শিয়া পরিচিতি

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

*************

২৪।  আফতাহিয়া  শিয়া:  আফতাহ আরবী শব্দ। অর্থ  - চওড়া    পদযুগল।   ইমাম    জাফর    সাদেক   রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পঞ্চপুত্রের  মধ্যে একজনের  নাম আবদুল্লাহ আফতাহ।  তাঁর   পদযুগল পাশে  বেশী চওড়া বা প্রশস্থ হওয়ার কারনে এ নাম রাখা হয়। তাঁর অনুগামীদেরকে আফতাহিয়া   শিয়া বলা হয়।   আবদুল্লাহ ইবনে  আম্মার নামক জনৈক শিয়া এই শাখার প্রথম নেতা। এ কারণে এদেরকে   আম্মারিয়া     শিয়াও   বলা    হয়।   এ   শিয়াগণ ইমাম        জাফর       সাদেক        রাদ্বিয়াল্লাহু        আনহু       এর ইনতিকালের   পর    তাঁর    পুত্র   আবদুল্লাহ    আফতাহকে ইমাম   বলে    বিশ্বাস   করে।   তাঁর   কোন    সন্তানাদি    না থাকায়   এখানেই  ইমামত   পদ     সমাপ্ত  হয়।  শিয়াদের মতে  তিনি   ইনতিকাল  করেছেন   সত্য,    কিন্তু   পুনরায়  পৃথিবীতে    ফিরে    আসবেন।    এরা    পুনর্জন্ম    (কুফরী)  মতবাদে বিশ্বাসী।

২৫।       ইসহাকিয়া       শিয়া:       ইমাম       জাফর       সাদেক রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   এর   পঞ্চ   পুত্রের     একজন   ছিলেন ইসহাক।   এই  দলের শিয়াগণ  ইসহাককে  ইমাম  বলে স্বীকার করে।  আবদুল্লাহ আফতাহকে এরা ইমাম বলে স্বীকার করে না!

২৬।   মুফাদ্দালিয়া শিয়া: মুফাদ্দাল ইবনে   আমর  - এর অনুসারী   শিয়াগণকে  মুফাদ্দালিয়া   শিয়া  বলে।  ইমাম   জাফর    সাদেকের  পর   তাঁর  তৃতীয়  পুত্র   মুছা   কাযেম রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহুকে   এরা  ইমাম  বলে   মানে।  এদের বিশ্বাস     -     হযরত     মুছা     কাযেম     রাদ্বিয়াল্লাহু     আনহু  নিশ্চিতভাবেই ইনতিকাল করেছেন।

২৭।   মামতুরিয়া   শিয়া:  এরাও  মুছা  কাযেমকে  ইমাম মানে। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে যে, তিনি জীবিত আছেন এবং     তিনিই    প্রতিশ্রুত     ইমাম     মাহদী।    পরে     তিনি আত্মপ্রকাশ     করবেন।    তাদেরকে     মামতুরিয়া    বলার কারণ এই   - মোফাদ্দালিয়া  গ্রুপের  এক  নেতা ইউনুছ  ইবনে    আবদুর      রহমান    এক     মুনাজারা     বা      বিতর্ক মজলিসে এদেরকে উপহাস করে বলেছিল  - ”তোমরা আমাদের    নিকট    ভিজা   কুকুরের    (কিলাব    মামতুরা) চেয়েও নিকৃষ্ট”।

২৮।      মুছুভিয়া      শিয়া:     এরা     হযরত     মুছা       কাযেম রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু    এর  জীবিত  থাকা  বা   মৃত  হওয়ার ব্যাপারে   স্থির সিদ্ধান্তহীনতায়   ভুগছে। এ  কারণে  তাঁর সন্তানগণকে     ইমাম       মানতে     এরা     ইতস্তত:      করে। মুফাদ্দালিয়া     ও     মামতুরিয়া     শিয়াদের     মাঝামাঝি    - সন্দেহবাদী দল এরা।

২৯।  রিজইয়্যা শিয়া: হযরত   মুছা  কাযেম  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু      এর    মৃত্যুর   পর   তাঁর   পুনরায়    ফিরে    আসার পক্ষপাতি    দলকে    রিজইয়্যা    শিয়া  বলে।  ২৮  ও  ২৯ ক্রমিকের   শিয়ারা   হযরত    মুছা   কাযেম    পর্যন্ত   ইমাম  মানে। এরপর ইমামতের পদ মওকুফ হয়ে গেছে বলে এদের বিশ্বাস।

৩০। আহমাদিয়া শিয়া: হযরত মুছা কাযেম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইনতিকালের পর তাঁর পুত্র আহমাদকে এক দল ইমাম  বলে  স্বীকার করে।  এরা ২৭   নং  শিয়াদের কাছাকাছি।    ২৮,   ২৯   নম্বর    শিয়াদের    চাইতে    এরা ভিন্নধর্মী।   কেননা,  ওরা পরবর্তী  কোন ইমাম মানেনা,  কিন্তু আহমদিয়ারা মানে।

৩১।  ইসনা  আশারিয়া  শিয়া:  বারজন  ইমামে  বিশ্বাসী  শিয়াদেরকে ইসনা আশারিয়া বলা হয়। ইমামীয়া শিয়া বা    ইমামপন্থী    শিয়া    বলতে    সাধারণত:    এদেরকেই  বুঝানো   হয়। এদের বারজন   ইমামের নাম হলো:   ১। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ২।   ইমাম    হাসান ৩। ইমাম হোসাইন ৪। ইমাম জয়নুল   আবিদীন ৫।  ইমাম বাকের    ৬।   ইমাম    জাফর     সাদেক   ৭।   ইমাম    মুছা  কাযেম ৮। ইমাম আলী রেযা ৯। ইমাম মুহাম্মাদ তাকি ওরফে  জাওয়াদ   ১০।    ইমাম  নকী  আলী  ১১।   ইমাম হাসান আসকারী  ১২।  তাঁর  ছেলে  ইমাম  মাহদী। এই শেষোক্ত ইমামই তাদের ভবিষ্যতের প্রতিক্ষীত    ইমাম মাহদী। ইসনা আশারিয়াদের একদল মনে করে - তিনি বর্তমানে       আতত্মগোপণ      করে     আছেন।     ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ    করবেন।     আর    একদল      মনে     করে     - ইনতিকাল করেছেন। কিন্তু পুনরায় তিনি দুনিয়ায় ফিরে আসবেন    পুনর্জীবিত     হয়ে   -    যখন    পৃথিবী   যুলুম   ও অত্যাচারে  ভরে যাবে। এই চরমপন্থী ইসনা আশারিয়া উপদলটির    সূচনা    হয়     ২৫৫     হিজরীতে।      বর্তমানে ইরানে    ইসনা    আশারিয়া     শিয়াদের     রাজত্ব    চলছে। উল্লেখ্য, ইমাম মাহদী হবেন  ইমাম   হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু এর বংশধর।

৩২। জাকারিয়া শিয়া: এরাও বারজন ইমামে বিশ্বাসী। তবে   তাঁদের  দ্ব্বাদশতম  ইমাম  হলো  -   জাফর।    তিনি একাদশতম   ইমাম   হাসান   আসকারীর   ভাই।   এদের  মতে    -    হাসান      আসকারীর    কোন    সন্তান    'মুহাম্মাদ মাহদী'    নামে    ছিলনা।   থাকলেও    বাল্যাবস্থায়ই   মারা যান।    অথবা আব্বাসীয় খলিফা  তাকে মেরে ফেলেন।  এ কথা তাঁর  চাচা জানতে পেরে নিজেকে  ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তির        অংশীদার      বলে       দাবী       করেন।      ইসনা আশারিয়া  জাফরকে মিথ্যাবাদী  বলে। দ্বাদশ  ইমামের ব্যাপারে    এই  দ্বন্দ্ব ইসনা  আশারিয়া  ও জাকারিয়াদের মধ্যে এখনও বিদ্যমান আছে।

৩৩। শাইখিয়া: বর্তমান কালে ইসনা  আশারিয়া দলের মধ্যে  আর  একটি  উপদলের  সৃষ্টি  হয়েছে।   এদেরকে  শাইখিয়া   বা   আহমাদিয়া   বলা   হয়।   শাইখ   আহম্মাদ  ইহসায়ী   এই  দলের  নেতা।  হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুকে    এরা    দার্শনিক    মতবাদ    অনুযায়ী    আকলে  আউয়াল বলে - যা সরাসরি শিরক।

৩৪।  রোশতিয়া:  সৈয়দ  কাযেম    হোসাইনী  এই  নতুন দলের   নেতা।  তিনি  শাইখ  আহম্মাদ  ইহসায়ীর   ছাত্র। তাঁর     আক্বীদা     তার      ওস্তাদের     আক্বীদার      চাইতেও জঘন্য।

৩৫। কুররিয়া: কুররাতুল  আইন নাম্মী এক মহিলা এই দলের  নেত্রী। তার নাম হিন্দা,   ডাকনাম উম্মে   সালমা এবং উপাধী কুররাতুল আইন। সৈয়দ কাযেম রোশতির পর সে নিজেকে  মহিলা ইমাম বলে   দাবী    করে।  এই  মহিলার মতে - ”মহিলাদের যৌন স্বাধীনতা  বৈধ  এবং শরীয়তের   বিধি      বিধানকে    সে   রহিত   বলে     ঘোষণা করে”।        (বাংলাদেশের       কুখ্যাত        নারী        তসলিমা  নাসরীনও নারীর যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী)।  এই ভন্ড দলের    মতে   পাঁচ   ওয়াক্ত    নামাযের   যুগ   খতম     হয়ে গেছে।    নামায    হলো     বিশেষ    যুগের    সাথে   সম্পৃত্ত। (নাউযুবিল্লাহ)।  এদের  মতে ওহীর  দরজা   বন্ধ হয়নি। এখনও কামিল ব্যক্তিদের নিকট না কি ওহী আসে তবে -  তা  শরীয়তমূলক  নয়  -  বরং  শিক্ষামূলক  (তাশরীয়ী  নয়      -   তালিমী)।   এই    মহিলা   শাহ    নাসির   উদ্দিনের রাজত্ব কালে বিদ্রোহ করে এবং  সদলবলে  নিহত হয়। তার কিছু ভক্ত তেহরান ও ইরাকে পরিদৃষ্ট হয়।

সারসংক্ষেপ:
=======
শিয়াদের      ফির্কা      বা       দল     উপদল     হিসেব     করলে ৪+২৪+৩৫= মোট  ৬৩টি  দাঁড়ায়। ৭২ ফির্কার একটি হলো  শিয়া।  এদের   মধ্যেই  পূন:   ৬৩   টি  উপ-  ফির্কা সৃষ্টি  হয়েছে।  আল্লাহ  আমাদের   এই   বিচ্ছিন্নতা  থেকে রক্ষা করুন।

                                               (চলবে)

উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন