(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
------------------
(ছ) হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শরীয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। তাই তিনি এক চোরের বাম হাত কেটে দিয়েছিলেন।
শিয়াদের এই অভিযোগ মিথ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সাহচর্য্য পেয়েছিলেন হযরত আবু বকর ও হযরত আলী। পূর্ণ ২৩ বৎসর তাঁরা উভয়েই ছায়ার মতো নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সাথে ছিলেন। এ জন্যই বাতিনী ইলমের ৪টি তরিকার মধ্যে কাদিরিয়া ও চিশতিয়া দুটি তরিকার উৎসমূল হলেন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া তরিকার উৎসমূল। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তৃতীয়বার চুরির অপরাধে বাম হাত কেটে ছিলেন। এটাই শরীয়তের বিধান। সুতরাং কম ইলমের অপবাদ আদৌ সত্য নয়।
(জ) শিয়াদের মতে: হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনজনই ছিলেন মুনাফিক - প্রকৃত মুসলমান নন। (নাউযুবিল্লাহ)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত - এর মতে এই জঘন্য অপবাদদাতা শিয়ারা ইসলাম ও নবীর দুশমন। শিয়াদের মতেই - ইমাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজে তিনজন খলিফার যুগে তাদের উজির সভার সদস্য ছিলেন এবং তাঁদের পিছনে নামাযও পড়েছিলেন। তাছাড়া যদি তাঁরা ঐ রকমই হতেন - তাহলে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিশ্চয় তাঁদের উযির হতেন না এবং তাঁদের পিছনে নামাযও পড়তেন না। শিয়াদের এই বিশেষ সাহাবী দুশমনি বর্তমানেও কোন কোন মুসলমানের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা শিয়া প্রভাবেরই ফল। হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে মুনাফিক বলা হারাম। (ইরফানে শরিয়ত)
(ঝ) শিয়াদের মতে: ”যেকোন ভাল কাজ করার পূর্বে বিসমিল্লাহর পরিবর্তে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে অভিসম্পাত করা অধিক উত্তম”।
আল্লাহ যেসব সাহাবীদের শানে ”রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু” বলেছেন - সেই সাহাবীগণের শীর্ষস্থানীয় দুজনকে শিয়াদের লানত করা বা অভিসম্পাত করা দ্বীন ও ঈমানের পরিপন্থী কাজ।
একটি কারামতি ঘটনা:
তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে: ইমাম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যুগে তাঁরই প্রতিবেশী জনৈক রাফিজীর (চরমপন্থী শিয়া) দুটি গাধা ছিল। সে একটির নাম রাখে আবু বকর - দ্বিতীয়টির নাম রাখে ওমর। এভাবে সে মনের ঝাল মেটাচ্ছিল। একদিন শুনা গেল - একটি গাধার লাথিতে উক্ত রাফিজী নিহত হয়েছে। একথা শুনে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি জনৈক শাগরিদকে ঘটনার খোঁজ নিতে বললেন এবং মন্তব্য করলেন যে, সম্ভবত: ওমর নামীয় গাধাটিই রাফিজীকে খুন করে থাকবে। শাগরিদ ঘটনা যাচাই করে এসে বললেন - হুযুর! আপনার কথাই ঠিক। (সোবহানাল্লাহ)।
শিয়ারা হযরত আলী ও পাকপাঞ্জাতনের পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে অন্য সাহাবীদেরকে কাফির, মুনাফিক, মুরতাদ - ইত্যাদি অশালীন বাক্যে জর্জরিত করেছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সতর্ক বাণী হচ্ছে ”আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহর গযবের ভয় করো। তাঁদেরকে তোমরা সমালোচনার শিকারে পরিণত করো না। তাঁদের প্রতি ভালবাসা আমার প্রতি ভালবাসারই প্রতীক এবং তাঁদের প্রতি দুশমনি আমার প্রতি দুশমনিরই প্রতীক।” (বুখারী)
২। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বিরুদ্ধে অপবাদ:
(ক) শিয়ারা হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বিরুদ্ধে একটি জঘন্য অপবাদ আরোপ করে বলেছে যে, বুখারী ও মুসলীম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ অবস্থায় ইনতিকালের ৫ দিন পূর্বে বৃহস্পতিবার দিন যোহর নামাযের পর হতে আর মসজিদে যেতে পারেননি। অসুখে তিনি ক্ষণে ক্ষণে অস্থির হয়ে উঠেন। এমন অবস্থায় হুজরা মুবারকে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে তিনি এরশাদ করলেন - ”তোমরা কাগজ নিয়ে এসো - আমি এমন কিছু লিখে দিয়ে যাবো - যাতে তোমরা আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না।”
সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। কেহ বললেন - কাগজ কলম নিয়ে আসুন। আবার কেহ বললেন - এমতাবস্থায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাগজ কলম দেয়া ঠিক হবে না। কুরআন মাজীদ তো পূর্ণ নাযেল হয়ে গেছে এবং দ্বীন পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে বলে কুরআনেই ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? তিনি অসুখের তারনায় এমনিতেই অস্থির। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন এই মতের মধ্যমনি। আল্লাহর নবীর সামনে এইভাবে বিতর্ক করা অশোভনীয় ছিল। সাহাবায়ে কেরামের বিতর্ক দেখে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উঠলেন - ”আমাকে একা থাকতে দাও, আমি এখন যে অবস্থায় আছি, তোমাদের বিতর্কের চাইতে এটা অনেক উত্তম।”
একথা বলেই তিনি তিনটি বিষয় উল্লেখ করলেন। যথা: (১) আরব উপদ্বীপ থেকে তোমরা মুশরিকদেরকে বহিষ্কার করে দেবে (২) আমি যেভাবে কোন প্রতিনিধি দলকে খাতির সম্মান করেছি, তোমরাও অনুরূপ করবে (৩) ইবনে আব্বাস বলেন: তৃতীয়বারে হয় তিনি চুপ ছিলেন অথবা কিছু বলেছিলেন - কিন্তু আমি তা ভূলে গেছি”। (বুখারী: কিতাবুল ইলম অধ্যাহ, কিতাবুল মুয়াদায়াহ, কিতাবুল মাগাজী, কিতাবুল মারাদ ওয়াত তিব্ব, কিতাবুল ইতিছাম)।
শিয়াগণ এই সূত্র ধরে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর উপর আক্রমম পরিচালনা করে বলেছে – ”নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর প্রতিটি বাণীই ছিল ওহী দ্বারা পরিচালিত। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ অমান্য করে প্রকারান্তরে ওহীতে বাধা সৃষ্টি করেছেন। ওহীতে বাধা সৃষ্টি করা কুফরী”।
শিয়াদের এই আক্রমনের জবাব দিতে গিয়ে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেছেন: (১) হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যদি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করে দোষী সাব্যস্থ হন। তাহলে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তো হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি নির্দেশ অমান্য করেছিলেন। সেটি হলো ”রাসুলুল্লাহ” শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে নির্দেশ করলে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তা করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু কেউ তো - এমনকি শিয়ারাও ঐ কাজকে দোষনীয় বা 'ওহীতে বাধা দান' বলে মন্তব্য করেনি। হযরত ওমরের বেলায় শিয়ারা দোষারোপ করছে কেন?
আসলে ব্যাপারটি ছিল নবীর প্রেম ও ভালবাসা। হযরত আলী যেমন নবীজীর মহব্বতে 'রাসুলুল্লাহ' শব্দটি বাদ দিতে ইতস্তত: করেছিলেন - হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তদ্রুপ হুযুরের কষ্ট হবে বলে কলম আনতে ইতস্তত: করেছিলেন। যদি তা খোদার অলঙ্গনীয় ওহী-ই হতো এবং লিখা বাধ্যতামূলক হতো - তাহলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তী সময়ে অবশ্যই তা লিখে দিতেন - নতুবা রিসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বলে তা সাব্যস্থ হতো। মোট কথা - হযরত আলীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি যেমন পরামর্শমূলক ছিল, তেমনি হযরত ওমরের বেলায়ও পরামর্শমূলক ছিল। শিয়াগণ হযরত ওমরের বেলায় আক্রমনমূলক কথা বললেও হযরত আলীর বেলায় একেবারেই চুপ। এটা ইনসাফের খেলাফ।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন