প্রমানের আলোকে কদমবুছি করা শিরিক নয় সুন্নাহ (১)

 

প্রমানের আলোকে কদমবুছি করা শিরিক নয় সুন্নাহ (১)


❏ প্রমাণ ১ :

ইমাম হযরত মুসলিম (رحمة الله) [ওফাত ২৬১হিঃ] ইমাম বুখারী (رحمة الله) [ওফাত ২৫৬হিঃ] এর নিকট কদম্বুচির অনুমতি প্রার্থনা সম্পর্কিত ঘটনা।



أحمد بن حمدان القصار سمعت مسلم بن الحجاج وجاء إلى محمد بن إسماعيل البخاري فقبل بين عينيه وقال دعني حتى أقبل رجليك يا أستاذ الأستاذين وسيد المحدثين وطبيب الحديث في علله حدثك



অনুবাদ: আহমদ বিন হামদান আল কাসার (رحمة الله) বলেছেন যে, তিনি ইমাম মুসলিম (رحمة الله)-কে ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দরবারে আসতে দেখেন এবং তিনি তাঁর কপালে চুম্বন করেন, "তখন তিনি তাঁর কদমে চুম্বন করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন" তখন তিনি বলেছিলেন: "হে মহান ওস্তাদের ওস্তাদ! হে চিরাচরিত (ইমামগণের) শিক্ষক!  হাদিসের দুর্বলতা সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।



তথ্যসূত্রঃ



►ইমাম ইবনে কাসীরঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (১১/৩৩), মক্তবা আল মা'রিফ, বৈরুত, লেবানন দ্বারা প্রকাশিত।


►খতিব আল-বাগদাদীঃ তারিখে বাগদাদে বর্ণনা করেছেন (১৩: ১০২),


►হাকিমঃ তারীখ আল হাকিম


►মারিফাত `উলুম আল হাদিস,


►বায়হাকীঃ আল-মদখাল,


►ইবনে হাজার আসকালানীঃ হাদীউস সারি (পৃষ্ঠা ৪৮৮) এবং তাঁর নূকাত (২: ৭১৭-৭১৯),


►তবকাত শফিয়িয়ায় বুখারির অধ্যায়ে আল-সুবকি,


►ইবনে আল-মুকরি '(মৃত্যু ৩৮১) তাঁর আল-রুখসা ফাই তাকবিল আল-ইয়াদ (রিয়াদ সংস্করণ ১৯৮৮)


►ইমাম যাহাবী: সিয়ারু নুবালা, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা নং: ৩৩৪৩, ইমাম বুখারীর জীবনী অনুসারে, জীবনী নং: ৪৯৬৯,


►ইমাম নববীঃ তাহযিব আল আসমা ওয়ার রিজাল খন্ড-১, প -৮৮।


►হাফিজ ইবনে ই হাজর আছকালানী: ফাতহুল বারী, অধ্যায়: মুকাদমাহ ফাতহুল বারী


►ইবনে নুকতা 'আত-তাকইদ লি মারিফা রুওয়াত আস-সুনান ওয়াল-মাসানীদ' (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)


►আল কিরামাতু ওয়াল তাক্ববীল।


►মিযানুল আখবার ৪৯ পৃষ্ঠা ।




______

❏ প্রমাণ ২ :



পাক ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দিসে দেহলভীর অভিমতঃ



قال الشيخ عبد الحق المحدث الدهلوى: وفى هذا الحديث دليل على جواز تقبيل الارجل-


পাক-ভারতের প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘আশিয়াতুল লুমআত’ কিতাবে শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, পরহেজগার আলেম-এর দস্তবুচি জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন- মুস্তাহাব। যদি আলেম ও ন্যায়-পরায়ন বাদশাহর হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের সম্মানার্থে বুচা বা চুমু দেয়, তাতে কোন দোষ নেই। তবে দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর উদ্দেশ্যে চুম্বন করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক রাসূলে পাক (ﷺ)'র কদমবুচি করার বর্ণনা এসেছে।


[সূত্র: আশিয়াতুল লময়াত, খন্ডঃ ৪র্থ, পৃ: ৩৩, মোজাহিরুল হক্ব, খন্ড: ৪র্থ, পৃষ্ঠা: ৬০।]


______

❏ প্রমাণ ৩ :


 


কদম্বুচি সম্পর্কে ফতোয়ার কিতাবে আরো বর্নিত আছেঃ


تمام روايات سے ثابت هوا كه علماء ومشاءخ اور ديني شرف ركهنے والے حضرات كي دست بوسي بلكه قدم بوسي نيز پيشاني وغيره پر بوسه دينا سنت اور تعامل صحابه وتابعين سے بلا كسي نكير كے ثابت هے


অর্থ: হাদীস শরীফের সকল বর্ননা দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, দ্বীনদার, আলেম,পীর ও বূজর্গ উনাদের হস্তবুচি বা হাত চুম্বন, কদম্বুচি বা পা চুম্বন এমনকি কপালে চুম্বন দেওয়াও সুন্নত এবং সাহাবায়ে কিরাম এবং হযরত তাবেয়ীগণের আমল হিসাবে বিনা প্রশ্নে প্রমানিত।"


[আল কিরামাতু ওয়াল তাক্ববীল লিশ শায়েখ আবেদ সিন্ধি]


______

❏ প্রমাণ ৪ :


 



মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর অভিমত :



اس حدیث پہ بھی معلوم ہوا ہے یہ جو محبین کے عادت ہے کہ پیر کے ہاتھ کو یا پیشانی وغیرہ کو بوسہ دیتے ہیں اسکا بھی کچھ حرج نہیں البتہ اذن شرعی سے تجاوز نہ چاہئے۔


অর্থ, তিনি “আওাকাশুফ” গ্রন্থের একটি হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন, এই হাদীসের জ্ঞাতব্য মূল কথা হল- পীরের প্রায় মুরীদগণের অভ্যাস হল স্বীয় পীরের হাত, পা ও কপালে চুম্বন করা। সুতরাং এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে শরয়ী হুকুমের কোন ব্যাঘাত যাতে না ঘটে। [সূত্রঃ ‘আত্তাকাশুফ’।]



এমদাদুল ফতোয়া কিতাবের ভাষ্য মতে :



پس صحیح جواز تقبیل قدم فی نفسہ ہے اور فقہاء کی منع عارض مفسد۔


অর্থ- কদমবুচি মূলত একটি জায়েয আমল। তবে দিক বিবেচনা করে তা নিষেধ করেছেন।


১.এমদাদুল ফতোয়া, খন্ড ৫, পৃ: ৪৫।


২.মাওয়ায়েজে আশরাফিয়!


 


আশরাফ আলী থানবী আরো ফতোয়া দিয়েছেঃ


عالم و والدين كي تقبيل يد ورجل جءز ھے


অর্থঃ আলিম, পিতা-মাতার হস্তবুচি (হাত চুম্বন) এবং কদম্বুচি (পা চুম্বন) জায়িয !"


[ইমদাদুল আহকাম ১ খন্ড ১৩৫।]



এমদাদুল আহকাম গ্রন্থে আছে-



عالم،والدین کہ تقبیل ید ورجل جائز ہے مگر انحناء مثل رکوع حرام ہے۔


অর্থ, আলেম, পিতা-মাতা ইত্যাদির হাত ও পায়ে চুম্বন করা জায়েয, কিন্তু রুকুর উদ্দেশ্য মাতা ঝুকানো হারাম। [সূত্র: এমদাদুল আহকাম: খন্ড, ১ম পৃ: ৩৫ পৃষ্ঠা।]


______

❏ প্রমাণ ৫ :



মাসাআলাঃ তবে ফাসেক-ফাজের, জালেম শাসক এবং জাহেল মুর্খকে কদম বুচি ও হাতবুচি করা মাকরূহ ও গুনাহ। কোন কোন ফকিহ এভাবে বলেছেন।

❏ প্রমাণ ৬ :


 দেওবন্দী গুরু রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তার কিতাবে লিখেছেঃ



وفی الفتاویٰ رشیدیہ: سوال:کسی شخص کے لئے تعظیم کو کھڑا ہو جانا اور پاوں پکڑنا اور چومنا تعظیما درست ہے یا نہیں؟


جواب: برائے تعظیم دینداروں کے لئے کھڑا ہونا درست ہے اور پاوں چومنا اس جیسی شخص کا بھی درست ثابت ہے۔



অর্থ, দেওবন্দি মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী তার রচিত “ফতুয়ায়ে রশিদিয়ার” মধ্যে প্রশ্নোত্তরে বলেন- প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির সম্মানে দাড়ানো বা তাকে কদমবুচি করা বৈধ কিনা ? উত্তর: দ্বীনদার ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়ানো ও তাদের পায়ে চুমু খাওয়া বৈধ এবং তা হাদীসে রসূল দ্বারা প্রমাণিত। [ফতোয়ায়ে রশীদিয়া কামেল ৪৫৯ পৃষ্ঠা]




______

❏ প্রমাণ ৭ :


 


দেওবন্দী মুফতী শফী তার কিতাবে লিখেছে-


پسي مختصر بات يهي هے که سنت رسول الله صلي الله عليه و سلم اور تعامل صحابه مين اسكي حوحد منقول هے اسكي اسي حدپر ركها جاءے-تو


بلا شبه دست بوسي قدم بوسي معانقه مصافحه سب جءز بلكه سنت ومستحب هيی


অর্থঃ সূতরাং সংক্ষিপ্ত কথা হলো যে, হাদীস শরীফ ও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনের আমল দ্বারা এর (কদম্বুচির) যেই সীমা বর্ননা করা হয়েছে, আমাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। নিঃসন্দেহে হস্তবুছী (হাত চুম্বন) কদম্বুচি ( পা চুম্বন) , মুয়ানিকা, মুছাহাফা, সবই জায়িয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।"


[জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ ১ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা]



দেওবন্দী মুফতি শফির সাহেবের অভিমত:



حضرت شیخ محمد عابد سندھی نے اپنی رسالہ میں تحریر فرمایا کہ تعظیم و تکریم کیلئے دست بوسی یا قدم بوسی صرف ان لوگوں کی جائز ہے جو عالم صالح یا سلطان عادل ہویا کوئی دینی شرف و بزرگی رکھتا ہو۔[ذکر الشفعی فی جواھر الفقہ صفحہ،১৮৫ جلد،৮]


অর্থ- তিনি বলেন, হযরত শায়খ মুহাম্মদ আবেদ সিনদী বলেছেন, তাকওয়াবান আলেম, ন্যায়পরায়ন বাদশা, ধর্মীয় দৃষ্টিতে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী শুধুমাত্র এমন লোকদের হাত ও পা চুম্বন করা জায়েয।


[সূত্র: জাওহারুল ফিকহ: খন্ড ১, পৃ: ১৮৫।]


______

❏ প্রমাণ ৮ :



দেওবন্দী গুরু মাহমুদুল হাসান লিখেছে,


جو شخص واجب الاكرام هو اسكي قدم بوسي كي اجازت هے



অর্থঃ যিনি সম্মানের অধিকারী, তাঁর কদম্বুচি করার অনুমতি রয়েছে!"


[ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ১ম খন্ড ১৭৫ পৃষ্ঠা]



ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া গ্রন্থে আছেঃ



جو شخص واجب الاکرم ہو اس کی قدم بوسی کے اجازت ہیں لیکن اعتقاد میں غلو نہ ہو اور سجدہ کی ھیّت نہ ہوئی پائی۔


অর্থ, যে ব্যক্তি সম্মানের পাত্র তার কদমবুচি করা বৈধ। তবে ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং সেজদার মত হবেনা।


[সূত্র: ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: খন্ড-১ পৃষ্ঠা: ১৭৫।]




______

❏ প্রমাণ ৯ :


 


ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়া مُلَاقَاتُ الْمُلُوْكِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে,


اِنْ قَبَّلَ يَدَ عَالِمِ اَوْ سُلْطَانٍ عَّادِلٍ بِعِلْمِهِ وَعَدْلِهِ لَا بَاسَ بِهِ


যদি আলিম বা ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের হাতে চুমু দেয়া হয় ওদের ইলম ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে, তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই।



❏ প্রমাণ ১০ :


 


একই গ্রন্থে কিতাবুল কারাহিয়াতে زِيَارَةُ الْقُبُوْرِ অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে,


وَلَاْبَاسَ بِتَقُبِيْلِ قَبْرِ وَالِدَيْهِ كَذَا فِى الْغَرَائِبِ


নিজের মা-বাপের কবরে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই যেমন গরায়েবে বর্ণিত হয়েছে।

______________

কিতাবঃ কদম্বুচি করা শিরিক নয় সুন্নাহ

লেখকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন