সপ্তম পর্ব
৯। কেবলামুখী হওয়া: ”শিয়াদের বিধানে নফল নামায এবং তিয়াওয়াতের সিজদায় কেবলামুখী হওয়া জরুরী নয়। যেকোন দিকে মুখ করে নফল পড়া ও সিজদায়ে তিয়াওয়াত করা তাদের মতে বৈধ”। শিয়াদের এই মত শরীয়ত বিরোধী। প্রত্যেক নামাযে এবং সিজদায়ে তিয়াওয়াতে কিবলামুখী হওয়া প্রধান শর্ত।
১০। নাপাক জায়গায় নামায: ”নামাযের জায়গায় শুকনা পায়খানা থাকলে এবং মুছল্লীর শরীরে বা কাপড়ে লাগলে শিয়াদের মতে নামায শুদ্ধ হবে”। সুন্নীমতে - নামাযের জায়গা পাক হওয়া ফরয।
১১। নামাযে চলাফেরা করা: ”শিয়াদের মতে মুছল্লিরা নামাযরত অবস্থায় দশ গজের মধ্যে ঘরে যাতায়াত করতে পারবে”। সুন্নী মতে - নামাযের মধ্যে আমলে কাছির (নামাযের বাইরের কাজ) নামায ভঙ্গের প্রধান কারণ। ঘরে যাতায়াত করাও আমলে কাছির।
১২। নামাযে ছানা অবৈধ: নামাযের মধ্যে ”ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা”পাঠ করলে শিয়া বিধানে নামায শুদ্ধ হবে না। সুন্নীমতে - উক্ত ছানা পাঠ করা সুন্নাত এবং সূরা জ্বীনে ”ওয়া আন্নাহু তায়ালা জাদ্দু রাব্বিনা” - কুরআনের আয়াত। সুতরাং যে কোন স্থান থেকে পাঠ করাই বৈধ”। উক্ত বাক্য পাঠে নামায ভঙ্গ হবে কেন?
১৩। নামাযে পানাহার করা: শিয়াদের নির্ভরযোগ্য ফিকাহের কিতাব ”শারায়িউল আহকাম”এ উল্লেখ আছে - ”নামাযের ভিতর পানাহার করা জায়েয ”।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে নামাযরত অবস্থায় পানাহার করা নিষেধ ও হারাম। ইহাই সুন্নী আক্বীদা।
১৪। নামাযরত মহিলার সাথে অশ্লীল আচরণ: ”শিয়াদের নেতৃস্থানীয় ফকিহ তুনী, আবু জাফর ও অন্যান্য শিয়া উলামাদের মতে নামাযরত অবস্থায় সুন্দরী কোন মহিলাকে ঝাপটে ধরে নিজ লিঙ্গ নারীস্থানের বরাবর লাগিয়ে ঘষা দিলে এতে যদি মজি বের হয় - তাতে নামায নষ্ট হবে না”। (নাউযুবিল্লাহ)
সুন্নীমতে এ ধরনের কাজ অন্য সময়েও অপরাধ এবং জঘন্য পাপ। নামাযরত অবস্থায় খোদার সম্মুখে এমন বেহায়া কাজ করা জঘন্যত্ম অপরাধ।
১৫। এক সাথে দুই ওয়াক্তের নামায: ”শিয়াদের মতে কোন ওযর বা সফর ছাড়াই যোহর - আছর এবং মাগরিব - এশা এক সাথে আদায় করা জায়েয”।
সুন্নীমতে - আরাফাতের ময়দানে হজ্বের দিনে মসজিদে নামিরায় জামাতে অংশগ্রহণকারী হাজীগণই কেবল যোহর ও আছর এক সাথে আদায় করতে পারবেন। মোজদালেফায় মাগরিব ও এশা এক সাথে এশার সময় মসজিদে মাসআরিল হারামে আদায় করতে পারবেন। আরাফাতের ময়দানে যারা মসজিদে না গিয়ে তাঁবুতে নামায আদায় করবেন - তারা এক সাথে যোহর - আছর আদায় করতে পারবেন না। পৃথক সময় পড়তে হবে।
১৬। ব্যবসায়ীদের জন্য কছর নামায নাই: ”শিয়াদের মতে ব্যবসা উপলক্ষে সফর করলে নামায পড়া যাবে না, কিন্তু রোযা ভঙ্গ করা যাবে। ইবনে ইদ্রিছ, ইবনে মো'লেম, তুসী - প্রমুখ শিয়া ওলামাগণ এই মতের পক্ষে”।
সুন্নী মাযহাব মতে - ”সব ধরনের সফরেই নামায কছর পড়তে হবে এবং রোযা ভঙ্গ করার এখতিয়ার আছে। পরে ক্বাযা করতে হবে।”
১৭। মাতম ও কপাল চাপড়ানো: শিয়া মাযহাব মতে মৃত ব্যক্তির শোক প্রকাশ করার বেলায় পুরুষদের ক্ষেত্রে পিতা, ছেলে ও ভাই - এর জন্য জামা ও কাপড় চোপড় ছিঁড়ে কান্না - কাটি করা এবং নারীদের ক্ষেত্রে যে কোন মৃত ব্যক্তির অনুরূপ শোক করা জায়েয”।
সুন্নীমতে - হাদীসে আছে - ”যারা শোকে চুল ছিড়ে অথবা কাপড় ছিঁড়ে - তারা আমার দলভূক্ত নয়”। অন্য হাদীসে আছে - ”যে ব্যক্তি জামা কাপড় ছিঁড়ে অথবা কপাল চাপড়ায়, সে আমার দলের নয়”।
১৮। আছর পর্যন্ত রোযা: ”শিয়া ধর্ম মতে - আশুরার রোযা ভোর হতে আছর পর্যন্ত মুস্তাহাব”।
সুন্নীমতে তাদের এই বিশ্বাস কোরআনের পরিপন্থী। কেননা, কোরআনে আছে - ”সুর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো”।
১৯। গাদীরে খুম রোযা: জিলহজ্ব চাঁদের ১৮ তারিখে ”গাদীরে খুম” দিবসে রোযা রাখা শিয়াদের মতে সুন্নাত।
সুন্নীমতে - নবীগণ, সাহাবীগণ বা ইমামগণ যে কাজ করেননি - তা ছুন্নাত নয়। শিয়ারা ঐ দিন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর জন্য রোযা রাখে। হযরত আলী কি ঐ দিন রোযা রাখতেন?
২০। ই'তেকাফ: ”শিয়াদের মতে যে মসজিদে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জুমা প্রতিষ্ঠা করেছেন - সে মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে ই'তেকাফ করা জায়েয নেই”।
সুন্নীমতে তাদের এই ধারণা কোরআনের খেলাফ। কোরআন বলে, ”যে কোন মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী গমন করতে পারবে না। এখানে সব মসজিদের কথাই বলা হয়েছে। তাদের কথা সঠিক হলে অল্প কয়টি মসজিদেই ই'তিকাফ করা যাবে।
২১। জিহাদ: ”শিয়াদের মত - জিহাদ কেবল রাসুলের সাথী, হযরত আলীর যুগের লোক, ইমাম হাসানের ছয় মাস খিলাফতকালের লোক, ইমাম হোসাইনের সঙ্গী ও ইমাম মাহদীর সঙ্গীদের উপরই ফরয”।
- এ কারণেই পাক ভারতের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং ইরানের বাহাউল্লাহ ইরানী - উভয়েই নবুয়ত দাবী করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছিল। মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেছেন - ”কাফিরছে লড়না হারগেজ দুরস্ত নেহী ”- অর্থাৎ কাফিরদের সাথে জিহাদ করা একেবারেই দুরস্ত নয়। অথচ - নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন - ”জিহাদ ও নিয়্যাত কিয়ামত পর্যন্ত ফরয”। ইহাই সুন্নী আক্বীদা।
২২। বিবাহ: ”শিয়াদের মতে - আত্মসংযম এবং ফিতনার ভয় - উভয় অবস্থায়ই বিবাহ না করা মুস্তাহাব”।
সুন্নীমতে শিয়াদের এই ধারণা নবী ও ইমামগণের সুন্নাতের পরিপন্থী এবং প্রকৃতিরও বিরুদ্ধাচরণ। বৈধ বিবাহ তারা অনুৎসাহী হলেও অবৈধ মুত'আর নামে সাময়িক বিবাহ বন্ধনে শিয়ারা খুবই আগ্রহী।
২৩। অন্য পথে যৌন ক্রিয়া: ”বিবাহিতা স্ত্রী অথবা বাঁদী দাসীর সাথে পায়খানার রাস্তায় যৌন ক্রিয়া করা শিয়াদের মতে জাযেয়”।
হাদীসে এসেছে: ”যে ব্যক্তি পায়খানার রাস্তায় স্ত্রী সংগম করে - সে অভিশপ্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)। সুতরাং অন্য পথে যৌন ক্রিয়া হারাম। ইহাই সুন্নী মত।
২৪। মুত'আ বিবাহ: ”ভোগ বিলাসের উদ্দেশ্যে অর্থের বিনিময়ে কোন নারীকে কিছু সময়ের জন্য বিবাহ করা শিয়াদের ধর্মে জায়েয”।
তাদের মতে মুতআ উত্তম ইবাদত। মুতআ বিবাহের ফযিলত সম্পর্কে শিয়াদের অনেক মওযু ও মনগড়া হাদীস রয়েছে। ”ফিকহে জাফরী”নামক তাদের ইসলামী আইন গ্রন্থে মুতআ বিবাহ হিন্দু মুসলমান, অগ্নী উপাসক, নির্বিশেষে সকল নারীর সাথেই বৈধ। শিয়াদের মতে - ”মুতআ দাওরিয়া” জায়েয। অর্থাৎ - একই নারীকে সম্মলিতভাবে বিবাহ করা এবং পালাক্রমে উপভোগ করা জায়েয। (নাউযুবিল্লাহ)।
”ইসনা আশারিয়া” শিয়াগণের মুহাক্কিক পন্ডিয়গণ তাদের কিতাবে এ ধরণের মুতআ বিবাহের বৈধতা স্বীকার করলেও সাধারণ শিয়াগণ এর বৈধতা স্বীকার করে না। ইসলামে মুতআ বিবাহ ব্যাভিচারেরই নামান্তর। সমাজ সভ্যতার লক্ষ্যে এবং রক্তের পবিত্রতা ও বংশ রক্ষার উদ্দেশ্য নারী পুরুষের বৈধ স্থায়ী বন্ধনকে শরীয়তে 'বিবাহ' বলে। অস্থায়ী বা টেম্পরারী কোন বিবাহ ইসলামে বৈধ নয়। আরবের জাহিলী যুগের মুতআ বিবাহকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধে ওহীর মাধ্যমে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কেননা, মুতআ বিবাহ হলে তার মা - বোন, খালা, নানী, বেটী - নাতনী - ইত্যাদি ক্ষেত্রে পার্থক্য করা যাবে না। কালের প্রবাহে হয়তো ঐ মহিলারই কন্যা সন্তান বা অধ:স্তন অন্য কোন নারীর প্রতি কামভাব নিয়ে দৃষ্টি করলে ঐ মহিলার মা, মেয়ে খালা, ফুফু ও অন্যান্য মাহারেম মহিলাকে বিবাহ করা হারাম হয়ে যাবে। এটাকে কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ”হুরমত বিল মুসাহারাত” বলা হয়। কামদৃষ্টি ও তজ্জনিত উদ্ভূত হারাম পরিস্থিতি থেকে এবং সামাজিক বৈবাহিক জটিলতা থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম পর্দা বা হিযাবের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। মুতআ বিবাহ বৈধ করণের মাধ্যমে শিয়া সমাজকাঠামো সমূলে বিনষ্ট হয়েছে। হালাল হারামের কোন পার্থক্যই তাদের মধ্যে নেই।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন