দশম পর্ব
*******
পূর্ব প্রকাশিতের পর
----------------
আহলে সুন্নাতের মতে আহলে বাইত:
কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম ও উলামাগণ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াছ - এই চার দলীলের মাধ্যমে হুযুরের বিবিগণ, চার ছেলে, চার মেয়ে ও জামাতা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে ”আহলে বাইত” বলে বিশ্বাস করেন। হাদীস দ্বারা প্রমাণীত অন্যদেরকেও আহলে বাইত বলে স্বীকার করেন। তবে হযরত বিবি ফাতেমা, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু - এই চারজনকে সবার উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কেননা, উনাদের উচ্চ মর্যাদা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এখানেই শিয়া ও সুন্নীদের আক্বীদার পার্থক্য। শিয়াগণ ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ”আহলে বাইত” বলে স্বীকার করলেও তাঁর বংশধরগণকে ”আহলে বাইত” বলে মানেনা। যেমন গাউসুল আযম আবদুল কাদির জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হাসানী বংশ হওয়া সত্বেও শিয়ারা তাঁকে ”আহলে বাইত” বলে স্বীকার করেনা।
উল্লেখ্য যে, শিয়াগণ পাক পাঞ্জাতন, আহলে রেদা, আহলে কাছা এবং আহলে আবা নামে শুধু পাঁচজনকেই ”আহলে বাইত” বলে। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মতে আহলে বাইত - এর পরিধি ব্যাপক। তন্মধ্যে চাদর দ্বারা আবৃত পাঁচজনকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিবি ফাতেমা, হযরত আলী, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা আহলে রেদা, আহলে কাছা বা আহলে আবা এবং পাক পাঞ্জাতন বলে পৃথকভাবে প্রাধান্য ও পৃথক সম্মান দিয়ে থাকেন। পাক পাঞ্জাতন হলেন খাস বা বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী এবং আহলে বাইত হলেন আম বা ব্যাপক সংখ্যক নবী পরিবারবর্গ।
আরো উল্লেখ্য যে, বিবি ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর বংশধরগণই কেবল পরবর্তীকালে ও বর্তমানে আহলে বাইত এবং সৈয়দ খান্দান বলে বিবেচিত। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আহলে বাইত - এর অন্তর্ভূক্ত হলেও তাঁর অন্য স্ত্রীগণের গর্ভজাত সন্তানগণ কিন্তু ”আহলে বাইত” ও ”আওলাদে রাসুলের” অন্তর্ভূক্ত নহেন। তাঁদের উপাধী হলো আলভী। অন্য কোন লোক আওলাদে রাসুল বলে দাবী করলে জাহান্নামী হবে। হযরত আলীর অন্য বংশধরগণকে ”আওলাদে আলী”- বলা হয় এবং ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর গর্ভজাত সন্তানগণকে ”আওলাদে রাসুল” বলা হয়ে থাকে। নসব পরিবর্তনকারী জাহান্নামী (আল হাদীস)। সুতরাং আওলাদে রাসুল হতে হলে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের বংশধর হতে হবে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বিবিগণ ”আহলে বাইত”- এর অন্তর্ভূক্ত:
====
তাফসীরে কবির, মিরকাত, আশিয়াতুল লোমআত - প্রভৃতি প্রামাণ্য গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, হক কথা হলো এই যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে, মেয়ে ও পবিত্র বিবিগণ - সকলেই হুযুরের ”আহলে বাইত”- এর অন্তর্ভূক্ত (কানযুল ঈমান ও খাযায়েনুল ইরফান দ্রষ্টব্য)।
হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবিগণ যে, ”আহলে বাইতে নবুয়াত”- এর অন্তর্ভূক্ত - ইহা কুরআন মজিদ, তাফসীর ও অনেক সহীহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণীত।
কুরআন মজীদ দ্বারা প্রমাণ:
১। বাংলা উচ্চারণ: ”ওয়া ইয গদাওতা মিন আহলিকা তুবাউ ইবুল মু'মিনীনা মাক্বাঈদা লিল ক্বিতালি” (আলে ইমরান, ১২১ আয়াত)।
অর্থ: হে প্রিয় রাসুল! স্মরণ করুন - যখন আপনি নিজ পরিবার (আহলে বাইত) এর নিকট হতে প্রত্যুষে বের হয়ে জিহাদের জন্য মুমিনগণকে যুদ্ধ ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করতে ছিলেন”।
শানে নুযুল:তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১৪ তারিখ ভোরে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার ঘর হতে বের হয়ে মুসলমানগণকে নিয়ে উহুদের ময়দানে পৌঁছে তাঁদেরকে বিভিন্ন ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করেছিলেন। যুদ্ধ কৌশলে এই কাজটি ছিল নিখুঁত। তাই আল্লাহ তায়ালা এই যুদ্ধ সফর ও ঘাঁটি স্থাপন কাজটিকে প্রশংসা করে এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা কে হুযুরের আহলে বাইত বলেছেন। সুতরাং বুঝা গেল - আহলে বাইতে রাসুলের মধ্যে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ও অন্তর্ভূক্ত।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
(চলবে)
*******
পূর্ব প্রকাশিতের পর
----------------
আহলে সুন্নাতের মতে আহলে বাইত:
কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম ও উলামাগণ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াছ - এই চার দলীলের মাধ্যমে হুযুরের বিবিগণ, চার ছেলে, চার মেয়ে ও জামাতা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে ”আহলে বাইত” বলে বিশ্বাস করেন। হাদীস দ্বারা প্রমাণীত অন্যদেরকেও আহলে বাইত বলে স্বীকার করেন। তবে হযরত বিবি ফাতেমা, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু - এই চারজনকে সবার উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কেননা, উনাদের উচ্চ মর্যাদা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এখানেই শিয়া ও সুন্নীদের আক্বীদার পার্থক্য। শিয়াগণ ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ”আহলে বাইত” বলে স্বীকার করলেও তাঁর বংশধরগণকে ”আহলে বাইত” বলে মানেনা। যেমন গাউসুল আযম আবদুল কাদির জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হাসানী বংশ হওয়া সত্বেও শিয়ারা তাঁকে ”আহলে বাইত” বলে স্বীকার করেনা।
উল্লেখ্য যে, শিয়াগণ পাক পাঞ্জাতন, আহলে রেদা, আহলে কাছা এবং আহলে আবা নামে শুধু পাঁচজনকেই ”আহলে বাইত” বলে। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মতে আহলে বাইত - এর পরিধি ব্যাপক। তন্মধ্যে চাদর দ্বারা আবৃত পাঁচজনকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিবি ফাতেমা, হযরত আলী, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা আহলে রেদা, আহলে কাছা বা আহলে আবা এবং পাক পাঞ্জাতন বলে পৃথকভাবে প্রাধান্য ও পৃথক সম্মান দিয়ে থাকেন। পাক পাঞ্জাতন হলেন খাস বা বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী এবং আহলে বাইত হলেন আম বা ব্যাপক সংখ্যক নবী পরিবারবর্গ।
আরো উল্লেখ্য যে, বিবি ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর বংশধরগণই কেবল পরবর্তীকালে ও বর্তমানে আহলে বাইত এবং সৈয়দ খান্দান বলে বিবেচিত। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আহলে বাইত - এর অন্তর্ভূক্ত হলেও তাঁর অন্য স্ত্রীগণের গর্ভজাত সন্তানগণ কিন্তু ”আহলে বাইত” ও ”আওলাদে রাসুলের” অন্তর্ভূক্ত নহেন। তাঁদের উপাধী হলো আলভী। অন্য কোন লোক আওলাদে রাসুল বলে দাবী করলে জাহান্নামী হবে। হযরত আলীর অন্য বংশধরগণকে ”আওলাদে আলী”- বলা হয় এবং ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর গর্ভজাত সন্তানগণকে ”আওলাদে রাসুল” বলা হয়ে থাকে। নসব পরিবর্তনকারী জাহান্নামী (আল হাদীস)। সুতরাং আওলাদে রাসুল হতে হলে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের বংশধর হতে হবে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বিবিগণ ”আহলে বাইত”- এর অন্তর্ভূক্ত:
====
তাফসীরে কবির, মিরকাত, আশিয়াতুল লোমআত - প্রভৃতি প্রামাণ্য গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, হক কথা হলো এই যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে, মেয়ে ও পবিত্র বিবিগণ - সকলেই হুযুরের ”আহলে বাইত”- এর অন্তর্ভূক্ত (কানযুল ঈমান ও খাযায়েনুল ইরফান দ্রষ্টব্য)।
হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবিগণ যে, ”আহলে বাইতে নবুয়াত”- এর অন্তর্ভূক্ত - ইহা কুরআন মজিদ, তাফসীর ও অনেক সহীহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণীত।
কুরআন মজীদ দ্বারা প্রমাণ:
১। বাংলা উচ্চারণ: ”ওয়া ইয গদাওতা মিন আহলিকা তুবাউ ইবুল মু'মিনীনা মাক্বাঈদা লিল ক্বিতালি” (আলে ইমরান, ১২১ আয়াত)।
অর্থ: হে প্রিয় রাসুল! স্মরণ করুন - যখন আপনি নিজ পরিবার (আহলে বাইত) এর নিকট হতে প্রত্যুষে বের হয়ে জিহাদের জন্য মুমিনগণকে যুদ্ধ ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করতে ছিলেন”।
শানে নুযুল:তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১৪ তারিখ ভোরে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার ঘর হতে বের হয়ে মুসলমানগণকে নিয়ে উহুদের ময়দানে পৌঁছে তাঁদেরকে বিভিন্ন ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করেছিলেন। যুদ্ধ কৌশলে এই কাজটি ছিল নিখুঁত। তাই আল্লাহ তায়ালা এই যুদ্ধ সফর ও ঘাঁটি স্থাপন কাজটিকে প্রশংসা করে এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা কে হুযুরের আহলে বাইত বলেছেন। সুতরাং বুঝা গেল - আহলে বাইতে রাসুলের মধ্যে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ও অন্তর্ভূক্ত।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
(চলবে)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন