শিয়া পরিচিতি


পঞ্চম পর্ব
=======
ইসলামের তিন খলিফা   ও হযরত  আয়েশা  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর বিরুদ্ধে শিয়াদের অবমাননাকর উক্তি: 

১।  হযরত  আবু  বকর  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু  এর  বিরুদ্ধে  শিয়াদের অপবাদ:

তোহফায়ে      ইসনা    আশারিয়া    -     কৃত    শাহ    আবদুল আজিজ  দেহলভী  রহমাতুল্লাহি    আলাইহি   নামক  গ্রন্থে হযরত    আবু     বকর     সিদ্দীক    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু    এর বিরুদ্ধে  শিয়াদের  কতিপয়  অবমাননাকর  উক্তি  উদ্ধৃত  করা হয়েছে - যার কিছু নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

(ক)    ”হযরত   আবু  বকর  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু    একদিন মসজিদে নববীর   মিম্বারে   দাঁড়িয়ে খুতবা  দিতে উঠলে হযরত ইমাম হাসান    ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা  দুই ভাই  এসে   তাঁকে  রাসুলুল্লাহর  মিম্বার থেকে  নেমে যেতে      বলেছিলেন।      কাজেই      হযরত        আবু      বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হওয়ার যোগ্য নন”।

তাদের  এই মনগড়া উক্তির জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে,   সে   সময়   ইমাম   হাসান   ও   হোসাইন  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু   ৮-৯   বৎসরের   বালক   ছিলেন।   তাদের    কথা  হাস্যকর।

(খ)     ”নবী    করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়া   সাল্লাম হযরত  আবু    বকর   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু  কে   কোন  দ্বীনী গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেতৃত্ব প্রদান করেন নি”।

তাদের এই উক্তি মিথ্যা।  কারণ, নবী করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি        ওয়া      সাল্লাম      ওহুদ      যুদ্ধের       পর      আবু সুফিয়ানের     পশ্চাদধাবন     করার    জন্য     হযরত     আবু বকরকে    নেতৃত্ব    প্রদান    করেছিলেন।   এছাড়াও     ৯ম হিজরীতে   মুসলমানদের প্রথম হজ্বে হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আমিরুল হজ্ব নিযুক্ত করেছিলেন। হুযুরের ওফাতের  ৫দিন পূর্বে তাঁকেমসজিদে নববীতে হুযুরের  স্থলে   ইমামতি    করার  অনুমতি   দিয়েছিলেন  - যার  পিছনে  সমস্ত   সাহাবা   ১৯   ওয়াক্ত  নামায  আদায় করেছিলেন।

(গ)  ”হযরত  আবু    বকর   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  -  হযরত ওমর  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  কে পরবর্তী খলিফা মনোনীত  করে  যান - অথচ  নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সালাম     হযরত   ওমরকে   একবার   যাকাত    আদায়ের  দায়িত্ব দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেন”।

এর      অর্থ      কি      চিরস্থায়ী      নিষেধাজ্ঞা?     অন্য     কোন  যুক্তিসঙ্গত কারণেই হয়তো তিনি তা করেছিলেন।

(ঘ) ”নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কোন   'উত্তরাধিকারী  বা  খলিফা   নিযুক্ত  করে   যাননি'- অথচ, হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু কে  পরবর্তী  খলিফা  মনোনীত  করে যান। এটা সরাসরি নবীজির আদর্শের খেলাফ”।

শিয়াদের এই অভিযোগও মিথ্যা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া   সাল্লাম     ইশারা    ও    ইঙ্গিতের   মাধ্যমে হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে খলিফা নিযুক্ত  করেছিলেন।  হুযুরের  ইশারাই  খলিফা  নিযুক্তির   জন্য  স্পষ্ট   ঘোষণার  সমতুল্য।   তদুপরি   -  মুসলিম   শরীফে উল্লেখ   আছে  যে,    ওহীর  মাধ্যমে  পূর্বেই   নবী  করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি      ওয়া    সাল্লামকে    জানিয়ে    দেয়া হয়েছে যে, মুসলমানগণ হযরত আবু বকরকেই খলিফা নিযুক্ত     করবে।     সুতরাং     ঘোষণা     দেয়ার     প্রয়োজন  ছিলনা। তদুপরি - শিয়াদের কথার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে,  তাদের  ইমাম   হযরত   আলীকেও  হুযুর   সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া  সাল্লাম  খলিফা  নিযুক্ত  করে   যাননি।   ' কোন  খলিফা   নিযুক্ত  করে   যাননি'  -  এই  কথাই  তার প্রমান।

(ঙ)    ”হযরত    আবু   বকর    রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   -    বিবি ফাতিমা  রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহাকে  পৈত্রিক  সম্পত্তি  থেকে বঞ্চিত    করেছেন    একমাত্র    নিজের    বর্ণিত    হাদীসের  ভিত্তিতে।   হাদীসটি   হলো:   আমরা   নবী   সম্প্রদায়   যে  সম্পত্তি রেখে যাই - তা সদকা বা জনগণের জন্য  দান হিসেবে  গন্য  হবে।  পরিবারের  কেউ  তা   পাবে   না”।  অথচ      কুরআনে     উল্লেখ       আছে:      ”আল্লাহ     তায়ালা তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি তোমাদের আওলাদের জন্য নিজে বন্টন করে দিয়েছেন। পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের দ্বিগুন    পাবে”।   হযরত      আবু   বকর   কুরআনের    উক্ত নির্দেশকে  অমান্য  করে   নিজের   শ্রুত   হাদীসের  দ্বারা  বিবি  ফাতিমাকে  রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি    ওয়া  সাল্লাম     এর     সম্পত্তির     উত্তরাধিকার     থেকে     বঞ্চিত  করেছেন।

শিয়াদের   এ    অভিযোগ  সম্পূর্ণ    মিথ্যা।   কেননা,  উক্ত হাদীসখানা হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামন,  জুবাইর ইবনুল আওয়াম, আবু দারদা,    আবু হুরায়রা, আব্বাস, হযরত আলী,  হযরত  ওসমান,  আবদুর রহমান  ইবনে  আউফ,       সা'আদ     ইবনে       আবি     ওয়াক্কাস     -     প্রমুখ সাহাবায়ে  কেরাম   থেকেও   বর্ণিত  হয়েছে  -  শুধু  একা হযরত    আবু    বকর    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু     থেকে    নয়।   দ্বিতীয়ত:  হযরত আবু  বকর  সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজ কন্যা বিবি আয়েশাকেও নবীজীর সম্পত্তি দেননি। হযরত   আব্বাসকেও   দেননি।  ফারায়েয   মতে  তাঁরাও সম্পত্তির  মালিক   হতে   পারতেন।  আল্লাহর   এই  বানী সাধারণ মুমীনদের বেলায়  প্রযোজ্য -  নবীজীর   ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য নয়। এ জন্যই কুরআন ”তোমাদের” বহুবচন শব্দ ব্যবহার  করা হয়েছে।  হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা   নবীজীর  হাদীস   সম্পর্কে   অবগত   ছিলেন  না। যখন  জানতে  পারলেন,   তখন  তিনিও দাবী  প্রত্যাহার করে নিলেন। সুতরাং শিয়াদের এই অভিযোগ হিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত -  সত্যের উপর  নয়। তদুপরি  - হযরত আবু       বকর       রাদ্বিয়াল্লাহু       আনহু       হযরত       ফাতিমা  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহার  জন্য  এর  পরিবর্তে  বাইতুল  মাল  থেকে ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

(চ)    ”নবী    করিম   সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া     সাল্লাম ফিদাকের      একখন্ড   জমি    বিবি   ফাতিমা    রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে   হেবা    সূত্রে   দান  করেছিলেন।  কিন্তু  হযরত আবু বকর  সিদ্দিক  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তা থেকেও বিবি  ফাতিমাকে বঞ্চিত করেছেন”।

শিয়াদের এই অভিযোগ সত্য নয়। কেননা, নবী করিম সাল্লাল্লাহু    আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম    হেবা  করে   থাকলে  নিশ্চয়ই দখল বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু তিনি দখল বুঝিয়ে দেননি        এবং        বিবি        ফাতিমাও         দখল         নেননি।  সাময়িকভাবে   উৎপন্ন  ফসল  ভোগ   করার  জন্য  দেয়া হয়েছিল  মাত্র।  হযরত  আবু  বকর  সিদ্দিক  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু     যখন    বায়তুল    মাল     থেকে       বিবি    ফাতিমার  পরিবারের জন্য ভাতা  নির্ধারিত করলেন,  তখনই উক্ত জমি   সরকারী   কোষাগারে   নিয়ে   নেয়া   হয়।     বিকল্প ব্যবস্থা  না  করে  উক্ত   জমি   ছিনিয়ে   নিলে  দোষ  দেয়া  যেতো।   বুখারী  শরীফে  বর্ণিত   আছে:  বিবি   ফাতিমার ঘরে  তিনি  নিজে  গিয়ে  ব্যাপারটি  বুঝিয়ে  বললে  বিবি  ফাতিমা   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহা   তাতে    রাজী    হয়ে   যান। নিস্পত্তিকৃত   বিষয়টি  নিয়ে  শিয়ারা   হযরত  আবু  বকর সিদ্দিক   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   এর  বিরুদ্ধে    একটি  মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করেছে।


উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন