কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.) যুগের বিজেতাদের বংশ পরম্পরায় নবীকুল সরদার হুজুর পাক ﷺ'র আওলাদে পাক!
দোজাহানের বাদশা নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা ﷺ যেভাবে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ তাঁর আওলাদে পাকগণও উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রহমত, পথপ্রদর্শক ও হাউযে কাউছারের ঝর্ণাধারা রূপে আবির্ভূত। মহান আল্লাহ তা'আলা রাসুল ﷺ কে যে কাউছার (অসংখ্য নিয়ামত) দান করেছিলেন, তার একটি নিদর্শন হলো দ্বিনের রক্ষক, কোটি কোটি তৃষ্ণার্ত আশেকদের অমিয় সুধা, যুগের বিজেতা আওলাদে রাসুলগণ। এমনই একজন সাচ্ছা আওলাদে রাসুল হলেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.)। তিনি ১৮৫৬/৫৭ ইংরেজিতে হযরত সৈয়্যদ ছদর শাহ (রহ.)'র ঔরসে বর্তমান পাকিস্তানের পেশওয়ার এলাকার সিরিকোটে শুভাগমন করেন এবং ১০ জিলক্বদ ১৩৮০ হিজরির (১৯৬১ ইংরেজি) বৃহস্পতিবার শতোর্ধ্ব বছরের ইহজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান। তিনি পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়ে নবী পাক ﷺ'র আওলাদ।
#নবীর আওলাদে পাক যুগে যুগে বিজেতা রূপে মদিনা হতে সিরিকোটেঃ
রাসুলে আকরাম ﷺ'র অধস্তন ৮ম তম আওলাদ, হযরত সিরিকোটি (রহ.)'র উর্ধ্বতন ৩০তম পুরুষ এবং হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রা.)'র পৌত্র হযরত সৈয়্যদ জালাল আর রেজাল (রহ.) পবিত্র মদিনা হতে ইরাকের বাগদাদে আউস নামক স্থানে হিজরত করতে বাধ্য হন এবং সেখানে বসতি স্থাপন করেন। ইমাম সৈয়্যদ জালাল আর রেজাল (রহ.) তৎকালীন সময়ের কলুষিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিবেশ থেকে দূরে সরে কোরআন -সুন্নাহ এবং ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় মুহাম্মদ বিন ইসহাক রাসুল ﷺ'র জীবনীর উপর প্রথম ইতিহাস রচনার সূত্রপাত করেন। আওলাদে রাসুলগণের আগমন ও তাঁদের কোরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে আউস নগরী সমগ্র আরবে সুখ্যাতি লাভ করে। ৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে আল মনসুরের আমলে হিরাতে উস্তাদীয়াশী নামে এক প্রতারক নবুয়্যতের দাবী করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং সে সিজিস্থান ও খোরাসান দখল করে নিলে আল মনসুর বার বার পাল্টা আক্রমন করেও তার রাজ্য পুনরুদ্ধার ও তাকে দমন করতে না পেরে তৎকালিন বিখ্যাত আরব বীর ইবনে খোজাইমা কে ইরাকে প্রেরণ করে হযরত সৈয়্যদ আর রেজাল ওরফে জালাল (রহ.) এর সহয়তা প্রার্থনা করেন। ইবনে খোজাইমা কুফা, বসরা, মক্কা ও মদিনা হতে নবী প্রেমিকদের নিয়ে সুবিনস্ত বাহিনী গঠন করে বাগদাদে এসে সৈয়্যদ আর রিজাল (র.)'র কাছে আবেগঘন আবেদন করলে তিনি ভন্ড নবী দমনে খোজাইমার সফলতা কামনা করে দোয়া করেন এবং স্বীয় পুত্র সৈয়্যদ শাহ ক্বায়েন (ক্বায়েম) কেও জিহাদে যোগদানের নির্দেশ দেন। খোজাইমার বাহিনী আওলাদে মুস্তাফাকে পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে উস্তাদীশ বাহিনীর উপর জাপিয়ে পড়ে তার বাহিনীকে পরাজিত করে এবং সে নিহত হয়।
যুদ্ধসমাপে হযরত সৈয়্যদ শাহ ক্বায়েন আল ক্বায়েম (রহ.) খোরাসানে বসবাসের ইচ্ছা পোষণ করলে আল মনসুর এই আহলে বায়তের সদস্যের জন্য কিছু লাখেরাজ জমি ও ভাতার সুব্যবস্থা করেন। খোরাসানেও আওলাদে রাসুলের পদচারণে ইসলামী জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। ৯৭৯ সনের দিকে পাঞ্জাব ও পেশওয়ারের হিন্দু শাসক জয়রাম (জয় পাল) মুসলিম সম্রাজ্য গজনীতে আক্রামণ চালালে গজনীর শাসন কমর্তা সবুক্তগীন হিন্দু রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। এ খবর নিয়ে সবুক্তগীনের প্রেরিত দূত খোরাসানে পৌঁছে সেখানে বসবাসরত আহলে বায়তের সদস্য সৈয়্যদ ক্বাব ইবনে ক্বায়েম ওরফে জাফর (রা.) কাছে দোয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি স্বীয়পুত্র সৈয়্যদ ওমরের নেতৃত্বে তিন সহস্রাধিক পদাতিক বাহিনীর এক জিহাদী ফাফেলা সবুক্তগীনের সাহায্যে প্রেরণ করেন। ৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সবুক্তগীন বিশাল বাহিনী নিয়ে পাঞ্জাব আক্রমণ করলে সবুক্তগীন ও খোরাসানের সৈয়্যদ ওমরের বাহিনীর হাতে হিন্দুরাজ পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পন করে গজনির পার্শ্ববর্তী কয়েকটি অঞ্চলের বিনিময়ে সন্ধির মাধ্যমে তার রাজ্য রক্ষা করেন।
সবুক্তগীন মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র সুলতান মাহমুদ গজনভী সিংহাসনে আরোহন করলে পাঞ্জাব রাজ সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে গজনীর পাশ্ববর্তী অঞ্চল সমূহ পুনরায় দখল করে নেই। ১০০১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গজনভী দশহাজার অশ্বরোহী বাহিনীসহ বিশাল বাহিনী নিয়ে পাঞ্জাবের পেশওয়ার অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেন। পাঞ্জাব রাজ এই বিশাল বাহিনীর মোকাবেলা করে ব্যর্থ হয়ে গন্ডগড় পার্তব্য অঞ্চলে বিতান্ডা দুর্গে আশ্রয় নেন। সুলতান মাহমুদের বাহিনী এই দুর্গ অবরোধ করেন। সুলতান মাহমুদ গজনভীর অশ্বরোহী বাহিনীর একজন প্রধান হলেন, হযরত সৈয়্যদ ওমর (রহ.)'র পৌত্র গাজী সৈয়্যদ মীর মুহাম্মদ বিন হামজা ওরফে গেসুদারাজ ইবনে আব্দুল গফ্ফার বা প্রথম গেসুরাজ (রহ.)। যিনি ৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ক্ষিপ্ততা, কৌশল ও সাহসিক অভিযানে বিতান্ডা দুর্গের পতন ঘটে। পাঞ্জাব রাজ জয়রাম ১৫ জন আমত্য ও অনুচরসহ বন্দি হোন। সুলতান মাহমুদ গজনভী গজনীর সুলতান হওয়া সত্বেও এই আলে রাসুল ﷺ, অশ্বরোহী প্রধান হযরত গেসুদারাজ (রহ.)'র সাথে সর্বদা নম্রতা ও আদবের সাথে আচরণ করতেন, এমনকি কখনো তাঁর আগে ঘোড়ায় আরোহন করতেন না। গজনীর সুলতান তাঁকে গজনীতে থেকে যাওয়ার এবং আমত্য পদ গ্রহণের প্রস্তাব দিলে তিনি শুধু গজনীতে বসবাসের জন্য রাজি হোন। তিনি জনকোলাহল হতে দূরে অবস্থানের আগ্রহ প্রকাশ করলে সুলতান মাহমুদ তাঁকে গজনীর নিকটবর্তী সোলেমানী পর্বতের বিশাল অংশ (কোহে সুলেমান) লাখেরাজ হিসেবে প্রদান করেন। হযরত সৈয়্যদ গেসুদারাজ (রহ.) আফগানিস্তানের সেই কোহে সুলেমানে ধর্ম প্রচার ও আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর দ্বীনি সংস্কারের মাধ্যমে অনেক আফগান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি এই দ্বীনের দাওয়াত মুলতান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম সাহসী জাতী আরবের মাশওয়ান অঞ্চলের দুধর্ষ বেদুইন যোদ্ধা খাকর উপজাতীর এক মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁর ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন, সৈয়্যদ মাসুদ মাশওয়ানী (রহ.)।
উল্ল্যেখ্য, গেসুদারাজ নামে ইতিহাসে আরেকজন আল্লাহর ওলী সুপ্রসিদ্ধ। অবশ্যই তিনি বন্দে নেওয়াজ খাজা গেসুদারাজ বা দ্বিতীয় গেসুদারাজ নামে পরিচিত। তিনি ১৩২১ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৪২২ খ্রিস্টাব্দে ওফাত লাভ করেন।
হযরত সৈয়্যদ মাসুদ মাসুদ মাশওয়ানী (রহ.)'র অধস্তন ১১তম বংশধর হলেন, সিরিকোট বিজয়ী/ ফাতেহ্ সিরিকোট সৈয়্যদ গফুর শাহ্ ওরফে কাপুর শাহ্ (র.)। তিনি আফগানের কোহে সোলাইমানি হতে হিজরত করে উত্তর- পশ্চিম সীমান্তের কোহে গঙ্গরে (গন্ডগড় রেঞ্জ) আসেন এবং সেখানকার অত্যাচারী শিখ রাজাদের প্রতিহত করে যে এলাকাটি ইসলামের জন্য আবাদ করেন এর বর্তমান কেন্দ্রস্থল ‘সিরিকোট’। ‘সের’ মানে মাথা, আর কোহ্ ‘হল পাহাড়। ‘সেরকোহ’ মানে ‘পাহাড়ের চূঁড়া’ বা পাহাড় শীর্ষ। এই ইসলাম বিজয়ী বীর হযরত সৈয়্যদ গফুর শাহ্ ওরফে কাপুর শাহ্ (রহ.) গঙ্গর পাহাড়ের একদম মাথায় বসবাস করতেন বিধায় তাঁর আবাস বুঝাতে ‘সেরকোহ্ শব্দটি ব্যবহার হয়, এবং কালের বিবর্তনে মানুষের মুখে শব্দ পরিবর্তনের স্বাভাবিক ধারায় বর্তমানে এ এলাকা ‘সিরিকোট’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ফাতেহ্ সিরিকোট সৈয়্যদ গফুর শাহ্ (র)’র ১৩ তম অধস্তন পুুরুষ হযরত সৈয়্যদ সদর শাহ্ (র)’র ই শাহজাদা হলেন, রাসূল ﷺ এর ৩৮তম আওলাদ, গাউসে জামান, বানিয়ে জামেয়া, পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করে প্রায় ষোল বছর যাবৎ সেখানকার অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে তাদের জন্য
ক্যাপটাউন বন্দরে সর্বপ্রথম ১৯১১ সনে প্রার্থনা গৃহ-জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯১২ সালে দেশে ফিরে স্বীয় পীরে মুর্শিদ গাউসে দাঁওরা হযরত খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী (রহ.)'র খেদমতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। চৌহর শরীফে পীরের প্রতিষ্ঠিত রহমানিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় অর্থ অনুদানসহ শারিরীক মানসিক খেদমতের পাশাপাশি অনেক মসজিদও নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেন। ১৯২০ সনে পীরের নির্দেশে আবারো স্বদেশ ত্যাগ করে দ্বীনের খেদমতে পারি জমান বার্মার রেঙ্গুনে। সেখানে একাধারে ষোলবছর মোট প্রায় ২২ বছর বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় বিশেষত রেঙ্গুনের সুল প্যাগুদা রোড়স্থ বাঙালী সুন্নি জামে মসজিদে দায়িত্ব পালন করে সেখানকার অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পাশাপাশি গাউসুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)'র যোগ্য খলিফা হযরত চৌহরভী (রহ.)'র নির্দেশে কাদেরিয়া ত্বরিকার প্রচার প্রসার, রহমানিয়া মাদরাসার জন্য নিয়মিত অর্থ জোগান এবং খাজা চৌহরভীর ইলমে লাদুনীর দ্বারা লিখিত অদ্বিতীয় ৩০ পারা দরূদ গ্রন্থ 'মজমুওয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল ﷺ'র মত বিশাল কিতাব প্রকাশনা সম্পূর্ণ করে ১৯৩৩ সালে প্রথমবারের মত উন্মোচিত করে বিশ্ব-জ্ঞানী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। রেঙ্গুনে চট্টগ্রামের কিছু সুনামধন্য ব্যক্তিত্ব হযরত সিরিকোটি (র.)'র নূরানী হাতে বায়াত হওয়ার সুবাদে ভাগ্য প্রসন্ন হয় চট্টগ্রামসহ পুরো তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের। ১৯৪১ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর ভক্ত মুরিদানদের রেঙ্গুন ত্যাগ করতে নির্দেশ করেন এবং তিনি চিরতরে বার্মা ত্যাগ করে সিরিকোট চলে যান। হুজুরের আদেশ অগ্রাহ্য করে যারা রেঙ্গুন ত্যাগ করেনি পরবর্তীতে যুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের রেঙ্গুন ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, অনেকের জান মালেরও ক্ষতি সাধন হয়েছিল। যা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে তিনি আগেই অবগত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের মুরিদান এবং ইমাম শেরে বাংলা (র.)'র অনুরোধে তিনি একচল্লিশের পর চট্টগ্রামে তাশরিফ আনেন এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিত আশা যাওয়া করে দ্বিন ধর্ম ও সিলসিলার কাজ পরিচালনা করেছিলেন। এরমধ্যে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হলো ১৯৫০ সনের ডিসেম্বর মাসে বাঁশখালীর একটি মাহফিলে হযরত সিরিকোটি (র.) সূরা আহযাবের দরূদ পড়ার আদেশ সম্বলিত ৫৬ নং আয়াতটি তেলাওয়াত করার পর সবাইকে নিরব দেখে তিনি বুঝতে পারেন এদেশে বাতেল ষড়যন্ত্র মানুষের অন্তর থেকে ঈমানের মূল নবীপ্রেম মুছে দিচ্ছে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাতেল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অব্যর্থ তীর জামেয়া প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৫৪ সনের কোনএক শুভক্ষণে চট্টগ্রামের ষোলশহরের নাজির পাড়ায় ইমাম আলা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন ব্রেলভী (র.)'র মসলকের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া। এ মাদরাসা সম্পর্কে তাঁর অমীয় বাণী "ইয়ে মাদরাসা কিস্তিয়ে নূহ হ্যা, মুঝেহ দেখনা হ্যায়, তো মাদরাসাকো দেঁখো। মুঝছে মুহাব্বত হ্যায়, তো মাদরাসাকো মুহাব্বত করো"। এই জামেয়ার খেদমত আজ সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে আর এটি সুন্নিয়তের প্রাণ কেন্দ্র রূপে সুন্নী মুসলমানদের সাহারা দিচ্ছে।
আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (র.) এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামেয়া সম্পর্কে আল্লামা আজিজুল হক শেরে বাংলা (র.) বলেন,
"#দর্ জমানশ্ নবী নম্ মিসলে ও পীরে মঁগা!
অর্থাৎ ওই জামানায় তাঁর তুলনা হয় এমন উঁচু স্তরের পীর আমি পৃথিবীর কোথাও দেখিনি।
আযবরায়ে আহলে সুন্নাত মাদরাছা করদাহ বেনা
বাহরে ইছতীছালে ওহাবী গশত তীরে বে-খত্বা।
অর্থাৎ, সুন্নী মুসলমানদের জন্য তিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ওহাবী নিধনের জন্য এটা অব্যর্থভাবে নিক্ষিপ্ত তীর হয়েছে।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া না-মশ বেদা
আয় খোদা তূ যিন্দাহ দা-রশ তা বক্বা-য়ে ঈ-জাঁহা
জেনে রেখো ওই মাদরাসার নাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া।
হে খোদা! তুমি এ পৃথিবী যতদিন স্থায়ী হবে ততদিন সেটাকে জীবিত রাখো" (দিওয়ান-ই আযীয)
উল্ল্যেখ্য, হযরত সিরিকোটি রেঙ্গুনে অবস্থাকালীন সময়ে মায্হাব-মিল্লাতের কর্মকাণ্ড পরিচালনার্থে ১৯২৫ সালে আনজুমান-এ-শুরায়ে রহমানিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম এসে এ সংগঠনকে পরিবর্ধিত করে আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া নামে নামকরণ করেন। বর্তমানে এই সংস্থার মাধ্যমে পারিচালিত হচ্ছে জামেয়াসহ পুরো দেশে দেড়শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওনার পরবর্তী দ্বিনের এই মশালকে আরো বেগবান ও সংস্কার করেন, হযরত সিরিকোটি (র.)'র শাহজাদা ও খলিফা গাউসে জমান, মাদারজাত অলী, আল্লামা, হাফেজ, ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (র.)। যিনি গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ'র মত দেশের সর্ববৃহৎ ত্বরিকত ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন সহ অসংখ্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা, খানকা, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। এরপর বর্তমানে যাঁরা এই মহান খেদমতের আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন তদীয় সুযোগ্য শাহজাদা ও খলিফাদ্বয় গাউসে জমান, মুর্শিদে বরহক হযরত আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ এবং পীরে বাঙাল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুমাল আলি।
#হযরত সিরিকোটি (র.)'র বংশীয় শাজরাঃ
১। #হযরত_মুহাম্মদ_মোস্তফা_ﷺ
২। হযরত ফাতেমাতুজ্জুহরা (রা.)
সহধর্মিনী হযরত আলী (রাঃ)
৩। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)
৪। হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)
৫। হযরত ইমাম বাক্বের (রা.)
৬। হযরত ইমাম মুহাম্মদ জাফর সাদেক্ব (রা.)
৭। হযরত সৈয়্যদ ইসমাইল (রা.)
৮। হযরত সৈয়্যদ জালাল আর রিজাল (রা.)
৯। হযরত সৈয়্যদ শাহ্ ক্বায়েম (কায়েন) (রা.)
১০। হযরত সৈয়্যদ জাফর (ক্বা’ব) (রা.)
১১। হযরত সৈয়্যদ ওমর (রা.)
১২। হযরত সৈয়্যদ আব্দুল গফ্ফার (রা.)
১৩। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামজাহ গীসুদারাজ (রা.)৪২১ হিঃ
১৪। হযরত সৈয়্যদ মাসুদ মাস্ওয়ানী (রা.)
১৫। হযরত সৈয়্যদ তাগাম্মুজ্ শাহ্ (রা.)
১৬। হযরত সৈয়্যদ ছুদুর (রা.)
১৭। হযরত সৈয়্যদ মুছা (রা.)
১৮। হযরত সৈয়্যদ মাহমুদ (রা.)
১৯। হযরত সৈয়্যদ আব্দুর রহিম (রা.)
২০। হযরত সৈয়্যদ আবদুল গফুর (রা.)
২১। হযরত সৈয়্যদ আবদুল জালাল (রা.)
২২। হযরত সৈয়্যদ আবদুর রউফ (রা.)
২৩। হযরত সৈয়্যদ আবদুল করিম (রা.)
২৪। হযরত সৈয়্যদ আবদুল্লাহ্ (রা.)
২৫। হযরত সৈয়্যদ গফুর শাহ্ (রা.) (প্রকাশ-কাপুর শাহ্ সিরিকোট)
২৬। হযরত সৈয়্যদ নফ্ফাস্ শাহ্বা তাফাহ্হুছ্ শাহ্ (রা.)
২৭। হযরত সৈয়্যদ আবী শাহ্ মুরাদ (রা.)
২৮। হযরত সৈয়্যদ ইউসুফ শাহ্ (রা.)
২৯।হযরত সৈয়্যদ হোসাইন শাহ্ (হোসাইন খিল্)(রা.)
৩০। হযরত সৈয়্যদ হাজী হাসেম (রা.)
৩১। হযরত সৈয়্যদ আবদুল করিম (রা.)
৩২। হযরত সৈয়্যদ ঈসা (রা.)
৩৩। হযরত সৈয়্যদ ইলিয়াছ (রা.)
৩৪। হযরত সৈয়্যদ খোশ্হাল (রা.)
৩৫। হযরত সৈয়্যদ শাহ্ খাঁন (রা.)
৩৬। হযরত সৈয়্যদ কাজেম (রা.)
৩৭। হযরত সৈয়্যদ খানী জামান শাহ্ (রা.)
৩৮। হযরত সৈয়্যদ ছদর শাহ্ (রা.)
৩৯। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রা.)
৪০। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রা.)
৪১।(ক) হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ #তাহের_শাহ্ (ম.)
(১) সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাশেম শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাশহূদ শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ মামূন শাহ্ (ম.)
(২) সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ শহীদ আহমদ শাহ (ম.)
(৩) সৈয়্যদ মুহাম্মদ আহমদ শাহ্ (ম.)
(খ) হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (ম.)
(১) সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাহমূদ শাহ্ (ম.)
(২) সৈয়্যদ মুহাম্মদ আক্বিব শাহ্ (ম.)
'আউলিয়া গণের জিকির গুনাহের কাফ্ফারা' হে আল্লাহ! আপনার প্রিয় মাহবুব নবীর পবিত্র আওলাদ এবং আপনার প্রিয় বান্দাগণের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন আর তাঁদের উসিলায় আমাদের ক্ষমা করুন। আমিন...
#তথ্য_সূত্রঃ
★মাসিক তরজুমা, জিলক্বদ ১৪৩৩ হিজরি সংখ্যায় কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব প্রকাশিত প্রবন্ধঃ History of Sarasans by Sayed amir ali, তুজক-ই-বাবর, History of Afganistan by Niamatullah, ইসলামের ইতিহাস, কৃত ড. এম. হাসান।
★দৈনিক আজাদীঃ হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (র.)'র স্মরণে প্রকাশিত প্রবন্ধ। প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৬, প্রবন্ধকার, অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান।
★https://ur.m.wikipedia.org/wiki/گیسو_دراز
★শাহেনশাহ্ এ সিরিকোট (রহঃ) বিশ্বব্যাপি সুন্নিয়তের জাগরণে তাঁর অবদান, শীর্ষক সেমিনার'১৮ এর মূল প্রবন্ধ। প্রবন্ধকার, আলহাজ্ব এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।
★মাসিক তরজুমান, জিলহজ্ব সংখ্যা, ১৪৩৯ হিঃ বেলায়তের নক্ষত্র খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী কৃত আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল হক।
★শাজরা শরীফ
★মুকাদ্দামায়ে মজমুওয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল (দ.)
★দিওয়ানে আযীয, কৃত আল্লামা গাজী ইমাম আজিজুল হক শেরে বাংলা (র.)
#সংকলনে,
Taher Hossain
বিঃদ্রঃ আগামী ১১ জিলক্বদ ১৪৪৩ হিজরি, ১২ জুন ২০২২ ইং রবিবার শাহিন শাহে সিরিকোটির ওরসে পাক অনুষ্ঠিত হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন