উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, হজরতে আম্মারকে হত্যা করেছেন আবু গাদিয়া নামক একজন যিনি সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়ার (رضي الله عنه) পক্ষে ছিলেন। এটাই হলো শিয়াদের মূল বক্তব্য যে, হজরতে আম্মারের হত্যাকারি বিদ্রোহী দল বলতে হজরতে আমিরে মুয়াবিয়ার দলকে বোঝানো হয়েছে। শিয়াদের উক্ত দাবি প্রমাণ হলেও উক্ত ঘটনার উপর ভিত্তি করে যেহেতু শিয়াদের দাবী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দলটি জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল , উদ্ধৃতাংশটির বাস্তবতা জানতে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে উত্তর দেওয়া দরকার।
প্রথমতঃ
আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) ও তার নেত্রীত্বাধীন সৈন্য দল যদি জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল হয়, তাহলে শিয়াদের মনে রাখা দরকার মওলা আলী সেই দলের (আমীরে মুয়াবিয়া) ডাকে সাড়া দিয়ে সালিসিতে সম্মতি জানিয়েছিলেন। শিয়া নামধারী খারজিরা নিষেধ করার পরও তিনি সেই সালিসিতে সম্মতি দেন। মওলা আলী নিজের দলের লোকেদের কথা না শুনে জাহান্নামের আহব্বানকারী দলের আহব্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। অতএব এখানে প্রশ্ন আসে নিজের দলের আহব্বানে সাড়া না দিয়ে জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দলের দিকে সাড়া দিলেন কেণ,এই প্রশ্নের উত্তর শিয়াদের কাছে থাকলে যেন দেয়।
দ্বিতীয়তঃ يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ
তিনি তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান দেবেন তারা তাঁকে জাহান্নামের দিকে আহব্বান দেবে, এই উদ্ধৃতাংশটি ইকরামা ছাড়া অন্য কেও বর্ণনা করেনি। তাছাড়া ইকরামা কোন সাহাবি ছিলো না। তার সম্বন্ধে কিছু বলার পুর্বে, উক্ত হাদীসটি সাহাবীগনও বর্ণনা করেছেন যেখানে কোথাও উক্ত শব্দটি বর্তমান নেই। তার প্রমাণ হিসাবে নিম্নে ভিন্ন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করলাম।
তৃতীয়তঃ
আমিরে মুয়াবিয়া (রাঃ) তাঁকে হত্যা করেন নি।
চতুর্থত,
১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
পঞ্চমত,
এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।
❏ হাদিস ২৭:
হজরতে উম্মে সালমা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ
عن أم سلمة قالت : قال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تقتل عماراً الفئة الباغية.
অর্থ উম্মে সালমা (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন আম্মারকে বিদ্রোহি দল হত্যা করবে।
➥(মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৫১৯৪)
❏ হাদিস ২৮:
হজরতে আমর বিন আ'স (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ
قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আ'স (رضي الله عنه) বলেন আমি আল্লাহর রসুল স্বাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তাকে অর্থাৎ আম্মারকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে
➥ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৬৩২)
❏ হাদিস ২৯:
হজরতে আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ
عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أبشر عمار تقتلك الفئة الباغية
আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন আম্মারকে সংবাদ দাও , তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।
➥(তিরমিজি শরিফ, হাদীস নং-৩৭৩৬)
❏ হাদিস ৩০:
হজরতে হুজাইফা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ
قال عمار بن ياسر : سمعت رسول الله :صلى الله عليه وسلم يقول لعمار : يا أبا اليقظان لن تموت حتى تقتلك الفئة الباغية-
হজরতে আম্মার বিন ইয়াসির (رضي الله عنه) বলেন আল্লাহর রসুলকে বলতে শুনেছি হে আবু ইয়াকজান তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা না করা পর্যন্ত তুমি মৃত্যুবরণ করবে না।
➥হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৫৬৯৫
❏ হাদিস ৩১:
খুজাইমা ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ
فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم : يقول تقتلك الفئة الباغية
সাবিত বিন খুজাইমা (رضي الله عنه) বলেন নিশ্চই আমি আল্লাহর রসুল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি হে আম্মার তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।
➥হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৫৬৭৬
❏ হাদিস ৩২:
আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন
أخبرنا سليمان أبو داود الطيالسي قال أخبرنا شعبة قال أخبرني عمرو بن دينار قال سمعت أبا هشام يحدث عن أبي سعيد الخدري أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعمار تقتلك الفئة الباغية
আমর বিন দিনার বলেন আমি আবু হিশামকে বলতে শুনেছি আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসুল (ﷺ) আম্মারকে বললেন হে আম্মার তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।
➥তাবকাতুল কুবরা,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৫২
উপরিউক্ত বর্ণনাগুলি আরো অন্যান্য বর্ণনা পর্যালোচনা করার পর জানা যায়,
يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ
সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান করবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে ।হজরতে ‘আম্মার (رضي الله عنه) বললেন, আমি ফিতনাহ হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, এই অতিরিক্ত উদ্ধৃতাংশটি কোন সাহাবী বা তাবেয়ি বর্ণনা করেননি এক মাত্র ইকরামাহ ব্যতীত।
এইবার ইকরামার দিকে তার বর্ণনা কতটা গ্রহণযোগ্য, নিম্নে তার কিছু দলিল পেশ করলাম।
ابن سعد عن أبيه عن سعيد بن المسيب أنه كان يقول لغلامه برد يا برد لا تكذب علي كما يكذب عكرمة على بن عباس وقال إسحاق بن عيسى الطباع سألت مالك بن أنس أبلغك أن بن عمر قال لنافع لا تكذب علي كما كذب عكرمة على بن عباس
ইবনে সা'দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন সায়িদ বিন মুসাইয়াব (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি তার গুলাম বুরদকে বললেন হে বুরদ আমার উপর মিথ্যা আরোপ করো না যেমন ইকরামাহ আব্বাসের উপর করতো।এবং ইসহাক বিন আইসা আলতিবায়ি বলেন, মালিক বিন আনাস বললেন আমি তোমাকে জানাবো যে ইবনে উমার নাফেকে বলেন, আমার উপর মিথ্যারোপ করো না যেমন ইকরামাহ সে ইবনে আব্বাসের উপর করতো।
(১)তাহযীবুত তাহযীব- খন্ড- ৩ পৃষ্ঠা -১৩৬
(২)লিসানুল মীযান-খন্ড- ২,পৃষ্ঠা- ২৬৯,
(৩)ইবনে সা'দ আততাক্বাতুল কুবরা-খন্ড-৫, পৃষ্ঠা- ১০৩,
(৪)তারীখে ইবনে আবী খাইসামা-খন্ড- ২ পৃষ্ঠা- ১৯৪,
وقال جرير بن عبد الحميد ، عن يزيد بن أبي زياد : دخلت على علي بن عبد الله بن عباس وعكرمة مقيد على باب الحش قال : قلت : ما لهذا قال : إنه يكذب على أبي.
জারির বিন আব্দুল হামিদ বলেন, আবু ইয়াজিদ বিন আবু জিয়াদ বর্ণনা করেন আমি আলী বিন আব্দুল্লাহ ঘরে প্রবেশ করলাম আর ইকরামাহ দরজার চৌকাঠে আটক ছিলেন আবু জিয়াদ বললেন এর কারণ কি? আলী বিন আব্দুল্লাহ উত্তর দিলেন সে আমার পিতার উপর মিথ্যারোপ করতো।
১.তাহজিবুত তাহজিব, খন্ড- ৭ পৃষ্ঠা-২৩৮
২.তাহজিবুল কামাল ফি আসমাউ রিজাল খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২২৯
وقال الجوزجاني : قلت لأحمد : عكرمة كان أباضياً
ইয়াকুব জুজ্জানি বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালকে বলতে শুনেছি ইকরামাহ ইবাজি (খারজি) ছিলো।
➥তাহজিবুত তাহজিব,খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-১৩৬
قال إبراهيم بن يعقوب الجُوزجاني : سألت أحمد بن حنبل عن عكرمة، قال: كان يرى رأي الأباضية
ইবরাহিম বিন ইয়াকুব বিন জুজ্জানি বলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালাকে ইকরামা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন সে ইবাজি (খারজি) মতদর্শ পোষণ করতো।
➥তাহজিবুল কামাল খন্ড-২০ পৃষ্ঠা-২৭৮
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমাদের কাছে একথা পরিস্কার যে, ইকরিমা ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কিত।তাই উপরিউক্ত বাক্যটি সন্দিহান। তাছাড়া উপরোক্ত বাক্যটির ব্যাপারে ইকরিমার কোন সমর্থক বর্ণনাকারী পাওয়া যায়নি। তাই অভিযুক্ত রাবির সমর্থকবিহীন বর্ণনাটির উপর আস্থা রাখা যায় না। কিন্তু বিষয় হলো যেহেতু
وَيْحَ عَمَّارٍ ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ،
এই উদ্ধৃতাংশটি বুখারী শরিফে বর্ণিত হয়েছে তাই কারোর কারোর আপত্তি থাকতে পারে, যে বুখারীর হাদীস অস্বীকার করেন কি করে, যেখানে সর্বসম্মত মত বুখারীতে সমস্ত হাদীস সহী?যারা এমন বলে বা বলবে তাদের এই মন্তব্যের উত্তরে বলতে চাই ইমাম বুখারী যত বড় মুজতাহিদ হোক তার সমস্ত বর্ণনা নিক্ষুঁত হতে পারে না কারণ তিনি নবী নন।এখানে ইজতেহাদের ব্যাপার আছে ভুল হতেই পারে। তাছাড়া উক্ত উদ্ধৃতাংশটি অতিরিক্ত ইমাম বুখারী আসল পান্ডুলিপিতে ছিলো না। তার দলিল হিসাবে, প্রমাণ নিচে দিলাম।
❏ ইবনে বাত্তাল বলেনঃ
ولفظه " ويح عمار تقتله الفئة الباغية يدعوهم " الحديث ، واعلم أن هذه الزيادة لم يذكرها الحميدي في الجمع وقال : إن البخاري لم يذكرها أصلا ،
এই শব্দাংশ আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে সে তাদেরকে আহব্বান জানাবে.. পুরো হাদীস.. আমি জানতে পেরেছি এই অতিরিক্ত অংশটি হামিদি জামে'তে উল্লেখ করেনি এবং বলেন ইমাম বুখারীও আসল পান্ডুলিপিতে উল্লেখে করেননি।
(১)ফাতহুল বারী খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭৯
(২)ইবনে হাজার আস্কালানি, আনিসুস সারি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭৫
(৩)ইবনে আসির আল জাযারি জামাউল উসুল ফি আহাদিসে রাসুল, খন্ড-৯ পৃষ্ঠা- ৩৭
(৪)তারিখুল ইসলাম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭
(৫)জামেইল বায়ান ওয়াল আহকামিল নিসিয়ান, পৃষ্ঠা-১০৬
অতএব বলা যায় বুখারী শরিফে বর্তমানে উল্লেখিত يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ
অংশটি ইমাম বুখারীর আসল পান্ডুলিপিতে ছিলো না, ইহা মতনে অতিরিক্ত সংযোজন। এইবার রয়ে গেলো বাগি বা বিদ্রোহী দল, বিদ্রোহী হওয়ার কারণে আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন সৈন জাহান্নামি হয়ে গেছে এমন নয় । নিজের হকের জন্য শাসক বা আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এমন বহু প্রমাণ পাওয়া যায়, যেমন দেশের জন্য সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা,যেমন আমরা দেখেছি স্বাধীনতা সৈনিকগন বা সংগ্রামীর দেশ স্বাধীনের খাতিরে ইংরেজ সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। কিংবা আজও দেখা যায় নিজের হকের জন্য জনতা নিজের দেশের সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সরব হয়। অনুরুপ ভাবে আমীর মুয়াবিয়াও সেই সময়কার শাসক বা আমীর, মওলা আলীর কাছে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবীতে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি তার হকের দাবি করছিলেন কারণ তিনি হজরতে উসমানের চাচাত ভাই। তিনি যদি না তার চাচাতো ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবী চাইবেন, তাহলে কে চাইবে? তবে যেহেতু তিনি ভুলের উর্ধ্বে ছিলেননা তাই এই ক্ষেত্রে তার কিছুটা ভুল হয়ছিলো তাঁর জানা বা বোঝা উচিত ছিলো, হজরতে উসমানকে কারা খুন করেছে তা মওলা আলী জানতেনই না। তিনি না জেনেই আবেগে এসে হটকারিতা দেখানোর ফল হিসাবে সিফফিন নামক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটি হলো। যাতে দু পক্ষের হাজারো হাজারো মুসলমান নিহত হয়েছে। সামান্য ইজতেহাদের ভুলের জন্য এতবড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেলো।
যাইহোক শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সৈনদলকে জাহান্নামী প্রমাণ করতে আরো একটি হাদীস দিয়ে থাকে, যা নিম্নে উল্লেখ করলাম।
❏ হাদিস ৩২:
حَدَّثَنَا عَفَّانُ قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو حَفْصٍ وَكُلْثُومُ بْنُ جَبْرٍ عَنْ أَبِي غَادِيَةَ قَالَ قُتِلَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ فَأُخْبِرَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ قَاتِلَهُ وَسَالِبَهُ فِي النَّارِ فَقِيلَ لِعَمْرٍو فَإِنَّكَ هُوَ ذَا تُقَاتِلُهُ قَالَ إِنَّمَا قَالَ قَاتِلَهُ وَسَالِبَهُ
হাদীস বর্ণনা করেছেন আফফান তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালমাহ তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন আবু হাফস ও কুলসুম বিন জাবরান তারা বলেন আবু গাদিয়া বলেন যখন হজরতে আম্মার বিন ইয়াসির শহিদ হয়ে গেলেন তো হজরতে আমর বিন আ'সকে তার খবর দেওয়া হলো তখন তিনি বললেন আমি আল্লার রসুল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি তাকে হত্যা করে তার মাল লুন্ঠনকারী জাহান্নামে যাবে। হজরতে আমর বিন আ'সকে বলা হলো আপনিও তো তার সাথে যুদ্ধ করছিলেন।তিনি বললেন মুলত আল্লাহর রসুল বলেছেন হত্যা করে তার মাল লুন্ঠনকারীর সম্বন্ধে।
(১)মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৭৩২২
(২)ইমাম হাইশামি, মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,হাদীস নং-১২০৬৪
(৩)ইবনে সা'দ, তাবকাতুল কুবরা,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯৭
(৪)আল্লামা বালজুরি, আনসাবুল আসরাফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৩১৪-৩১৫
(৫)ইবনে হাজার আস্কালানি, আল ইসাবাহ, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৫৯
(৬)ইবনে আসাকির, তারিখে দামিস্ক, হাদীস নং-৫১৫৬
উক্ত হাদীস সম্বন্ধে কিছু কথা, প্রথমে তো উক্ত হাদীসের সনদ নিয়ে কথা বলা যাক যার মুল বর্ণনাকারী আমর বিন আ'স তাঁঁর থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আবু গাদিয়াহ,তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন কুলসুম বিন জাবরান ও আবু হাফস তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন হাম্মাদ বিন সালমাহ এবং তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আফফান বিন মুসলিম বিন সাফফার।এছাড়া কোন বর্ণনা কারী পাওয়া যায়নি। অতএব বলাযায় উক্ত হাদীসটি ফারদে মুতলাক বা গারিবে মুতলাক। আর গারীবে মুতলাক বা ফারদে মুতলাক সেই হাদীসকে বলে যার সনদে মুল রাবি সর্বক্ষেত্রে একজনই থাকে। এখানে তো সমস্ত রাবির একাকিত্ব রয়েছে।অতএব এই ধরণের সমর্থকবিহীন বর্ণনা উপর সম্পুর্নরুপে আস্থা রাখা যায় না। কারণ এইধরনের গরিব হাদীসের মধ্যে মতনও গরিব হয়। তাই এতে সন্দেহ থেকে যায় তাই যেহেতু এর সত্যতা প্রমাণ করতে সমর্থক বর্ণনাকারী নেই তাই উক্ত হাদীসের মতনের উপর সম্পুর্ণরুপে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।
তাছাড়া যদি যুক্তির খাতিরে উক্ত হাদীস কিছুক্ষনের জন্য মানা যায় তাহলে, সেক্ষেত্রে বলতে হয় আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দলকে জাহান্নামী বলা যাবে না। কারণ হজরতে আবু গাদিয়া কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে হজরতে আম্মারকে হত্যা করেননি। হত্যা করার পর জানতে পারেন তিনি আম্মার ছিলেন। যদিও এক্ষেত্রে কেও তাকে জাহান্নামি বলে তাহলে এখানে দুটো যুক্তি পেশ করা যেতে পারে, প্রথম - যখন হজরতে আম্মার তার সামনাসামনি হলেন হজরতে গাদিয়ার কি হজরতে আম্মারের পরিচয় জানা উচিৎ ছিলো?এটা যুদ্ধক্ষেত্র নাকি আলাপচারিতার যায়গায়? যুদ্ধে কি সেই সুযোগ থাকে? দ্ব্বিতীয় যদিও জানতেন হজরতে আম্মার তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তার মুকাবিলা না করে নিজের গর্দন হজরতে আম্মারের কাছে দিয়ে দেবেন, আর বলবেন মারো আমাকে? আপনাকে মারলে আমি জাহান্নামী হয়ে যাবো আপনিই মেরেদিন আমাকে!!! যুদ্ধ ক্ষেত্রে তা হয়না। তাছাড়া উক্ত বর্ণনা লক্ষ করলে বোঝা যায় আম্মারকে হত্যাকরে লুন্ঠনকারী জাহান্নামি। কিন্তু আবু গাদিয়া তাকে ভুলুবসত হত্যা করে দিয়েছেন বটে মাল লুন্ঠন করেনি। তাই তাকে জাহান্নামী বলার প্রশ্ন আসে না। তাছাড়া তার হাতে, হজরতে আম্মার হত্যা হয়ে যাওয়ার পর তিনি আন্তরিক ভাবে আফসোস করেছেন। আমার হাতে একি হয়ে গেলো!! এই আফসোস তার ক্ষমাপ্রার্থনার ধাপ, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষের মৃত্যু ঘটাটাই স্বাভাবিক। যাইহোক আগেও প্রমাণ করেছি মওলা আলীর দল হোক বিপক্ষ দল হোক উভয় দল জান্নাতি কারণ রসুল তাদের মুসলিম বলেছেন যা আমি পুর্বেই প্রমাণ করেছি। এমনকি হজরতে আম্মারেরও স্বীকারোক্তি আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সৈনদল মুসলিম ছিলেন নিম্নে তার প্রমাণ হিসাবে হাদীস দিলাম,
❏ হাদিস ৩৩:
حدثنا مكي بن إبراهيم حدثنا عبيد الله بن أبي زياد حدثني عبد الكريم بن أبي المخارق حدثني سعيد بن عامر القرظي قال حدثتني أم عمارة حاضنة لعمار قالت اشتكى عمار قال لا أموت في مرضي حدثني حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم أني لا أموت إلا قتلا بين فئتين مؤمنتين
সাইদ বিন আলকারজি বয়ান করেন আম্মারের (رضي الله عنه) পরিসেবিকা উম্মে আম্মারা বলেন, হযরত আম্মার অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন । হজরতে আম্মার বললেন আমি এই অসুস্থ্যতায় মৃত্যুবরণ করবো না, আমার হাবীব আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে বলেছেন,মোমিন দুই দলের মাঝে যুদ্ধ না হওয়া ব্যতীত আমি মৃত্যুবরণ করবো না ।
(১)ইমাম বুখারী তারিখুল আওসাত, হাদীস নং-৩১২,
(২)ইবনে আসাকির, তারিখে দামিস্ক, হাদীস নং-২০০৩৬
(৩)কাঞ্জুল উম্মাল,হাদীস নং-৩৭৩৭৯
উক্ত হাদীস আবারও প্রমাণ করে আল্লাহর দুইদলকে মুসলমান বলে গেছেন। তাই তার বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করা, দুঃসাহিসকাত ছাড়া কিছুনা। কারণ আল্লাহর রসুল যাকে মুসলমান বলবেন তাকে কাফীর বলার অধিকার কারোর নেই। আর তার মুসলমান হওয়ায় কোন সন্দেহ থাকেনা।
হজরতে আম্মারের স্বীকারোক্তিঃ
❏ হাদিস ৩৪:
حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ الْحَكَمِ ، عَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ ، قَالَ : كُنْتُ إِلَى جَنْبِ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ بِصِفِّينَ , وَرُكْبَتِي تَمَسُّ رُكْبَتَهُ , فَقَالَ رَجُلٌ : كَفَرَ أَهْلُ الشَّامِ , فَقَالَ عَمَّارٌ : لَا تَقُولُوا ذَلِكَ نَبِيُّنَا وَنَبِيُّهُمْ وَاحِدٌ , وَقِبْلَتُنَا وَقِبْلَتُهُمْ وَاحِدَةٌ ; وَلَكِنَّهُمْ قَوْمٌ مَفْتُونُونَ جَارُوا عَنِ الْحَقِّ , فَحَقَّ عَلَيْنَا أَنْ نُقَاتِلَهُمْ حَتَّى يَرْجِعُوا إِلَيْهِ
হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়াজিদ বিন হারুন তিনি বলেন হাসান বিন হাকিম বর্ণনা করে বলেন জায়েদ বিন হারিস হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি সিফফিনের ময়দানে হজরত আম্মারের পাসেই ছিলাম আমার হাটু আর তার হাটু স্পর্শ করছিলো। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠলো শামিগন কুফর করেছে। তখন হজরত আম্মার বলেন এইভাবে বলোনা আমাদের নবী ও তাদের নবী এক আমাদের কিবলা ও তাদের কিবলা এক বরং বলো তারা অজ্ঞতা বসত সত্য থেকে সরে এসেছে। এটা আমাদের কর্তব্য যে তাদের সাথে ততক্ষন যুদ্ধ করি যতক্ষণ না তারা সত্যের দিকে ফিরে আসে।
➥(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং- ৩৭১৭৪)
উক্ত হাদীস দ্বয় দ্বারা বোঝা গেলো বিদ্রোহের কারণে আমীরের মুয়াবীয়া ও তার সৈনদল কাফীর হয়ে যায়নি। হজরতে আম্মারও তাদেরকে মুসলমান মনে করতেন। কারণ তিনি জানতেন আল্লাহর রসুল এই মুসলিম দলের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
যাইহোক শিয়ারা যেহেতু একটা প্রতারক দল তাই তারা প্রতারণা ছাড়া কিছুই জানে না। আমি পুর্বে প্রমাণ করেছি মওলা আলী, তার প্রতিপক্ষকে মুসলমান এবং জান্নাতি মনে করতেন। উক্ত বর্ণনা গুলি তাদের হজম না হলেও নিজেদের মতলবের কিছু বর্ণনা দিয়ে, নিজেদের উদ্দেশ্য সার্থক করতে চায়। তার জন্য নানা কুকৌশল অবলম্বন করে থাকে। তার মধ্যে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ যোগ্য।
❏ হাদিস ৩৫:
حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا حُصَيْنٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَعْقِلٍ ، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ عَلِيٍّ صَلَاةَ الْغَدَاةِ ، قَالَ : فَقَنَتَ ، فَقَالَ فِي قُنُوتِهِ : اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِمُعَاوِيَةَ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَأَشْيَاعِهِ ، وَأَبِي السُّلَمِيِّ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ وَأَشْيَاعِهِ
আব্দুর রাহমান বিন মা'কিল হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সৈয়েদানা মওলা আলী মুস্কিল কুয়াসার সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। তিনি কুনুতে নাজেলা পাঠ করলেন। কুনুতে নাজেলাতে বললেন হে আল্লাহ! আপনি মুয়াবিয়া তার শিয়াদের, আমর ইবনে আ'স ও তার শিয়াদের, আবুল আওয়ার ও তার শিয়াদের, এবং আব্দুল্লাহ বিন কায়েস ও,তার শিয়াদের আপনার উপর ন্যাস্ত করলাম।
➥(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং- ৬৯৪৭)
উপরিউক্ত বর্ণনা অনুযায়ী শিয়াদের দাবি মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সাথিদের লানত প্রদান করেছেন।কিন্তু বিষয় হলো উক্ত বর্ণনায় শিয়ারা প্রতারকের পরিচয় দিয়েছে। তারা তারজমাটা সাধারণত যে ভাবে করে তাতে বলা যায়, উক্ত হাদীসে শিয়ারা তারজমায় খিয়ানত করেছে যা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ। শিয়াদের কাছে আমার দাবি, তারা হাদীসে এমন কোন শব্দ দেখাক যার অর্থ তারা লানত হয়। হাদীসে এমন কোন শব্দই নেই যাতে লানত অর্থ আসে, হাদীসে আছে :
❏ হাদিস ৩৬:
اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِمُعَاوِيَةَ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَأَشْيَاعِهِ ، وَأَبِي السُّلَمِيِّ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ وَأَشْيَاعِهِ
যার অর্থ হে আল্লাহ মুয়াবিয়া ও তার শিয়া, আমর বিন আস ও তার শিয়া, আব্দুল্লাহ বিন কাইস ও তার শিয়াদের আপনার হাতে ছেড়ে দিলাম। اللَّهُمَّ عَلَيْكَ হে আল্লাহ আপনি লানত দিন অর্থ হয় না বরং অর্থ হয় হে আল্লাহ আপনার উপর ন্যাস্ত করলাম, অর্থাৎ হে আল্লাহ বিশাল বিপদ ধেয়ে আসছে আমার ও আমার সাথিদের উপর। এদের থেকে রক্ষা পেতে আপনার হাতে বিষয়টা ছেড়ে দিলাম, এটাই ছিলো মওলা আলীর উদ্দেশ্য। কারণ দুর্যোগ কালে বা বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা যেতে পারে। যেমন মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদের হাসিয়ায় লেখা আছে,
فلا نِزاعَ بين الأئمَّة في مشروعية القنوت ولا في مشروعيته للنازلة، وإنما النِّزاع في بقاء مشروعيته لغير النازلة، فمالك
দুর্যোগ কালে কুনুতে নাজেলা পড়া যাবে, এই ব্যাপারে ইমামদের কোন মতবিরোধ নেই। দুর্যোগ ছাড়াও পড়া যাবে কি না তাতে মত বিরোধ রয়েছে । এখানে কুনুতে নাজেলা পড়ার উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিপদ বা দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যা মওলা আলী আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়েছেন। তাই শিয়াদের কুনুতে নাজেলা পড়ার উদ্দেশ্যকে লানত বলে চালিয়ে দেওয়া এটা তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, প্রতারণা বটে। বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা যেতেই পারে । যদিও শিয়ারা নিজেদের দাবির সমর্থক দলিল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীসটিও দিয়ে থাকে।
❏ হাদিস ৩৭:
، فكان علي إذا صلى الغداة قنت فَقَالَ اللَّهُمَّ العن مُعَاوِيَة وعمرو وأبا الأعور، وحبيب بن مسلمة وعبد الرحمان بْن خالد بْن الوليد، والضحاك بْن قَيْس والوليد بْن عقبة
অতঃপর হজরতে আলী যখন ফজরের নামাজ আদায় করে কুনুত পাঠ করলেন এবং বললেন হে আল্লাহ মুয়াবিয়া, আমর বিন আ'স, আবু আওরা, হাবিব বিন মুসলেমা, আব্দুর রাহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং দ্বাহাক বিন কায়েস এবং ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে অভিসপ্ত করুন।
➥(আনসাবুল আসরাফ, পৃষ্ঠা-৩৮৯ হাদীস নং-৩২২)
হাদিস পর্যালোচনাঃ
উক্ত বর্ণনার উপর আমার জবাবঃ উক্ত বর্ণনাটি সনদ নিয়ে কথা বলার পুর্বে বলতে চাই আনসাবুল আসরাফ একটি বিতর্কিত কেতাব। এতে প্রচুর পরিমানে শিয়াদের বর্ণনা ও মুনকার রাবি বিদ্যমান। সেই দিকে নজর রেখে যদি উক্ত বর্ণনার সনদ পর্যালোচনা করা যায় ইহা বিস্তারিত বর্ণনার (২-৩ পাতার বর্ণনার) অংশ বিশেষ, যার সনদ এইরুপ
وَحَدَّثَنِي عَبَّاسُ بْنُ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي مِخْنَفٍ لُوطِ بْنِ يَحْيَى، وَعَنْ عَوَانَةَ
অর্থাৎ আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্বাস বিন হিশাম➠ তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন ➠আবু মুখান্নাফ লাওত বিন ইয়াহিয়া বর্ণনা করে বলে➠ আবু আওয়ানাহ হইতে বর্ণিত। ➠উক্ত বর্ণনায় আবু মুখান্নাফ নামক একজন বিতর্কিত রাবি রয়েছে যে একজন শিয়া ইতিহাসবিদ। যার লিখিত বিভিন্ন কেতাব হলো কিতাবুস সাকিফা, কিতাবুর রিদ্বা,কিতাবুল জামাল, কিতাবুস সিফফিন, মাকতাল আল হাসান, মাকতাল আল হুসাইন ইত্যাদি । যেহেতু সে একজন শিয়া তাই আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা বর্ণনা করাটাও স্বাভাবিক। তাছাড়া সে একজন বিতর্কিত রাবি ছিলো বলে জানা যায়, নিম্নে তার প্রমাণ দিলাম।
قال يحيى بن معين : ليس بثقة . وقال أبو حاتم : متروك الحديث . وقال الدارقطني : أخباري ضعيف
▪ ইমাম ইবনে মঈন বলেন সে নির্ভরযোগ্য নয় এবং আবু হাতিম রাজি বলেন সে মাতরুকুল হাদীস, ইমাম দারকুতনি বলেন খবরে জইফ হিসাবে পেয়ছি।
➥সিয়ারু আলামিন নুবালায়ি, খন্ড-৭ পৃষ্ঠা-৩০২.
نا عبد الرحمن قال قرئ على العباس بن محمد الدوري قال سمعت يحيى بن معين يقول أبو مخنف ليس بثقة، نا عبد الرحمن قال سمعت أبي يقول أبو مخنف متروك الحديث.
▪আব্দুর রাহমান বর্ণনা করেন তিনি বলেন তিনি আব্বাস বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে পড়েছেন, তিনি বলেন আমি ইহিয়াহ ইবনে মঈনকে বলতে শুনেছি আবু মুখান্নাফ নির্ভরযোগ্য নয়। আব্দুর রাহমান আরো বলেন তার পিতা থেকে শুনেছেন আবু মুখান্নাফ মাতরুকুল হাদীস ছিলো।
➥ইবনে আবি হাতিম রাজি, আল জিরাহ ওয়াল তাদিল খন্ড-৮ পৃষ্ঠা -৫৮
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, আবু মুখান্নাফ একজন মাতরুক রাবি ছিলো তাই তার বর্ণনা নির্ভরযোগ্যতা রাখে না।মাতরুক রাবি সেই সব রাবিদের বলা হয় যাদের বর্ণনা পরিত্যক্ত। তাই এমন বর্ণনা যাকে একজন মাতরুক রাবি বর্ণনা করেছে তা গ্রহনযোগ্য নয় বরং পরিত্যক্ত বটে ।
________________
আমীরে মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে বিতর্কের সমাধান কৃতঃ আবু আইয়্যুব কাদেরী (সম্পাদিত)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন