শিয়া পরিচিতি

চতুর্থ অধ্যায়

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

***********

৭।    ইমামিয়াপন্থী   শিয়াদের   মতে:   কোন    কোন   নবী খোদা     প্রদত্ত     দায়িত্ব        পালনে      ওজর       আপত্তি     ও অপারগতা    প্রকাশ    করেছিলেন।    প্রমাণ   স্বরূপ   তারা বলে - খোদা যখন মুছা আলাইহিস সালামকে বললেন  - হে মুছা! তুমি যালিম বাদশাহ ফিরাউনের নিকট গমন করো। তখন মুছা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন - ”হে খোদা!  আমি  মনে  করি  -    ফিরাউন    ও    তার   প্রজারা  আমাকে সত্য বলে  স্বীকার  করবে না। তদুপরি আমার তর্ক   করার   ক্ষমতা   কম   এবং   আমার   কথা   অস্পষ্ট।  সর্বোপরি   -   আমি   এক   কিবতী   যুবককে   চপেটাঘাত  করে মেরে ফেলেছি।  তাই  ভয় পাচ্ছি  - তারা আমাকে মেরে  ফেলবে।   সুতরাং   হে  খোদা,   তুমি  আমার   ভাই হারুনকে  আমার  পরিবর্তে  নবুয়ত  দিয়ে  পাঠাও  তিনি  আমার চাইতে বেশী বাগ্মী”।

আহলে    সুন্নাত    ওয়াল    জামায়াতের    আক্বীদা      হলো: আল্লাহর   নির্দেশ    পালনে  কোন    নবীই   ওজর  আপত্তি করতে পারেন    না। কেননা, ওজর আপত্তিকারী   ব্যক্তি বিশ্বস্ত  হতে   পারেন  না।   শিয়াগণ  কুরআনে    উল্লেখিত মুছা   নবীর   ঘটনা   সমূহ     অপব্যাখ্যা   সহকারে   বিকৃত করেছে    এবং    এই     অপব্যাখ্যা    থেকে    ভুল     সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।     উল্লেখ্য     যে,     মউদুদী     সাহেবও     হযরত  ইব্রাহীম  আলাইহিস  সালামের  বেলায়  রাত্রিতে  চাঁদ  -  তারা দর্শন করার আয়াতকে তাঁর স্বীকৃতিমূলক কালাম বলে  হযরত  ইব্রাহীম  আলাইহিস  সালামকে  ক্ষণিকের  জন্য মুশরিক  সাব্যস্ত করেছেন  (তাফহীমুল  কুরআন)। যারা  কোন  নবীকে  এক   মুহুর্তের  জন্য   মুশরিক   বলে ধারণা   করবে - তারা নির্ঘাত কাফির।  শিরিক,   কুফর, কবিরাহ - ইত্যাদির গুনাহ নবীদের শানে আরোপ করা কুফরী       ও      বেদ্বীনী।       হযরত      ইব্রাহীম      আলাইহিস সালামের   উক্তি    ছিল    প্রশ্নবোধক  ও  তিরষ্কারমূলক  - স্বীকৃতিমূলক ছিলনা।

৮। গোরাবিয়া শিয়ারা  বলে:   হযরত আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু       এর    শারিরিক     গঠন     নবী    করিম    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম  এর মত  ছিল।  আলাহ   তায়ালা জিব্রাইলকে   রিছালাতের    ওহী   দিয়ে      হযরত   আলীর নিকট পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ভুল করে  মোহাম্মাদ   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া সাল্লাম  এর          নিকট          রিছালাত          বানী         পৌছিয়ে         দেন   (নাউযুবিল্লাহ)।

ইসলামী    আক্বীদা  হচ্ছে    -  হযরত  মোহাম্মাদ  মোস্তফা সাল্লালাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম-ই শেষ নবী -   হযরত আলী নবী নন। জিব্রাইল আমীন আমানতদারীর সাথেই সঠিক পাত্রে ওহী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ভূল হয়নি। কেননা,   জিব্রাইলের   ভূল  হয়ে   থাকলে  খোদা  কেনো  জেনে     শুনেও    তা   সংশোধন    করেননি?   মূলত:   এই শিয়াগণ   চরমপন্থী।   আর   চরমপন্থী   শিয়ারা   কাফির।  কাদিয়ানী ফির্কাকেও এরা হার মানিয়েছে।

৯।  ইসমাইলী, মোয়ামারী ও মনসুরিয়া শিয়া  গোত্রত্রয় মূল   মেরাজকেই   অস্বীকার  করে।  মনসুরিয়া  শিয়াগণ  বলে - মেরাজ শুধু একা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া   সাল্লামের   হয়নি।   তাদের    নেতা   আবুল    মনসুর আজালিও   মিরাজ  গমন   করেছিল   বলে  তারা  বিশ্বাস  করে। আবুল মনসুর নাকি সামনা সামনি খোদার সাথে কথা   বলেছে  এবং   খোদাও     আবুল  মনসুরের   মাথায় হাত    বুলিয়ে   দিয়েছেন।   ইমামিয়া   শিয়াদের   একদল  বলে    -    হযরত    আলীও    ঐ      মিরাজে     রাসুল    করিম  সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়া   সাল্লাম      এর   সাথে    শরীক ছিলেন।     আর  একদল  বলে    -  হযরত  আলী   আরশে  গমন  করেননি  -  তবে  তিনি  পৃথিবীতে  থেকেই  ঐসব  কিছু      অবলোকন        করেছিলেন       -       যা       অবলোকন করেছিলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওখানে গিয়ে (নাউযুবিল্লাহ)।

ইসলামী আক্বীদা  হচ্ছে:  আকাশে   ও  উর্দ্ধ  জগতে নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম  এর    মিরাজে  অন্য  কেউ তাঁর সাথে শরীক ছিলেন না। তিনি ছিলেন   একা।    জিব্রাইল    আলাইহিস    সালাম    ছিলেন    সাথী।  কোরআন   মজীদে   'বি     -    আবদিহী'  শব্দ  দ্বারা  একক নবীকেই  মিরাজে    গমনের   মালিক  বলে    উল্লেখ  করা  হয়েছে। পৃথিবীতে  থেকে যদি উর্দ্ধ  জগতের  সব   কিছু অবলোকন  করা   যেতো  -   তবে   এত  আয়োজন  করে নবী  করিম   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া   সাল্লামকে  নেয়া হয়েছিল   কেন?    এতে    তো   হযরত     আলীরই   শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত   হয়   -    এটা   কুফরী।    শিয়াদের   এই   মিথ্যা    অপবাদ মনগড়া ও ইসলাম বিরুধী আক্বীদা।

১০। শিয়াদের অনেক উপদলই শরীয়তের বিধি বিধান রহিত হয়ে  গেছে  বলে বিশ্বাস  করে।  যেমন    সাবইয়া, খাত্তাবিয়া,         মানসুরিয়া,         মুয়াম্মারীয়া,         বাতিনীয়া,  কারামাতা,  রেজামিয়া -   প্রভৃতি  শিয়াগণ এই  আক্বীদা পোষণ করে যে,  বর্তমানে    শরীয়তের সব  বিধি বিধান রহিত হয়ে গেছে। এরা আরও বলে - নামায রোযা হজ্ব যাকাত   দ্বারা    প্রচলিত   ইবাদত   বুঝায়   না।    এগুলোর একটি  গোপন  অর্থ   আছে   -  যার  অর্থ  একমাত্র  ইমাম মাসুম জানেন - অন্য কেউ নয়।

কুরআন হাদীসের বানী সমূহ প্রকাশ্য অর্থেই গ্রহন করা মুসলমানদের আক্বীদা। কুরআন হাদীসের বিধি  বিধান স্পষ্ট ও চিরস্থায়ী।

১১।  ইমামিয়া   শিয়ারা  বলে:  হযরত  আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকটেও ফেরেস্তা ওহী নিয়ে  আসতো। নবী ও হযরত আলীর ওহীর   মধ্যে  শুধু  পার্থক্য  এতটুকু যে   - নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া   সাল্লাম    ফেরেস্তা দেখতেন,   কিন্তু   আলী   শুধু   কথা   শুনতেন   -   ফেরেস্তা  দেখতেন  না।   আর   একদল   শিয়া  বলে  -  নবী  করিম সালাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের পর বিবি     ফাতিমা    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহা      এর    নিকট    ওহী আসতো।  এ   ওহী   জমা  করে  রাখা  হয়েছে  এবং  এর নাম   মাসহাফে  ফাতিমা।  ভবিষ্যতে    সংঘটিত   অনেক ঘটনা  ও   ফিৎনা   ঐ  ফাতিমী    মাসহাফে   লিখা  আছে। তাদের    ইমামগণ    ঐ   মাসহাফ    দেখে   দেখে   গায়েবী সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন।

ইসলামী আক্বীদা হচ্ছে: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামের    পর   আল্লাহর    বানী   নিয়ে   আর  কোন ফেরেস্তা      দুনিয়াতে    আসেননি।     তাদের    এই    ধারণা পবিত্রাত্বাদের প্রতি অপবাদ মাত্র।

১২।   শিয়ারা   বলে:   ইমামের    এই  ক্ষমতা  আছে  যে,   তিনি যখন মনে করেন, তখন যে কোন শরীয়তী বিধান পরিবর্তন বা বাতিল করে দিতে পারেন (নাউযুবিল্লাহ)।

মুসলমানদের    কোন     ধর্মীয়     ইমাম    বা    নেতার    এই  অধিকার নেই যে,  সে শরীয়তের কোন বিধান  মানসুখ বা   বাতিল   করে   দিতে   পারেন   বা   পরিবর্তন   করতে  পারেন।    ইহা    একমাত্র    নবীর    শান।    তিনি    ছাহেবে  শরীয়ত।   তিনি   পারেন    রহিত   করতে      বা   পরিবর্তন করতে।


উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন