডার ফাতাওয়ায়ে রজভীয়া শরীফ" যা বারাে খন্ডে সুবিন্যান্ত, প্রতিটি খন্ড সহস্রাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত। যাকে মুসলিম গবেষক, পন্ডিত ও মনীষীগণ ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম" অর্থাৎ ইসলামের বিশ্বকোষ নামে অভিহিত করে থাকে। আলা হযরতের এহেন বিস্ময়কর, খেদমতে ধর্মীয় মনীষীরা এক বাক্যে তাঁকে চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইমাম আহমদ রজা ফাযেলে বেরেলভী (রহঃ) ছিলেন শানে রেছালতের উপর তিনি অজস্র নাত,গজল, রচনা করেন। হুজুরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে রচিত প্রসিদ্ধ "ছালাত-ছালাম" (মুছতফ জানে রহমত পে লাখাে সালাম)যার একেকটি পংক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর একেকটি বরকতময় সুন্নাত এবং আমলকে নির্দেশ করে লিখিত হয়েছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বিশেষতঃ পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায় শত বর্ষ ধরে সর্বজন সমাদৃত হয়ে পঠিত হয়ে আসছে। তাঁর নাত-সংকলন "হাদায়েকে বখশিশ" নামে সুপ্রসিদ্ধ।
ملك سخن کی شاهی تمکو رضا مسلم
جس سمت آگئ هيں سکے بتها دیئے هیں
মূলতঃ সমগ্র জীবনকে তিনি দ্বীনের খেদমতে অতিবাহিত করেন। তাঁর হৃদয়ে সদা।মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণ কামনা জাগরুক থাকতাে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে তিনি মুসলিম জাতির পথ-প্রদর্শক এর ভূমিকা পালন করেছেন। যখন বড় বড় কংগ্রেসী মৌলভীরা "অখন্ড ভারত" আন্দোলনের শ্লোগানে মুখর, আলা হযরত তখন মুসলমানদেরকে এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাবধান করে দ্বি জাতি তত্ত্বের ফর্মূলা পেশ করলেন। অতঃপর ১৮৯৭ সালে পাটনায় অনুষ্ঠিত "অল ইন্ডিয়া ছুন্নী কনফারেন্সে" দ্বিজাতি তত্ত্বের ফর্মূলা উপস্থাপন করে মুসলিম জাতিকে সচেতন করে দিলেন যে, মুসলমান এক স্বতন্ত্র জাতি এবং হিন্দু আরেক স্বতন্ত্র জাতি। সুতরাং এই স্বতন্ত্র ধর্ম এবং জাতি সত্তার ভিত্তিতে তাদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি নির্ধারিত হতে হবে। এভাবে আলা হযরত মুসলিম জাতির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায় যে, তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক সমুজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন।
২৫শে ছফর ১৩৪০ হিঃ মােতাবেক ২৮শে অক্টোবর ১৯২১ইং বেরেলী শরীফে তিনি বেছাল প্রাপ্ত হন। সেখানেই তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত। যা আজো ইসলামী বিশ্বের মুসলিম জাতির নিকট হেদায়তের জ্যোতি বিকিরণ করে যাচ্ছে।
মুহাম্মদ আলতাফ আহমদ কাদেরী রজভী
আলা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ফকীহে আজম মাওলানা শাহ আহমদ রজা খান রহমতুল্লাহি আলায়হি এর সাড়া জাগানাে ফতওয়া।
(ইহা রজভীয়া লাইব্রেরী, আরামবাগ, করাচী কর্তৃক মুদ্রিত ফতওয়ায়ে রজভীয়ার ষষ্ঠ খন্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় ছাপানাে হয়েছে।)
++++++++++++++++
জবাবঃ
رب أعوذ بك من همزات الشياطين - واعوذ بك رب أن يحضرون - والذين يوذون رسول ا الله لهم عذاب اليم - أن الذين يوذون ال له ورسوله لعنهم ا الله في الدنیا والآخرة واعد لهم عذابا مهينا - الا لعنة ا الله على الظالمين.
তরজমাঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানের প্ররােচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালন কর্তা, আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক সাজা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শান্তি। সাবধান! জালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। মুসলিম নামধারীদের মধ্যে যারা (শানে রেছালতের অবমাননা সম্বলিত) ঐ অভিশপ্ত পত্র খানা রচনা করেছে তারা কাফের-মুরতাদ (অর্থাৎ ধর্মত্যাগী) যারা ঐ পত্র খানার উপর দ্বিতীয় দফায় নজর দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছে তারাও কাফের, মুরতাদ। যাদের তত্তাবধানে তৈরী হয়েছে তারাও কাফের, মুরতাদ। মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঐ অভিশপ্ত পত্রের বক্তব্য এর অনুবাদ করে নবীজীর অপমান-অবমাননার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে, বা উহার বক্তব্যকে হালকা ভাবে গ্রহণ করেছে কিংবা অভিশপ্ত পত্রকে
নিজেদের নম্বর কমিয়ে দেয়া বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার চেয়ে সহজ বিষয় বলে ধারণা করেছে তারা সবাই কাফের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) প্রাপ্ত বয়স্ক হউক অপ্রাপ্তবয়স্ক।
উপরােক্ত চার দলের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে সালাম কালাম করা, মেলামেশা, উঠা-বসা করা সবই সম্পূর্ণ রূপে হারাম। তাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করলে তাকে গােসল দেয়া, কাফন পরানাে, তাঁর মৃতদেহবাহী খাট বহন করা, তার জানাযার নামাযে অংশগ্রহন করা, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তার আত্মায় ছওয়াব পৌঁছানাে ইত্যাদী সন্দেহাতীত ভাবে হারাম, বরং এহেন মৃত কাফের, মুরতাদগণের নিকটাত্মীয়রা যদি শরিয়তের বিধি-বিধান মান্য করেন তবে তাদের কর্তব্য হবে এই অভিশপ্তদের মৃতদেহগুলাে কুকুর মরা-শৃগাল মরার ন্যায় চামার-কুমার এর সাহায্যে পর্বত চূড়ায় উঠিয়ে কোন সরু-সংকীর্ণ গর্তের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করে যাতে গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের গলিত লাশের দূর্গন্ধে আল্লাহর সৃষ্ট জীবরা কষ্ট না পায়। এই বিধান সকল নবী-বিদ্বেষীদের জন্য সমান ভাবে প্রযােজ্য।
উপরােক্ত কাফের,মুরতাদ গণের বিবাহিত স্ত্রীরা বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পরস্পর কাছাকাছি হলে ব্যভিচার হিসাবে গন্য হবে এবং এর কারণে সন্তান হলে অলদুজ যেনা তথা ব্যভিচারের সন্তান বলে ধর্তব্য হবে। ইসলামী শরিয়তের পক্ষ থেকে এদের স্ত্রীরা অধিকার লাভ করেছে যে, নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত হলে তারা নিজেদের পছন্দনীয় যে কোন লােকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
যদি এ সকল কাফের,মুরতাদগণের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, "কুফরী"কে স্বীকার করে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় তবে তাদের ব্যাপারে মৃত্যু সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান গুলাে স্থগিত হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে সালাম-কালাম, মেলামেশা সংক্রান্ত নিষধাজ্ঞা গুলাে পুরােপুরী বহাল থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তাদের সামগ্রিক আচার-আচরণ এর দ্বারা তাদের ইখলাছ-আন্তরিকতা সহকারে তাওবা করার সত্যতা এবং ঈমান- ইসলাম গ্রহণের বিশুদ্ধতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হয়, তবে এরপরও তাদের পূর্বের স্ত্রীগণ তাদের নিকট ফিরে আসতে বাধ্য নয়। বরং তাদের এখতেয়ার বহাল থাকবে যে তারা তাদের পছন্দানুসারে কোন লােকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিংবা আদৌ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না।হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে পূর্বের স্বামীর সঙ্গেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
অতঃপর ঈমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রজা খান (রঃ) তাঁর প্রদত্ত উপরােক্ত ফতওয়ার সমর্থনে শরিয়তের ইমামগণের বিভিন্ন অভিমত এবং বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ফতওয়া গ্রন্থের বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিম্নে উপস্থাপন করেছেন।
ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রহঃ) তাঁর রচিত বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ শেফা শরীফের।৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اجمع العلماء ان شاتم النبي صلى ا الله عليه وسلم والمنقص له كافر والوعید چار। عليه بعذاب ا الله تعالي ومن شك في کفره وعذابه فقد كفر
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ইজমায়" (অর্থাৎ সর্বসম্মত শরয়ী সিদ্ধান্ত) উপনীত হয়েছেন যে, নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে অবমাননা কারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাবের হুঁশয়ারী কার্যকরী। আর।যারা সে ব্যক্তির কাফের হওয়ার এবং আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহঃ) তাঁর রচিত নছীমুর রেয়াজ" গ্রন্থের চতুর্থ খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
ماصرح به من كفر الساب والشاك في كفره هو ماعليه ائمتنا وغيرهم
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর মহান শানে অবমাননাকারী কাফের হওয়া এবং যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও
কাফের হওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মহান ইমামগণ এবং অন্যান্য ইমামদের মাজহাব।
ওয়াযীযে ইমাম কুরদরী, তৃতীয় খন্ডের ৩২১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
لو ارتد والعياذ بالله تعالی تحرم امرأته يجدد التكاح بعد اسلامه والمولود بينهما قبل تجديد النكاح بالوطى بعد التكلم بكلمة الكفر ولد زنا ثم ان آتی بكلمة الشهادة على العادة لايجد به مالم يرجع عما قاله لأن باتيانهما علی العادة لايرتفع الكفر اذا سب الرسول صلى ال له عليه وسلم او واحدا من
الأنبياء عليهم الصلوة والسلام فلاتوية له واذا شتمه عليه الصلوة والسلام سکران لايعفي واجمع العلماء ان شاتمه كافر ومن شك في عذابه وكفره كفر ملنقط كاكثر الأواني ل لاختصار
অর্থাৎ যে ব্যক্তি (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদ হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। অতঃপর ইসলাম গ্রহনের পর বিবাহ বন্ধনকে নবায়ন করা অপরিহার্য হয়। ইতিপূর্বে কুফরী বাক্য উচ্চারনের পর যদি স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয় আর তা হতে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে উহা জারজ সম্তান হবে। আর যদি সে ব্যক্তি কুফরী বাক্য থেকে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা না করে শুধু অভ্যাসগত ভাবে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তবে এর দ্বারা সে কোনরূপ উপকৃত হবে না। কেননা অভ্যাস বশতঃ কলেমা পাঠের দ্বারা মুরতাদ ব্যক্তির কুফরী রহিত হয় না। যে ব্যক্তি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী -রাসূল আলায়হিমুস সালামের শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করবে তার তাওবা কবুল হবে না। আর যে লােক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা করবে তাও ক্ষমা করা হবে না এবং উম্মতের সকল ওলামায়ে কেরাম ইজমায়' অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, নবী করীম রউফুর রহীম (সাঃ) এর শানে অপমান-অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি তার কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
ইমামে মুহাক্বিক ইবনুল হুম্মাম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "ফাতহুল ক্বদীর"এর চতুর্থ খন্ডের ৪০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
كل من آبغض رسول الله صلی الله عليه وسلم بقلبه کان مرتدا فالساب بطريق أولى وان سب سكران لايعفى عنه.
: অর্থাৎ যার অন্তরে রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্ধেষভাব লুকায়িত থাকবে সে মুরতাদ। অতএব রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী অধিকতর সঙ্গত কারণে কাফের বলে গন্য হবে। আর যে ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অবমাননা করবে তাও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
বাহুরুর রায়েক' পঞ্চম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপরিউক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখিত হওয়ার পর ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে-
سب واحدا من الانبياء كذلك فلا يفید الانكار مع البينة . . . . . فجعل انکار الردة توية أن كانت مقبولة.
অর্থাৎ যে কোন নবীর শানে অবমাননাকারীর হুকুম অনুরূপ অর্থাৎ সে কাফের, তাকে ক্ষমা করা হবে না। কেননা অবমাননা প্রমানিত হওয়ার পর অস্বীকার এর দ্বারা কোন উপকার পাওয়া যায় না। তাছাড়া মুরতাদ এর অস্বীকার তাে সাজা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে তাওবা তাে সেই বিষয়ে হয়ে থাকে যেখানে গ্রহনযােগ্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, এখানে মােটেও ক্ষমা পাওয়ার অবকাশ নেই।
আল্লামা মাওলানা খছরু "দুরারুল আহকাম" এর প্রথম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبياء صلوات ال له عليهم اجمعين مسلم فلاتوية له اصلا واجمع العلماء أن شاتمه كافر ومن شك في عذابه. وكفره كفر.
অর্থাৎ যদি কোন নামধারী মুসলিম রাসূলে আকরম ফখরে দোআলম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবীর শানে অবমাননা করে তাকে কখনাে ক্ষমা করা হবে না। কেননা, তার জন্য আদৌ তাওবার সুযােগ নেই। কেননা উম্মতের সকল উলামায়ে কেরাম এ মাসআলায় "ইজমায়" উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে, ব্যক্তি তার কাফের ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
শুনইয়াযুল আহকাম" এর ৩০১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
محل قبول توية المرتد مالم تكن ردة بسب النبی صلى الله عليه وسلم او بغضه صلى الله عليه وسلم فان كان به لاتقبل تويته سواء جاء تانيا من نفسه او شهد عليه بذلك بخلاق غيره من المكفرات.
অর্থাৎ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমান্বিত শানে অবমাননা করা অন্যান্য কুফরীর মতাে নয়। কেননা, অন্যান্য কুফরীর কারণে মুরতাদ ব্যক্তির তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী মুরতাদের জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের সুযােগ নেই।
আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের" "আর রিদ্দাহ" অধ্যায় উল্লেখিত আছে-
الاقصح ردة السكران الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم فانه لايعفی عنه وكذا في البزازية وحکم الردة بينونة امرأته مطلقا )ای سواء رجع او لم يرجع غمز العيون( واذا مات على ردته لم يدفن فی مقابر المسلمين ولا احل ملة وانما يلقي في حفرة كالكلب والمرتد اقبح كفرا من الكافر الاصلی واذا شهدوا على مسلم بالردة وهو منكر لايتعرض له لالتکذيب الشهود العدول بل لأن انکاره توية ورجوع فتثبت الأحكام التي للمرتد ماتاب من حبط الأعمال وبينونة الزوجة وقوله لايتعرض له اغا هو في مرتد تقبل توتبه في الدنيا الا الردة بسب النبي صلى الله عليه وسلم الأولى تنكير النبي كما عبر به سبق غمز العيون
অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যদি কারাে মুখ দিয়ে কোন প্রকার কুফরী বাক্য বের হয়ে যায় তবে তাকে নেশার কারণে কাফের বলা হবে না কিংবা কুফরীর সাজাও দেয়া হবে না।
কিন্তু নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহিমামন্ডিত শানে অবমাননা করা এমন কুফরী-যা নেশাগ্রস্থ হওয়ার অজুহাতে ক্ষমার যােগ্য হবে না (বজজাযিয়া গ্রন্থেও অনুরূপ উল্লেখিত আছে) আর (নাউজুবিল্লাহ) মুরতাদের হুকুম হলাে- সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। যদি সে পরবর্তীতে নতুন ভাবে ইসলাম গ্রহণ করে তবুও তার স্ত্রী বিবাহ বদ্ধনে ফিরে আসবে না। আর যদি মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যু হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে কিংবা ইয়াহুদী-নাছারাদের কবরস্থানেও দাফন করা যাবে না। বরং কুকুর মরার ন্যায় কোন গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। মুরতাদের কুফরী প্রকাশ্য ও মৌলিক কাফের এর কুফরীর চেয়ে নিকৃষ্টতর । যদি ন্যায় পরায়ন সাক্ষীর কোন মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, অমুক বক্তব্য বা কাজের দরুন সে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর সে লােকটি উহা অস্বীকার করে। তাহলে তার উপর কোন রূপ শাস্তি আরােপ করা যাবে না। এই বিধান ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্যকে মিথ্যা বলে গন্য করার প্রেক্ষিতে নয়। বরং এজন্য যে, মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার করাকে তার কুফরী বক্তব্য বা আচরণ থেকে তাওবা হিসেবে গ্রহন করে।
অতএব ন্যায়পরায়ন সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং মুরতাদ ব্যক্তির অস্বীকার উভয়ের ফলাফল হলাে- ঐ ব্যক্তি কুফরী বক্তব্য বা আচরনের কারণে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তাওবা করেছে। তাই এখন সেই ব্যক্তির উপর ঐ মুরতাদের হুকুম কার্যকরী হবে, যে কুফরী থেকে তাওবা করেছে। আর তা হলাে তার আমল সমূহ বরবাদ হয়ে যাবে। স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কোন শাস্তি প্রয়ােগ করা হবে না। কিন্তু রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করা এমন কুফরী যার সাজা দুনিয়ায় তাওবা করার পরও ক্ষমার যােগ্য হবে না।
"দুররে মুখতার"গ্রন্থকারের উস্তাদ ইমাম খাইরুদ্দীন রমলী (রহঃ) "ফাতাওয়া খাইরিয়া"এর প্রথম খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
من سب رسول ال له صلى الله عليه وسلم فانه مرتد وحكمه حكم المرتدین ويفعل به مايفعل بالمرتدين ولاتوية له اصلا واجمع العلماء انه كافر ومن شك في كفره كفر.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে সে মুরতাদ। তার হুকুম হলাে মুরতাদের হুকুম। তার সঙ্গে ঐ আচরণ করা হবে যা মুরতাদগনের সঙ্গে করা হয়ে থাকে। তার জন্য তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রাপ্তির অবকাশ নেই। উম্মতের আলেমগণ ইজমায় উপনীত হয়েছেন যে, নবীর শানে অবমাননাকারী কাফের। আর যে ব্যক্তি এতে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
মাজমাউল আনহার শরহে মুলতাকাল আবহার' নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ৬১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে যে-
اذا سبه صلى الله عليه وسلم او واحدا من الانبيا، مسلم ولو سکران فلا توية له تنجیه کالزنديق ومن شك في عذابه وكفره فقد كفر.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলমান নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে যদি নেশাগ্রস্থাবস্থায়ও অবমাননা করে সে এমন মুরতাদ- কাফের হয়ে যাবে যার জন্য তাওবার সুযােগ নেই। যেমন যিন্দীক এর জন্য তাওবার অবকাশ নেই। আর যে লােক এই মুরতাদের কুফুরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করবে সেও কাফের।
আল্লামা আখী ইউসুফ (রহঃ) "জখিরাতুল উকবা" নামক গ্রন্থের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قد اجمعت الامة على أن الاستخفاف بنبينا صلى ال له عليه وسلم وبای نبئ كان عليهم الصلوة والسلام كفر سواء فعله على ذلك مستحلا أم فعله معتقدا لحرمته وليس بين العلماء خلاف في ذلك ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ সকল উম্মত সন্দেহাতীতভাবে এই বিষয়ে ইজমায় (অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত) ,পৌছেছেন যে, রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন নবী-রাসূলের শানে অবমাননা কারী কাফের। চাই সে অবমাননা করাকে হালাল জেনে করুক অথবা হারাম জেনে করুক, সর্বাবস্থায় সে কাফের। এ মাসআলায় উলামাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। আর যে লােক অবমাননাকারী কাফের হওয়া ও আযাবের অধিকারী হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
উপরােক্ত কিতাবের ২৪২পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
لايغسل ولايصل عليه ولايكفن اما اذا تاب وتبرأ عن الارتداد ودخل فی دین الإسلام ثم مات غسل وكفن وصلى فيه ودفن في مقاير المسلمين.
অর্থাৎ সেই অবমাননাকারী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল, কাফন কিছুই দেয়া যাবে না। এবং তার উপর জানাযার নামাজও পড়া যাবে না। কিন্তু যদি সে তাওবা করে পূর্বের কুফরী হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায় এবং ইসলাম ধর্মে আন্তরিকভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় অতঃপর মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে গােসল-কাফন দেয়া যাবে, তার উপর জনাযার নামাজ পড়া যাবে এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে।
শাইখুল ইসলাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ "তানভীরুল আবচার" নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
كل مسلم ارتد فتوبته مقبولة الا الكافر سب النبی صلى الله عليه وسلم.
অর্থাৎ সকল মুরতাদ ব্যক্তির তাওবা কবুল হয় কিন্তু নবীর শানে অবমাননাকারী এমন কাফের যার তাওবা কবুল হবে না এবং দুনিয়ার সাজা থেকে রক্ষাও হবে না।
"দুররে মুখতার" গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
لكافر بسب نبي من الانبياء لاتقبل تويته مطلقا ومن شك في عذابه كفره كفر.
অর্থাৎ কোন নবীর শানে অপমান-অবমাননা কারী এমন কাফের যার তাওবা কখনো কবুল হবে না এবং দুনিয়ায় কোনরূপ শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না। আর যে ব্যক্তি
তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) "কিতাবুল খারাজের ১১২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
يما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او كذبه او عابه او تنقُّصه فقد كفر بال له تعالی وبانت زوجته
অর্থাৎ যে লােক মুসলমান হওয়ার পর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করবে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, নবীর শানে দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। উপরােল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের কাফের এবং মুরতাদ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবা করলে তা কবুল হবে।
তবে এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে যে, ইসলামী সরকার প্রধান তাদেরকে তাওবা করে ইসলাম গ্রহণের পর শুধু কি তা'যীর অর্থাৎ নাকি তখনও মৃত্যুদন্ড দান করবে। বজ্জাযিয়া এবং অন্যান্য অনেক নির্ভরযােগ্য কিতাবে যে রয়েছে তাদের তাওবা কবুল হবে না তার ব্যাখ্যা ইহাই। উহার আলােচনা এখানে নিস্প্রয়োেজন। কেননা কোথায় ইসলামী সুলতান-বাদশা আর কোথায় মৃত্যুদন্ডের বিধান। শত - সহস্র দুশ্চরিত্র, ধূর্ত, অভিশপ্ত, সীমালংঘনকারী যারা উঁচু স্তরের মুসলমান তথা মুফতী, মুদাররিছ, ওয়ায়েজ এবং শাইখুল ইসলাম বলে আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকর বড় বড় অভিশপ্ত বুলি আওড়ায় যাদের বাধা প্রদান করার কিংবা বারণ করার কেউ নেই। আর কেউ প্রতিবাদ করলে তা তথাকথিত সভ্যতার ধবজাধারী অভিজাত মুসলমানদের নিকট অসভ্যতা আর ধর্মীয় গোঁড়ামী বলে বিবেচিত হয় (নাউযুবিল্লাহ)।
فانظر الی آثار مقت الله الغيور - كيف انقلبت القلوب وانعکست الأمور ، ولاحول ولاقرة الا با الله العلى العظيم - وسيعلم الذین ظلموا ای منقلب ينقلبون. والله تعالی اعلم.
গাজ্জালিয়ে যমান হযরত সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ)
---------------
গাজ্জালিয়ে যমান হযরত শাহ সৈয়যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) পবিত্র হারামে রাসূল মদীনা মুনাওয়ারায় দরবারে রেছালতে আবেগ ভরা হৃদয়ে মনের আবেদন- নিবেদন-ফরিয়াদ পেশ করছিলেন। মুখমন্ডল কাবার কাবা সরদারে আম্বিয়া, মাহবুবে কিবরিয়া আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দিকে আর পৃষ্ঠদেশ খানায়ে কাবা বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে ছিল। আর ইহাই বুজুর্গানে দ্বীনের অনুসৃত দরবারে রেছালতে উপস্থিতির চিরাচরিত আদব যে, যখনই রাসূলে আকরম নূরে মুজাসুসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের দরবারে পাকে উপস্থিত হবেন মুখ মন্ডল রওজায়ে রাসূল (দঃ) এর দিকে এবং পৃষ্ঠদেশ খানায়ে কাবার দিকে হবে।
রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজায় নিযােজিত নজদী প্রহরীরা নিষেধ করলাে এবং বললোে খানায়ে কাবার দিকে পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করবেন না। বরং বাইতুল্লাহর দিকে মুখমন্ডল করে রাসূলে খােদার রওজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিন। আল্লামা কাজেমী (রহঃ) তাঁদের কথায় আমল দিলেন না। তই দ্বিতীয় দিন তাঁকে সাউদী বিচারকের সামনে উপস্থিত করা হলাে। বিচারক মহােদয় আল্লামা কাজেমী (রহঃ) কে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন-আপনি কি রওজায়ে রাসূল (দঃ) কে পবিত্র খানায়ে কাবা থেকে অধিকতর উত্তম মনে করেন? জবাবে তিনি বললেন- আপনি খানায়ে কাবার কথা বলছেন? আমিতাে শুধু খানায়ে কা'বা নয় বরং রওজায়ে রসূল (দঃ) এর মহিমাম্বিত স্থানকে আরশে আজম থেকে ও উৎকৃষ্টতর বলে বিশ্বাস করি। বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, এ কথার স্বপক্ষে দলীল প্রমান কি? আল্লামা কাজেমী (রহঃ) প্রতি উত্তরে বললেন- বিচারক মহােদয় লক্ষ্য করুন , পবিত্র কুরআনের আলােকে প্রমানিত হয় -সাইয়্যেদুনা হযরত ঈছা আলায়হিস সালাম আল্লাহ পাকের শুকরগুজার মহিমান্বিত বান্দা। আল্লাহ্ পাক বলেন- আমি তাঁকে শুকরগুজার কৃতজ্ঞচিত্ত হওয়ার বদৌলতে চতুর্থ আসমানে উত্তোলন করে মহিমান্বিত আসনে অধিষ্ঠিত করেছি। আর সেখানেও তিনি আল্লাহর শােকর আদায় করছেন। পবিত্র কুরআনের ঘােষনা হলাে - لئن شكرتم لازيدنكم অর্থাৎ নেয়ামতের শুকর আদায় করলে নেয়ামতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেবে বহুগুনে।
খােদায়ী ঘােষণার প্রেক্ষিতে প্রত্যাশিত ছিল আল্লাহপাক হযরত ঈছা আলায়হিস সালাম এর মহিমান্বিত অবস্থান চতুর্থ আসমান থেকে উন্নীত করে আরশে মুয়াল্লায় উপনীত করবেন তাঁর শুকরগুজারীর বদৌলতে । কিন্তু আল্লাহপাক তাঁকে সবশেষে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পার্শ্বদেশে রওজা শরীফের অভ্যন্তরে চির শয্যায় শায়িত করবেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যেই মর্যাদা-মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব রাসূলে খােদা (দঃ) এর পার্শ্বদেশে অবস্থানের মধ্যে রয়েছে তা আরশে আজমে নেই। আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর এহেন অকাট্য দলীল শ্রবণে নজদী বিচারক নির্বাক নিরুত্তর হয়ে রইলেন।
আল্লামা শাহ সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী রহমতুল্লাহি আলায়হি মুসলিম মিল্লাতের গৌরব, অদ্বিতীয় মুহাদ্দিছ, যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহ, মহান গবেষক এবং মনীষী ছিলেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি হাদীসে নববীর খেদমত এবং প্রচার-প্রসারে অতিবাহিত করেন।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞানগর্ভ ও গবেষণালক অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। মুসলিম জাতির প্রতি অন্তরে গভীর দরদ লালন করতেন। দেশ এবং জাতির প্রয়ােজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি কুন্ঠিত হতেন না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ পদদলিত হওয়ার আশংকায় তিনি সর্বদা বিচলিত থাকতেন। জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে আহলে সুন্নাতের আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় আজীবন সচেষ্ট ছিলেন।
গজ্জালিয়ে যমান, রাজীয়ে ওয়াক্ত সৈয়াদ আবুন নজুম আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (রহঃ) এর বংশ পরম্পরা আহলে বাইতে রাসূল এর অন্যতম ইমাম সাইয়্যেদুনা মুছা কাজেম (রহঃ) এর সঙ্গে মিলিত হয়। ১৯১৩ সালে মুরাদাবাদ এর আঞ্চলিক শহর আমরূহায় তিনি ভূমিষ্ট হন। বাল্যকালেই তিনি বুজুর্গ পিতা সৈয়্যদ মুহাম্মদ মুখতার কাজেমীর স্নেহ ছায়া থেকে বঞ্চিত হন। জীবনের সূচনা পর্ব থেকে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা-দীক্ষা, তালীম-তরবিয়ত সবই তাঁর সম্মানিত বড় ভাই হযরত আল্লামা উস্তাজুল উলামা সৈয়্যদ খলীল ছাহেব কাজেমী, খাকী, মুহাদ্দীসে আমরুহী রহমতুল্লাহি আলায়হির সযত্ন তত্তাবধানে সুসম্পন্ন হয়। এবং তাঁরই বরকতময় হাতে "সিলসিলায়ে চিশতীয়া চাবেরীয়া" এর বায়আত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সম্মানিত বড় ভাই সৈয়্যদ খলীল ছাহেব কাজেমী (রহঃ) তাকে খেলাফত দানে ধন্য করলেন।
আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর খেদমতঃ
----------------
ষোল বছর বয়সে আল্লামা শাহ সৈয়দ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী(রহঃ) শিক্ষা জীবনের সমাপনী সনদ অর্জন করলেন। অতঃপর দস্তারবন্দী উপলক্ষে আয়ােজিত আজিমুশশান জলসায় জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং আরেফে কামেল হযরত ছুদরুল আফাযিল সৈয়্যদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রহঃ) , হযরত মাওলানা মে'ওয়া ছাহেব রামপুরী (রহঃ), হযরত মাওলানা নেছার আহমদ ছাহেব কানপুরী এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ওলামা- মাশায়েখে আহলে সুন্নাত এর উপস্থিতিতে মহান অলীয়ে কামেল হযরত শাহ সূর্ফী আলী হুছাইন ছাহেব আশরফী কছুছভী রহমতুল্লাহি আলায়হি বরকতময় হাতে আল্লামা কাজেমী (রঃ) এর মাথায় দস্তারে ফজিলত বেঁধে দিলেন।
শিক্ষা সমাপনীর পর আল্লামা কাজেমী (রহঃ) লাহুর আগমন করে জামেয়া নূমানিয়ায় অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়ােজিত হলেন। এক পর্যায়ে একই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ আটাশটি পাঠের অধ্যাপনার দায়িত্ব তাঁর জিম্মায় সােফর্দ হলাে। ১৯৩১ সালে তিনি লাহুর থেকে নিজের জন্মস্থান আমরুহায় আগমন করে চার বছর পর্যন্ত মাদ্রাসায়ে মুহাম্মদীয়া হানফীয়ায় সম্মানিত বড় ভাই ও পীর মুহাদ্দীস খলীল ছাহেব কাজেমীর পৃষ্ঠপােষকতায় শিক্ষকতায় আত্মনিয়ােগ করলেন। ১৯৩৫ সালের প্রারম্ভে তিনি মূলতানে শুভাগমন করলেন। প্রাথমিক অবস্থায় নিজের বাসস্থানেই অধ্যয়ন-অধ্যাপনার কার্যক্রম শুরু করে দিলেন। কিছু দিন পর মূলতান শরীফের মধ্যভাগে ভূমি ক্রয় করে মাদ্রাসা আনওয়ারুর উলুম' প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে দিলেন।
আল্লামা কাজেমী (রহঃ) ভারত উপমহাদেশ বিভক্তি এবং মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও শুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে বেনারস কনফারেন্সে যােগদান করেছিলেন। যে যুগে কংগ্রেসী এবং আজাদী আন্দোলনের উলামারা জানবাজি করে পাকিস্তানের বিরােধিতা করছিল সে সময়ে খাজা ক্বমরুদ্দীন সিয়ালভী, পীর সৈয়্যদ জামাত আলী শাহ (রহঃ), মাওলানা আবুল হাছানাত, মাওলানা আবদুল হামেদ বদায়ূনী, মাওলানা আবদুল গফুর হাজারভী(রহঃ) প্রমুখের সঙ্গে আল্লামা কাজেমী (রহঃ) পৃথক জাতীয়তা এবং স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ধারাবাহিক সংগ্রামে ও লাগাতার কর্মসূচী পালনে নিয়ােজিত ছিলেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি নুতন অবস্থার পর্যবেক্ষনে দেখলেন- যারা এতােদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘাের বিরােধিতা করেছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির পর তারা মুসলিম লীগে যােগদান করে শাসক গােষ্ঠীর নজরে চোখের সুরমার ন্যায় গ্রহণযােগ্য হয়ে গেলেন। সে সময়ে আল্লামা কাজেমী (রহঃ) আহলে সুন্নাতের ঐক্য এবং সাংগঠনিক শক্তির প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করলেন যাতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের রাজনৈতিক অবস্থান ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়। মূলতানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক বিশাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে হযরত আল্লামা মাওলানা আবুল হাছানাত (রহঃ)কে সভাপতি, আল্লামা শাহ সৈয়দ আহমদ ছাঈদ কাজেমী (রহঃ) কে জেনারেল সেক্রেটারী করে "জমিয়তে উলামায়ে পকিস্তান নামে আহলে সুন্নাতের একটি সাংগঠনিক প্লাটফরম তৈরী করা হয়।আল্লামা কাজেমী (রহঃ) এর সুযােগ্য নেতৃত্বে "জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তানের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়।
দেশ ও মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়। যার মধ্যে "কাশ্মীর সংগ্রাম, সংবিধান রচনা, খতমে নবুওয়ত আন্দোলন, প্রচার-প্রসার, বন্যার্তদের সাহায্য ইত্যাদী উল্লেখ্যযােগ্য। এক কথায় প্রতিটি প্রয়ােজনীয় মূহুর্তে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় এই জমিয়ত।
২৫শে রমজান শরীফ ১৪০৬ হিঃ মুতাবেক ১৯৮৬ইং গাজ্জালিয়ে যমান আল্লামা শাহ সৈয়্যদ আহমদ কাজেমী (রহঃ) এই নশ্বর জগত ত্যাগ করে মাওলায়ে হাকীকীর একান্ত সান্নিধ্যে গমন করেন। (ইন্না লিল্লাহি, ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন) তার ইন্তেকালে সর্বস্তরের ছু্নী মুসলমান এবং মাজহাব-মিল্লাত অসহায়ত্বের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হন।
আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ ছায়ীদ কাজেমী (আল্লহ পাক তাঁর মর্যাদাকে বুলন্দ করুন) এর মহান সত্তা প্রকৃত পরিচয় প্রদানের মুখাপেক্ষী নন। যখনই তাঁর মহিমান্বিত নাম উল্লেখ করা হয় বড় বড় উপাধী-অভিধাগুলাে তাঁর আজীমুশশান ব্যক্তিত্বের মূল্যায়নে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বলে মনে হয়। নিঃসেন্দেহে তিনি যুগের "নাবেগা" ছিলেন- যারা শতাব্দীর পর পৃথিবী পৃষ্ঠে আবির্ভূত হন। তাঁর মহা মূল্যবান জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থগুলাে অধ্যয়ন করলে তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও মহান ব্যক্তিসত্তা দিবালােকের ন্যায় সকলের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। নিম্নে কতিপয় গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলাে- (১) তাছবীহর রহমান (২) মুযিলাতুন নিযা আন মাসআলাতিস সেমা (৩) তাছকীনুল খাওয়াতির (৪) হায়াতুন্নবী (দঃ) (৫) মি'রাজুন্নবী (দঃ) (৬) মীলাদুন্নবী (দঃ) (৭) তাকরীরে মুনীর (৮) ইসলাম এবং খৃষ্টবাদ (৯) তাহকীকে কুরবানী (১০) ইসলাম এবং সমাজতন্ত্র (১১) আল-হাক্কুল মুবীন (১২) মওদুদী দৰ্পন (১৩) কিতাবুত তারাবীহ (১৪) নাফযুজ জিল্লেওয়াল ফাইয়ে (১৫) আত্-তাবশীর বিরদ্দিত্ তাহজীর (১৬)
পবিত্র কুরআনে করীমের উর্দু অনুবাদ ইত্যাদী।
- মুহাম্মদ আলতাফ কাদেরী রজভী
শরীয়তের বিধান সম্পর্কিত পিটিশন
প্রসঙ্গঃ শানে রেছালতের অবমাননা
মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালত শরয়ী আদালত, পাকিস্তান।
পক্ষে-সৈয়্যদ আহমদ ছাঈদ কাজেমী
সভাপতি- কেন্দ্রীয় জামাতে আহলে সুন্নাত, পাকিস্তান ও শায়খুল হাদীছ মাদরাসায়ে আরাবিয়া ইসলামিয়া আনওয়ারুল উলুম, মুলতান জনাব মুহাম্মদ ইসমাঈল কুরাইশী, সিনিয়র এডভােকেট, সুপ্রীম কোর্ট, পাকিস্তান,
লাহাের বনাম গণতান্ত্রিক পাকিস্তান-পাকিস্তান দন্ডবিধি, দফা নম্বর ২৯৫ আলিফ এবং দফা নম্বর ২৯৮ আলিফ এর বিরুদ্ধে শরয়ী আদালতে এক আবেদন পেশ করেন। শানে রেছালত-নবুওয়ত এর অপমান-অবমাননা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের সঙ্গে ঐ আবেদনের যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে ঐকমত্য পােষন করি এবং শরীয়তের প্রমাণাদি অর্থাৎ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমায়ে উম্মৎ এবং ইমামগণের অভিমতের আলােকে উহাকে পূর্ণাঙ্গরূপে সমর্থন ও প্রমান করার প্রয়াস পাচ্ছি। নিম্নে উহার বিস্তারিত বর্নণা উপস্থাপিত হলাে।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মৎ এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমতের আলােকে সুম্পষ্টরূপে প্রমানিত হয় যে, রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর সাজা একমাত্র মৃত্যুদন্ড। রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রকাশ্যে বিরােধিতা করা তাঁর মহান শানে অবমাননার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড বলে ঘােষিত হয়েছে। এই অপরাধের কারণে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ذلك بانهم شأقوا الله ورسوله.
অর্থাৎ (কাফেরদেরকে হত্যা করার) হুকুম এজন্য দেয়া হয়েছে যে "নিশ্চয় তারাআল্লাহপাক এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচরণ করে অবমাননাকারী হিসেবে গন্য হলাে। আর পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা কুফরী।
যেমন এরশাদ হয়েছে,
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض ونلعب قل ابا الله وآياته ورسوله کنتم تستهزؤن - لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন তবে তারা অবশ্যই বলবে আমরা তাে শুধু ঠাটা -বিদ্রুপ করছিলাম। (ওহে রাসূল (দঃ) আপনি (তাদের উদ্দেশ্যে) বলুন- তােমরা কি আল্লাহ, তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা -বিদ্রুপ করছাে? তােমরা কোন ওযর-অজুহাত পেশ করাে না। নিশ্চয় তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছে।
মুসলিম হিসেবে পরিচয় দানের পর কুফরী কারী মুরতাদ" হিসেবে গন্য হয়। আর পবিত্র কুরআনের আলােকে মুরতাদ এর সাজা ক্বতল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লহ্ পাক এরশাদ করেন।
قل للمخلفين من الاعراب ستدعون إلى قوم اولی بأس شديد تقانلون أو يسلمون.
(ওহে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) আপনি (যুদ্ধে আপনার সঙ্গে বের না হয়ে) গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তােমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তােমরা তাদের সঙ্গে সঙ্গ যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। (সূরা ফাতহ, ১৬নং আয়াত)।
এই আয়াত খানা আরবের "ইয়ামামা" বাসী মুরতাদগণ প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎ বানী স্বরূপ অবতীর্ণ হয়। যদিও বা কোন কোন আলেম পারস্য, রােম ইত্যাদী দেশের অধিবাসীদের
প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতের আলােকে প্রমাণিত হয়- আয়াত খানা "ইয়ামামা" বাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগনের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ।
যেমন বর্ণিত আছে-
عن رافع بن خديج انا كنا نقرا هذه الاية فيما مضى ولانعلم من هم حتی دعا أبويكر رضى الله عنه إلى قتال بنی حنيفة فاعلمنا أنهم أريدوا بها.
তরজমাঃ হযরত রাফে বিন খদীজ (রঃ) বলেন- অতীতে আমরা এ আয়াতখানা তেলাওয়াত করতাম, কিন্তু আমরা অবগত ছিলাম না যে, এ আয়াতে বর্ণিত লােকগুলাে কারা? অবশেষে যখন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) আরবের ইয়ামামাবাসী বনু হানীফা গােত্রের মুরতাদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুসলমানদেরকে আহবান জানালেন তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, আয়াত খানা তাদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।
এই রেওয়াতের আলােকে প্রমানিত হলাে যে, যদি মুরতাদ ইসলাম গ্রহন না করে তবে পবিত্র কুরআনের ফয়সালানুযায়ী তার সাজা হলাে একমাত্র ক্বতল। কুরআনে করীমের এই রায়ের সপক্ষে অসংখ্য হাদীসে নববী বর্ণিত হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় শুধু একটি হাদীসে রাসূল (দঃ) নিম্নে উদ্ধৃত হলাে-
آتی على بزنادقة فاحرقهم )وفي رواية ابی داؤد ان عليا احرق ناسا ارتدوا عن الاسلام( فبلغ ذلك این عباس فقال لوكنت انا لم احرتهم لنهى رسول الله صلی ال له عليه وسلم: لا تعذبوا بعذاب الله ولقتلتهم لقول رسول الله صلی الله عليه وسلم: من بدل دينه فاقتلوه.
তরজমাঃ আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযেরত আলী (রঃ) এর নিকট ধর্মত্যাগী "যিন্দিক" উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের জ্বালিয়ে ফেললেন ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এর রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, হযরত শেরে খােদা আলী মুরতজা (রঃ) একদল ইসলাম ত্যাগী মুরতাদ কে জ্বালিয়ে ফেললেন।) এ সংবাদ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন-যদি হযরত আলী (রঃ) এর স্থলে আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতাম তবে আমি তাদের প্রজ্বলিত করতাম না। কেননা, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, তােমরা আল্লাহর সাজা (অর্থাৎ আগুন) প্রয়াগ করে কাউকে সাজা দিও না। তবে আমি অবশ্যই তাদের ক্বতল করে দিতাম। কেননা, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এরশাদ করেছেন- যেই মুসলমান নিজের ধর্ম পরিবর্তন করবে তােমরা তাকে ক্বতল করাে।
মুরতাদ এর সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর রায়ঃ
আমিরুল মুমেনীন সাইয়ােদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রঃ) খেলাফতের মসনদে আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অত্যন্ত কঠোর ভাবে মুরতাদগণকে ক্বতল করে দিয়েছিলেন তা আজ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মুরতাদগণকে জীবিতাবস্থায় দেখা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) এর নিকট অসহ্যকর ছিল। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এবং হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে আরবের ইয়ামন প্রদেশের পৃথক দুই অঞ্চলে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। একদা হযরত মুয়াজ ইবনে জবল (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে বন্দী অবস্থায় এক ব্যক্তি কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-এ লােকটি কে? জবাবে হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) বললেন-
كان يهوديا فاسلم ثم تهود قال اجلس قال لاأجلس حتى يقتل قضاء الله ورسوله ثلاث مرات فامر به فقتل.
অর্থাৎ লােকটি ইয়াহুদী ছিল পরবর্তীতে মুসলমান হওয়ার পর আবার ইয়াহুদী হয়ে মুরতাদ হয়ে গেলাে। সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) সাইয়্যেদুনা হযরত মুয়াজ বিন জবল (রঃ) কে বসার জন্য অনুরােধ জানালে তিনি তিন দফায় বলে উঠলেন-যতক্ষন পর্যন্ত এই মুরতাদ কে ক্বতল করা হবেনা ততক্ষন আমি বসতে পারিনা। আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (দঃ) এর ফয়সালানুযায়ী মুরতাদ এর একমাত্র সাজা হলাে ক্বতল। অতঃপর সাইয়্যেদুনা হযরত আবু মুছা আশআরী (রঃ) এর আদেশে ঐ মুরতাদ কে ক্বতল করা হয়।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম) অবমাননা কারীর সাজা ক্বতলঃ
----------------------
রাসূলে করীম রউফুর রহীম আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম তাঁর শানে অবমাননাকারী মুরতাদকে খানায়ে কাবার পূত পবিত্র ও মহিমান্বিত গিলাফের নীচে আশ্রয় গ্রহন করা অবস্থায় মসজিদে হারামেই ক্বতল করার হুকুম দিয়েছিলেন। যেমন প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল হযরত আনাস বিন মালিক (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম মক্কা শরীফে বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোন এক ব্যক্তি এসে আরজ করলেন - ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ), আপনার শানে অবমাননাকারী ইবনে খতল খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আল্লাহর রাসূল (দঃ) হুকুম দিলেন- তাকে সেখানেই ক্বতল করাে।
এই আবদুল্লাহ্ বিন খতল মুরতাদ ছিল। মুরতাদ হওয়ার পর সে কিছু লােককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-
অবমাননা সম্বলিত কবিতা লিখে প্রচার করেছে। সে দু'জন গায়িকা এ উদ্দেশ্যেই রিজার্ভ করে রেখেছিল যে তারা রাসূলে পাক (দঃ) এর অপমান-অবমাননা সম্বলিত কবিতা গেয়ে বেড়াবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন তাকে হত্যার আদেশ দিলেন তাকে খানায়ে কাবার পবিত্র গিলাফ জড়িয়ে ধরার অবস্থা হতে বের করে এনে মকামে ইব্রাহীম এবং জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে শিরচ্ছেদ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মক্কা মুকাররমা বিজয়ের দিবসে রসূলে করীম (দঃ) এর জন্য হারমে মক্কায় হত্যা এক ঘন্টার জন্য হালাল করা হয়েছিল। তবে বিশেষ করে মসজিদে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে মকামে ইব্রাহীম এবং পবিত্র জমজম কূপের মধ্যবর্তী স্থানে ইবনে খতল মকে হত্যা করা এ বিষয়ের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারী মুরতাদ,অন্যান্য মুরতাদগনের চেয়ে জগন্যতম ও অধিকতর নিকৃষ্ট।
উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা বা ঐকমত্য
---------------
প্রথমঃ
قال محمد بن سحنون أجمع العلماء ان شاتم النبی صلى الله عليه وسلم والمتنقص له كافر والوعید جار عليه بعذاب الله له وحكمه عند الأمة القتل ومن شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ বিন ছাহনুন (রঃ) বলেন- উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ওলামাগণের ইজমা তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলাে যে রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর শানে গালি-গালাজকারী এবং অপমান-অবমাননাকারী কাফের এবং তার উপর খােদায়ী আযাব এর হুমকি বহাল রয়েছে। সকল উম্মতের নিকট এই ব্যক্তির সাজা হলাে ক্বতল। যে ব্যক্তি তার কুফরী এবং আযাবের বিষয়ে সন্দেহ পােষন করবে সেও কাফের।
দ্বিতীয়ঃ
وقال ابوسلیمان الخطابی لا اعلم احدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله اذا كان مسلما،
অর্থাৎ ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবী (রঃ) বলেন- যখন কোন মুসলিম পরিচয় দানকারী ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করবে আমার জানামত এমন কোন মুসলমান নেই যে তার সাজা ক্বতল হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য করবে। (অর্থাৎ সবাই তার ক্বতল এর ব্যাপারে ঐকমত্য পােষন করবে।)
তৃতীয়ঃ
واجمعت الامة على قتل متنقصه صلى الله عليه وسلم من المسلمين وسابه
অর্থাৎ মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি যদি রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি গালাজ বা অবমাননা করে তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার
বিষয়ে সকল উম্মৎ একমত।
চতুর্থঃ
قال ابویکر این المنذر اجمع عوام اهل العلم على أن من سب النبي صلى الله عليه وسلم يقتل قال ذلك الامام مالك بن انس والليث واحمد واسحاق وهو مذهب الشافعى قال القاضی ابوالفضل وهو منتضی قول أبي بكر الصديق رضي الله عنه لاتقبل توبته عند هؤلاء ويمثله قال أبوحنيفة واصحابه والثوری واهل الكوفة والأرزاعي في المسلمين لكنهم قالوا هي ردة.
অর্থাৎ ইমাম আবু বকর ইবনুল মুনযির বর্ণনা করেন- সকল উলামায়ে ইসলামের ইজমা বা ঐকমত্য হলাে যে ব্যক্তি নবী করীম (দঃ) এর শানে গালি-গালাজ করবে তাকে ক্বতল করা হবে। আর এই ইজমা বা ঐকমত্য পােষনকারীদের মধ্যে হযরত ইমাম মালেক বিন আনাছ (রঃ), ইমাম লাইছ (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং ইমাম ইছহাক (রঃ) হলেন- অন্যতম। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এর মজহাব ও এ বিষয়ে একমত। ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) বলেন- আমিরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রঃ) এর ফরমানের দাবী ও এটা। (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজকারীর সাজা ক্বতল হওয়া)। উপরােক্ত ইমামগনের মতে ঐ ব্যক্তির তাওবাও কবুল হবে না। ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ)তাঁর শিষ্যত্ববরনকারী ইমামগণ, ইমাম ছৌরী (রঃ) কুফার অন্যান্য ইমাম এবং ইমাম আউযায়ী (রঃ) এর অভিমত ও উপরােক্ত ইমামগণের সিদ্ধান্তের অনুরূপ । তাঁদের মতে এটা (অর্থাৎ নবীর শানে গালি-গালাজ বা অবমাননা করা) "রিদ্দত" তথা ধর্ম ত্যাগ করার নামান্তর।
পঞ্চমঃ
أن جميع من سب النبی صلى الله عليه وسلم او عابه او الحق به نقصا في نفسه او نسبه او دينه او خصلة من خصاله او عرض به او شبه ه بشيئ على طريق السب له أو الازراء عليه او التصغبر بشانه او الغض منه والعيب له فهو ساب له والحكم فيه حكم الساب يقتل كما نبينه ولانستثنی فصلا من
فصول هذا الباب على هذا المقصد ولانمترى فيه تصریحا كان او تلويحا وهذا كله اجماع من العلماء وائمة الفتوى من لدن الصحابة رضوان الله عليهم الى هلم زراء
অর্থাৎ যারা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি-গালাজ করবে, দোষারােপ করবে, হুজুর (দঃ) এর পূত-পবিত্র মহান সত্ত্বা, বংশ, দ্বীন অথবা কোন চরিত্রের প্রতি দোষ-ক্রুটি আরােপ করবে কিংবা বিরূপ সমলােচনা করবে অথবা যারা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায়ে বা রাসূলের মহান সত্ত্বার প্রতি কোন প্রকার দোষ-ক্রুটি আরােপ করার অসদুদ্দেশ্যে হুজুর আকরম (দঃ) কে কোন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে তারা প্রকাশ্যে গালি- গালাজকারী হিসেবে গন্য হবে। আর তাদের হত্যা করাই হবে একমাত্র সাজা।
আমরা এই হুকুম কার্যকরী করার ক্ষেত্রের কোন প্রকার রদ-বদল করবােনা বা এ হুকুম এর বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ পােষন করিনা। প্রকাশ্য অবমাননা হউক কিংবা
অপ্রকাশ্য ইঙ্গিতমূলক উভয়ের হুকুম একই। আর এটা ছাহাবায়ে কেরাম (রঃ) থেকে অদ্যাবধি উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর সকল উলামায়ে কেরাম, মুজতাহিদগণ এবং ফতওয়া প্রদানকারী ইমামগণের সর্বসম্মত ফত্ওয়া।
যষ্ঠঃ
والحاصل انه لاشك ولاشبهة في كفر شاتم النبی صلى الله عليه وسلم وفی استباحة قتله وهو المنقول عن الأئمة الأريعة.
অর্থাৎ সার বক্তব্য হলাে এই যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালিগালাজকারী কাফের হওয়া এবং তার সাজা একমাত্র ক্বতল হওয়ার বিষয়ে কোন রূপ সংশয় সন্দেহ নেই। আর এই ফতওয়া চারি মজহাবের ইমাম গণ তথা ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) ইমাম মালেক বিন আনাস (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত সর্বসম্মত ফতওয়া।
সপ্তমঃ
كل من أبغض رسول الله صلى الله عليه وسلم بقليه كان مرتدا فالساب بطريق أولى ثم يقتل حدا عندنا.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি মনে মনে বিদ্বেষভাব পােষন করবে সে মুরতাদ। অতএব প্রকাশ্যে গালি-গালাজকারী আরাে বহুগুন বেশী মুরতাদ হবে। ফলে তাকে হত্যা করা হবে শরিয়ত সম্মত সাজা আমাদের মতে।
অষ্টমঃ
ایما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم او کذبه او عابه او تنقصه فقد كفر با الله ويانت منه زوجته.
অর্থাৎ যে মুসলিম রাসূলে আকরম (দঃ)এর প্রতি গালি-গালাজ করবে বা মিথ্যা আরােপ করবে বা দোষারােপ করবে অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে সর্বাবস্থায় সে যেন আল্লাহর সাথে কুফরী করলাে। অতঃপর তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেলাে।
নবমঃ
اذا عاب الرجل النبي صلى الله عليه وسلم في شيئ كان كافرا وكذا قال بعض العلماء لو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم شعیر فقد كفر وعن ابی حفص الكبير من عاب النبی صلی الله عليه وسلم بشعرة من شعراته الكرية فقد كفر وذكر في الاصل أن شتم النبی کفر.
অর্থাৎ রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কোন বৈশিষ্ট বা বিষয়ে যদি দোষারােপ করে তাহলে সে কাফের হিসেবে গন্য হবে। এভাবে কতিপয় ইমাম বর্ণনা করেছেন- যদি কোন ব্যক্তি রাসূলে পাক (দঃ) এর পবিত্র চুল মুবারককে তাছগীর" তথা ক্ষুদ্র জ্ঞাপক শব্দে "শুআয়রুন" অর্থাৎ ছােট চুল হিসেবে বর্ণনা করে তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে কাফের হয়ে যাবে। হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হাফছ আল- কবীর (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি নবীয়ে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের একটি পবিত্র চুল মুবারকের প্রতিও দোষারােপ করে তবে তৎক্ষনাত কাফের হয়ে যাবে। ইমামে আজম আবু হানীফা (রঃ) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) তাঁর রচিত গ্রন্থ "মাবছুত" এ বর্ণনা করেন যে, রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে গালি দেয়া কুফরী।
দশমঃ
ولاخلاف بين المسلمين أن من قصد النبي صلى الله عليه وسلم بذلك فهو من ينتحل الاسلام انه مرتد يستحق القتل.
অর্থাৎ কোন নামধারী মুসলিম যদি রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লাম এর শানে অপমান-অবমাননা করার কিংবা রাসূল (দঃ) কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য করে সে সঙ্গে সঙ্গে মুরতাদ এবং ক্বতল হওয়ার যােগ্য বলে গন্য হবে। এ মাসআলায় মুসলিম মিল্লাতের ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে কোন প্রকার মতানৈক্য নেই।
আমাদের উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, পবিত্র কুরআন, হাদীছে রাসূল (দঃ) উম্মতে মুহাম্মদী (দঃ) এর ইজমা এবং শরিয়তের ইমামগণের অভিমত অনুযায়ী নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্বতল করাই হলাে একমাত্র সাজা। এরপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলাে স্পষ্টভাবে অবগত হওয়া অপরিহার্য।
যথাঃ (১) নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান- অবমাননা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকে দন্ডযােগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্থ করার জন্য এই শর্তারােপ করা শুদ্ধ হবে না-"অপমান-অবমানকারী মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে অবমাননা করেছে।" এমন হতে হবে। কেননা এহেন শর্তারােপ নবীর শানে অবমাননাকারীদের রক্ষা করার নামান্তর হবে। শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার দ্বার চিরতরে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এর প্রেক্ষিতে প্রত্যেক নবীর শানে
অবমাননাকারী ব্যক্তি সাজা ভােগ করা হতে এই বলে পার পেয়ে যাবে যে ধর্মীয় জজবা উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে আমি এটা করি নাই। তাছাড়া এহেন শর্ত আল্লাহর কুরআনের ও পরিপন্থী। যেমন সূরা তাওবার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শানে রেছালতে অবমাননাকারী মুনাফিকদের এই অজুহাত "আমরা তা পরস্পরের মধ্যে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। শানে রেছালতের অবমাননা করা আমাদের লক্ষ্য নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।" মহান আল্লাহ্ পাক প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন এবং স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন- মুসলমানদের
لاتعتذروا قد كفرتم بعد ايمانکم
অর্থাৎ তােমরা অযুহাত পেশ করাে না অবশ্য তােমরা ঈমান আনয়নের পর কুফরী করেছো।
(দুই) প্রকাশ্য অপমান- অবমাননা করার ক্ষেত্রে নিয়তের মূল্যায়ন প্রয়ােজন হয় না। রায়েনা" বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের পরও যদি কোন ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) অপমান-অবমাননার উদ্দেশ্য না করে রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের
শানে "রায়েনা" উচ্চারণ করতেন তাহলে আল্লাহ্র বাণী-
واسمعوا وللكافرین عذاب اليم
অনুযায়ী কুরআনী সাজার উপযুক্ত বলে গন্য হতেন। আর ইহা এ কথার প্রমাণ বহন করে-শানে রেছালাতে অবমাননার উদ্দেশ্য না করেও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা কুফরী।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম শিহাবউদ্দীন খিফাযী (রঃ) বর্ণনা করেন-
المدار في الحكم بالكفر على الظواهر ولانظر للمقصود والنيات ولانظر لقرائ ن حاله
অর্থাৎ শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার কারণে কুফরী হুকুম প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্য অবমাননাকর শব্দমালার উপর নির্ভর করে। অবমাননাকারীর উদ্দেশ্য, নিয়্যত কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থাবলীর প্রতি নজর করার আবশ্যকতা নেই। নতুবা শানে রেছালতে অপমান-অবমাননার দরওয়াজা কখনাে বন্ধ হবে না। কেননা, প্রত্যেক অবমাননাকারী এই বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাইবে যে, অপমান-অবমাননা করা আমার নিয়্যত বা উদ্দেশ্য ছিল না। অতএব এই বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে পড়লাে যে, শানে রেছালতে অপমান-অবমাননাকারীর নিয়্ত কিংবা উদ্দেশ্যের যাতে মূল্যায়ন করা না হয় কুফরীর হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে।
(৩) এখানে এই সন্দেহটি নিরসন হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে যে, "যদি কোন মুসলমানের বক্তব্যে নিরানব্বই ভাগ কুফরীর দিক এবং শুধু এক ভাগই ইসলামের দিক এর সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয় তখন ফকীহগনের অভিমত হলাে তাকে কুফরীর ফত্ওয়া দেয়া যাবে না।"
ফকীহগনের উপরােক্ত অভিমতের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে এভাবে যে, কোন মুসলমানের বক্তব্যে যদি নিরানব্বই ভাগ কুফরলীর সম্ভাবনা থাকে এবং প্রকাশ্য কুফরী মূলক শব্দ বা বাক্য না থাকে তখন ফকীহগনের উপরােক্ত হুকুম কিন্তু যেবক্তব্য প্রকাশ্যরূপে অবমাননাকর সেখানে কোনরূপ "তাভীল" তথা ব্যাখ্যা -বিশ্লেষন করা বৈধ নয়। কারণ , প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দে "তাভীল" বা ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্য নয়।
ইমাম কাজী আবুল ফজল আয়াজ মালেকী (রঃ) বর্ণনা করেন -
قال حبيب ابن الريبيع لأن ادعاء التاويل في لفط صريح لايقبل.
অর্থাৎ হাবীব বিন রবী (রঃ) বলেন- প্রকাশ্য অর্থবােধক শব্দমালায় তাভীল" তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লোষন করার দাবী গ্রহনযােগ্য নয়।
কোন বক্তব্য প্রকাশ্য অবমাননাকর হওয়াটা নির্ভর করে সমাজ এবং পরিভাষাগত ব্যবহারের উপর। উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাই যে, যদি কোন ব্যক্তিকে ওয়ালাদুল
হারাম" বা হারামজাদা বলে আখ্যায়িত করা হয় আর পরবর্তীতে "হারাম" শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে, আমি "হারাম" শব্দটিকে "আল মসজিদুল হারাম" ও "বাইতুল হারাম"এ ব্যবহৃত "হারাম" এর ন্যায় সম্মানিত ও মহিমান্বিত অর্থে বলেছি।
এ ব্যাখ্যা কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে আদৌ গ্রহণযােগ্য হতে পারে না। কেননা সামাজিক পরিভাষায় ওয়ালাদুল হারাম" শব্দটা গালি এবং অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বক্তব্য-যেখানে সামাজিক পরিভাষাগত অর্থে
অপমান-অবমাননার অর্থ পাওয়া যায় সেটা অবমাননাকর বক্তব্য হিসাবে স্বীকৃত হবে যদিও বা হাজার "তাভীল" ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হউক না কেন। কেননা সামাজিক পরিভাষাগত অর্থের বরখেলাপ কোন ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্যা নয়।
(চার) এখানে এই সন্দেহের ও অপনােদন হওয়া অপরিহার্য মনে করছি যে, যদি রাসূলে করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ছাল্লামের শানে অবমাননা করার সাজা ক্বতল হয়ে থাকে তবে কতিপয় মুনাফিক রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে স্পষ্ট অপমান-অবমাননা করতাে। এমন কি কোন কোন সময় ছাহাবায়ে কেরম (রঃ) আরজ করতেন- ওহে আল্লাহর রাসূল (দঃ)। আমাদের অনুমতি দিন যে আমরা এ সকল
অবমাননাকারী মুনাফিকদের ক্বতল করে দেবাে। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (দঃ) তাদের অনুমতি দেন নাই।
উপরােক্ত বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট সন্দেহের অপনােদনকল্পে ইবনে তাইমিয়া বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন। যার সারাংশ হলাে এই যে, (ক) সে সময়ে ঐ সকল মুনাফিকদের উপর সাজা কার্যকরী করা ব্যাপক ফিতনা- ফ্যাসাদের কারণ ছিল। তাই তাদের অবমাননাকর বক্তব্যে ছবর করা ফিতনা-ফ্যাসাদ এর মােকাবিলার চেয়ে সহজতর বিবেচিত হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয় নাই।
(খ) মুনাফিকরা প্রকাশ্য ভাবে শানে রেছালতে অবমাননা করতাে না। বরং পরস্পরের মধ্যে অতি গােপনে শানে রেছালতে অপমানজনক কথােপকথন করতাে।
(গ) ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে রাসূলে পাক (দঃ) এর শানে অবমাননাকারী মুনাফিকদের হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা এ কথার প্রমান বহন করে যে, ছাহাবায়ে
কেরাম অবগত ছিলেন-রাসূল (দঃ) এর শানে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল। কেননা, নবী করীম রউফুর রহীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং শানে রেছালতে অবমাননাকারী আবু রাফে ইয়াহুদী এবং কাব বিন আশরফ কে হত্যা করার নির্দেশ জারি করেছিলেন। এ আদেশ জারীর কারণে ছাহাবায়ে রাসূল (দঃ) জানতেন যে,শানে রেছালতে অবমাননাকারীর সাজা ক্বতল বৈ আর কিছু নয়।
(পাঁচ) রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বৈধ ছিল যে, তিনি তাঁর শানে অবমাননাকারী কিংবা তাকে কষ্টদানকারীকে জাগতিক হায়াতে থাকাবস্থায় ক্ষমা করবেন। কিন্তু উম্মতের জন্য এটা বৈধ নয় যে, রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীকে ক্ষমা করে দিবে। রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং
অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মহান আল্লাহর এই আদেশকে অনুসরণ করেছেন- "আপনি ক্ষমাশীলতার বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করুন, অজ্ঞ-মূর্খদের এড়িয়ে চলুন এবং সৎ কর্মের আদেশ দান করুন।" (সূরা আরাফ ১৯৯ নং আয়াত)।
আমি আরজ করতে চাই যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননাকারীর উপর ক্বতলের সাজা কার্যকরী করা স্বয়ং রাসূল (দঃ) এর হক। যদিওবা রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অপমান-অবমাননাকর আচরণ করা উম্মতের জন্য ও ভীষন কষ্টদায়ক ব্যাপার এবং একারণে এহেন অবমাননা কারীর উপর সাজা প্রয়ােগ করা উম্মতের হক ও বটে। তবে এটা সরাসরি নহে। বরং রাসূলে আকরম (দঃ) এর পবিত্র মহান সত্বার মাধ্যমে। আল্লাহপাক হজুর (দঃ) কে এ ধরনের এখতিয়ার দান করেছেন যে, তিনি নিজস্ব হক কারাে জন্য মাফ করে দিবেন।
যেমন শরিয়তের অন্যান্য বিধান এর ক্ষেত্রে দলীল সহকারে প্রমাণিত আছে যে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঐ সকল বিধি-বিধানের বিষয়ে রাসূল পাক (দঃ) কে এখতিয়ার দান করেছেন। প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসূল (দঃ) হযরত বারা বিন আযেব (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে খােদা ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত আবুদ্দারদা (রঃ) কে একটি ছাগল ছানা কুরবানী করার হুকুম দিয়ে বললেন-
ولن تجزي عن أحد بعدك
অর্থাৎ এই কুরবানী তুমি বিনে অন্য কারাে জন্য কখনাে বৈধ হবে না। এভাবে প্রখ্যাত ছাহাবীয়ে রসূল হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হারাম শরীফের ঘাস কর্তন করাকে হারাম ঘােষনা করলেন-তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) আরজ করলেন-"ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ওহে আল্লাহ রাসূল (দঃ), ইজখার নামী ঘাস কে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখুন। জবাবে আল্লাহর হাবীব (দঃ) এরশাদ করলেন "ইল্লাল ইজখার" অর্থাৎ ইজখার নামী ঘাসকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। এটা কর্তন করা তােমাদের জন্য জায়েজ।
এই হাদীছে রাসূল (দঃ) এর ব্যাখ্যায় শেখে মুহাককিক হযরত আবদুল হক মুহাদ্দীছে দেহলভী (রঃ) এবং নওয়াব ছিদ্দীক হাছান খান ভূপালী লিপিবদ্ধ করছেন-
ودرمذهب بعضے آن است که احکام مفوض بود بو صلى الله عليه وسلم هرچه خواهد ویر هرکه خواهد حلال وحرام گرداند وبعضے گویند با اجتهاد گفت واول اصح واظهر است.
অর্থাৎ কতিপয় ইমামগনের মাজহাব হলাে যে, শরিয়তের বিধি-বিধান প্রবর্তন রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-রে জিম্মায় সােপর্দ করা হয়েছে। তিনি যার জন্য যা কিছু চান হারাম-হালাল করতে পারেন।
কেউ কেউ বলেন-রাসূলে পাক (দঃ) এটা ইজতিহাদ বা গবেষনার মাধ্যমে করেছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত ইখতিয়ার এর মাধ্যমে নয়। উভয় মাজহাবের মধ্যে প্রথম মাজহাব টি অধিকতর বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট।
উপরােক্ত হাদীছে রাসূল (দঃ) এর আলােকে প্রমানিত হয় যে রাসূলে পাক (দঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এখতিয়ারের অধিকারী যার প্রেক্ষিতে তিনি কোনরূপ
হিকমত কিংবা কল্যান এর প্রত্যাশায় ঐ সকল মুনাফিকদের উপর ক্বতল এর সাজা কার্যকরী করেন নাই। তবে হুজুরে আকরম (দঃ) এর পরে অন্য কারাে জন্য এ এখতিয়ার বাকী নাই যে, তিনি ও ক্বতল এর সাজা প্রয়ােগে গড়িমসি করবেন।
পরিশেষে আরজ করতে চাই যে, শানে রেছালতের অপমান-অবমাননার সাজা ঐ ব্যক্তির উপর কার্যকরী হবে যার পক্ষ থেকে এই অপরাধ সংগঠিত হওয়াটা দৃঢ়তার সাথে অকাট্ট্যরূপে প্রমানিত হয়। এছাড়া অন্য কাউকে এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্থ করে ক্বতল করা কখনাে বৈধ হবে না। খবরে মুতাওয়াতির বা ব্যাপক এবং ধারাবাহিক সাক্ষ্য প্রমান ভিত্তিক সংবাদ এ বিষয়ে অকাট্য দলীল হিসেবে গন্য হবে। তাছাড়া কোন ব্যক্তি যদি অবমাননাকর স্পষ্ট অর্থবােধক কথা
বলে কিংবা লিপিবদ্ধ করে অতঃপর স্বীকারােক্তি করে যে, এই অবমাননাকর কথা আমি বলেছি বা লিপিবদ্ধ করেছি তবে ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে। পরবর্তীতে যতই বাহানা বা কৌশল অবলম্বন করুক না কেন বা বলাবলী করুক যে, অবমাননা করা আমার নিয়্যতের মধ্যে ছিল না। অথবা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা-সেন্টিমেন্টে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। যত কিছুই বলুক না কেন, সর্বাবস্থায় তাকে ক্বতল করা ওয়াজীব হবে।
যারা রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে স্পষ্ট অবমাননাকর বক্তব্যের তাভীল" বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অবমাননাকারীকে রক্ষা করতে তৎপর হয় তারাও সমান ভাবে অবমাননাকারীর ন্যায় ক্বতলযােগ্য অপরাধী। রাসূলের শানে গালি-গালাজকারীর সাজা প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাহনুন (রঃ) এর অভিমত ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রঃ) রচিত শেফা শরীফ এবং আছ-ছারেমুল মাসলুল এর বরাতে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি-
من شك في كفره وعذابه كفر.
অর্থাৎ যারা শানে রেছালতে অবমাননাকরীর কুফরী এবং সাজা প্রসঙ্গে সন্দেহ পােষন করবে তারাও কাফের।
ইমাম ছাইয়্যেদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (রঃ)
২৫শে নডেম্বর, ১৯৮৫ ইং
"ঈমান " প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী রদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্যঃ
--------------------
তােমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-
يحلفون با الله ماقالوا - ولقد قالوا كلمة الكفر وكفروا بعد اسلامهم
তরজমাঃ তারা (অর্থাৎ মুনাফিকরা) আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, নবীর শানে অবমাননা করে নাই। আর (আল্লাহ্ পাক বলেন) নিশ্চয় তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং মুসলমান হওয়ার পর কাফের হয়ে গেছে। (সূরা তাওবা, ১৬ নং রুকু)।
ইমাম ইবনে জরীর, তবরানী, আবুশ শেখ এবং ইবনে মারদুয়া মুফাসসীরকুল সরদার সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলে আকরম নূরে মুজাসসাম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একদা এক বৃক্ষের ছায়ায় অবস্থানরত ছিলেন। রাসূল (দঃ) এরশাদ করলেন- অতিসত্বর এমন এক ব্যক্তির আগমন হবে যে ব্যক্তি তােমাদেরকে শয়তানের দৃষ্টিতে দেখবে। যদি সে আসে তবে তােমরা তার সঙ্গে কথা বলবে না। অল্প কিছুক্ষণ পর ছােট চোখ বিশিষ্ট এক লােক আমাদের সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাে। রাসূলে আকরাম (দঃ) তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি এবং তােমার সঙ্গী কোন বিষয়ে আমার শানে অবমাননাকর কথা বলছাে? সে লােকটি গিয়ে তার সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে এলাে। অতঃপর সবাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে লাগলাে- আমরা হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম শানে অবমাননাকর কোন বাক্য উচ্চারন করিনি। তখনই আল্লাহ্ পাক এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন- আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, তারা অবমাননা করে নাই। অথচ অবশ্য তারা (রাসূলের শানে) কুফরী বাক্য বলেছে এবং রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে অবমাননা করে মুসলমান হওয়ার পর কাফের হযে গেছে। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, আল্লাহ্ পাক স্বয়ং সাক্ষ্য দিচ্ছেন-নবীর শানে অবমাননাকর শব্দ বা বাক্য কুফরী এবং এই অবমাননাকারী শত-সহস্র বার মুসলমানীর দাবী কিংবা কলেমা পাঠ করলেও সে তৎক্ষনাৎ কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ পাক আরাে এরশাদ করেন-
ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض وتلعب - قل ابا الله واياته ورسوله کنتم تستهزؤن لاتعتذروا قدكفرتم بعد ايمانکم.
তরজমাঃ আর যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন তাদেরকে অবশ্যই তারা বলবে আমরা তাে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছি মাত্র। (ও হে রাসূল (দঃ)! আপনি তাদের বলুন- তােমরা কি আল্লাহপাক তাঁর কুদরতের নিদর্শনাবলী এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছাে। কোনরুপ উযর-অজুহাত পেশ করাে না। তােমরা ঈমান আনয়নের পর কাফের হয়ে গেছো।
ইমাম ইবনে আবি শাইবা (রঃ), ইবনে জরীর (রঃ), ইবনুল মুনাযির (রঃ) , ইবনে আবী হাতেম (রঃ), ইমাম আবুশ শেখ (রঃ) এবং ইমাম মুজাহিদ (রঃ) মুফাসসিরকুল শিরমনী হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে-
انه قال في قوله تعالی ولئن سألتهم ليقولن انما كنا نخوض وتلعب قال رجل من المنافقين يحدكنا محمد ان ناقة فلان بوادي كذا واما يدريه بالغيب
অর্থাৎ কোন এক ব্যক্তির উষ্ট্রী হারিয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তা তালাশ করা হচ্ছিল। রাসূলে আকরম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলের অমুক স্থানে আছে। তখন এক মুনাফিক মন্তব্য করে বসলাে- মুহাম্মদ (দঃ) কি গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান জানেনঃ তখনই আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন- "আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা করছো? তবে কোন অজুহাত পেশ করােনা তােমরা মুসলমানীর দাবীদার হয়েও শানে রেছালতে এহেন অবমাননাকর শব্দ উচ্চারণ করার কারণে কাফের হয়ে গেছে।
(তাফসীরে ইবনে জরীর, দশম খন্ড, ১০৫ পৃঃ, তাফসীর দুররে মনছুর তৃতীয় খন্ড ২৫৪ পৃঃ)
মুমিনগণ!
লক্ষ্য করুন, রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে এতটুকু অবমাননাকর শব্দ- মুহাম্মদ (দঃ) কি "গায়ব" জানেনঃশত-সহস্র বারের কলেমা পাঠ কিংবা ইবাদত-রেয়াজত কোন কাজে আসে নাই। বরং আল্লাহ পাক সাফ জানিয়ে দিলেন- কোন অজুহাত গ্রহনযােগ্য নয় তােমরা মুসলমান হওয়ার পর কাফের হয়ে গেছে।
- সমাপ্ত -
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন