(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
************
নদীর পাড়ে এসে পায়ে হেঁটে উঠেন ৬০ ফুট টিলার উপর এবং ভক্তিতে মাথানত করে পবিত্র পদচিহ্ন চুম্বন করেন । (খালি পায়ে উপরে উঠার নিয়ম আজও চালু
আছে)। ঠিক এমনি করে একদিন পায়ে হেটে সম্রাট আকবর গিয়েছিলেন ভারতের আজমীর শরীফ খাজা মইনউদ্দিন সাহেবের দরবারে, জাহাঙ্গীরকে কোলে নিয়ে তাঁহার পুত্র কামনার ওয়াদা পূর্ণ করিতে ।
মির্জা নাথান তাঁর পুস্তকে বলেন, “যেই সময় শাহজাহান কদমরছুল পরিদর্শন করেন তখন কদমরসুলের নাম ছিল হয় কদমরছুল বা রছুলপুর এবং সেখানে হযরত
মুহাম্মদ (দঃ)-এর কদম মােবারক রক্ষিত আছে। উক্ত পবিত্র পদচিহ্ন বার ভূইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর প্রধান সেনাপতি মাছুম খাঁন কাবুলী উক্ত স্থানে স্থাপন করেছেন |"
পূর্বেই বলা হইয়াছে মােগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহানকে নানাপ্রকার বিদ্রোহ দমনের জন্য কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় । বিদ্রোহটা অবশ্য ছিল পিতা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী একযুদ্ধে বাংলার বৃদ্ধ সুবেদার ইব্রাহিম খাঁ ফতেজঙ্গকে পরাজিত ও নিহত করিয়া যুবরাজ খুররম (শাহজাহান) রাজমহলে বাদশাহীর স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন। সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা (জাহাঙ্গীরনগর) বিজয়ী শাহজাদাকে ভক্তরা রামপালের (বিক্রমপুর) নামকরা কয়েক কান্দি কলা ভেট পাঠিয়ে ছিলেন। এ জন্য ঢাকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাগুলােতে শাহাজাদা খুররমের।
(শাহজাহান) ব্যক্তিগত আগমন ইতিহাসের কোন নুতন ঘটনা ছিল না । মির্জা নাথান আরও বলেন ‘কদমরছুল দর্শন করে শাহজাহান উক্ত দরগাহের খাদেমদের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন এবং সেলামীস্বরূপ খাদেমদের একশত স্বর্ণমুদ্রা দান করেন। উক্ত কদম মােবারক এবং দরগাহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাদেম সৈয়দ হাজী নূর মুহাম্মদকে তিনি ৮০ (আশি) বিঘা করমুক্ত জমি দানের ওয়াদা করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর নূরজাহান বেগমের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়ে (যুদ্ধ জয়ের মানত অবশ্য কদমরছুল দরগাহে করেছিলেন) দিল্লীর সিংহাসনে আরােহণ করিলে তাহার পুত্র শাহসুজাকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। শাহসুজা সুবেদার থাকাকালীন সেই ওয়াদা বাস্তবায়নে দুই সনদে যথাক্রমে ৬০ এবং ২০ বিঘা জমি যাহা সম্পূর্ণ করমুক্ত হাজী নুর মােহাম্মদকে দান করেন। উক্ত ৮০ বিঘা জমির সম্পদ ফার্শী ভাষায় লিখিত শাহসূজার দস্তখত ও সীলমােহরসহ ঢাকা কালেকটরেটে মােহাফেজ খানায়
রক্ষিত আছে। উক্ত সম্পদ অনুযায়ী সম্পত্তির আয় থেকে হাজী নুর মােহাম্মদের বংশধরগণ পর্যায়ক্রমে জীবিকা নির্বাহ করবেন। শাহজাহান ইসলামের প্রতি অখন্ড নিষ্ঠায় নিয়ােজিত থাকতেন এই জন্য তার আমলেই অনেক দরগাহ শরীফ এবং তাহা
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জমির উপর করমুক্ত বা নিষ্কর জমি ওয়াকফ করার জন্য বাদশাহী ফরমান জারী করা হইত।
বঙ্গদেশের রাজধানী কোলকাতা থাকায় ১৯৩৮ সালে কোলকাতা ওয়াকফ অফিসে এই সম্পত্তি এবং দরগাহ ওয়াকফ আল-আওলাদ নামে রেজিষ্ট্রি করা হইলে নম্বর
দেওয়া হয় E.C (Enrolment Certificate) No. 926, স্বাধীন বাংলাদেশে বর্তমান ওয়াকফ অফিসে একই নম্বর বহাল আছে । ইংরেজ শাসনামলে দরগাহের
প্রায় সম্পত্তি বিভিন্ন নামে বেদখল হয়ে যায় ।
(চলবে)
পেইজ নং- ১২
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন