শিয়া পরিচিতি

ষষ্ঠ পর্ব
=======
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে শিয়াদের  ভ্রান্ত আক্বীদা:

১। শিয়াদের মতে হযরত  আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর প্রতি    ভালবাসা    মুক্তি     ও      নাজাতের    জন্য    যথেষ্ঠ।   শিয়াদের   শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস  বাবুওয়াই  কুমী (কুম শহরের  অধিবাসী) মুগাদ্দাল ইবনে আমরের সূত্রে ইমাম জাফর সাদেক   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু   এর    কথিত  মন্তব্য   উল্লেখ  করে   বলেন:  ”একদিন    মুফাদ্দাল   আবু   আবদুল্লাহকে (ইমাম  জাফর   সাদেকের  কুনিয়াত)  জিজ্ঞাসা করলো: হযরত      আলী     কেমন      করে      বেহেস্ত     ও     দোযখের  বন্টনকারী     হলেন?     উত্তরে    ইমাম     আবু      আবদুল্লাহ বললেন -  হযরত আলীর মহব্বতের  নামই ঈমান এবং তাঁর  প্রতি বিদ্বেষের নামই  কুফর।  বেহেস্ত সৃষ্টি  হয়েছে ঈমানদের জন্য  এবং দোযখ সৃষ্টি হয়েছে    কাফিরদের জন্য। অতএব   পরোক্ষভাবে হযরত আলীই  বেহেস্ত  ও দোযখ   বন্টনকারী।  তাঁর   প্রেমিক   ব্যতিত  অন্য  কেউ  বেহেস্তে  যাবে  না  এবং  তাঁর  প্রতি  বিদ্বেষ  পোষণকারী  ব্যতিত অন্য কেউ দোযখে যাবে না।”

জবাব: উক্ত  বর্ণনা মিথ্যা।  কেননা,  কুরআন   হাদীসের পরিপন্থী কোন কথা ইমাম বংশের কেউ বলতে পারেন না।   তদুপরি  -    তাদের    সূত্র  মতে  ফেরাউন,  নমরুদ, শাদ্দাদ   -   তারাও   দোযখে   যাবে   না।   কেননা,   তারা  আলীকে  চোখেও  দেখে   নাই   -  বিদ্বেষ  পোষণ  করবে কখন?।   অথচ   কুরআন   হাদীসের   ভাষ্য   মতে   তারা  জাহান্নামী।

২।   শিয়া   মুহাদ্দিছ    বাবু   ওয়াই   আর   একটি   মনগড়া  হাদীস     বর্ণনা    করে      হযরত    আলী    কে    নবী    করিম সাল্লাল্লাহু      আলাইহি     ওয়া     সাল্লামের      উপর     মর্যাদা দিয়েছে।      সে       হযরত      আবদুল্লাহ      ইবনে       আব্বাস রদ্বিয়ালাহু আনহু এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছে: ”নবী করিম    সাল্লাল্লাহু     আলাইহি     ওয়া    সাল্লাম     বলেছেন: আমার      নিকট      জিব্রাইল      আলাইহিস      সালাম      এই  সুসংবাদ দিয়েছেন যে,  মহান  আল্লাহ   আমাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন   আমার   প্রেরিত  নবী ও আমার   রহমত। আর আলী  হলেন  আমার হুজ্জাত বা   দলীল ও প্রমাণ।  যে      ব্যক্তি   আলীকে  ভালবাসবে  -  তাকে  আমি    শাস্তি দেবনা - যদিও সে আমার  নাফরমানী করুক না কেন। আর    যে  ব্যক্তি  আলীর  সাথে  দুশমনি  করবে  -  তাকে আমি   রহম   করবোনা    -    যদিও    সে   আমার     অনুগত হোকনা কেন”। (নাউযুবিলাহ)

জবাব: উক্ত বর্ণনায় দেখা যায় যে, নবুয়ত ও রহমতের মর্যাদা দেয়া  হয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আর হুজ্জাত বা দলিল প্রমাণের মর্যাদা দেয়া হয়েছে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে। হুজ্জাত এর মর্যাদা নবুয়ত ও রহমতের উপরে। আল্লাহর নাফরমানী করে    আলীর    মহব্বত   পোষণ   করলেই     শাস্তি   থেকে রেহাই    পেয়ে   যাবে   -    এটা   ইসলাম   পরিপন্থী   কথা। কুরআনে আছে  ”যারা   আল্লাহ  ও  রাসুলের নাফরমানী করবে  -  তারা  স্পষ্ট  পথভ্রষ্ট”  (সূরা  আহযাব)  আলীর  নাফরমানীর কথা কুরআনে নেই।

৩।  শিয়াদের  নির্ভরযোগ্য  নেতা  হাসান  ইবনে কাবাশ নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া   সাল্লাম এর নামে একখানা      মনগড়া       হাদীসে      বলেছে:      নবী       করিম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়া  সাল্লাম  আলী   সম্পর্কে   দীর্ঘ  এক হাদীসের শেষে নাকি বলেছেন - ”আলী পরকালে দোযখের পিঠে দাঁড়িয়ে   তাঁর প্রেমিকদেরকে জাহান্নাম থেকে        বের        করে       নিয়ে        আসবেন       এবং       তাঁর বিরুদ্ধবাদীদেরকে    দোযখে    প্রবেশ   করিয়ে    দেবেন। অত:পর   বেহেস্তের দরজায়  গিয়ে যাকে  ইচ্ছা বেহেস্তে প্রবেশ করাবেন।” (নাউযুবিল্লাহ)

জবাব:  এই    কথিত  হাদীসে  তো   প্রমাণিত    হলো  যে, হযরত  আলীর   কোন  কোন  প্রেমিকও  প্রথমে   দোযখে যাবে।  পরে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে দোযখ থেকে  উদ্ধার করে আনবেন।  অথচ শিয়া  নেতার (বাবু ওয়াই)    ২   নং  বর্ণনায়  বলা    হয়েছে  -  হযরত   আলীর প্রেমিক  শাস্তি    পাবে   না  আর  ৩  নং  নেতার  (কাবাশ)  বর্ণনায় দেখা যায় -  কেউ কেউ   শাস্তি ভোগ করার পর খালাস     পাবে     -     হযরত      আলী      রদ্বিয়ালাহু      আনহু  তাদেরকে দোযখ   থেকে  বের  করে আনবেন। সুতরাং উভয়টিই অসংলগ্ন ও পরস্পর বিরুধী কথা।

উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন