এই উপমহাদেশে মােগলদের কর্তৃক ভারত জয় এবং শাসনভার গ্রহণের পর আরবদের এই পাথর শিল্প ও কারুকার্য দ্বারা মােগলরা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয় ।
ভারতের বহু স্থানে মােগলদের তৈরি মসজিদ, দরগাহ, সমাধিতে পাথরে খচিত রয়েছে কোরানের বাণী, পবিত্র হাদীসের বাণী এবং কারুকার্য খচিত বিভিন্ন শিল্পকর্মে । হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর পদচিহ্ন কালাে পাথরে ধারণ এবং খচিত মােগলদের শুধু আকৃষ্ট করেনি, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় সবাই মাথা নত করে দিয়েছিল ।
একেবারে শীতলক্ষ্যা নদী ঘেষে গ্রামের গভীর জঙ্গলময় পরিবেশে জনমানবহীন একটি স্থানে এই পবিত্র পদচিহ্ন মাথার উপর রেখে হাজী নূর মােহাম্মদ ও তদীয় পত্নী অবস্থান করতেন। স্বামীর বিশ্রাম ও ঘুমে স্ত্রী মাথার উপর রেখে বসে থাকতেন আবার স্ত্রীর বিশ্রাম ও ঘুমে স্বামী মাথার উপর রেখে বসে থাকতেন। তখন থেকেই
শুরু হয় মানুষের মনে গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা নদীর মত শীতলক্ষ্যা উত্তাল এবং ভাঙ্গাগড়ার ইতিহাস না হলেও এই নদী বহন করছে অনেক শাসকদলের ইতিহাস, যুদ্ধ, অনেক কাহিনী, অনেক রূপকথা । নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত খিজিরপুর বা হাজীগঞ্জ দুর্গের ঠিক পূর্বপাড়ে অবস্থিত এই কদমরছুল দুর্গ না হলেও দুর্গ হিসাবে অনেক সময় ব্যবহৃত হয়েছে বার ভূইয়া কর্তৃক ।
শীতলক্ষ্যা নদীর এই স্থানটিতে ঈশা খাঁর সৈন্য ও মােগল সৈন্যদের মধ্যে অনেকবার হয়েছে নৌকাযুদ্ধ। অনেক শাসকের রাজত্বকালে কদমরছুল পেয়েছে স্বল্পকালীন রাজধানীর সম্মান । শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ঈশা খাঁ ও চাঁদ রায়ের কন্যা সােনা বিবির প্রেমের উপাখ্যান।
পর্তুগীজ জলদস্যু থেকে শুরু করে মােগল সেনাপতি ও সৈন্যদের, ঈশা খাঁ ও তার সৈন্যদের বিচরণ ছিল শীতলক্ষ্যা নদী ও নদী পাড়ের অনেক অঞ্চল।
রাজধানী জাহাঙ্গীর নগরের (ঢাকা) সঙ্গে নদীপথে সংযােগের মাধ্যমে ছিল দোলাইখাল । দোলাই খালের অস্তিত্ব নেই, ঢাকাতে শুধু একটি নাম আছে বর্তমানে।
এই দোলাইখাল দিয়ে আসতেন মােগল শাসক ছাড়া আরও অনেক শাসক, এসেছেন অনেক ভক্ত, নির্মাণ করেছেন ইমারত কদমরসুলে ।
বৃটিশ দুত মিঃ রালফ ফিচ ১৫৮৬ খ্রীষ্টাব্দে আকবরের সময় এদেশে এসে বিশাল নৌকা নিয়ে বঙ্গদেশে ভ্রমণকালে কদমরছুল দর্শন করেন। শুধু কদম রছুল নয় শীতলক্ষ্যা নদীর দু'কুলের নয়নাভিরাম সবুজ শ্যামল দুশ্য তাকে মুগ্ধ করেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছেন ।
পেইজ নং - ৬
(চলবে)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন