শিয়া পরিচিতি

নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী আলা রাছুলিহিল কারীম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

শিয়া পরিচিতি
====
ফির্কা    সৃষ্টির    ভবিষ্যৎদ্বানী:     (হাদীস)   -     নবী   করিম সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়া   সাল্লাম     ইরশাদ   করেছেন- ”আমার উম্মত অচিরেই তিয়াত্তর  ফির্কায়  বিভক্ত   হয়ে যাবে - তন্মধ্যে একটি ছাড়া বাকী বাহাত্তরটি জাহান্নামী হবে”। উক্ত বাহাত্তরের মধ্যে শিয়া ফির্কা একটি। শিয়া ফির্কা পূন: ৬৩ টি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

ফির্কা সৃষ্টির ইতিকথা
=========
ভূমিকা:  ইসলামে  বিভিন্ন   ফির্কার  সৃষ্টি    হয়  খিলাফতে রাশেদা         যুগের        শেষের         দিকে।        ত্রিশ         বৎসর খিলাফতকালের মধ্যে প্রথম  পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত  কোন ফির্কার   অস্তিত্ব    ছিলনা।     হযরত   ওসমান   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু     শহীদ    হওয়ার     সাথে    সাথেই     সলামী    রাষ্টে মুসলমানদের মধ্যে ভূল বুঝাবুঝি ওঅনৈক্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।  হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  এর ১২ বৎসর    খিলাফতের    শেষ ছয় বৎসরে জনৈক ইয়াহুদী গুপ্তচর   মুসলমান   সেজে    হযরত    ওসমান   রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  এর  খিলাফতের  বিরুদ্ধে    লোকদেরকে  উস্কানী দিতে থাকে। তার   নাম  আবদুল্লাহ ইবনে  সাবা।  তার   দেশ   ইয়েমেন।    সানা   শহরে   ছিল  তার   আবাসভূমি। ইসলামী   রাষ্ট্র    তখন     আরব     ভূখন্ড   ছেড়ে   আফ্রিকা, ইউরোপের     সাইপ্রাস,     এশিয়া     মহাদেশের    পারশ্য, এশিয়া    মাইনর      ও     চীন   সীমান্ত    পর্যন্ত   এবং   দক্ষিন এশিয়ায় বর্তমান  পাকিস্তান   সীমান্ত  পর্যন্ত  বিস্তৃত ছিল।  আরবের চেয়ে অনারব  মুসলমানের সংখ্যা ছিল বেশী। আবদুল্লাহ   ইবনে সাবা মিশর,  ইয়েমেন, কুফা, বসরা, খোরাসান-  প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক   সফর  করে  বক্তৃতা ও    বিবৃতির   মাধ্যমে    হযরত    ওসমানের    খিলাফতের  বিরুদ্ধে লোকদেরকে  উত্তেজিত করে  তোলে। শুরু হয় ভূল     বুঝাবুঝির।     মাথা     চাড়া     দিয়ে     উঠতে     থাকে  বিদ্রোহ।   এভাবে   মুনাফিক   আবদুল্লাহ    ইবনে    সাবার প্রথম       পরিকল্পনা       সফল       হলো।       দুর্বল       চিত্তের  মুসলমানদের     মধ্যে     বিচ্ছিন্নতা      সৃষ্টির     প্রথম      বীজ এভাবেই     বপন    করতে     সক্ষম     হয়েছিলো    ইয়াহুদী  মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। কিন্তু সে রইলো ধরা- ছোঁয়ার   বাইরে।   যেমনটি     ঘটছে     বর্তমানে    -   ইহুদি  নাসারা  ষড়যন্ত্রের  বেলায়।   তারা   মুসলমানদের   মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়ে।

হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর শাহাদাতের পর খলিফা  নিযুক্ত     হন   হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু। হযরত  আলী    (কাররামাল্লাহু  ওয়াজহাহু)  -এর  ক্ষমতা সুসংহত   হওয়ার    পূর্বেই   হযরত   ওসমান   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুর শাহাদাতের বিচার  অনুষ্ঠানের দাবী তোলা হয় এবং উক্ত বিচার হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি আনুগত্য স্বীকারের  পূর্বশর্ত হিসাবে আরোপ করা হয়। আবদুল্লাহ    ইবনে     সাবা      এ    দাবীর     পেছনে     ইন্দন  জোগাতে  শুরু   করলো।  কিন্তু   প্রকাশ্যভাবে   মুনাফিক্বী চাল    এঁটে    সে    হযরত   আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   এর আস্থাভাজন   হওয়ার   চেষ্টা    করলো।    এঅবস্থায়     ঘটে  গেলো   দু:খজনক   দুটি   ঘটনা।   একটি   হলো   -   জঙ্গে  জামাল  বা উষ্ট্রের   যুদ্ধ।  দ্বিতীয়টি  হলো জঙ্গে সিফফিন বা সিফফীনের  যুদ্ধ। প্রথমটির নেতৃত্ব দেন মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা  এবং দ্বিতীয়টির নেতৃত্ব  দেন হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। এই দুই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুই  বাতিল ফির্কার   সূচনা হলো। একটির    নাম ”শিয়া ফির্কা”; দ্বিতীয়টির নাম ”খারিজী ফির্কা”।  শিয়া ফির্কা হলো  হযরত   আলীর  পক্ষে  এবং  খারিজীরা   বিপক্ষে।  তারা  এমন  সব   জঘন্য   আক্বীদার  সৃষ্টি  করলো-   যার  কোন  ভিত্তি   ইসলামে   খুঁজে     পাওয়া   যায়না।  খারিজী ফির্কার     প্রথম     প্রতারণামূলক     শ্লোগান     ছিল     পবিত্র  কোরআনের    একটি    পবিত্র    বাণী    ”ইনিল    হুকমুইল্লা  লিল্লাহ”    অর্থাৎ     আল্লাহর    হুকুমত     ছাড়া    অন্যকোন  হুকুমত আমরা মানিনা”।

আল্লাহর    কালামের   মনগড়া   ব্যাখ্যা    করে    খারিজীরা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকে অস্বীকার করে  বসলো।  এই   খারিজী     দল  যুগে   যুগে  ইসলামী  রাষ্ট্রে   বহু    ফিতনা    সৃষ্টি    করেছে।   এই   দলেই   পয়দা হয়েছে   ইবনে   তাইমিয়া   ও   মুহাম্মাদ   ইবনে   আবদুল  ওহাব     নজদী    (শামী,    তারিখে      নজদ    ও     হিজায)। বর্তমানকালে  আবুল     আ'লা  মউদুদীকেও  নব্যখারিজী ফির্কা  বলে অভিহিত করেছেন দেওবন্দী উলামাগনসহ সর্বস্তরের উলামা মাশায়িখগণ। বিস্তারিত বিবরণ শর্ষিনা থেকে  প্রকাশিত  ”মউদুদী  জামাতের  স্বরূপ”  (১৯৬৬  ইং) পুস্তকে দেখা যেতে পারে।

শিয়া     ফির্কা     প্রথমদিকে     কেবলমাত্র      হযরত      আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্বপক্ষের  লোকদেরকেই বলা হত। তাঁদেরকে   বলা   হতো  শিয়া  মুখলিসীন।  এদের  মধ্যে সাহাবায়ে  কেরামগণও   ছিলেন।  তাঁদের  কোন    পৃথক আক্বীদা  ছিলনা।  পরবর্তীতে হযরত   আলী রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুর  যামানাতেই  শিয়াদের  আরেকটি   শাখার   সৃষ্টি হলো। এদেরকে বলা হতো তাফলিদিয়া শিয়া বা অন্য সাহাবীগণের উপর হযরত আলী রদ্বিল্লাহু আনহু শ্রেষ্ঠত্ব আরোপকারী  শিয়া।  এরপর  সৃষ্টি    হলো   তৃতীয়   শিয়া ফির্কা।          এদের         নাম         হলো         ”ছাব্বাইয়া”           ও ”তাবাররাইয়া” - যারা অন্য সাহাবীগণকে গালিগালাজ করতো।       এই       দলের     নেতাসেজে     বসলো      ইহুদি মুনাফিক্ব  আবদুল্লাহ  ইবনে   সাবা।  এরপর  সৃষ্টি    হলো শিয়াদের    চতুর্থ    ফির্কা   ”ঘালী   শিয়া”   বা   চরম   পন্থী শিয়া।

এই     ঘালী    বা     চরমপন্থী     শিয়া    পরবর্তীতে    ৬৩    টি উপ-শাখায়   বিভক্ত   হয়েছে।   এদের   মধ্যে   ইমামিয়া,  ইসমাঈলীয়া, ইসনা আশারিয়া ও কারামাতা শিয়াগণই বেশী পরিচিত ও জঘন্য আক্বীদায় বিশ্বাসী।

(সূত্রঃ          আল-মিনহাতুল          ইলাহিয়া          -          তালখিছু  তারজামাতুত    তুহফাতিল    ইসনা    আশারিয়া    -    কৃত,  আল্লামা    সাইয়্যিদ    মাহমুদ    শিকরী    ইবনে    সাইয়্যিদ  আবদুল্লাহ  হুসাইনী  আলূসী  বাগদাদী  ইবনে  সাইয়্যিদ  মাহমুদ   আলূসী  বাগদাদী,  প্রণেতা    -তাফসীরে   রুহুল মা'আনী।    আল-    মিনহাতুল    ইলাহিয়া    আরবী    গ্রন্থটি  অবলম্বন করেই  শিয়া  পরিচিতি রচনাকরা হলো। (মূল কিতাব হলো ”তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া”)।

আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিত' কিতাব থেকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন