শিয়া পরিচিতি

দ্বিতীয় পর্ব
=======
ক্রমিক  ৪  -  এর  ঘালী    বা  চরমপন্থী     শিয়াদের   শ্রেণী  বিভাগ: (২৪)

উপরে       উল্লেখ      করা      হয়েছে       যে,      চতুর্থ      ফির্কার শিয়াদেরকে   ঘালী  বা  চরমপন্থী  শিয়া  বলা   হয়।  এরা পুনরায় চব্বিশটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মূল আক্বীদা      হলো      -         ”হযরত      আলী-       ই-      খোদা”  (নাউযুবিল্লাহ)। এই আক্বীদার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়েই  তাদের  মধ্যে  এই  চব্বিশটি  উপ-  শাখার  সৃষ্টি  হয়। সংক্ষেপে তাদের  ইতিবৃত্ত ও আক্বীদা নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১। সাবাইয়্যা শিয়া:  এরা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা নামক ইহুদি   চরের   অনুসারী।   চরমপন্থী   এই   শিয়া   গ্রুপের  আক্বীদা   হলো  -   ”হযরত  আলী  -ই-  খোদা”।  হযরত আলী  শাহাদত  বরণ করার পর আবদুল্লাহ ইবনে সাবা প্রচার    করে    যে,    ”তিনি   মরেননি   -   ঘাতক   আবদুর  রহমান ইবনে  মূলজেম   হযরত আলীকে  শহীদ করতে পারেনি  -  বরং   একটি  শয়তান  হযরত    আলীর   সুরত ধারণ করেছিল। ইবনে মূলজেম   তাকেই হযরত আলী  মনে    করে    কতল   করেছে।   ঐ     সময়    হযরত    আলী আকাশের  মেঘ  মালায়    লুকিয়ে    যান  এবং  বর্তমানের মেঘের  গর্জন  হযরত  আলীরই  গর্জন।  মেঘের  বিদ্যুত  হচ্ছে     হযরত     আলীর      তরবারী     বা     কোড়া।      তিনি পৃথিবীতে  আবার  নেমে  আসবেন  এবং  তাঁর  শত্রুদের  থেকে প্রতিশোধ নেবেন”।

এ  কারণেই   চরমপন্থী   এই   শিয়া   গ্রুপ   মেঘের   গর্জন শুনলেই     বলে     উঠে      ”আলাইকাচ্ছালাম      আইয়ুহাল   আমীর” অর্থাৎ  হে আমিরুল   মুমিনীন!  আপনার   উপর ছালাম বর্ষিত হোক। তাদের এ কুধারণা কুসংস্কারেরই ফলশ্রুতি। তাদের ধারণা মতে যদি সত্যি সত্যি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মেঘ  মালায় লুকিয়ে থাকতেন, তাহলে  এখনই তাঁর শত্রুদের   নিপাত করতেও   সক্ষম হতেন।  এত    দীর্ঘ  প্রতীক্ষার   কি  প্রয়োজন?  (তোহফা ইসনা আশারিয়া)

২।   মুফাদ্দালিয়া  শিয়া:  চরমপন্থী   দ্বিতীয়   শাখা     হলো মুফাদ্দাল  সাইরাফী নামক নেতার অনুসারী দল। প্রথম শাখার আক্বীদা তো এরা পোষণ করেই - তদুপরি আর একটু অগ্রসর হয়ে তারা বলে - ”হযরত আলীর সম্পর্ক আল্লাহর  সাথে  ঐরূপ   -   যেরূপ  সম্পর্ক  ছিল  আল্লাহর  সাথে ইছা নবী আলাইহিস সালামের”।

এদের আক্বীদা আর খৃষ্টানদের  আক্বীদা এক।    আল্লাহ ও   বান্দাকে   তারা    এক   মনে    করে।    তাদের   আরো  বিশ্বাস    -      নবুয়ত    ও   রিসালাতের    ধারা    খতম   হয়ে যায়নি। যেসব বুযর্গের সাথে লাহুতি জগত (উর্দ্ধজগত) সম্মিলিত  হয়,   তাঁরা   হলেন   নবী।  এই    নবীগণ  যখন  মানুষকে হিদায়াতের আহবান জানান, তখন তাঁদেরকে বলা    হয়     রাসুল।    এই     চরমপন্থী    মুফাদ্দালিয়া    গ্রুপ থেকেই       অতীতে       নবুয়ত       ও       রিসালাতের       ভন্ড  দাবিদারদের উদ্ভব হয়েছিল। বর্তমানে কাদিয়ানী গ্রুপ এবং  দেওবন্দ  মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাছেম  নানুতবীও  কুরআনের   খতমে  নবুয়ত   সংক্রান্ত আয়াতটির এভাবে অর্থ করেছে - ”তিনি নবীগণের ভূষণ ও আফযল নবী - তাঁকে     শেষ      নবী      মনে     করা     জাহেলদের      কাজ”  (তাহযীরুন্নাছ)।

৩।   ছারিগীয়া    শিয়া:     এই   গ্রুপ  ছারিগ    নামক  শিয়া নেতার  অনুসারী।  দ্বিতীয়  মুফাদ্দালিয়া  গ্রুপ  এবং  এই  তৃতীয়   গ্রুপের মতবাদ প্রায় একই   রূপ। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, দ্বিতীয় গ্রুপের মতে  যে কোন বুযুর্গের  মধ্যেই    আল্লাহ   হুলুল  (প্রবেশ)  করতে     পারেন।  কিন্তু ছারিগীয়ারা     এই     হুলুল     বা       প্রবেশ       নিম্ন       লিখিত পাঁচজনের   মধ্যেই   সীমাবদ্ধ   বলে   মনে    করে।   তাঁরা  হলেন:   নবী   করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়া  সাল্লাম, হযরত  আব্বাছ,  হযরত   আলী,   তাঁর  দুই  ভাই  হযরত জাফর ও হযরত আকিল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।

৪। বাজিইয়া শিয়া: চরমপন্থী ঘালী শিয়াদের চতুর্থ দল হলো বাজিইয়া গ্রুপ।  বাজি ইবনে উইনুছ  নামের  এক শিয়া    নেতার   অনুসারি    এরা   এদের   আক্বীদা     হচ্ছে: ”শুধুমাত্র ইমাম জাফর  সাদেক   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু এর মধ্যেই খোদায়ীত্ব   প্রবেশ করেছে - অন্য  কারও  মধ্যে নয়।   তাদের   মতে      -     আল্লাহ   তায়ালা    এক   ব্যক্তির মধ্যেই  প্রকাশিত হয়েছেন   মাত্র।   তবে তিনি দেহধারী  নহেন”।  তারা  বলে  -   ”ইমাম  জাফর   সাদেকের  পর অন্য কোন  শিয়া ইমাম খোদা হতে  পারবেন না। তবে তাদের নিকট ওহী অবতীর্ণ হবে এবং তাদের মেরাজও সংঘটিত হতে পারে”।

৫।   কামিলিয়া শিয়া: আবু  কামিল   নামক জনৈক শিয়া নেতার অনুসারী এই দল। এজন্য তাদেরকে কামিলিয়া নামে  আখ্যায়িত   করা   হয়।  এদের  চরমপন্থী   আক্বীদা হচ্ছে ”আত্মা এক দেহ হতে অন্য দেহে প্রবেশ  করতে পারে। কোন দেহ মরে গেলে বা ধবংস হয়ে গেলে তার আত্মা অন্য দেহ ধারণ  করতে   পারে”। তাদের ধারণা  মতে    ”আল্লাহর  পবিত্র   আত্মা  প্রথমে  আদমের   মধ্যে  সন্নিবেশিত     হয়েছিল।     ক্রমান্বয়ে     শীশ     পয়গাম্বরের  মাধ্যমে    অন্যান্য   নবীগণের    মধ্যেও    আল্লাহর   পবিত্র আত্মা    স্থানান্তরিত    হয়েছে”।    তারা    বলে    -    ”যেসব  সাহাবা   হযরত   আলীর   খিলাফত   স্বীকার   করেননি   -  তারা      সবাই  কাফির    এবং  হযরত   আলীও  কাফির  - কেননা   তিনি   তাঁর    ন্যায্য  অধিকার  দাবী   করেননি”। (নাউযুবিল্লাহ)

এরা অভিমানী   ও  হতাশ প্রেমিক শিয়া। নেতার    উপর অভিমান  করেই তারা  নেতার  বিরুদ্ধে  কুফরী ফতোয়া জারি করে বসে আছে।


আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন