ইসলামের প্রকৃত আদর্শ সুন্নী মতাদর্শ। এ আদর্শের অনুসারীদেরকেই অদৃশ্য বক্তা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম জান্নাতী বলেছেন। এর বিপরীতে আরো বাহাত্তর ফির্কার অস্তিত্বের কথা যেমন সহীহ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, তেমনি তাদের প্রকৃতি ও পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা দোযখী। এ বাহাত্তর ফির্কার অনেকগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলেও কয়েকটা ফির্কার অস্তিত্ব রয়ে গেছে। এ শেষোক্ত গোমরাহ্ ও দোযখী ফির্কাগুলোর মধ্যে কতিপয় ফির্কা নানাভাবে তাগূতী শক্তি দ্বারা মদদপুষ্ট হয়ে শুধু সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে পথহারা করে ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাতকে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে নিশ্চিহ্ন কিংবা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে, অনেক দীর্ঘ সময় থেকে। তথাপি আল্লাহ্ তা'আলার অশেষ মেহেরবানীতে, এ দোযখী ফির্কাগুলোর বিরুদ্ধে সফল মোকাবেলা করে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ আহলে সুন্নাত তথা সুন্নী মতাদর্শকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য প্রতিটি যুগে যাহেরী ও বাতেনী (রূহানী) শক্তি সমৃদ্ধ সুন্নী পীর-মাশাইখ ও হক্কানী-রাব্বানী ওলামায়ে কেরামও তিনি সৃষ্টি করেছেন। বলা বাহুল্য, বংশগত, জ্ঞানগত,রূহানী ও ত্বরীক্বতগত আভিজাত্য ও অদম্য বেলায়তী ক্ষমতার অধিকারী ওলী-মুর্শিদ কামিল-মুকাম্মিল হিসেবে শাহানশাহে সিরিকোট হযরত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হির নাম শীর্ষে।
সত্যিকার অর্থে ওলী
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে অকৃত্রিমভাবে ভালবাসেন।
আল্লাহর ভালবাসা ও ইশক্বে রসূল পূর্ণাঙ্গভাবে তাঁদের
মধ্যে থাকে। তাঁরা নিজেরা যেমন দেহ ও আত্মার দিক
দিয়ে একেবারে পরিশুদ্ধ থাকেন, তাঁদের অনেকে আবার পরিপার্শ্বিক মানুষ ও সৃষ্টিকে পরিশুদ্ধ করতে সচেষ্ট থাকেন। সমাজও তাঁদেরকে পীর-মুর্শিদ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাঁরাও আল্লাহ্- আল্লাহর রসূলের নির্দেশানুসারে মানুষকে সঠিকপথে স্থির রাখার জন্য বায়'আতের সুন্নাত পালন করান। এতে একদিকে তারা আল্লাহর ওলীর সান্নিধ্যের বরকত লাভ করে ধন্য হয়, অন্যদিকে বায়'আতের সময়ে কৃত ওয়াদা পালনের প্রতি যত্নবান হয়।
এদিকে পীর-মুর্শিদের মধ্যেও নিম্নলিখিত চারটা পূর্বশর্ত
যথাযথভাবে বিরাজ করলে সোনায় সোহাগা হয়: ১. বিশুদ্ধ আক্বীদা, আক্কাইদে আহলে সুন্নাতের ধারক হওয়া, ২. প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম থাকা, ৩. আমল বিশুদ্ধ থাকা,প্রকাশ্য ফাসিক্ব না হওয়া এবং ৪. বিশুদ্ধ সিলসিলায় খিলাফতপ্রাপ্ত হওয়া, যেই সিলসিলায় কোন বদ আক্বীদা কিংবা বদ আমলের ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ না থাকা ইত্যাদি ।
[সূত্র: ইরশাদত-ই আ'লা হযরত, আল-ক্বওগুল জামীল (সংক্ষেপিত)।
উক্ত ইশকে ইলাহী ও ইশ্বকে রসূল'-এর ধরনটুকুও এরূপ যে, 'আল-ইশক্ব ইয়াহরিকু মা-সেওয়াল মা'শুক্ব' (ইশক্ব মাশূক্ব ব্যতীত অন্য সব কিছুকে জ্বালিয়ে দেয়')। মোট কথা, আল্লাহ্ ও রাসূলের ভালবাসা ও ইশক্ব ওই ওলীর মধ্যে এমনভাবে জাগরুক থাকে যে, কাউকে আল্লাহর শানে কিংবা রসূলে আকরামের শানে অশোভন কথা বলতে শুনলে কিংবা করতে দেখলে ওই মহান ওলী বিচলিত ও অসহনীয় যন্ত্রণাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁর বেলায়তী শক্তি দ্বারা তাদের খন্ডন কিংবা তাদের পথ রোধে স্থায়ী বহুমুখী ব্যবস্থা করতে তৎপর হয়ে যান। ফলে, আল্লাহ্ তা'আলা এবং তাঁর রসূলে আকরামের পক্ষ থেকে তিনি অকল্পনীয়ভাবে সাহায্য প্রাপ্ত হন।
বলাবাহুল্য, আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ ওলীই কামিল- মুকাম্মিল হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি
রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হির ক্ষেত্রেও একজন কামিল ওলীর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর পূর্ণ সাফল্য যথাযথভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে ও হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মধ্যে বংশীয় আভিজাত্য, অসাধারণ দ্বীনি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান, জন্ম থেকে খাঁটি সুন্নী মতাদর্শ ধারণ, হযরত চৌহরভীর মত কামিল-মুকাম্মিল মুর্শিদের সন্ধান লাভ ও সান্নিধ্য গ্রহণ, অসাধারণ ও অস্বাভাবিক ধরনের রিয়াযত-মুশাহাদার অনুশীলন এবং আজীবন দ্বীন ও মাযহাবের স্বার্থে বেলায়তী দূরদর্শিতা ও অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা পরিনতি অবলোকন এবং সহীহ ত্বরীক্বতের খাতিরে অদম্য
সাহসিকতার সাথে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেই
গেছেন। এ উপমহাদেশের নয় বরং সারা বিশ্ব মুসলিম এ মহান ও বরকতময় যাতের বরকত লাভ করে ধন্য হয়েছে ও হচ্ছে এবং হতে থাকবে। আজ সব বিবেকবান ও কৃতজ্ঞজনের মুখে ঘোষিত হচ্ছে- এ দেশে তথা উপমহাদেশে শাহানশাহে সিরিকোটের শুভ পদার্পণ না ঘটলে ইসলামের সঠিক মতাদর্শ বা সুন্নী মতাদর্শের ইতিহাস ভিন্নভাবে, দুঃখজনকরূপে লিপিবদ্ধ হতো।
উল্লেখ্য, কামিল ঈমানদারগণ হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে কারো মুখে অশালীন কথা শুনলে তা বরদাশত করতে পারেন না। যেমন, হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর মাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তাঁর মা, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে, হুযূর-ই আকরামের শানে অশালীন মন্তব্য করে তাঁর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এটা শুনে তিনি মনের অসহনীয় দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে গিয়ে তাঁর মায়ের হিদায়তের জন্য দো'আর দরখাস্ত করেছিলেন। হুযূর-ই আকরামও দো'আ করেছিলেন এবং এর বরকতে সাথে সাথে তাঁর মা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। [মিশকাত: বাবুল মু'জিযাত]
আলহামদুলিল্লাহ্ শাহান শাহে সিরিকোটের মধ্যেও একজন কামিল-মুকাম্মিল ওলী ও মুরশিদের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ছিলো। এসব বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর ফূয়ূয ও বরকতের কিছুটা বর্ণনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।
(মাসিক তরজুমান,জ্বিলক্বদ ১৪৪১হি)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন