(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
-------------------
(খ) শিয়াগণ দ্বিতীয় অভিযোগে বলে: ”হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শরীয়তের কোন কোন বিধি বিধান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন না। খিলাফতের জন্য শরীয়তের পূর্ণ জ্ঞান থাকা জরুরী। হযরত ওমরেরে তা ছিল না। সুতরাং তিনি খিলাফতের যোগ্য ছিলেন না”। উদাহরণ স্বরূপ শিয়াগণ বলে - হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জ্বেনার দ্বারা গর্ভবতী এক মহিলাকে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এই রায় সংশোধন করে বলেছিলেন - অপরাধ হলো মহিলার। তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলে তার পেটের সন্তানকেও হত্যা করা হবে। এটাতো শরীয়তে বৈধ নয়। তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আনন্দে বলে উঠলেন ”আলী না থাকলে ওমর আজ ধবংস হয়ে যেতো”।
শিয়াদের এই অপবাদের জবাব আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসীনগণ এভাবে দিয়েছেন - হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট শুধু জ্বিনার প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছিল - গর্ভধারনের বা পেটে সন্তানের কোন প্রমাণ তাঁর কাছে ছিল না। যখন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গর্ভের সন্তানের সংবাদ দিলেন - তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গর্ভ খালাস হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখেন। কারও কাছে কোন বিষয়ের প্রমাণ না থাকার অর্থ শরীয়তের জ্ঞানের অভাব নয়। এটা হয়েছিল সাক্ষীর অভাবে। এটা হলো শিয়াদের অপকৌশল মাত্র।
(গ) শিয়াগণ বলে: হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু বিদআত চালু করেছেন - যা দ্বীনের অংশ নয়। যেমন - তিনি জামাতের সাথে তারাবিহ নামায কায়েম করাকে উত্তম বিদআত বলে অভিহিত করেছেন। অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন ”সব বিদআতই গোমরাহী”। তিনি আরও বলেছেন, ”কোন ব্যক্তি আমার এই ধর্মে যদি এমন জিনিস নূতনভাবে সংযোজন করে - যা ধর্মের অংশ নয়, তা বাতিল বলে গন্য হবে”। সুতরাং হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ধর্মে তারাবিহর নূতন বিদআত চালু করার দোষে দোষী। (নাউযুবিল্লাহ)।
শিয়াদের এ অভিযোগ সত্য নয়। কেননা, হাদীসে মুতাওয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তিন রাত্র পর্যন্ত জামাআতের সাথে তারাবিহ নামায পড়েছিলেন। চতুর্থ রাত্রি থেকে তা বন্ধ করে দেন এবং এরশাদ করেন - ”আমি ভয় করছি - এ নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে যেতে পারে।” হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পর ওহী বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং ফরয হওয়ার ভয়ের কারণ তিরোহিত হয়ে যাওয়াতে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবীজীর সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করেছেন মাত্র। ইহা নূতন সংযোজন নয়। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জামাতের সাথে তারাবিহ আদায় করাকে উত্তম বিদআত বলার কারণ হলো - নবীজীর পরে নূতন করে তা পুনরায় চালু হয়েছে মাত্র। শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও পরিভাষায় তা সুন্নাত। কোন কাজ বন্ধ করার পেছনে বিশেষ কারণ থাকলে পরে সেই কারণের ভয় না থাকলে বা আশংঙ্কা দুরিভূত হয়ে গেলে মূল কাজ চালু করা বৈধ।
শিয়াগণ একদিকে জামায়াতের সাথে তারাবিহ নামাযকে বিদআত বলছে, অপর দিকে তারা হযরত ওমরের শাহাদাত দিবস ৯ই রবিউল আউয়াল তারিখে শুকরিয়ার নামায আদায় করাকে বিদআত বলে মনে করছে না। অগ্নি উপাসকদের নওরোজ উৎসব পালন করা, মোতা বিবাহ বা সাময়িক অস্থায়ী ও কন্ট্রাক্ট ম্যারেজকে তারা বিদআত বা হারাম বলে মনে করে না। অথচ উম্মতের সর্বসম্মত রায় অনুযায়ী নওরোজ ও মুতা বিবাহ হারাম বলে ইজমা হয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদীন যে প্রথা চালু করেছেন তা বিদআত নয় - বরং সুন্নাত। যেমন - হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক কুরআন সংকলন ও জুমআর দিনের বর্তমান প্রথম আযান প্রচলন এবং হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক এলমে নাহু বা আরবী ব্যাকরণ চালু ইত্যাদি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন - ”তোমরা আমার সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত বা প্রথাকে মযবুত করে ধরে রাখবে”। সুতরাং চার খলিফা কর্তৃক চালুকৃত সমস্ত কাজই সুন্নাত। (বুখারী)
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন