ফানায়ে ইরাদা বা ইচ্ছার অবলুপ্তি

 

ফানায়ে ইরাদা বা ইচ্ছার অবলুপ্তি সম্পর্কেঃ যখন তালেবে হাকীকত বা হাকীকতের অনুসন্ধানকারীর বক্ষ, কেবলমাত্র আল্লাহর ফযলে, সমস্ত আশা আকাংখা থেকে শূন্য হয় এবং সে হক সুবহানুহু ব্যতীত আর কারাে প্রত্যাশী না হয়, এই সময় সে ঐ সমস্ত বস্তু লাভ করে, যা তার সৃষ্টির সময় উদ্দেশ্য ছিলাে। তখন সে হাকীকি বা প্রকৃত বন্দেগী করতে সক্ষম হয়। অতঃপর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাকে অপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীতে পাঠান। এই সময় হক তায়ালা তাকে একটি ইরাদা বা ইচ্ছা প্রদান করেন এবং একটি ইখতিয়ারও দেন, যাতে সে কাজে ও কথায় স্বাধীন ও অনুমতি প্রাপ্ত হয়। যেমন, একটি অনুমতি প্রাপ্ত গােলাম তার কাজ কর্মে স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। এই মাকামটি ‘আল্লাহর চরিত্রে’ চরিত্রবান হওয়ার মাকাম। এই মাকামের অধিকারী ব্যক্তি যা কিছু চান, সবই অন্যের জন্য চান এবং তার উদ্দেশ্য থাকে অন্যের উপকার করা, নিজের নয়। আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যও এইরূপ। আর এই মহান সদিচ্ছা তাে কেবল আল্লাহ তায়ালারই যােগ্য। আর এই ‘সাহেবে ইরাদা’ বা ‘ইচ্ছাকারী’ ব্যক্তির জন্য কখনােই এটি জরুরী এবং জায়েয নয় যে, সে যা চাইবে, তাই হবে । কেননা, এইরূপ ধারণা করা শিরক পর্যায়ের। হক সুবহানাহু তায়ালা স্বীয় হাবীব মােহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে কোরআন পাকে এইরূপ ইরশাদ করেছেনঃ ‘আপনি তাকে হেদায়েত দিতে সক্ষম হবেন না, যাকে আপনি ভালবাসেন, বরং আল্লাহ্ হেদায়েত দেন, যাকে ইচ্ছা করেন। সাইয়েদুল বাশার সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ইচ্ছায় যখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, তখন অন্যদের সেখানে কি করার থাকতে পারে? আর এটাও জরুরী নয় যে, ইচ্ছাকারীর সমস্ত উদ্দেশ্য হক তায়ালা ওয়া তাকাদ্দাসার মর্জির অনুরূপ হবে। যদি এমনই হতাে, তবে আঁ-হজরত সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কিছু কথা ও কাজের উপর, হক সুবহানুহুর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ নাযিল হতাে না। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘নবীর জন্য এটি উচিত ছিলাে না....(আয়াতে শেষ পর্যন্ত)। এই আয়াতের মধ্যে ক্ষমার কোনাে অবকাশ নেই।অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ ‘আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে স. ক্ষমা করেছেন। (দেখুন, আল- কোরআন, সুরা আনফাল, ৬৮ আয়াত। বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ) ক্ষমার চিন্তা তাে সেই সময় করা হয়, যখন কোনােরূপ ত্রুটি বিচ্যুতি হয়। এতদসংগে একথাও স্মরণীয় যে, হক তায়ালা শানুহুর সমস্ত ইচ্ছা, তার মর্জির অনুরূপ হয় না ।যেমন - কুফরী এবং গুনাহ। (কেননা, এর ইরাদা তাে হক তায়ালা করেন। অন্যথায় এর অস্তিত্বই থাকতাে না এবং তা বান্দা থেকে প্রকাশও পেতাে না। কিন্তু এই কাজগুলাে হক তায়ালার মর্জির অনুরূপ নয়। যেমন আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ— ‘আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দাদের নিকট থেকে কুফরীকে পছন্দ করেন না। সুতরাং আল্লাহর ইরাদা যখন তাঁর নিজেরই মর্জির খেলাফ হয়, তখন ইরাদাকারী বান্দার মর্জিও হক সুবহানুহুর খেলাফ হতে পারে।

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন