রোযা,তারাভীহ,ই'তিকাফ,যাকাত ও সদক্বায়ে ফিতর
রােযা
* মুসলিম নর-নারীগণ সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদতের নিয়্যতে পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই রােযা। নারীদের বেলায় এ সময় হায়েজ ও নেফাসথেকে পবিত্র থাকা পূর্বশর্ত। (আলমগীরী)।
* রমযানের রােযা রাখা মুসলমান বালেগ, বিবেকবান ও সুস্থ্য নর এবং একই ধরনের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত নারীদের উপর ফরযে আইন। অস্বীকার বা ঠাট্টা করলে কাফির হবে আর বিনা অজুহাতে অবহেলা বশতঃ আদায় না করলে কবীরা গুণাহগার ও ফাসিক হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ও আলমগীরী)।
* রমযানের একমাস রােযা পালন করা ফরয। হাদীস শরীফে বর্ণিত যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- মাস উনত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রােযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখেই (রােযা) রাখা বন্ধ কর। যদি উনত্রিশে রমজান চাঁদ দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। (খাযাইনুল ইরফান)।
রােযার নিয়্যত
* রােযার জন্য নিয়্যত করাও অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক রােযার জন্য অন্তরে ইচ্ছা থাকলে নিয়্যতের শর্ত পূরণ হবে। তবে তা মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এ নিয়্যত পূর্বদিনের সূর্যাস্তের পর হতে রােযার দিনের দুপুরের আগে পর্যন্ত করা যাবে। এর আগে বা পরে করলে রােযা হবে না।
* রােযার নিয়্যতে সাহরী খাওয়াও নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে। সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়্যত করলে বলবেন- নাওয়াইতু আন আসূমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বা-নাল মুবারাকি ফারদ্বাল লাকা ইয়া আল্লাহু! ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল'আ্লীম অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আগামী কাল রমযানের ফরয রােযার নিয়্যত করলাম।
আর ফজরের পর নিয়্যত করলে বলবেন-
নাওয়াইতুআন আসুমা হাযাল ইয়াওমা লিল্লাহি তায়ালা মিন ফারদ্বি রমাদ্বানা। (আল্লাহর জন্য আমি আজকের রমজানের ফরজ রােযা রাখার নিয়্যত করলাম।)
* রােযার নিয়্যত রাতে বা ফজরের আগে করাই মুস্তাহাব। রােযার নিয়্যত কার্যকর হয় সুবহে সাদেক হতে। অতএব, কারাে দিনের বেলার (মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যন্ত) নিয়্যত ঐ সময়ই শুদ্ধ হতে পারে যদি নিয়্যতকারী সুবহে সাদিক হতে রােযা ভঙ্গের কোন কাজ না করে। (রদ্দুল মুহতার)।
* সাহরী খাওয়ার সময় বা সুবহে সাদেকের পূর্বে যদি মনস্থ করে যে, সকালে রােযা রাখবেনা এবং এর উপর নতুন নিয়ত না করলে রােযা হবেনা। যদিও সে সারাদিন পানাহার ও যৌন সঙ্গম পরিহার করে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।
* সাহরী খাওয়া রােযার নিয়্যত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু সে সময় যদি এই ইচ্ছা থাকে যে, সকালে রােযা রাখবেনা তাহলে সাহরী খাওয়া নিয়্যত বলে গণ্য হবে না। (জাওহারাহ ও দুররে মুখতার)।
* মুসাফির ও পীড়িত লােক ব্যতীত অন্য কেউ রমযানের রােযার সময় যদি নফল কিংবা ওয়াজিব কিংবা পূর্ববর্তী কোন কাযার নিয়্যত করে তবুও তার রমজানের রােযাই আদায় হবে। পক্ষান্তরে মুসাফির ও পীড়িত লােক যদি রমযান ব্যতীত অন্য কোন রােযার নিয়্যত করে তবে যা নিয়্যত করে তাই আদায় হবে- রমযানের নয়। (তানভীরুল আবসার)।
* যদি কোন নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় রাতে রােযার নিয়্যত করে থাকে এবং সুবহে সাদেকের পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার রােযা শুদ্ধ হবে। (জাওহারাহ)।
রমজানের রােযা যাদের জন্য পরে আদায়ের অবকাশ রয়েছে
* সফর, গর্ভধারণ, সন্তানকে দুগ্ধ পান করানাে, পীড়া,বার্ধক্য, শারীরিক ও মানসিক কোন প্রকার ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা এবং জেহাদ এ সব অজুহাতে এ মাসের রােযা না রেখে তা কাযা করলে গুনাহগার হবে না। (আলমগীরী)।
* বিনা ওযরে এ মাসে রােযা না রাখা বড় গুনাহ। পীড়িত লােক নিজ অনুমান বশত রােযা ছেড়ে দিতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামত কিংবা নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা অথবা কোন প্রমাণ দ্বারা দৃঢ় ধারণায় উপনীত না হয় যে, রােযার কারণে তার রােগ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় তাকে রােযার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হবে। কোন লােক সুস্থ; কিন্তু দ্বীনদার চিকিৎসক যদি রােযার কারণে পীড়িত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তবে সে ব্যক্তিও পীড়িতদের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। (খাযাইনুল ইরফান ও দুররে মুখতার)।
* গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী রমণী যদি রােযার কারণে স্বীয় কিংবা দুগ্ধ পােষ্য সন্তানের জীবনহানি অথবা অসুস্থতার আশংকা বােধ করে তবে তার জন্য পরবর্তীতে রােযা রাখার অবকাশ রয়েছে। এমন কি এ ক্ষেত্রে পেশাদার স্তন্যদানকারীনীর জন্যও। (দুররে মুখতার ও খাযাইনুল ইরফান)।
* যে মুসাফির সুবহে সাদিকের পর সফর শুরু করে তার জন্য সেদিনের রােযা না রাখার অবকাশ নাই। কিন্তু যদি সুবহে সাদেকের পূর্বে সফর আরম্ভ করে তবে তার জন্য অবকাশ রয়েছে। আর যদি সেদিন সফরে রােযা ভঙ্গ করে তবে কাফফারা দিতে হবেনা; যদিও সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে সফরে যাওয়ার আগেই রােযা ভাঙ্গলে কাযা ও কাফফারা উভয়ই বাধ্যতামূলক হবে। (আলমগীরী)।
* বার্ধক্য জনিত দুর্বলতা হেতু রােযা রাখতে অসমর্থ হলে তার জন্য কাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি সে ব্যক্তির সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি প্রতি রােযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করাবে, অথবা অর্ধ সা (২ কেজি ৫০ গ্রাম) গম বা গমের আটা কিংবা তার দ্বিগুণ যব কিংবা যবের সমমূল্য ফিদয়া হিসেবে সাদকা করবে।
* যদি ফিদয়া প্রদানের পর পুনরায় রােযা রাখার মত সামর্থ্য ফিরে আসে তবে তাকে তখন রােযার কাযাও আদায় করতে হবে।
* মরণােম্মুখ বৃদ্ধ বা শায়খে ফানী (যার সুস্থতা ও সামর্থ ফিরে পাওয়ার আশা নেই) রােযা রাখতে অসমর্থ হলে বা ফিদয়া প্রদানেও যদি সক্ষম না হয় তবে সে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজের অক্ষমতার জন্য মার্জনা চাইতে থাকে। (খাযাইনুল ইরফান ও রদ্দুল মুহতার)।
* হায়েয ও নেফাস অবস্থায় নারীদের জন্য রােযা রাখা নিষেধ। তা পরে কাযা করবে।
* কোন নারীর হায়েয ও নিফাসজনিত রক্তস্রাব শুরু হওয়া মাত্র তার রােযা ভঙ্গ হয়ে যায়। অতএব, এ থেকে পবিত্র হওয়ার পর রােযা পালন করবে।
* কোন নারীর যদি রাতেই হায়েয বন্ধ হয় তবে সুবহে সাদিক থেকে সে রােযা পালন করবে।
* কোন নারীর দশদিনের ভেতরে হায়েজ বন্ধ হলে তার জন্য গােসলের সময়ও হায়যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই রাতের এমন সময় যদি সে পবিত্র হয় যে, গােসল সমাপন করতে ফজর হয়ে যায় তবে তার জন্য সেদিনের রােযা শুদ্ধ হবে না। এমনভাবে ভাের হওয়ার পরে রক্ত বন্ধ হলেও তার জন্য ওই দিনের রােযা রাখা শুদ্ধ হবে না।
* ক্ষুধা ও পিপাসা যদি এতই তীব্র ও প্রকট আকার ধারণ করে যে, রােযা ভঙ্গ না করলে মৃত্যুের আশঙ্কা বা মানসিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সংশয় হয় তবে রােযা ভঙ্গ করতে পারে। (আলমগীরী)।
* সাপ বা বিষাক্ত কোন কিছুর দংশনে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিলেও রােযা ভঙ্গ করতে পারে। (রদ্দুল মুহতার)।
* মুসাফিরের জন্য সফরকালে রােযা রাখা নিজের জন্য এবং সফর সঙ্গীদের জন্য কোন প্রকার বিঘ্নের কারণ না হলে রােযা পালন করা উত্তম। বিঘ্ন বা অসুবিধা হলে রােযা না রাখাই উত্তম। (দুররে মুখতার)।
* রােযা না রাখার অবকাশ প্রাপ্তরা অর্থাৎ রােযারকাযা পরবর্তী বৎসরের রমযানের আগেই কাযা আদায় করে দেবে। কেননা হাদীস শরীফে এজন্য জোর তাকীদ দিয়ে বলা হয়েছে যে,পূর্ববর্তী রমযানের রােযা আদায় না করলে তার রােযা কবুলের অযােগ্য হয়ে যায়। (দুররে মুখতার)।
* যদি অবকাশ প্রাপ্তগণ তাদের অবকাশকালীন সময়ে মৃত্যু বরণ করে এবং কাজা আদায়ের সময়ই না পায় তাহলে এর বিনিময় স্বরূপ ফিদিয়া দেয়া ওয়াজিব নয়। এতদসত্বেও তারা অসিয়ত করলে তাদের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে এ ওসীয়ত পূর্ণ করা হবে। পক্ষান্তরে, যদি অবকাশের পর মৃত্যুর পূর্বে সময় পাওয়া যায় যাতে সে কাযা করতে পারত তাহলে তার জন্য মৃত্যুকালে এ ফিদিয়া দান করার ওসীয়ত করা ওয়াজিব। মৃত ব্যক্তি ওসীয়ত না করলেও ওয়ারিশগণ তাদের পক্ষ থেকে তার ফিদিয়া আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে।
যে সব কারণে রােযা ভঙ্গ হয় না
* ভুল বশতঃ পানাহার বা যৌন সম্ভোগ সংঘটিত হলে। কিন্তু রােযার কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই সেগুলাে থেকে বিরত হতে হবে। যদি স্মরণ হওয়া মাত্র বিরত না হয়ে সে কাজে রত থাকে তবে রােযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কেবল কাযা করবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।
* কোন রােযাদারকে ভুল বশতঃ পানাহার করতে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু যখন উক্ত রােযাদার অতিশয় দূর্বল হয় এবং স্বরণ করানাের ফলে সে ব্যক্তি পানাহার বন্ধ করবে এবং রােযা রাখাও তার জন্য অসাধ্য হবে, তবে স্মরণ করানাে হতে বিরত থাকাই উত্তম। (রদ্দুল মুহতার)
* মাছি বা এ জাতীয় প্রাণী, ধোঁয়া ও ধুলাে-বালি গলায় চলে গেলে তাতে রােযা নষ্ট হবে না। যদি উড়ন্ত আটার কনাও অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ঢুকে যায় তবু ও রােযা নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গিললে রােযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* রােযা রেখে সুরমা বা তেল লাগানাে অথবা আতর ব্যবহার করতে অসুবিধা নাই। চোখে সুরমা ব্যবহারের ফলে যদি থুথুতে তার রঙ দেখা যায় এবং কণ্ঠনালীতে তার স্বাদ ও অনুভব হয় তবুও রােযার কোন ক্ষতি হবে না।
* অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ধোঁয়া প্রবেশ করলে রােযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা মুখে ধোঁয়া টেনে নিলে রােযা ভঙ্গ হবে এবং কাযার সাথে সাথে কাফফারাও দিতে হবে।
* রােযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কিংবা স্বপ্নে কোন পানাহার করলে রােযার কোন ক্ষতি হবে না।
*রােযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করলে, এতে স্বামীর বীর্যপাত না হলে রােযা ভঙ্গ হবে না। স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকালাে কিন্তু স্পর্শ করলাে না কিংবা বারবার সেদিকে দৃষ্টিপাত করল এরই ফলে অথবা দীর্ঘক্ষণ যৌনকল্পনার ফলশ্রুতিতে আপনা-আপনি বীর্যপাত হলাে, সে ক্ষেত্রে রােযা ভঙ্গ হবে না। (জাওহারাহ ও দুররে মুখতার)।
* কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজা দুষণীয় নয়। যদি মিসওয়াকের তিক্ত রস বা স্বাদ মুখে অনুভূত হয় তবুও রােযার কোনরূপ ক্ষতি হবে না।
* গােসল করার সময় পানির শীতলতা শরীরে অনুভূত হলেও রােযা ভঙ্গ হবে না। অনুরূপ, কুল্লি করে মুখ থেকে পানি ফেলে দিল কিন্তু এরপর যেটুকু আর্দ্রতা রইল তা থুথুর সাথে গিলে ফেললেও রােযার ক্ষতি হবে না।
* দাঁতে ঔষধ চূর্ণ করতে গিয়ে গলায় তার স্বাদ অনুভূত হল অথবা হাঁড় চোষণ পূর্বক থুথু গিলল কিন্তু হাঁড়ের কোন অংশ কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করল না, কানে পানি ঢুকল বা খড়কুটো দিয়ে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে এবং গায়ে লেগে আসা কানের ময়লা রেখেই বার কয়েকবার তা কানে প্রবেশ করালাে, দাঁতের ফাঁকে বা মুখে অতি ক্ষুদ্র কোন দ্রব্য নিজের অজান্তে থেকে গেল যা থুথুর সাথে বেরিয়ে আসার মত, তা বের হয়ে গেল অথবা দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছল এবং এর নিচে গেলনা, এ সব অবস্থায় রােযা নষ্ট হবে না। (দুররে মুখতার ও ফতহুল ক্বদীর)।
* কথা বলতে গিয়ে থুথুতে মুখ ভরে উঠলাে সেগুলাে গিলে ফেলল অথবা মুখের গড়িয়ে পড়া লালা মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই টেনে নিয়ে গিলে ফেলল, নাকের শ্লেষা বা পানি অথবা গলার কফ গিলে ফেলল, এ সবের কারণেও রােযা ভঙ্গ হবে না। তবে এসব থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়। (আলমগীরী, দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।
* জিহ্বা দ্বারা লবণের স্বাদ গ্রহণ করে থুথু ফেলে দিল এবং মুখ পরিষ্কার করে নিল, এ অবস্থায় রােযা ভঙ্গ হবে না।
* তিল বা তিল পরিমাণ কোন বস্তু চিবিয়ে থুথুর সাথে গিলে ফেলল এবং তাতে যদি এর স্বাদ অনুভূত হয় তাহলে রােযা ভঙ্গ হবে অন্যথায় রােযা ঠিক থাকবে। (ফতহুল কদীর)।
* রােযা অবস্থায় গ্লুকোজ জাতীয় স্যালাইন বা ইনজেকশন কিছু গ্রহণ করলে তাতে রােযা ভঙ্গ হবে।
যেসব কারণে রােযা ভঙ্গ হবে এবং কাযা করতে হবে
* সুবহে সাদিক হয়নি ভেবে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগ করেছে। কিন্তু পরে জানতে পারলাে, তখন সুবহে সাদিক হয়েছিল এ অবস্থায় রােযা রাখবে, তবে ঐ রােযার ক্বাযা করতে হবে।
*সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে সময়ের পূর্বে ইফতার করে ফেললে।
* সুবহে সাদেকের পূর্বে পানাহার বা স্ত্রী সম্তোগে রত হলাে কিন্তু সুবহে সাদেক হওয়া মাত্রই মুখের খাদ্য বা পানীয় ফেলে দিলনা বা স্ত্রী সম্ভোগ হতে আলাদা হলনা এ অবস্থায় রােযার কাযা করতে হবে।
* ভুলবশতঃ স্ত্রী সম্তোগ বা পানাহার করল এবং এতে রােযা বিনষ্ট হয়েছে মনে করে স্বেচ্ছায় পানাহার করলাে এতেও কাযা করতে হবে।
* নাকে নস্যি টানলে, কানে বা নাকে তেল বা ঔষধ দেয়ায় তা ভিতরে ঢুকলে, মলদ্বার বা স্ত্রীর যৌনাঙ্গ দিয়ে পানি, ঔষধ বা তেল প্রবেশ করালে রােযা ভঙ্গ হবে।
* রােযাদারের দাঁত উপড়ানাের পর রক্ত কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছালে রােযার কাযা করতে হবে।
*ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করলে রােযা নষ্ট হয়। অনুরূপ অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়ার পর সামান্য পরিমাণও গিলে ফেললে রােযা নষ্ট হয়ে যাবে।
* খাদ্য বস্তু নয় এমন কিছু যেমন, পাথর, লােহা, মুদ্রা ইত্যাদি যদি গিলে ফেলে তাহলে রােযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
* কুলি বা গােসলের সময় রােযার কথা স্বরণ থাকা সত্বেও কোনভাবে পানি নাক-কান দিয়ে কণ্ঠনালী কিংবা মগজে প্রবেশ করে তবে রােযার কাযা করতে হবে।
* সাহরীর পর পান মুখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং এ অবস্থায় ফজর হয়ে গেলে রােযার কাযা আদায় করতে হবে।
* চিনি বা এ জাতীয় খাদ্য দ্রব্য যা মুখে দিলে গলে যায়, যদি মুখে রাখে এবং থুথু গিলে ফেলে তাহলে রােযার কাযা করতে হবে।
* দাঁতের ফাঁকে চনা পরিমাণ বা তার চাইতেও বড় কোন খাদ্য লেগেছিল, তা খেয়ে ফেলে অথবা এর চাইতে ছােট কণা মুখ হতে বাইরে এনে আবার তা খেয়ে ফেললে রােযা নষ্ট হয়ে যাবে।
* অপরের থুথু খেলেও রােযা নষ্ট হবে। অনুরূপ নিজের থুথু হাতে নিয়ে পুণরায় তা গিলে ফেললে রােযার কাযা করতে হবে।
* মুখে রঙিন সূতা বা কাপড় রাখায় থুথুতে রঙ মিশে থুথু রঙিন হল এবং সে থুথু গিলে ফেললে রােযা নষ্ট হবে।
রােযার ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহ
* ইচ্ছাকৃতভাবে রােযা অবস্থায় পানাহার বা যৌনমিলন করলে তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়ই বাধ্যতামূলক।
* এমনিভাবে বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা, বা নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের কারণে রােযার ক্বাযা ও কাফফারা দেয়া আবশ্যক।
* কাঁচা মাংস খেলে ক্বাযা ও কাফফারা দিতে হবে। এমনকি যদি তা মৃতের মাংসও হয়।
* যে ব্যক্তির মাটি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে সে যদি মাটি খায় তবে কাযা কাফফারা দিতে হবে কিন্তু অভ্যাস বশত না হলে কাযা করলে চলবে। (জাওহারা ও আলমগীরী)।
* ঘুমন্ত রােযাদার স্ত্রীর সঙ্গে রােযাদার স্বামী যৌন মিলন করলে উভয়ের রােযাই নষ্ট হবে কিন্তু ক্বাযা ও কাফফারা বাধ্যতামূলক হবে কেবল স্বামীর উপর, স্ত্রী শুধু কাযা করবে।
রােযার কাফফারা
এক নাগাড়ে ৬০টি রােযা রাখা। শারীরিক সামর্থ্য না থাকলে ষাট জন মিসকীন বা অভাবীকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করানাে বা তৎপরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থ পরিশােধ করতে হবে।
যে সব কারণে রােযা মাকরূহ হয়
* বিনা প্রয়ােজনে কোন কিছুর স্বাদ পরীক্ষা করা বা কোন কিছু চিবানাে মাকরূহ।
* মিথ্যা বলা, গীবত (অন্যের দোষ চর্চা), চোগলখােরী, অশ্নীল বাক্য উচ্চারণ করা, গালি দেয়া, বেহুদা কথা বলা, কাউকে কষ্ট দেয়া এমনিতেই হারাম ও নাজায়েয রােযাদারের জন্য এসমস্ত কাজ কোন মতেই উচিত নয়। এসব কাজ রােযাকে মাকরূহ করে ফেলে।
* রােযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, গলাগলি করা বা শরীর স্পর্শ করা মাকরূহ যদি এর ফলে বীর্যপাত কিংবা যৌন মিলনের আশঙ্কা হয়। আর স্ত্রীর ওষ্ঠ চোষা রোযাদারের জন্য সর্ববস্থায় মাকরূহ। (রদ্দুল মুহতার)।
* পবিত্রতা হাছিলে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার করা, কিংবা কুল্লি করা ও নাকে বেশী করে পানি দেয়া মাকরূহ। ওযু ও গােসল ব্যতীত অন্য সময় অনাবশ্যক কুল্লি করা বা নাকে পানি দেয়াও মাকরূহ।
* পানিতে বায়ু ত্যাগ করা, মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা প্রভৃতি কাজ রােযাকে মাকরহ করে ফেলে। (আলমগীরী)।
সাহরী ও ইফতার
* সূর্যান্তের পর পানাহারের মাধ্যমে রােযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে এবং শেষ রাতে সুবহে সাদেকের আগে রােযার শক্তি যােগানাের জন্য আহার্য গ্রহণ করাকে সাহরী বলে। ইফতার ও সাহরী উভয়টাই সুন্নাত ও বরকতময়।
* রােযাদার নিজেও ইফতার ও সাহরী গ্রহণ করবে এবং সম্ভব হলে অন্যকেও এতে শরীক করাবে। এতে বিশেষ সওয়াব ও বরকত নিহিত রয়েছে।
ইফতার
ইফতার করা সুন্নাত। সূর্যাক্তের পর পরই খােরমা বা মিষ্টিজাত দ্রব্য দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। অহেতুক বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করতে নিষেধ করেছেন। ইফতারের সময় এ দোআ পাঠ করবে-
ইফতারের দোআ
আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া 'আলা রিযকি কা আফত্বারতু বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
তারাভীহ
তারাভীহের ২০ রাকাত নামায প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। জামাত সহকারে মসজিদে আদায় করা উত্তম। নামাযে পূর্ণ এক খতম কারআন পড়া সুন্নাত। বেশী পড়া ভাল। ক্বদর রাত্রিতে এক খতম করা মুস্তাহাব। কোরআন খতম করলে জামাতের লোকের কষ্ট হলে বা জামাতের লােক কমে গেলে ছােট কিরআত দ্বারা পড়া ভাল। কিন্তু অলসতার জন্য খতমে কোরআন ছেড়ে দেয়াও অনুচিত। অধিকাংশ হাফেজ আজকাল খতমে কোরআন আদায়ের সময় এত দ্রুত তিলাওয়াত করেন যে, শুধুমাত্র আয়াতের শেষাংশটুকুই বােধগম্য হয়। বর্ণ ও শব্দের উচ্চারণ ওয়াজিব গুন্নাহ ও মদ্দে ওয়াজিব সঠিকভাবে আদায় করে না এ ধরনের নামমাত্র খতমে কোরআন দ্বারা কোরআন খতম তাে দূরের কথা, নামাযও শুদ্ধ হবে না।
* না-বালেগের পেছনে বালেগের তারাভীহ শুদ্ধ হবেনা। অর্থাৎ তারাভীহ নামাযে অপ্রাপ্তবয়স্ক ইমামের পেছনে প্রাপ্তবয়স্কের ইক্বতিদা করা শুদ্ধ নয়, এটাই সহীহ।
তারাভীহের প্রতি চার রাকাত অন্তর বসে তাসবীহ ও দরূদ পাঠ করবেন এবং দো'আ পড়বেন -
সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানা যিল ইযযাতি ওয়াল 'আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল জাবারূত। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা-ইয়ামূতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ এটাও বৃদ্ধি করা যায়- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নাসতাগফিরুল্লাহা নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার।
অতঃপর এটা পড়ে মুনাজাত করবেন-
আল্লাহুম্মা ইন্না-নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্না-র। ইয়া-খালিকাল জান্নাতি ওয়ান না-র, বিরাহমাতিকা ইয়া -আযী-যু ইয়া গাফফা-রু ইয়া-কারীমু ইয়া-সাত্তারু ইয়া রহী-মু ইয়া জাব্বা-রু ইয়া খা-লিকু ইয়া বা-র। আল্লা-হুম্মা! আজিরনা ওয়া খাল্লিসনা মিনান্নারি ইয়া-মুজী-রু ইয়া-মুজী- রুইয়া -মুজী-রু বিরহমাতিকা ইয়া-আরহামার রা-হিমীন।
* যদি কোন কারণে তারাভীহ নামায ফাসেদ (ভঙ্গ) হয়ে যায় তবে যতটুকু কোরআন মজীদ ঐ নামাযে পড়া হয়েছে তা ফিরিয়ে পড়তে হবে, যাতে খতমে কুরআন পরিপূর্ণ হয়। (আলমগীরী)।
* যদি কোন কারণে কুরআন খতম না হয়, তবে সূরা তারাভীহ পড়বে। এ জন্য কেউ কেউ নিয়ম ধার্য করেছেন যে- সূরা ফীল (আলামতারা) থেকে সূরা নাস (কুল আউযু বিরব্বিন নাস) পর্যন্ত দুইবার পড়লে ২০ রাকাত হয়ে যাবে।
* প্রত্যেক অথবা প্রথম রাকআতে সূরা কাওসার থেকে সুরা লাহাব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এবং দ্বিতীয় রাকআতে সুরা ইখলাস পড়বে। এর ফলে আট রাকআত হবে। তারপর ১ম ও ২য় রাকআতে সুরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে দু রাকআত পড়লে দশ রাকআত হয়। এভাবে দু'বার নামায সম্পন্ন করলে ২০ রাক'আত হবে। অথবা প্রত্যেক রাকাতে সূরা তাকাসুর থেকে সূরা নাস পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আর দ্বিতীয় রাকআতে নিয়মানুসারে সূরা ইখলাস পড়েও ২০ রাক'আত তারাভীহ সম্পন্ন করা যাবে।
ইতিকাফ
ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়্যত সহকারে মসজিদে অবস্থান করাকে ইসলামী পরিভাষায় ইতিকাফ বলে।
* ইতিকাফকারী নারী-পুরুষের অবশ্যই মুসলমান ও বিবেকবান হওয়া পূর্বশর্ত। পুরুষকে স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে এবং নারীকে হায়য-নিফাসের অপবিত্রতা হতে পবিত্র হতে হবে।
ইতিকাফের জন্য মসজিদ
ইতিকাফের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত নয়, বরঞ্চ যে মসজিদে ইমাম ও মােয়াযযিন নিয়ােজিত আছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে আদায় হয়, সে সব মসজিদে ইতিকাফ করা জায়েয।(বাহারে শরীয়ত ও তাহতাবী)।
* তবে মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস, অতঃপর যেখানে জামাত বড় হয় সেখানে ই'তিকাফ করা ভাল। মেয়েদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরহ। তারা ঘরে একটা নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবে। (বাহারে শরীয়ত ও তাহতাবী শরীফ)।
* পবিত্র রমযান শরীফের শেষের দশদিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কেফায়া অর্থাৎ মহল্লাবাসীর কেউ যদি ইতিকাফ করে তাহলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ ইতিকাফ না করে, তাহলে সকলেই সমানভাবে গুনাহগার হবে।(আলমগীরী, দুররে মুখতার)।
* ইতিকাফ আদায়ের জন্য ২০ রমযান সূর্যান্তের পূর্বে মসজিদে ইতিকাফের নিয়্যতে প্রবেশ করে ঈদের চাঁদ উদয় হওয়ার পর বের হবেন। কেউ যদি ২০শে রমযান সূর্যাস্তের পর মসজিদে প্রবেশ করে তবে কিছু সময় কম হওয়ার দরুন তার ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ হিসেবে আদায় হবে না।
ইতিকাফ অবস্থায় যা মাকরুহ
(১) ইতিকাফকারী চুপ থাকা। ইবাদত মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী(গুনাহ); তবে স্বাভাবিক কারণে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী নয়।
(২) কথাবাতা বলা বা অনর্থক কোন কাজ করা। মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা পুণ্যসমূহকে নষ্ট করে দেয়।
ইতিকাফ অবস্থায় কি কি করা ভাল
(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা'আত সহকারে আদায় করা। জামা'আত অকারণে ছেড়ে দিলে গুণাহগার হবে। কেননা জামাআত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ।
(২) ইশরাক, দ্বোহা, আউয়াবীন, শাফীউল বিতর ও তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নামায আদায় করা।
(৩) কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
(৪) হাদীস শরীফ অধ্যয়ন করা।
(৫) কোরআন-হাদীসের বিশুদ্ধ তাফসীর ও ব্যাখ্যাগ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করা।
(৬) নবী ও ওলীগণের জীবনী পাঠ করা।
(৭) ধর্মীয় পুস্তিকা পাঠ করা।
(৮) অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
(৯) তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করা। অর্থাৎ সর্বদা ইবাদতে মগ্ন থাকা। (তাহতাবী ও দুররে মুখতার)।
* কেউ মান্নাতের ই'তিকাফ পালনকালে মৃত্যু বরণ করলোে, কিংবা মৃত্যুকালে তার দায়িত্বে মান্নতের ই'তিকাফ থেকে যায়, তবে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজনের ফিতরা পরিমাণ অর্থ বা আহার্য কোন ফকীর -মিসকীনকে প্রদান করতে হবে যদি মান্নতকারী ওসীয়ত করে যায়। মান্নতকারীর জন্য ওসীয়ত করে যাওয়া কর্তব্যও বটে। ওসীয়ত না করলেও ওয়ারিশগণের কেউ তা আদায় করা জায়েয ও উত্তম।
* ইতিকাফকারী ভুল বশতঃ দিনের বেলায় কিছু খেয়ে ফেললে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। (আলমগীরী)।
* ইতিকাফকারী প্রস্রাব-পায়খানা করতে বের হওয়া অবস্থায় কর্জদাতা তাকে আটকে ফেললে তার ই'তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
ইতিকাফ নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
(১) শরীয়ত অনুমােদিত প্রয়ােজন ছাড়া ইতিকাফকৃত মসজিদ বা ঘর থেকে বের হলে।
(২) স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হলে।
(৩) স্বামী-স্ত্রী পরস্পর চুম্বন করলে বা কামভাব নিয়ে স্পর্শ করলে।
(৪) জানাযার নামায পড়তে বের হলে।
(৫) রােগী দেখতে বের হলে।
(৬) পাগল হয়ে গেলে বা বেহুশ থাকা অবস্থায় রােযা রাখা সম্ভব না হলে।
(৭) খাবার মসজিদে নেয়া সত্বেও বাইরে এসে খেলে।
(৮) ওজু ও গােসলের জন্য ভেতরে ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বাইরে বের হলে ই'তিকাফ ভঙ্গ হবে।
যেসব প্রয়ােজনে ই'তিকাফের স্থান হতে বের হওয়া বৈধ
(১) ভিতরে পায়খানা-প্রস্রাবের ব্যবস্থা না থাকলে।
(২) পুরুষের জন্য ই'তিকাফকৃত মসজিদে জুমুআর ব্যবস্থা না থাকা অবস্থায় জুমার নামায আদায়ের জন্য যাওয়া।
(৩) অপবিত্র হলে গােসলের জন্য (ভেতরে ব্যবস্থা না থাকলে)।
অবশ্য, পায়খানা-প্রস্রাব করতে গিয়ে মুস্তাহাব গােসল করে ফেললে ক্ষতি নেই।
(৪) খাবার আনার ব্যবস্থা না থাকলে ঘরে গিয়ে আহার করা।
(৫) আযান দিতে মিনার পর্যন্ত যাওয়া।
(৬) মসজিদ ভেঙ্গে পড়লে, যালিমদের অত্যাচারের আশঙ্কায় নিরাপত্তার জন্য অন্য মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ সম্পন্ন করা জায়েয এবং সে উপলক্ষে বের হওয়া।
সদকা-এ ফিতর
নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের অধিকারী নারী বা পুরুষের সদকা-এ ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। নিসাব হচ্ছে সাড়ে সাত তােলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্য কিংবা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ।
* কর্জমুক্ত ও প্রয়ােজনীয় অর্থ ব্যতীত নিসাব (সাড়ে সাত তােলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ)-এর মালিকগণ নিজের ও নিজের পােষ্য নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ হতে এ সদকা প্রদান করবেন। ফিতরার ন্যূন্যতম পরিমাণ হল- অর্ধ সা; (২ কেজী ৫০গ্রাম) পরিমাণ গম বা আটা বা এর সমমূল্য।
* যার উপর সদকা-এ ফিতর ওয়াজিব তাকে অবশ্যই এটা আদায় করতে হবে। এমনকি অনাদায়ী থাকাবস্থায় দরিদ্র হলেও এটা ক্ষমা করা হবে না।
* একজনের ফিতরা এক জনকে দেয়া জায়েয। তেমনিভাবে কয়েকজনকে বন্টন করে দেয়াও জায়েয।
ঈদুল ফিতরের নামায
ঈদুল ফিতর এর ৬ তাকবীর বিশিষ্ট দুই রাকআত নামায আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর ওয়াজিব।মুসাফির, নারী, অসুস্থ ব্যক্তি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগ), ক্রীতদাস ও অন্ধ ব্যক্তির উপর ঈদুল ফিতরের নামায ওয়াজিব নয়। বিনা কারণে এ নামায পরিত্যাগ করা গােমরাহী ও বিদআত।
* ঈদের নামাযের পর খােতবা প্রদান করা সুন্নাত, কিন্তু শ্ৰবণ করা ওয়াজিব। এ সময় কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ, এমনকি তাসবীহ -তাহলীল ও কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করাও নিষেধ।
* খতীব ঈদের খােতবা প্রদানের পূর্বে মিম্বরে না বসা সুন্নাত এবং প্রথম খােতবার পূর্বে ৯বার, দ্বিতীয় খােতবার পূর্বে ৭বার উচ্চস্বরে এবং মিম্বর থেকে অবতরণের পূর্বে ১৪বার আল্লাহু আকবর চুপে চুপে পাঠ করা সুন্নাত।
ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়্যত
নিয়্যত : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই সালাতিল ঈদিল ফিতরি মা'আ সিত্তি তাকবীরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তা'আলা ইক্বতিদায়তু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরীফাতি, আল্লাহু আকবার।
* নিয়্যতের পর ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবর' বলে কানের গােড়া পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামায শুরু করবেন। তারপর চুপে চুপে সানা পাঠ শেষ করে ৩ বার তাকবীরে যায়েদা- 'আল্লাহু আকবর' বলে ইমাম সাহেবের সাথে কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে এবং প্রথম দুই বার হাত ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় বারের পর হাত বেধে নেবেন। তারপর ইমামের ক্বিরআত পাঠের পর রুকু ও সাজদা দ্বারা প্রথম রাকআত সমাপন করা হবে।
অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকআতের শুরুতে সূরা ফাতিহা ও ক্বিরআতের পর রুকুর পূর্বে ৩ বার তাকবীরে যায়েদা- "আল্লাহু আকবার আদায় করে রুকু ও সাজদা দ্বারা নামায শেষ করবে। তারপর ইমাম সাহেব খােতবা প্রদান করবেন।
* ঈদের নামাযের পূর্বে নখ কাটা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া, নতুন ও ভাল পােষাক -পরিচ্ছেদ পরিধান করা, সুগন্ধী ব্যবহার করা, ফিতরা আদায় করা, হেটে এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে আসা, কিছু খােরমা কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাওয়া, নির্দোষ পন্থায় আনন্দ এবং দান-খায়রাত দ্বারা খােদার শুকরিয়া আদায় করা, নামাযের পর কবর যিয়ারত ও মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নাত ও মুস্তাহাব।
* ঈদের রাত ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করা, খােদার করুণা প্রার্থনা করা অত্যন্ত মঙ্গলজনক এবং সাওয়াবদায়ক।
যাকাত প্রসঙ্গ
'যাকাত' আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ- (১) পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতা এবং (২) বৃদ্ধি।
এ গুণ দুটির পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী পরিভাষায় যাকাত এমন একটি ইবাদতকে বলা হয়, যা প্রত্যেক নিসাবের অধিকারী মুসলমানের উপর ফরয। এটা এ উদ্দেশ্যে ফরয করা হয়েছে, যেন বান্দা খােদা ও বান্দার হক্ব আদায় করে। যাকাত আদায়কারীর অর্থ-সম্পদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হলে তার মধ্যকার কার্পণ্য, স্বার্থান্ধতা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি কুপ্রবৃত্তি দূর হবে। অন্যদিকে তার মধ্যে প্রেম,ভালবাসা, উদারতা, কল্যাণ কামনা, পারস্পরিক সহযােগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার গুণাবলী বৃদ্ধি পাবে।
ফক্বীহগণ যাকাতের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছেন, অর্থ সম্পদের মধ্য থেকে গরীবের এ প্রাপ্য আদায় করা ফরয। যাকাতের নিসাব ও পরিমাণ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। যে কোন সময় ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাতে হ্রাস-বৃদ্ধি করার অধিকার কারাে নেই।
আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ যেরূপ কর নির্ধারণ ও আদায় করে থাকে যাকাত তদ্রুপ কর নয় বরং এটি একটি ইবাদত ও সাদকা, যা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা ও সামাজিক অসমতা মুক্ত করার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে।
যাকাত আদায় করলে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে দ্বিবিধ মঙ্গল সাধিত হয়। প্রথমতঃ যাকাত আদায়কারী ধনী ব্যক্তি ধন লিপ্সা ও ধনের প্রতি আসক্তি হতে উদ্ভূত বিভিন্ন চারিত্রিক দোষ ও পাপ থেকে মুক্ত থাকে। দ্বিতীয়তঃ দরিদ্র, ইয়াতীম, বিধবা নারী, বিকলাঙ্গ, উপার্জনে অক্ষম নর-নারী, নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিগণ যাকাত দ্বারা লালিত -পালিত বা উপকৃত হয়ে থাকে; এটি তাদের প্রতি দয়া নয়, এটি তাদের প্রাপ্য।
কার উপর যাকাত ফরজ
বিবেক সম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়ে থাকে, তাহলে তাদের উপর যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক এবং এটা আদায়ের ব্যাপারে তারা নিজেরাই দায়িত্বশীল। নিসাবের অধিকারী ইয়াতীমের সম্পদের উপর যাকাত আদায় করা ফরয এবং তা আদায় করার দায়িত্ব তার অভিভাবকের। নিসাবের অধিকারী যে কোন প্রতিবন্ধীর অর্থ সম্পদের উপরও যাকাত আদায় করা ফরয। এটি আদায় করার দায়িত্বও তার অভিভাবকের উপর। অনুরূপ কয়েদীর উপরেও, যে ব্যক্তি তার অবর্তমানে ব্যবসা বা অর্থ সম্পদের অভিভাবক হবে, সে ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করবে।
বাংলাদেশের কোন মুসলমান যদি বিদেশে থাকে এবং বাংলাদেশে তার সম্পত্তি বা ব্যবসায়ে নিয়ােজিত অর্থ নিসাব পরিমাণ মওজুদ থাকে তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। উৎপাদন বৃদ্ধিতে সক্ষম ধন-সম্পদের নির্ধারিত ন্যূনতম পরিমাণ (নিসাব) এক বৎসরকাল কারাে মালিকানা বা অধিকারে থাকলে এর যাকাত তার উপর ফরয হয়ে থাকে।
নিছক ধনই যাকাতের কারণ নয়; বরং ধন বৃদ্ধির (উৎস) ক্ষমতাই যাকাতের মূল কারণ। ধন বৃদ্ধি করার ক্ষমতা থাকলেই পূর্ণ নিসাবের উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে।
নিসাব
নিসাব হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা সমপরিমান মালামাল বা অর্থ সঞ্চিত থাকা। কারাে নিকট নিসাবের কম স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে উভয়ের মূল্য একত্রে যদি সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্যের মূল্যের সমান হয়, তবে মােট মূল্যের উপর যাকাত ফরয হবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য উভয় বস্তু নিসাব পরিমাণ থাকলে এগুলাের মূল্য একত্রে হিসাব করার দরকার নেই; বরং উভয়ের যাকাত পৃথক পৃথকভাবে আদায় করতে হবে।
নগদ মুদ্রার যাকাত
ফক্বূহগণের সর্বসম্মতিতে, নগদ মুদ্রার যাকাত ফরজ। যদি ও মুদ্রাগুলাে খাদ্য মিশ্রিত হয়। কারণ তা দেশে প্রচলিত মূল্য স্বরূপ এবং লেন-দেনের উদ্দেশ্যেই এর উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং কারাে নিকট সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তােলা স্বর্ণের মূল্যের সমান নগদ টাকা থাকলে; স্বর্ণ ও রৌপ্য কিছুই না থাকলে ও তার উপর যাকাত ফরয হবে।(ফতােয়ায়ে শামী)।
উদাহরণ স্বরূপ, এক তােলা রৌপ্যের মূল্য ২৫০ টাকা। সুতরাং কারাে নিকট সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্যের হিসাবে ১৩,১২৫ টাকা থাকলে এর যাকাত ফরয। কেননা তা সাড়ে বায়ান্ন তােলা রৌপ্যের সমান। নগদ টাকার যাকাতও ৪০ ভাগের এক ভাগ। ব্যাঙ্কে যে সমস্ত টাকা রক্ষিত আছে সেগুলির উপর ও যাকাত ওয়াজিব।
বন্ধকী সম্পত্তি যার আয়ত্তাধীনে থাকবে তার নিকট থেকে তার যাকাত আদায় করা হবে। বন্ধকী জমি যদি মহাজনের আয়ত্বাধীনে থাকে তাহলে মহাজনের নিকট থেকেই তার উৎপন্ন দ্রব্যের ওশর বা দশমাংশ আদায় করতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে জমির খাজনা দিতে হয়, তার কোন ওশর বা দশমাংশ দিতে হবে না। কারখানার যন্ত্রপাতির উপর যাকাত বাধ্যতামূলক নয়। কেবল বছরের শেষভাগে যে কাঁচা মাল বা।শিল্পদ্রব্য কারখানায় থাকবে, তার দাম ও নগদ অর্থের দামের
উপর যাকাত দিতে হবে। অনুরূপ ব্যবসায়ীদের আসবাবপত্র, স্টেশনারী দোকান বা গৃহ এবং এ ধরনের অন্যান্য বস্তুর উপর যাকাত দিতে হবে না। কেবল বছরের শেষে তাদের দোকানে যে মালপত্র থাকবে তার দামও তাদের তহবিলে সঞ্চিত নগদ অর্থের উপর যাকাত ফরয হবে।
যে সমস্ত বস্তু ও যন্ত্রপপাতিকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। সেগুলাের উপর যাকাত ফরয নয়। মণি-মুক্তা বা মূল্যবান পাথর অলঙ্কারের গায়ে বসানাে থাকুক বা পৃথক থাকুক তার উপর কোন যাকাত নেই, তবে যদি কেউ মূল্যবান পাথরের ব্যবসা করে তবে অন্যান্য পণ্যদ্রেব্যের ন্যায় তার উপর ও যাকাত ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ থাকলে তার মূল্যের শতকরা আড়াই ভাগের হিসাবে যাকাত ওয়াজিব হবে।
খনিজ দ্রব্য, গুপ্তধন ও কৃষি উৎপাদন ছাড়া বাকী যাবতীয় দ্রব্যের যাকাতের জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে নিসাব পরিমাণ বা তার চাইতে অধিক দ্রব্যের উপর একটি বছর অতিবাহিত হতে হবে। কিন্তু খনিজ দ্রব্য, গুপ্তধন ও কৃষি উৎপাদনের এক বছর অতিবাহিত হওয়া পূর্বশর্ত নয়।
অন্যদিকে ফসল কাটার সাথে সাথেই কৃষি উৎপাদনের উপর যাকাত বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। বছরে দুবার বা তার চেয়েও অধিকবার ফসল হলেও প্রতিবারেই ফসল কাটার পর প্রাপ্ত ফসলের উপর যাকাত দিতে হবে, যদি ওই জমির খাজনা দিতে না হয়।
হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে, যে সব বস্তুর উপরযাকাত ফরয সেগুলাের হার নিম্নরূপঃ
বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ হলে শতকরা ১০ভাগ এবং কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থায় চাষাবাদ হলে শতকরা ৫ ভাগ। নগদ টাকা ও সােনা-রূপা শতকরা আড়াই ভাগ। কারখানার উৎপাদিত দ্রব্যাদির উপর শতকরা আড়াই ভাগ।
যাকাতের খাত
কোরআন-হাদীসের আলােকে নিম্নোক্ত শ্রেণীর মানুষকে যাকাত দেয়া যাবে। যথা: গরীব, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারীগণ, ঋণগ্রস্ত, খােদার পথে জেহাদকারী ও মুসাফির। গরীব অর্থ হচ্ছে নিজের জীবন ধারণের জন্য যে ব্যক্তি অন্যের মুখাপেক্ষী। যেমন- বার্ধক্য বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্রুটির কারণে যারা সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয় এবং কিছু সাহায্য লাভ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এমন শ্রেণীর লােক এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে, বিধবা মহিলা, বেকার ও উপার্জনে অক্ষম এবং দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিবর্গ। 'মিসকীন' শব্দের ব্যাখ্যা হাদীস শরীফে এমনভাবে দেয়া হয়েছে- যে ব্যক্তি নিজের প্রয়ােজন পরিমাণ সামগ্রী লাভ বা উপার্জন করে না। মানুষ যাকে সাহায্য করে বলে বুঝা যায় না এবং সে মানুষের সামনে হাতও পাতেন না।
এ প্রেক্ষিতে মিসকিন এমন ভদ্র ও শরীফ ব্যক্তিকে বলা হয় যে নিজের প্রয়ােজন পরিমাণ রুজি অর্জনে সক্ষম নয়। উপার্জনরত দেখে লােকেরা তাকে সাহায্য করেন না। অন্যদিকে নিজের শরাফতের কারণে সে কারাে কাছে হাত পাততেও পারেন না।
যাকাত আদায়কারী কর্মচারী বলতে বুঝায়, যারা যাকাত উসূল, বন্টন ও তার হিসেব-নিকেশে রত থাকে। তারা নিসাবের মালিক হােক বা না হােক স্ববস্থায় যাকাতের অর্থ থেকে তারা পারিশ্রমিক লাভ করবে।
যাকাতের টাকা উল্লিখিত ব্যয় ক্ষেত্রের প্রত্যেকটিতে একই সঙ্গে ব্যয় অপরিহার্য নয়। প্রয়ােজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী যে ব্যয় যে পরিমাণ সঙ্গত মনে করবে সে পরিমাণ ব্যয় করতে পারবে। এমনকি প্রয়ােজন দেখা দিলে একই ব্যয়ক্ষেত্রে সমস্ত টাকাও ব্যয় করা যেতে পারে।
যাকাতের স্বত্বদান
যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে স্বীয় সত্ব ত্যাগ করে যাকাত প্রদান করতে হবে। অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। মালিকানা স্বত্বে দখল না নিয়ে যাকাত গ্রহীতার মঙ্গলজনক কাজে ব্যয় করলে যাকাত আদায় হবে না। তাই মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও ইয়াতীমখানা নির্মাণ, পুল নির্মাণ, নদী-নালা, কূপ ও খাল খনন, সড়ক ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ বা মেরামত, মৃত ব্যক্তির কাফন দান, অতিথি ভােজন ইত্যাদি কার্যে যাকাতের মাল ব্যয় করা জায়েজ নাই। যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি যদি এ সমস্ত হতে উপকার গ্রহণ করে থাকে তবুও দুরস্ত হবে না। এ গুলির উপর তাদের মালিকানা স্বার্থ না থাকার কারণেই যাকাত আদায় হয়না। কিন্তুএতিমখানায় যদি এতিমদেরকে মালিকানা স্বত্বে আহার, বস্ত্ৰ ও মাদরাসার মিসকীনফান্ড থাকে এবং ঐ ফান্ড হতে গরীব ছাত্রদের খরচ নির্বাহ হয়ে থাকে তাহলে জায়েজ হবে। তদ্রুপ উত্তরাধিকারী বিহীন মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যয় নির্বাহে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা দুরস্ত নয়। কারণ মৃত ব্যক্তির মালিক হওয়ার যােগ্যতা নেই। কিন্তু যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে যাকাত দিলে, সে যদি স্বেচ্ছায় উক্ত মৃত ব্যক্তির কাফনে তা ব্যয় করে তবে জায়েজ হবে। সেরূপ মৃত ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত থাকলে যাকাতের অর্থ দ্বারা সােজাসুজি এটা পরিশােধকরা জায়েজ নহে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হলে তাকে মালিকানা স্বত্বে যাকাত দেয়া যেতে পারে সে তার মালিকানা হতে স্বীয় সন্তুষ্টিতে মৃত ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশােধ করলে জায়েজ হবে।
যাকাতের নিয়্যত
যাকাত আদায়ের সময় এর নিয়্যত করা ফরজ। যাকাত আদায়ের নিয়্যত ব্যতীত শুধু দান করলে যাকাত আদায় হবে না। নিয়্যত মনে মনে করলে চলবে, মুখে বলা জরুরী নয়। উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেলে যাকাত দেয়া হবে এ উদ্দেশ্যে যাকাতের মাল পৃথক করে রাখা ভাল। যাকাতের মাল পৃথক করার সময় অথবা উপযুক্ত পাত্রকে দেয়ার সময় যাকাতের নিয়্যত করলে চলবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নিয়্যত না করলে যাকাত আদায় হবেনা। (হেদায়া)।
যাকাত দেওয়ার সময় যাকাত গ্রহীতাকে যাকাতের মাল দেয়া হচ্ছে এ বিষয় জানাবার প্রয়ােজন নেই; বরং যদি সে যাকাত গ্রহণের উপযােগী হয়। (মাসিক তরজুমান,১৪৩৮হি:,জুন - ২০১৭ই,পৃষ্ঠা- ৩১ থেকে ৩৯)।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন