শিয়া পরিচিতি

প্রথম পর্ব
=======
শিয়া ফির্কার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও আক্বীদা:
======
শিয়া    সম্প্রদায়     -    যারা    হযরত     আলী    কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহু  এর  স্বপক্ষীয়  ও  অনুসারী  বলে  দাবি  করে  এবং  তাঁকে  মহব্বত  করে।  তারা  মূলত:  চার  ফের্কায়  বিভক্ত। যথা:

১। প্রথম যুগের আদি শিয়া বা মুখলিসীন শিয়া:
হযরত   আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  এর  খিলাফতকালের  (৩৫-৪০হিজরী)     মুহাজির,     আনসার     এবং     তাঁদের  অনুসারী তাবিয়ীগণ এই দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তাঁরা হযরত আলীর  ন্যায্য   প্রাপ্য   ও মর্যাদার  স্বীকৃতি দাতা  ছিলেন।   পক্ষান্তরে  তাঁরা   অন্য  কোন  সাহাবীকে  ছোট করে দেখানো কিংবা    তাঁদেরকে   গালিগালাজ করা বা কাফির  মনে  করা  -  ইত্যাদি  দোষ-  ত্রুটি  হতে  সম্পূর্ণ  মুক্ত      ছিলেন।      কুরআনের      ব্যাখ্যায়      তাঁরা      হযরত  আলীকেই অনুসরণ  করতেন।  বাইআতুর রিদওয়ানের মধ্যে শরীক চৌদ্দশত সাহাবীর মধ্যে আটশত সাহাবীই সিফফীনের যুদ্ধে হযরত আলীর পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তন্মধ্যে তিনশত সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। অবশ্য কোন   কোন    সাহাবী    উক্ত   যুদ্ধ    থেকে    নিজেদেরকে  দূরত্বে  রেখেছিলেন   - শুধু সাবধানতা  অবলম্বন করার   জন্য।    তাঁরা    এসব    ঝামেলায়    নিজেদেরকে    জড়িত  করেননি। এঁদের মধ্যে অন্যতম  ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

জঙ্গে     জামাল      ও      জঙ্গে      সিফফীনে     হযরত      আলী রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু     ছিলেন   সত্যের   উপর   প্রতিষ্ঠিত।  অনেকেই    পরে   হযরত  আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু    এর সাথে     যোগদান       না     করার      জন্য       দু:খও     প্রকাশ  করেছিলেন।  শিয়া  শব্দটি  কখন  থেকে  প্রচলিত  হয়  -  সে সম্পর্কে শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তোহফা  ইসনা  আশারিয়া গ্রন্থে বলেন:   ৩৭  হিজরী সনে শিয়া বা ”শিয়ীয়ানে আলী” শব্দটি প্রচলিত হয়। এই দলের কোন পৃথক মতবাদ বা নিজস্ব আক্বীদা ছিলনা।     তাঁরা   সর্ব   বিষয়ে   হযরত   আলী    রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে অনুসরণ করতেন।

২। তাফলিদিয়া শিয়া:
এই  সম্প্রদায়ভূক্ত  শিয়াগন সমস্ত সাহাবায়ে    কেরামের উপর হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বেশী ফযিলত বা  মর্যাদা দিতেন বলে  এই নামকরণ   করা  হয়।   কিন্তু তাই বলে অন্য কোন সাহাবীকে গালি দেয়া বা কাফির বলা     কিংবা    তাঁদের     প্রতি       বিদ্বেষ    পোষণ    করা     - কোনটাই এঁদের   মধ্যে   ছিলনা। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম     উল্লেখযোগ্য    ব্যক্তিত্ব    ছিলেন    আরবী    নাহু  বিদ্যার     জনক     আবুল     আসওয়াদ    দোয়ায়লী।    তাঁর সাগরেদ    আবু  সাঈদ   ইয়াহইয়া,  সালেম   ইবনে   আবু হাফসা  (যিনি   ইমাম   বাকের  রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু  এবং  ইমাম জাফর সাদেক রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু    থেকে হাদীস বর্ণনা       করেছেন),        বিখ্যাত       অভিধান       ”ইসলাহুল  মানতিক” প্রণেতা আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক - প্রমুখ।

পরবর্তীকালের  বিখ্যাত  সূফী  সাধক  আল্লামা   আবদুর  রহমান জামী  রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর গ্রন্থাবলীতেও তাফদিলী মতবাদের কিছুটা  আভাস পাওয়া যায়। এই তাফদিলী  সম্প্রদায়ের  প্রকৃত  আত্মপ্রকাশ   ঘটে   প্রথম   সম্প্রদায় মুখলিসীন শিয়াদের দুই কি তিন বৎসর পরে অর্থাৎ ৩৯ বা ৪০ হিজরী সনে।

বিশ্বস্ত      বর্ণনামতে      দেখা     যায়      যে,      হযরত      আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু      আনহু       তাঁর      খিলাফত        কালেই       টের পেয়েছিলেন  যে,  কিছু  কিছু  লোক  তাঁকে  হযরত  আবু  বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু    আনহু   এর  উপর  মর্যাদা  দিচ্ছেন।    সাথে  সাথে তিনি এ আক্বীদা পোষণ করা থেকে বারণ করেন এবং বলেন -  ”যদি আমি কারও  মুখে একথা শুনি যে, হযরত  আবু   বকর   ও  হযরত  ওমরের  উপর   আমাকে মর্যাদা    দেওয়া     হচ্ছে    -   তাহলে    আমি   তাকে    আশি দোররা  মারবো”।  কোন  কোন  বর্ণনায়  দশ  দোররার  কথা উল্লেখ আছে।

(এই পর্বের বাকি অংশ পরের পোষ্টে দেওয়া হবে।)

আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন