প্রথম পর্ব
=======
শিয়া ফির্কার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও আক্বীদা:
======
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
****************
৩। ছাব্বাইয়া বা তাবাররাইয়া শিয়া ফির্কা:
এই সম্প্রদায়ভূক্ত শিয়াগণ সালমান ফারসী, আবু যার গিফারী, মিকদাদ, আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম - প্রমুখ সাহাবীগণ ব্যতীত অন্য সব সাহাবীগণকেই গালিগালাজ দিয়ে থাকে। এমনকি - তারা উক্ত মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাকি সব সাহাবীকেই কাফির ও মুনাফিক বলে বিশ্বাস করে এবং গালিগালাজ করে থাকে। তারা এ কথাও বলে যে, বিদায়ী হজ্জ্ব সমাপন করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে ”গাদীরে খুম” নামক স্থানে সাহাবায়ে কিরামকে একত্রিত করে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর সম্পর্কে বলেছিলেন - ”আমি যার মাওলা, আলী ও তার মাওলা”।
তারা মনে করে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভাষণের দ্বারা হযরত আলীকেই তাঁর পরবর্তী খলিফা নিয়োগ করে গেছেন। সুতরাং পরবর্তীকালে ঐ সময়ে উপস্থিত সাহাবীগণ হুযুরের ইন্তিকালের পর নাকি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে হযরত আলীকে খলিফা নির্বাচিত না করে বরং হযরত আবু বকর সিদ্দীকের হাতে বাইয়াত করে সকলেই মুরতাদ শ্রেণীর কাফির হয়ে গেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। এই সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় হযরত আলীর খিলাফতকালেই। ইয়েমেনের সানা প্রদেশবাসী কুখ্যাত ইহুদি মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবার কুমন্ত্রণা ও উস্কানীতে এই বদ আক্বীদার সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে সোয়াইদ নামক জনৈক ব্যক্তি হযরত আলীর খিদমতে এসে বললেন যে, আমি একটি সম্প্রদায়কে দেখেছি - ”তারা হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে গালমন্দ করছে। আপনি হয়তো অন্তরে অন্তরে এ ধারণা পোষণ করেন বলেই তারা এই প্রকাশ্য গালমন্দের দু:সাহস দেখাচ্ছে”। একথা শুনেই হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু লজ্জায় নাউযুবিল্লাহ বলে আমাকে নিয়ে কুফার মসজিদে প্রবেশ করে সমবেত মুসল্লীদের উদ্দেশ্য এক সারগর্ভ ভাষণে বললেন: ”কত হতভাগা ঐ সব লোক - যারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর উযির ও সাহাবী, কুরাইশ সর্দার ও মুসলমানদের পিতৃতুল্য দুই সাহাবী সম্পর্কে কটুক্তি করছে। আমি এসব লোকের সংস্পর্শেও নেই। তাঁরা উভয়ে আজীবন রাসুলে পাকের নিত্যসঙ্গী ছিলেন। ইনতিকালের সময় পর্যন্ত তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। ভালবাসা, বিশ্বস্ততা ও আল্লাহর নির্দেশাবলী প্রতিষ্ঠায় তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা দিয়ে তাঁরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহচর্য দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি ভালবাসাই ইবাদত তুল্য এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাই ঈমান থেকে খারিজ হওয়ার সমতুল্য।”
এ কথা বলেই তিনি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা - এর বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ইরাকের মাদায়েনে গিয়ে আত্মগোপন করে। এই ছাব্বাইয়া গোত্রের শিয়ারা প্রথম শ্রেণীর শিয়াদের থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা করে নিজেদের নাম রাখে ”আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত”। এটা ছিল তাদের আত্মরক্ষার ধোঁকাবাজী ও প্রতারণামূলক কাজ। আজকালও দেখা যায় যে, কোন সম্প্রদায় ওহাবী বা দেওবন্দী অথবা মওদুদী বলে পরিচিত হয়ে গেলে তারা নিজেদেরকে ”আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত” বলে আত্মপরিচয় দেয় এবং ঐ নামে প্রতারণামূলক প্যারালাল সংগঠনও দাঁড় করে ফেলে। এটা তৃতীয় শ্রেণীর শিয়াদের মতই প্রতারণামূলক কাজ। আমাদের দেশের চুনকুটির সদর উদ্দীন চিশতী ও তার অনুসারীরা ছাব্বাইয়া শিয়াদের অনুসারী। এরা খুবই জঘন্য মুনাফিক।
৪। ঘালী বা চরমপন্থী শিয়া:
এই ফির্কার শিয়াদের উদ্ভব হয় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফতকালেই। ইহুদি চর আবদুল্লাহ ইবনে সাবা’র ইঙ্গিতেই এই শাখার সৃষ্টি হয়। এই চরমপন্থী শিয়াদের আক্বীদা ও বিশ্বাস হলো - ”হযরত আলী -ই- খোদা” (নাউযুবিল্লাহ)। এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা ছিল ইবনে আবিল হদিস নামীয় জনৈক কবি। এই আক্বীদাপন্থীর পরিচয় পেলে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথেই তাকে কতল করে ফেলতেন। এই শেষোক্ত ফির্কার লোক যদিও পূর্বের তিনটি দলের তুলনায় কম ছিল - তবু তারা পরবর্তীকালে চব্বিশটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। (সূত্র: তোহফা ইসনা আশারিয়া - শাহ আবদুল আজিজ)
আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন