নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (৬)
হাদিস - ৫১
হযরত আবু ওয়ায়েল হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন ফিতনা তোমাদেরকে জড়াবে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাতে বড়রা অতিবৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং ছোটরা বড় হতে থাকবে। মানুষ তাকে সুন্নত হিসাবে গ্রহণ করবে। যখন তা থেকে কোন কিছু ছেড়ে দিবে,তখন বলা হবে তুমি সুন্নতকে ছেড়ে দিয়েছ। কেউ প্রশ্ন করল হে আবু আব্দুর রহমান, তা কখন হবে? তিনি বললেন যখন তোমাদের মধ্যে অজ্ঞব্যক্তিরা ব্যাপকতা লাভ করবে,আর আলেমগণ কমে যাবে। কারী ও নেতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। আখেরাতের আমলের মাধ্যমে দুনিয়া অন্বেষণ করবে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১]
হাদিস - ৫২
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,তোমাদের মাঝে এবং তোমাদের উপর অকল্যান নিপতিত হওয়ার মাঝে একমাত্র দুরত্ব হলো ওমর (رضي الله عنه) এর মৃত্যু। (অর্থাৎ ওমর (رضي الله عنه) এর মৃত্যুর পর থেকেই অকল্যাণ তথা ফিতনা আসতে থাকবে।)➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২]
হাদিস - ৫৩
হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে এবং অকল্যাণের মাঝে একমাত্র দূরত্ব হলো একজন ব্যক্তি। তিনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন তখন তোমাদের উপর অকল্যাণকে ঢেলে দেওয়া হবে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩]
হাদিস - ৫৪
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) এর এক গোলাম বলেন, আমি একদিন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে দেখলাম, যে অবস্থায় তিনি কতক বাচ্চাকে একথা বলতে শুনেছেন, “পরবর্তীতে অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে”। একথা শুনার সাথে সাথে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলে উঠলেন,কসম যে সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আরো অনেক কঠিন ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখিন হতে হবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৪]
হাদিস - ৫৫
হযরত হুজায়ফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি একদিন আমেরকে বললেন, হে আমের! তুমি যা অবলোকন করছ যেগুলো যেন তোমাকে ধোকায় ফেলে না দেয়, হতে পারে এগুলো খুব দ্রুত তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বের করে আনবে। যেমন,এক মহিলা অন্য মহিলার সামনে তার লজ্জাস্থানকে প্রকাশ করে থাকে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৫]
হাদিস - ৫৬
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, সর্বপ্রথম পারস্যবাসীরা ধ্বংস হবে। তাদের ধ্বংসের পরপর আরবের অধিবাসীগণ ধ্বংস হতে থাকবে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৬]
হাদিস - ৫৭
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) এর যুগে আমরা একদিকে মনোযোগি ছিলাম, অতঃপর যখন রাসূল (ﷺ) ইন্তেকাল করলেন তখন আমরা এদিক সেদিক মনোযোগ দিতে লাগলাম।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৭]
হাদিস - ৫৮
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবিযি’ব (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, আমার রাষ্ট্র পরিচালনা সম্বন্ধে হযরত কা’ব যেসব মসিবতের কথা বলেছেন আমি আমার জিম্মাদারী পালন করতে গিয়ে সবকিছুর সম্মুখিন হয়েছি। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৮]
হাদিস - ৫৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে (رضي الله عنه) হতে বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন। একদিন হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) আবু কুবাইদের উপর কিছু সূউচ্চ বাড়ি দেখতে পেয়ে বললেন, হে মুজাহিদ! যখন তুমি মক্কার ঘর বাড়িকে তার আশ্বপাশ্বের বাড়ি ঘর থেকে উঁচু দেখতে পাবে এবং তার অলি-গলিতে পানি প্রবাহিত হতে দেখবে তখন তুমি অবশ্যই এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৯]
হাদিস - ৬০
হযরত আবু ওয়ায়েল (رحمة الله) বলেন, আমি হুযায়ফা (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি একদা আমরা হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফিতনা সম্পর্কীয় বাণী স্মরণ আছে? হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, আমার স্মরণ আছে তিনি যে ভাবে বলেছেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, এ ব্যাপারে তুমি সৎসাহসী সুতরাং তা পেশ কর। আমি বললাম মানুষ ফিতনায় পড়বে তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে, মালসম্পদের ব্যাপারে, তার নিজের সন্তানসন্ততি ও পাড়া প্রতিবেশীর ব্যাপারে। তবে নামাজ, সদকা এবং ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ তা মিটিয়ে দেবে। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত উত্থিত হবে এবং তোলপাড় করে ফেলবে, সে ফিতনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি বললাম,হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি ভয় করবেন না, (তা তো আপনাকে পাবেনা।) কেননা সেই ফিতনা ও আপনার মধ্যে একটি আবদ্ধ দরজা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা সেই দরজাটি কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, না খোলা হবে? হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, খোলা হবে না; বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, তাহলে তা আর কখনো বন্ধ করা হবেনা। আমি বললাম হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন আমরা হযরত হুযায়ফা ( (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা হযরত ওমর (رضي الله عنه) কি জানতেন দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এমন নিশ্চিতভাবে জানতেন যেমন আগামীকালের পূর্বে রাত্রির আগমন সুনিশ্চিত। আমি তাঁকে (ওমর (رضي الله عنه)কে) এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছে,যা কোন গোলক ধাঁধা নয়। রাবী শাক্বীক্ব বলেন, আমরাতো এ ব্যাপারে হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাচ্ছিলাম তাই হযরত মাসরূক্বকে বললে তিনি হযরত হুযায়ফাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, দরজাটি হলেন ‘ওমর’ নিজেই।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬০]
_______________
আল ফিতান
কৃত:নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন