শিয়া পরিচিতি

সপ্তম পর্ব
=======
শিয়াদের    পৃথক   আচার   অনুষ্ঠান   ও   পৃথক   শরীয়তী  বিধান:
শিয়াগণ  আচার  অনুষ্ঠান  ও  শরীয়তের  বিধি  বিধানের ক্ষেত্রে নিজস্ব পৃথক   মতবাদ ও  মাসআলা -   মাসায়েল তৈরী      করেছে।     এগুলো      তাদের      নিজস্ব     ফিকাহর কিতাবে     লিপিবদ্ধ      রয়েছে।    শাহ     আবদুল     আজিজ দেহলভী     রহমাতুল্লাহি    আলাইহি    এ    গুলোর    একটি  তালিকা    ”তোহফা    ইসনা    আশারিয়া”     নামক     গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। সেখান থেকে কিছু নমুনা উল্লেখ করা হচ্ছে।

১। ঈদে  গদীরে খুম: ১১ হিজরীতে  বিদায় হজ্ব থেকে   মদিনা     শরীফে     প্রত্যাবর্তন      কালে      যিলহজ্বের     ১৮ তারিখে পথিমধ্যে 'গদীরে খুম' নামক স্থানে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে একত্রিত করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। উক্ত ভাষণের এক  পর্যায়ে   হযরত   আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  সম্পর্কে এরশাদ করেছিলেন  ”মান কুনতু মাওলাহু, ফা আলীউ মাওলাহু” (বুখারী)। অর্থাৎ আমি যার  মাওলা, আলীও তার মাওলা”।

হযরত   আলী    রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুকে   এই  দিন   মাওলা  উপাধী  দান  করায়  শিয়াগণ   মনে   করেছে   -  নবীজীর পরবর্তী  খলিফা   হযরত   আলী    ছাড়া  অন্য  কেউ  নয়। তাই  শিয়ারা  এই দিনকে  তাদের  ঈদের   দিন হিসাবে  পালন করে  থাকে। এই দিনের ঈদকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হতেও তারা উত্তম মনে করে এবং ”ঈদে আকবর”দলে    স্বীকৃতি     দেয়।   তাই   শিয়ারা   জিলহজ্ব চাঁদের   ১৮   তারিখে     ”ঈদে   গদীরে   খুম”   ধুমধামের সাথে    পালন    করে।    কেননা,    এই    দিনেই    ”গদীরে  খুম”এর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদত্ত হয়েছিল এবং হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাদের মতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম  এর  উত্তরাধীকারী  নিযুক্ত  করা  হয়েছিল।

২।   ঈদে    বাবা  সুজাউদ্দিন:   হযরত   ওমর  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু    এর  হত্যাকরীর  নাম  আবু  লুলু।  সে  ছিল  অগ্নি উপাসক। হযরত ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু   এর দরবারে আবু লুলু   তার  মনিবের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে    মামলায়  হেরে  যায়।     এতে   সে  প্রতিজ্ঞা  করে   -   হযরত   ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু     আনহু      কে      সে     শহীদ     করবে।      এরই ফলশ্রুতিতে ২২ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ২৮ তারিখে  আবু লুলু মজুসী  মসজিদে নববীতে ইমামতির দায়িত্ব    পালনরত   অবস্থায়   হযরত   ওমর    রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু  এর  পিঠে  ছুরিকাঘাত  করে  তাঁকে  শহীদ  করে  ফেলে।    ইন্না  লিল্লাহ.......।    শিয়াগণ  আবু   লুলুর  এই  বিরত্বপূর্ণ  (?) কাজের স্বীকৃতি  স্বরূপ   প্রতি বৎসর  ৯ই রবিউল  আউয়াল তারিখে    আবু লুলু স্মরণে  ঈদ পালন করে  থাকে।  আবু লুলুকে   শিয়ারা ”বাবা   সুজাউদ্দিন” (দ্বীনের    বীর)   বলে   সম্বোধন   করে   এবং    তার   স্মৃতি  স্মারক   হিসাবে   উক্ত   ঈদের   নাম   রাখে   ”ঈদে   বাবা  সুজাউদ্দিন”    (নাউযুবিল্লাহ)    শিয়াদের   ধর্মগুরু    আলী  ইবনে  মাযাহের  ওয়াসেতী   -    আহমদ  ইবনে   ইসহাক কুমী  -    এর    সূত্রে  বর্ণনা    করেছে  যে,  আহমদ   ইবনে ইসহাক  কুমী  (কুম    শহরের  অধিবাসী)  বলেছে:  ঈদে আবু   লুলু  বা   ঈদে  বাবা  সুজাউদ্দিন    -   এর  এ  দিনটি সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন, গৌরবের দিন, পবিত্রতা অর্জনের মহান দিন,  বরকতের  দিন এবং সর্বপরি -  আত্মতৃপ্তির  দিন”। উক্ত আহমদ ইবনে ইসহাক কুমী  সর্বপ্রথম এই ঈদের   প্রচলন   করে।   তার  অনুসারীরা    পরবর্তীকালে নিয়মিতভাবে এই  ঈদ পালন করতে থাকে। এরা বলে -  পূর্ববর্তী  তাদের  ইমামগণ  নাকি   উক্ত   ঈদ  পালনের নির্দেশ       দিয়ে       গেছেন।       প্রকৃতপক্ষে       এটা         অগ্নি উপাসকদের  ঈদ বা  আনন্দ   দিবস। কেননা, তাদেরই লোক     হযরত     ওমর     রাদ্বিয়াল্লাহু     আনহু    কে    শহীদ করেছিল।

৩। নওরোজ  উৎসব পালন:   ইরানের অগ্নি উপাসকরা আবহমানকাল    থেকে    নওরোজ   উৎসব   পালন    করে আসছে।     এটা     অগ্নি     উপাসকদের     ধর্মীয়      উৎসব।  শিয়াগণ নববর্ষের এই দিনকে সম্মান করে। বিধর্মীদের উৎসব পালন করা কুফরী।

মুহাজ্জাব   গ্রন্থে   ইবনে  ফাহদ  বর্ণনা  করেন   -  ”এইটি  অগ্নি উপাসকদের শ্রেষ্ঠতম ধর্মীয় দিবস”। বিশ্বস্ত  সূত্রে বর্ণিত    আছে:    নওরোজ    দিবসে   জনৈক   ব্যক্তি     কিছু মিঠাই ও ফালুদা নিয়ে কুফায় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু   এর  খিদমতে   হাদিয়া   স্বরূপ  পেশ   করে।   এই মিঠাই  ও   ফালুদা  পেশ   করার  কারণ   জানতে  চাইলে উক্ত    ব্যক্তি  হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  কে  এটা নওরোজের      হাদিয়া      বলে     জানায়।      হযরত      আলী রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু    ঘৃনাভরে     ঐ    মিঠাই      ও     ফালুদা  প্রত্যাখ্যান   করে   বললেন    -    মুসলমানের    প্রতিদিনই   নওরোজ  বা   নূতন   দিন।   শিয়াগণ  অগ্নি  উপাসকদের এই দিবসকে সম্মান  করে এবং  নিজেরাও পালন করে -   অথচ  হযরত    আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  এই  দিনকে ঘৃণা করতেন। বিধর্মীদের ধর্মীয় কাজের অনুসরণ করা নিষিদ্ধ ও কুফরী।

৪।       শাসকদের      সিজদা      করার         প্রথা:      শিয়াদের আলিমগণ যালেম শাসক বা বাদশাহকে সিজদা করার প্রথা    চালু   করে।   শিয়া   আলিম    বাকের   মজলিশী   ও অন্যান্য শিয়া ইমামগণ এই প্রথা চালু করে।

সম্ভবত: দিল্লীর বাদশাহ সম্রাট আকবর ”দ্বীনে ইলাহী” প্রবর্তন করে  তাদের অনুকরণে  এই সিজদা  প্রথা পূন: চালু      করেছিলেন।    কেননা,    তাঁর    মা     হামিদা     বানু, প্রধানমন্ত্রী     বৈরাম    খান,   আবুল   ফ'যল,   ফৈজী,   শেখ মুবারক, আবদুর রহমান খানে খানান, নবরত্ব ও উজির নাজির   -    তারা  সবাই   ছিলেন   শিয়া।  কাজেই  ”দ্বীনে ইলাহীর” উপর শিয়াদের প্রভাব পড়া খুবই স্বাভাবিক। শিয়াদের প্রভাবপুষ্ট দ্বীনে ইলাহীকে ধবংস করার  জন্য মুজাদ্দিদে   আলফিসানী,   শেখ   আবদুল    হক   মুহাদ্দিছ  দেহলভী,     আবদুল    কাদির     বদায়ুনী,    মোল্লা    দো     - পেয়াজা   -  প্রমুখ সুন্নী আলিমগণ  ও পীর  মাশায়েখগণ অগ্রণী    ভূমিকা   পালন  করেছিলেন।  ইসলামে   আল্লাহ  ছাড়া    অন্য    কাউকে     সিজদা     করার       বিধান     নেই। ইবাদতের   নিয়তে   মানুষকে সিজদা করা  শিরক  এবং তাজীমী সিজদা করা কবিরা  গুনাহ। উভয়টিই নিষিদ্ধ। নবী    করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া    সাল্লাম    এবং  সাহাবায়ে   কেরাম  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুমা  কারও সিজদা গ্রহণ    করেননি।   ইসলামে   সিজদার  পরিবর্তে  সালাম  প্রথা চালু হয়েছে।

৫।  শারাব    হালাল  ও   পবিত্র:  শিয়াদের  ইমাম   ইবনে বাবুওয়াই, জু'ফী ও ইবনে আকিল - প্রমুখ ফকিহগণের মতে   শরাব  পবিত্র  এবং  হালাল। (অথচ  - কুরআনের  দ্বারা ইহা হারাম প্রমাণিত। )

৬।       মজি      ও      অদী:       ”শিয়াদের      মতে      শারিরীক উত্তেজনায়    পুরুষের   মজি   ও   অদী    (পাতলা   বীর্য   ও ঘোলা প্রস্রাব) বের হলে অজু নষ্ট হয়না”।

শরীয়তের   বিধান   হলো   -   বীর্য   বা   মনি   নির্গত   হলে  গোসল ফরয। আর মজী ও অদী নির্গত  হলে শুধু অজু  করা ফরয।

৭।        ঈদে        নওরোজ:        নওরোজের        দিন        (অগ্নী  উপাসকদের ঈদের  দিন)   গোসল করা শিয়াদের মতে সুন্নাত।
আরব   দেশে    নওরোজ     ছিলনা    এবং   এখনও    নেই। কাজেই সুন্নাত হওয়ার দাবীটাই মিথ্যা।

৮।  রক্তমাখা কাপড়ে নামায: শিয়াদের বিধানে  শরীর  থেকে নির্গত রক্ত - পুঁজ ইত্যাদিতে পরিধানের পোষাক নষ্ট    হলেও   তাতে   নামায    পড়া   বৈধ।      কিন্ত    আহলে সুন্নাতের    ইমামগণের   মতে  রক্তমাখা  কাপড়ে  নামায  অশুদ্ধ।

উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন