শিয়া পরিচিতি

দশম পর্ব
=======
আহলে বাইত - সংজ্ঞা ও পরিধি: 
আহলে    সুন্নাত   ওয়াল   জামাতের  হাককানী  উলামায়ে কেরামের  মধ্যে অন্যতম আলেম মুফতি আহমদ ইয়ার খান    নাঈমী     রহমাতুল্লাহি   আলাইহি   যিনি    তাফসীরে নাঈমী,       জাআল        হক,       শানে        হাবীবুর       রহমান,  সালতানাতে মোস্তফা সহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন - তাঁর লিখিত আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নামক গ্রন্থে  তিনি  ”আহলে বাইত”- এর  যে সংজ্ঞা  দিয়েছেন এবং    যে   তাত্ত্বিক    আলোচনা   করেছেন    -   তা   থেকে  উদ্ধৃতি পেশ করা হল –

তিনি   বলেন:   প্রথমে   এটা    বুঝা   প্রয়োজন  যে  -   নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া  সাল্লাম   এর  ”আহলে বাইত” কারা এবং এর অর্থ কি?

”আহল”    একটি     আরবী   শব্দ।    এর   শাব্দিক    অর্থ   - ওয়ালা।    ”বাইত”-   আর    একটি    আরবী    শব্দ।     এর শাব্দিক   অর্থ    -   ঘর।   সুতরাং   ”আহলে    বাইত”    এর একত্রে    শাব্দিক   অর্থ   দাঁড়ায়    ”ঘর    ওয়ালা”-   অর্থাৎ একই    ঘরে     বসবাসকারী।     ব্যবহারিক    অর্থে    ঘরের অধিবাসীদেরকে  আহলে বাইত বলা  হয়। স্ত্রী ও  ছেলে মেয়েকে  সাধারণত:   আহলে  বাইত  বলা  হয়ে  থাকে।  অনুরূপভাবে 'আহল' শব্দটির ব্যবহার অন্যান্য ক্ষেত্রেও হতে পারে। যেমন  - আহলে এলম,   আহলে  দৌলত  - ইত্যাদি।

”আল” আরেকটি  আরবী  শব্দ। এর অর্থও  বংশধর বা পরিবারবর্গ। তবে  ”আহল  ও  আল” দুটি শব্দের মধ্যে তত্ত্বগত কিছু পার্থক্য আছে। ”আহল”- শব্দটি মানুষের ক্ষেত্রে   এবং   অন্যান্য     বস্তুর    ক্ষেত্রে     ও    ব্যাপকভাবে ব্যবহার   করা  যায়।  যেমন   -  আহলে    বাইত,    আহলে এলেম,   আহলে  দৌলত,  আহলে  ফলানা     -  ইত্যাদি।  কিন্তু      ”আল”     শব্দটি      শুধুমাত্র      মানুষের     বেলাতেই ব্যবহৃত     হয়।     যেমন      -       আলে     রাসুল-     (রাসুলের বংশধর), আলে ইমরান -  (ইমরানের  বংশধর), আলে  ফিরআউন - (ফেরাউনের অনুসারী বা খাদেম)।

পারিভাষিক   অর্থে    -   পরিবার  পরিজনকে   সাধারণত: ”আল”   বলা    হয়।  আবার    কোন   কোন  সময়   বিশিষ্ট খাদেম ও   অনুসারীগণকেও ”আল” বলা  হয়ে থাকে।   যেমন - উপরে আলে ইমরান, আলে ফেরাউন ও আলে রাসুল তিনটি  শব্দে   দেখানো হয়েছে। ”আলে  রাসুল”  বলতে অনুসারী এবং খাদেমকেও বুঝায়।

আহলে বাইত কারা?
এবার  দেখা  যাক   - ”আহলে   বাইতে নবী” অর্থ  কি?  এর অর্থ  হচ্ছে  -  নবী করিম   সাল্লাল্লাহু আলাইহি    ওয়া সাল্লামের ঘরের অধিবাসীগণ এবার প্রশ্ন আসে - ঘরের অধিবাসী   বলতে  কাকে  বুঝায়?  ঘরের  অধিবাসী   দুই প্রকার।    যথা:    (১)    নসব    বা    বংশগত    সূত্রে    ঘরের  বাসিন্দা।   যেমন,   ছেলে  ও  মেয়ে  (২)   বৈবাহিক  সূত্রে ঘরের বাসিন্দা। যেমন, স্ত্রী। প্রথমটি আবার দুই প্রকার - (১) ছেলে (২) মেয়ে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চার ছেলে   - কাসেম, তৈয়ব, তাহের ও ইব্রাহীম  পিতৃগৃহে  জন্মগ্রহন  করে  পিতৃগৃহেই  অবস্থান  করেছেন। কিন্তু    চার   মেয়ে -  জয়নব, রোকেয়া, উম্মে  কুলসুম ও হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহা পিতৃগৃহে জন্মগ্রহন করে পরে স্বামী গৃহে গমন করেছেন। হযরত জয়নব    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহা    আবুল    আস    রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহা   এর  ঘরে,  হযরত   রোকেয়া  ও   উম্মে   কুলসুম   রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা  পর  পর হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ঘরে এবং হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হযরত     আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   এর    সংসারে   গমন করেছেন। তাঁরা  উভয়   দিকের  ”আহলে  বাইত”- এর অন্তর্ভূক্ত।

দ্বিতীয়  প্রকার  -  আহলে  বাইতুছ    ছুকনা   বা  বৈবাহিক  সূত্রে   ঘরের   বাসিন্দা। উনারা হলেন -  হযরত খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা,  হযরত   সওদা  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহা, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা সহ হুযুরের ১১   জন     বিবি।   তাঁদেরকেও    ”আহলে    বাইতুন   নবী ছুকনা” বলা হয়।

উপরোক্ত   পর্যালোচনা দেখা   যায়  যে,  কেবলমাত্র পুত্র সন্তানগণই    ঘরের     স্থায়ী     বাসিন্দা     বা    স্থায়ী    আহলে বাইত।  মেয়েগণ  প্রথমে  পিতার  ঘরের  আহলে  বাইত  এবং   পরে   স্বামী   গৃহেরও   আহলে   বাইত   হয়ে   যান।  সুতরাং হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর   ”আহলে বাইত” বলতে  মূলত: চার ছেলে, চার  মেয়ে ও এগার বিবিকেই বুঝানো হয়েছে। তবে হযরত আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু  খাজা    আবু  তালেবের  ছেলে হয়েও   বিবি     ফাতিমা    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহা   এর     স্বামী হওয়ার  কারণে   আহলে   বাইত  এর  অন্তর্ভূক্ত   হওয়ার   গৌরব  অর্জন   করেছেন    -   নবীজির   বিশেষ  হাদীসের মাধ্যমে।   হযরত   আলী    রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু     শিশুকাল থেকেই   হুযুরের   ঘরে   লালিত    পালিত।    কিন্ত   হযরত ওসমান  রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  এবং  হযরত    আবুল    আস রাদ্বিয়াল্লাহু     আনহু      জামাতা      হয়েও     তাঁরা      আহলে  বাইতের অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন নি।

শিয়াদের মতে আহলে বাইত: 
শিয়াগণ শুধু বিবি ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এবং তাঁর দুই   ছেলে-    ইমাম     হাসান   ও   ইমাম    হোসাইন   এবং হযরত     আলী      রাদ্বিয়াল্লাহু       আনহুমাকেই     ”একমাত্র আহলে বাইত” বলে স্বীকার করে অন্য কাউকে স্বীকার করে    না।       হুযুরের     অপর     তিন     সাহেবজাদী,    চার সাহেবজাদা      এবং       এগার     বিবিকে       তারা     আহলে বাইতের বহির্ভূত বলে মনে করে।


উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

(চলবে)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন