নীল নদীর প্রতি চিঠি

কারামাতে আউলিয়া
(১৫)
*********

 হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) (৪৩ হি.)

----------------

হযরত ওমর (রা.)'র খেলাফত কালে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) মিশর জয় করেন। মিশরবাসীরা একটি নির্দিষ্ট দিনে তার নিকট এসে বলল যে, হে আমীর! আমাদের নীল নদীতে পানি প্রবাহিত হওয়ার জন্য একটি সনাতন প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, যা ব্যতিত নদী প্রবাহিত হয় না বরং শুকিয়ে যায় এবং আমাদের ক্ষেত খামার নীল নদীর পানির উপরেই নির্ভরশীল। তিনি জিজ্ঞেস করেন এই প্রথা কি? উত্তরে তারা বলল, এই মাসের এগার তারিখ আসলে একজন কুমারী যুবতীকে নির্বাচিত করে তার পিতা মাতাকে রাজী করে তাকে উত্তম পােষাক ও অলংকার পরিধান করায়ে নীল নদীতে নিক্ষেপ করে দেই, তারপর পানি প্রবাহিত হয়। তিনি বলেন ইসলামে এটা কখনাে হতে পারে না। এটা অযৌক্তিক ও অহেতুক । ইসলাম এগুলাে চিরতরে বন্ধ করার জন্য এসেছে। সুতরাং এটা কখনাে হতে পারে না। একথা শুনে লােকেরা ফিরে গেল। কিন্তু ঠিকই দেখা গেল কিছুদিন পর নীল নদী
শুকিয়ে গেল । মানুষ অভাবের ভয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করার উপক্রম হল। এ অবস্থা দেখে তিনি হযরত ওমর (রা.) এর নিকট বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে চিঠি পাঠান। হযরত ওমর (রা.) চিঠি মারফত উত্তরে বলেন- তুমি মিশরবাসীকে খুব সুন্দর জবাব দিয়েছ। এই চিঠির সাথে আমি আরেকটি চিঠি পাঠাচ্ছি যা তুমি নীল নদীতে নিক্ষেপ করবে। এই চিঠি হযরত আমর
ইবনুল আস (রা.) এর নিকট পৌছলে তিনি তা খুলে দেখেন। সেখানে লেখা ছিল- পত্রখানা আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমর এর পক্ষ হতে মিশরের নীল নদীর প্রতি।
অতপর হে নীল নদী! তুমি যদি নিজ ইচ্ছায় প্রবাহিত হও তবে প্রবাহিত হইও না। আর যদি আল্লাহ তােমাকে প্রবাহিত করেন তাহলে আমি কাহহার এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যাতে তােমাকে প্রবাহিত করে দেন।
তিনি হযরত ওমর (রা.)'র চিঠি রাতে নদীতে নিক্ষেপ করেছেন। মিশরবাসীরা সকালে দেখে যে, আল্লাহ তায়ালা নীল নদীর পানিকে আগের চেয়ে ষোল হাত উচু করে প্রবাহিত করে দেন। তারপর থেকে নীল নদী এভাবে আর কোন দিন শুকিয়ে যায়নি এবং এই কুপ্রথা
চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।
 আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী, (৯১১ হি.), তারীখুল খােলাফা, পৃ :- ৮৭, বিষয় ভিত্তিক কারামাতে আউলিয়া,পৃ :- ৭৩)।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন