নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (৭)

 

নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (৭)


হাদিস - ৬১

হযরত কা’ব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় মানুষের উপর এমন যুগ আসবে যে, মুমিন ব্যক্তি তার ঈমানের ব্যাপারে অপমানবোধ করবে। যেমন আজকাল পাপিষ্ট তার পাপের ব্যাপারে অপমান বোধ করে। এমনকি যে কোন ব্যক্তিকে বলা হবে যে, তুমি মুমিন, ফকীহ। (ফিক্হশাস্ত্রবিদ) ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬১]


হাদিস - ৬২

হযরত আব্দুল্লাহ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মিথ্যা প্রকাশ পাবে তখন হত্যা বেশী হতে থাকবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬২]


হাদিস - ৬৩

হযরত আয্রা ইবনে কাইছ থেকে বর্ণিতঃ একদিন হযরত খাশেদ ইবনে ওলীদ  (رضي الله عنه) শামের মধ্যে খুতবা দেয়া অবস্থায় এক লোক দাড়িয়ে বলল, নিঃ সন্দেহে ফিৎনা প্রকাশ পেয়ে গেল। একথা শুনে হযরত খালেদ বিন ওলীদ  (رضي الله عنه) বললেন, হযরত ওযর  (رضي الله عنه) যত দিন জীবিত থাকবেন ততদিন নয়। সেটা তখনই হবে যখন মানুষ বিভিন্ন প্রকার বালা মসিবতে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যে বালা-মসিবত থেকে বাঁচার জন্য মানুষে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিতে চেষ্টা করবে কিন্তু যে রকম কোনো আশ্রয়স্থল তারা পাবে না। মূলতঃ তখনই ফিৎনাসমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৩]


হাদিস - ৬৪

হযরত আব্দুল্লাহ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় রাত্রি সমূহ, দিন সমূহ, মাস সমূহ এবং যুগ সমূহ এর অকল্যাণ কিয়ামতের বেশী নিকটবর্তি।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৪]


হাদিস - ৬৫

হযরত হুজাইফা ইবনুল এমান  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর কাছে আসলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়ে বললেন, তোমাদেরকে নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়ে বললেন, তোমাদের মাঝে এমন কে আছ, যে লোক ফিৎনা সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীর হেফাজতকারী। তারা সকলে বললেন, এ সম্বন্ধে তো আমরা সকলেই শুনেছি, এক পর্যায়ে হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন, হয়তো বা তোমরা তোমাদের ব্যক্তিগত এবং পরিবার গত ফিৎনার কথা বলছো। তারা সকলে বললো, হ্যাঁ আমরা সকলে এরকম ধারনা করেছি। তাদের কথা শুনে হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন, আমার উদ্দেশ্য কিন্তু সেটা নয়, সেটা তো নামায-রোযা দ্বারা মাফ হয়ে যাবে। বরং এমন ফিৎনা সম্বন্ধে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি, যা,সমুদ্রের যত বিশাল বিশাল আকারের ঢেউ তুলবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর কথা শুনে উপস্থিত সকলে চুপ হয়ে যায়। আমি ভাবলাম তিনি আমারই মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাচ্ছেন। ফলে আমি বলে উঠলাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি বলতে পারব। আমার কথা শুনে তিনি বললেন অবশ্যই, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কুরবান হোক।

আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! উক্ত ফিৎনার বিপরীত একটা শক্তভাবে বন্ধ দরজা রয়েছে যে দরজা খোলা হবে না হয় ভাঙ্গা হবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন তোমার ধ্বংস হোক যে দরজা ভাঙ্গ হবে?

আমি বললাম, হ্যাঁ! ভাঙ্গ হবে, আমার কথাশুনে তিনি বললেন, যদি যে দরজা ভাঙ্গা হয়, হয়তো সেটা আর বন্ধ করা সম্ভব হবেনা। অতঃপর আমি বললাম, হ্যাঁ যেটা ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং যে দরজা হচ্ছেন, একজন মহান ব্যক্তি, হয়ত তাকে হত্যা করা হবে, না হয় তিনি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করবেন। এটা এমন হাদীস যার মধ্যে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৫]


হাদিস - ৬৬

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত নু’মান ইবনে বশির  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন কিছু ফিৎনা প্রকাশ পাবে, যেন যেগুলো অন্ধকার রাতের একটা টুকরা। সকাল বেলা যে লোক মুসলমান থাকবে বিকালে যে কাফের হয়ে যাবে। একদিন সন্ধ্যার সময় যে মুসলমান থাকবে, পরের সকালে সে কাকের হয়ে যাবে। মানুষ তাদের চরিত্রকে দুনিয়ার সামান্য ও নগন্য বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিঃসন্দেহে আমি তাদেরকে এমন সূরতে দেখেছি, যেন তাদের মধ্যে কোনো বোধশক্তি নেই, তারা যেন জ্ঞান-বুদ্ধিবিহীন কিছু শরীর। তাদেরকে দেখলে মনে হয় আগুনের বিছানা এবং লোভি মাছি। সকার করে দুই দেরহাম দ্বারা, সন্ধ্যা করে দুই দেরহামের মাধ্যমে। তারা নিজেদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে, সামান্য একটা ছাগলের টাকার বিনিময়ে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৬]


হাদিস - ৬৭

হযরত আবু ওয়ায়েল শাকীক বলেন, হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেছেন, একদা হযরত ওমর  (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফিতনা সম্পর্কীয় বাণী শুনেছ? হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন,আমি বললাম, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, মানুষ ফিতনায় পড়বে তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে, মাল সম্পদের ব্যাপারে এবং তার পাড়া-প্রতিবেশীর ব্যাপারে। তবে রোজা, নামাজ ও সদকা তা মিটিয়ে দেবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বলেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সমুদ্রে তরঙ্গমালার মতো উত্থিত হবে এবং তোলপাড় করে ফেলবে, আর তা একের পর এক আসতে থাকবে, সে ফিতনা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) এর বাণী জানতে চেয়েছি। হযরত হুযাইফা  (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি বললাম হে আমীরুল মুমিনীন! উক্ত ফিতনা সম্পর্কে আপনি ভয় করবেন না! (তা আপনাকে পাবেনা) কেননা সেই ফিতনা ও আপনার মধ্যে একটি আবদ্ধ দরজা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা সেই দরজাটি কেমন হবে? তা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, না খোলা হবে? হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, খোলা হবে না; বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত তা আর কখনো বন্ধ করা হবে না। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৭]


হাদিস - ৬৮

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়, কিয়ামতের পূর্বে হারজ বা গণহত্যা হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! হারজ কী? রাসূলুল্লাহ যাঃ বললেন, ব্যাপক হত্যা। আমরা সহসা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ! বর্তমানে যেমন হত্য চলছে তার থেকেও বেশি হবে! জবাবে তিনি বললেন, মুসলমানদের অবস্থা তখনকার যুগে বর্তমানের চেয়ে আরো উন্নত হবে।

এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদেরকে কাফেররা হত্যা করবেনা, বরং তোমরা নিজেরাই একে অপরকে হত্যা করবে। এমন কি মানুষ তার আপন ভাই, চাচাত ভাই এবং প্রতিবেশিকে হত্যা করবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মুখ থেকে একথা শুনার সাথে সাথে উপস্থি সকলে এমনভাবে আশ্চর্য্যন্বিত হয়ে পড়ল, যার ফলে অনেক সময় স্পষ্ট বস্তুও আমাদের দৃষ্টিগোচর হতোনা।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৮]


হাদিস - ৬৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ফিতনা তোমাদেরকে জড়াবে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাতে বড়রা আরো বৃদ্ধ হবে এবং ছোটরা বড় হয়ে থাকবে। মানুষ তাকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে। যখন তাতে কোন কিছু পরিবর্তিত হবে তখন লোকেরা বলবে এটা দ্বীন পরিপন্থি। কেউ জিজ্ঞাসা করলো তা কখন ঘটবে? তখন তিনি বললেন, যখন তোমাদের মধ্যে নেতারা আধিক্যতা লাভ করবে আর আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। বক্তাবৃন্দ আধিক্যতা লাভ করবে আর দ্বীনের বিজ্ঞ আলেমগন (ফকীহ) কমে যাবে। তার দ্বীন ব্যতিত অন্য কিছু (বদদ্বীন) শিক্ষা করবে এবং তারা আখেরাতের আমলের বিনিময়ে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৯]


হাদিস - ৭০

আবু কুবাইল  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাসলামা ইবনে মাখলাদ আল আনসারীকে বলতে শুনেছি, তিনি সামুদ্রিক সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে কিছুটা বৃদ্ধি করেছিলেন, যার কারণে তার অন্য সৈন্যরা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। তিনি তাদের এ অবস্থা দেখে মিম্বরে দাড়িয়ে বললেন, হে মিশরবাসী! তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করোনা। আল্লাহর কসম নিঃসন্দেহে আমি বৃদ্ধি করেছি তোমাদের সৈন্য সংখ্যায় এবং তোমাদের রসদপত্রের মধ্যে অনেক বৃদ্ধি করেছি আর আমি তোমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে শক্তিশালী করেছি। একথা জেনে রেখ, নিশ্চয় আমি তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অনেক-অনেক উত্তম। কেননা ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে ফিৎনা বৃদ্ধি পাবে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭০]

_______________

আল ফিতান

কৃত:নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন